আওয়ামী লীগের কে হবেন সাধারণ সম্পাদক ও একটি গবেষণা প্রতিবেদন।
আবুল হাশেম, রাজশাহী ব্যুরোচীফঃ
কূটনৈতিক রাজনীতি দেখভাল করা, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে বুদ্ধিবৃত্তিক পর্যায়ে মোকাবিলা করে কার্যকর নেতৃত্ব দেয়া, দলের সাংগঠনিক দিকটায় সফল হওয়া এবং আওয়ামী লীগের জনপ্রিয়তাকে ধরে রাখার মাধ্যমেই সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করতে হবে”——-এমন বাস্তবতাকে সঙ্গী করে আসন্ন ডিসেম্বরে দেশের ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সম্মেলনে নতুন সাধারণ সম্পাদক কে নির্বাচিত হতে পারেন, তা নিয়ে জোর আলোচনা আছে ও চলছে। যদিও এমন খবরের প্রকাশনায় জাতীয় সংবাদমাধ্যমগুলো একটু নীরব। এদিকে গণমাধ্যমগুলোর অনেকেই প্রতিবেদন প্রকাশ করাটাকে ঝুঁকিমুক্ত হিসাবে দেখতে চাইছে না । কারণ, সাধারণ সম্পাদক হতে চাইবার লড়াইয়ে কার্যত অনেক নেতাই ইচ্ছেপোষণ করায়, জট পাকিয়ে ফেলেছে, বেড়েছে সংকট। বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক বাস্তবতায় সংবাদকর্মীরা দলিয় সংবাদ কর্মীর মত করে হওয়ায়, দেশের শ্রেষ্ঠ রাজনৈতিক দলের জন্য সেরা পর্যায়ের নেতৃত্বকে তাই তুলেধরত এক প্রকার উপেক্ষা করাই হচ্ছে জাতীয় গণমাধ্যমে। এটি স্পষ্ট হয়েছে। বিশেষত, যারা এই পদের জন্য লড়াই করছেন, তাদের অনুসারীর মত করে সংবাদকর্মীরাও হওয়াতে, তথ্য সরবরাহে কৃপণ থাকা হচ্ছে। গণমাধ্যমগুলোর সম্পাদক কিংবা হেড অব নিউজেরাও বলা শুরু করছেন, আওয়ামী লীগ যাকে খুশী সাধারণ সম্পাদক করুক, আমাদের কারোর ব্যক্তিগত আক্রোশে পড়ার অর্থ নেই। সূত্রমতে, আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতাদের অনেকেই এবার সাধারণ সম্পাদক হতে চান। অথচ, যখনই তাদের সামনে যেয়ে এ বিষয়ে কথা বলতে তাগিদ রাখা হচ্ছে, তখন ধরি মাছ না ছুই পানির মত করেই তাঁরা দায়সারা পর্যায়ের সাক্ষাৎকার দিচ্ছেন। কিন্তু, ভেতরের খবর ভিন্ন।
যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র সফর থেকে ফিরে এসে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দীপ্ত উচ্চারণে যেয়ে সর্বশেষ সংবাদ সম্মেলনে আগামী ডিসেম্বরে নতুন করে দল পুনর্গঠিত হবে, তা ঘোষণা করার পরও রহস্যজনক কারণে দেশের সংবাদমাধ্যমগুলো আওয়ামী লীগের আসন্ন নতুন কমিটি ও নীতি নির্ধারণ পর্যায়ের পদগুলো নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশে মেতে নেই, তা বলাবাহুল্য। গবেষণা, অনুসন্ধান করতে যেয়ে সত্যান্বেষী সাংস্কৃতিক মন উঁকি দিয়ে জানান দিয়েছে, দলের দুই একজন নেতা চাইছেন, এই ইস্যুতে কোন আলাদা প্রতিবেদন করলে তাদের সাধারণ সম্পাদক পদ নিশ্চিত হয় না। বরং, প্রতিবেদনগুলোয় যৌক্তিক বিষয়গুলো তুলে ধরলে তাঁরা সাধারণ সম্পাদকের পদের দৌড় থেকে ছিটকে পড়বে। এদিকে এখন বাংলাদেশে কার্যত অতি মাত্রায় রাজনৈতিক উত্তাপ না থাকলেও, দেশের অপর বৃহৎ রাজনৈতিক শক্তি বিএনপি ও তাদের সমমনা সংগঠনের পক্ষ থেকে চেষ্টা একটা চলছে। একান্ন বছরের বাংলাদেশে কয়েকবার করে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসা বাংলাদেশ জাতীয়তবাদী দল বিএনপি বলতে চাইছে, “আমরা ওয়ার্ম আপ করছি, খেলা হবে।” বিএনপির কয়েকজন নেতা ইতোমধ্যে ঘোষণা করেছেন যে, আগামী ১০ ডিসেম্বরের পর হতে বাংলাদেশ চলবে বিএনপি দলিয় চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার কথায়। অন্যদিকে টানা তিন মেয়াদের ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের বর্তমান সাধারন সম্পাদক ওবায়দুল কাদের অতি সম্প্রতি এক সমাবেশে বিএনপির উদ্দেশে প্রতিউত্তরে বলেছেন, “আসুন, খেলা হবে।” খেলা হবে ! দক্ষিণ এশিয়ার রাজনৈতিক সমাবেশগত বলিষ্ঠ উক্তি হিসাবে “খেলা হবে” জায়গা নিয়েছে। শুরুটা অবশ্য বরেণ্য রাজনীতিক এ কে এম শামসুজ্জোহা পুত্র সাংসদ শামীম ওসমানের মুখ থেকেই ফেরে। ❝খেলা হবে❞ ও এই উক্তির রাজনৈতিক শ্লেষ, সূত্রমতে, এপার বাংলা ছাড়িয়ে ওপার বাংলায় গিয়েও ঠেকেছিল। বিএনপি আন্দোলনের মাধ্যমে কিছু করতে চায় তা স্পষ্ট। ১২ অক্টোবর থেকে দেশের বিভিন্ন জায়গায় সমাবেশ করবে তাঁরা। ১০ ডিসেম্বরে ঢাকায় মহাসমাবেশ করার পর তাঁরা জানুয়ারী থেকে নাশকতার রাজনীতিকে সঙ্গী করবে, তা অনুমেয়। আওয়ামী লীগের জন্য তাই প্রাসঙ্গিক বাস্তবতায় আসছে ডিসেম্বরের জাতীয় সম্মেলন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, নতুন নেতৃত্ব দ্বারা তাদের প্রধান ও প্রথম কাজ হবে, বুদ্ধিবৃত্তিক ও মাঠ দখলের রাজনীতিকে আশ্রয় দিয়ে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করা। কাজেই খেলা হবে, এমন উক্তি অর্থবহ প্রেক্ষাপটে আসন্ন, তা বুঝতে কারোর বাকিও নেই বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা মত দিচ্ছেন। যদিও ক্ষুরধার বিশ্লেষণ ও ব্যাখায় যেয়ে রাজনৈতিক ধারাভাষ্যকারদের অনেকেই বলছেন, বাংলাদেশের দ্বিদলিয় রাজনৈতিক শক্তির মধ্যকার আর খেলা অনুষ্ঠিত হবে কিনা, তা নিয়ে সন্দেহ থাকলেও খেলা খোদ আওয়ামী লীগের মধ্যেই চলছে। তাঁরা বলছেন, “খেলা হবে, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হওয়ার লড়াইয়েও।” —- এমন মত কিংবা আলোচনা রয়েছে আওয়ামী লীগের কয়েক কোটি নেতাকর্মীদের মাঝেও। এদিকে প্রখ্যাত কলাম লেখক প্রয়াত সাংবাদিক আব্দুল গাফফার চৌধুরী রাজনৈতিক ধারাভাষ্য দিতে যেয়ে গেল একযুগে বারবার করে বলেছেন যে, “দলের জন্য, দেশের জন্য এবং বৈশ্বিক সমঝোতা- সমন্বয় মিলিয়ে দলের লেজেন্ডারি রাজনীতিক প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা প্রায় সব দিক আগলিয়ে রাখার জন্য শ্রেষ্ঠ সত্তা, তাই সেখানে গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকেও অন্যদের কাজও সহজ হয়ে যাচ্ছে বা যায়।” কলামিস্ট আয়শা সাম্প্রতিক সময়ে আওয়ামী লীগের রাজনীতি নিয়ে লিখিত ধারাভাষ্যে বলেন, ” টানা তিন মেয়াদে ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগের সামনে সাতটি চ্যালেঞ্জ দাঁড়িয়ে গেছে। এর মধ্যে প্রথম চ্যালেঞ্জ হলো প্রধান প্রতিপক্ষ বিএনপি ও তাদের সমর্থিত রাজনৈতিক শক্তিকে মোকাবিলা করা। দুই নম্বর চ্যালেঞ্জ হল, বৈশ্বিক শক্তির চাপ সামলিয়ে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ধরে রাখা। তিন-এ রয়েছে জনশ্রেণির আস্থা অর্জনে ধারাবাহিকতা রক্ষা করা। চার, অভ্যন্তরীণ সংকট কাটিয়ে ক্রেডিবল একটি কাউন্সিল বা সম্মেলনের মধ্য দিয়ে দলকে পুনর্গঠন করা। পাঁচ নম্বর চ্যালেঞ্জ হিসেবে আওয়ামী লীগের সামনে রয়েছে রাজনৈতিক জোটকে পুনরায় গুরুত্ব দিয়ে সমমনাদের মূল্যায়ন করার বিষয়টি। ছয় নম্বর চ্যালেঞ্জ হিসেবে দলটির সামনে রয়েছে- প্রশাসনিক দায়িত্বে থাকা সে সব আমলাদের শনাক্ত করা, যারা একটি বিশেষ শক্তির স্বার্থ সংরক্ষণে কাজ করে যাচ্ছে বা যেতে পারে। সবশেষ, সাত নম্বরে রয়েছে, সুশীল সমাজের নামে রাজনৈতিক উচ্চাভিলাষীদের উপদ্রব প্রতিহত করা”।
ধারণা করা হচ্ছে, আগামী বছরের শেষভাগে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের সম্ভাবনাই বেশী। যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফিরে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী আরো স্পষ্ট করেছেন। তিনি বলেছেন, নতুন নেতৃত্ব দিয়েই আগামী দিনের রাজনীতি কোন পথে চলবে তা নির্ধারণ করা হবে। নতুন নেতৃত্ব দ্বারা আমরা রাজনৈতিক অবস্থান স্পষ্ট করব। তিনি বলেন, বিএনপি রাজনৈতিক কর্মসূচী দিচ্ছে। দিতে থাকুক। এই প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য আবদুর রাজ্জাক বলছেন, “এবারের সম্মেলন খুব গুরুত্বপূর্ণ। সম্মেলন থেকেই নির্বাচনের হাওয়াও শুরু হবে।” সূত্র এবং কঠিন বাস্তবতা বলছে, আওয়ামী লীগ একটি ভাগ্যবান দল ,যারা শেখ হাসিনার মত একজন বিশ্বনেত্রী পেয়েছেন। সঙ্গত প্রেক্ষাপটের আলোকে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের সকলজনাই বলছেন, আওয়ামী লীগের আসন্ন কাউন্সিলে শেখ হাসিনা সভানেত্রী হিসাবে থাকবেন তা নিয়ে প্রশ্ন তোলা বোকামি হলেও, দলের সাধারন সম্পাদক পদ নিয়ে দলটি নতুন নেতার সন্ধান করতে যাচ্ছে বলে অনুমিত হয়।
এদিকে বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের শারীরিক সামর্থ্য নিয়ে আগের মত করে দলের জন্য ভুমিকা না রাখতে পারলেও তাঁকে প্রতিদিনই সংবাদমাধ্যম কর্তৃক তাঁর অবস্থান স্পষ্ট করতে দেখা যায়। অনেকের কাছে এই প্রশ্নও রয়েছে যে, তিনি কি এমন গুরুদায়িত্ব নিয়ে পুনরায় সাধারণ সম্পাদক হয়ে বহাল থাকতে চান কিনা ! আয়শার সাত চ্যালেঞ্জের দিক পর্যালোচনা করলে আওয়ামী লীগের জন্য একজন খুবই দক্ষ, সৎ, দূরদৃষ্টিসম্পন্ন সাধারণ সম্পাদকের দরকার। যিনি মুলত সেনাপতি হয়ে শেখ হাসিনার দেশ পরিচালনা কে মসৃণ করতে নিজ দলের হয়ে শ্রেষ্ঠ মুখপাত্র হয়ে সবদিক ঠিক রাখবেন। সমন্বয় করবেন। বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের গেল দুই মাসে নিজের গতি বাড়িয়েছেন। এতে করে বোঝা যাচ্ছে যে, তিনি পুনরায় এই দায়িত্বে থাকার মানসে আছেন। অন্যদিকে, এবারের কাউন্সিলে নতুন সাধারণ সম্পাদক হিসাবে কে নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন, তা নিয়ে জোর গুঞ্জনই কেবল নয়, ভেতরে ভেতরে অনেক নেতার সুপ্ত বাসনা প্রকাশ্যে চলে আসছে। যে তালিকায় জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী ও বাহাউদ্দীন নাসিমের নাম রয়েছে। “আওয়ামী লীগে শীর্ষ পদ নিয়ে গেল ৩১ বছরে নিজেদের মধ্যে যুদ্ধ করেনি। শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের আগে কামাল হোসেন- মালেক উকিলেরা অবশ্য একটি কাউন্সিলে চেয়ার ছোড়াছোড়ি করেছেন। আজকের সময়ে উক্তিময় কৃষ্টি ‘খেলা’ তাই শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দলের মধ্যে হয় নি, হবেও না। তবে, দলের জন্য সেরাটা দিতে যেয়ে স্বপ্ন দেখেন অনেকেই। সেই স্বপ্ন পূরণ করতে হলে জাতীয় মুখপাত্র হওয়াটাও অত সহজ নয়। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হওয়া মানে একটি দেশের অন্যতম প্রধান মুখপাত্র হয়ে যাওয়া। তাঁর চলন- বলন পরখ করতে হবে, প্রত্যুপন্নমতি হওয়া, দূরদৃষ্টি ও চরিত্র থাকতে হবে , দেশপ্রেম আছে কিনা, বক্তা হওয়া—সবই প্রয়োজন। তিনি যখন কথা বলছেন, তখন উপস্থিত সুধী, দেশবাসী তাকে টিভিতে কিংবা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেখছে, যেন তাঁর কথা উপেক্ষা করে মানুষ না চলে যায়— এমন করে বলছিলেন, সমাজ ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানী আহসান আহমেদ। ” তবে, দলের তিন প্রেসিডিয়াম সদস্যের মধ্য থেকে এবার নতুন সাধারণ সম্পাদক কে দেখা যাবে বলে আলোচনা ক্রমশ বাড়ছে। যে তিন নেতার নাম আলোচনার তুঙ্গে রয়েছে, তাঁরা হলেন- এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন, ডক্টর আব্দুর রাজ্জাক ও জাহাঙ্গীর কবির নানক।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিল্লি সফর, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র ও জাপান সফরের পরই আওয়ামী লীগ ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিতব্য সম্মেলন নিয়ে মেতে যাবে বলে দলের নীতি নির্ধারণ পর্যায়ের একজন নেতা সংশ্লিষ্ট সুত্রকে বলছেন, “শেখ হাসিনা যেভাবে বলবেন সেভাবেই দলকে সুগঠন করা হবে এবং তিনি জানেন কী করতে হবে !” সাধারণ সম্পাদক পদে অন্যান্যদের মধ্যে যাদের নাম উচ্চারিত হচ্ছে তাঁরা হলেন, মাহবুব উল আলম হানিফ, মির্জা আজম, দীপু মনি, হাছান মাহমুদ ও ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপস।
দলের গুরুত্বপূর্ণ অপরাপদ পদ নিয়েও চলছে নানা বিশ্লেষণ। দপ্তর সম্পাদক থেকে শুরু করে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদের জন্যও নেপথ্যে চাওয়া-পাওয়ার লড়াই চলছে। আওয়ামী লীগের জাতীয় কাউন্সিলে সাংগঠনিক পদ নিয়ে ফিরতে পারেন তাজউদ্দীন আহমেদ তনয় সোহেল তাজও। শামীম ওসমানও কারণে অকারণে বিভিন্ন সভায় বক্তব্য বাড়িয়েছেন কেন, তা নিয়ে অনুসন্ধানী প্রেক্ষাপট জানাচ্ছে যে, সাম্প্রতিক সময়ে নারায়ণগঞ্জে কেন রাজনৈতিক সংঘাত হল এবং এর সুন্দর সমাধানে শামীম ওসমান কাজ করতে পারলে তাঁর দলের হয়ে গুরুত্ব বাড়ে বলে মনে করার রহস্যময় দিক রয়েছে। আওয়ামী লীগের আসন্ন সম্মেলন নিয়ে বিভিন্ন পদে অনুমাননির্ভর নানাজনের নাম আসলেও নীতিনির্ধারকরা বলছেন, প্রবীণ-নবীনের সংমিশ্রনে আগামী কেন্দ্রীয় কাউন্সিলে নতুন নেতৃত্ব গঠিত হবে। তবে গতবারের কেন্দ্রীয় কমিটি ও মন্ত্রিসভার মতো এবারও বড় চমক আনতে পারেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। চমক হিসাবে এই মুহূর্তে সবচাইতে বড় আলোচনায় রয়েছেন দলটির সভাপতিমন্ডলীর সদস্য এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন। যিনি সাধারণ সম্পাদক পদে অধিষ্ঠিত হতে পারেন। দলের ত্যাগী নেতা ওবায়দুল কাদের থেকে যাবেন, নাকি তিনি আসবেন এই পদে—এমন আলোচনা গুরুত্বসহকারে আওয়ামী লীগের মধ্যে বেড়েছে। বাংলাদেশের রাজনৈতিক বাস্তবতায় আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে তুলকালাম কান্ড প্রতিহত করার সত্যিকারের চ্যালেঞ্জ আওয়ামী লীগের রয়েছে। দলটি চাইবে একটি ক্রেডিবল সম্মেলন করতে। তবে দলের মধ্যে পদ পেতে ব্যকুল হওয়ার লড়াই রয়েছে। বিএনপি চাইছে আগামী ডিসেম্বর মাসেই রাজনীতির ময়দান নিয়ন্ত্রনে নিতে। অতঃপর আগামী বছরের জুনের মধ্যে তাঁরা সফল হতে চায়। অন্যদিকে আওয়ামী তাদের জাতীয় সম্মেলন করবার মধ্য দিয়ে রাজনীতির মাঠে এমনিতেই থাকছে। অপরদিকে বিএনপির কাউন্সিল করার কোন খবর পাওয়া যায়নি। সূত্রমতে, তাদের কাউন্সিল করতে গেলেই শীর্ষ নেতৃত্ব ইস্যুতে সংকট বেড়ে যাবে। কারণ, যারা দলের পরিচালনায় রয়েছে, তাদের কে বৈধতা কোনভাবেই নির্বাচন কমিশন দিতে পারবে না। বিএনপি তাই ডু অর ডাই সূত্র কে নিয়ে এগিয়ে যেতে চায়। আওয়ামী লীগও নতুন কমিটি দ্বারা দল পুনর্গঠন করে নতুন বছর থেকে সবকিছু সামাল দিতে চাইবে, বলাই বাহুল্য।
সূত্র: কেএইচএন রিসার্চ টিম, দেশের একমাত্র রাজনৈতিক গবেষণা সংস্থা।
আবুল হাশেম, রাজশাহী ব্যুরোচীফঃ
কূটনৈতিক রাজনীতি দেখভাল করা, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে বুদ্ধিবৃত্তিক পর্যায়ে মোকাবিলা করে কার্যকর নেতৃত্ব দেয়া, দলের সাংগঠনিক দিকটায় সফল হওয়া এবং আওয়ামী লীগের জনপ্রিয়তাকে ধরে রাখার মাধ্যমেই সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করতে হবে”——-এমন বাস্তবতাকে সঙ্গী করে আসন্ন ডিসেম্বরে দেশের ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সম্মেলনে নতুন সাধারণ সম্পাদক কে নির্বাচিত হতে পারেন, তা নিয়ে জোর আলোচনা আছে ও চলছে। যদিও এমন খবরের প্রকাশনায় জাতীয় সংবাদমাধ্যমগুলো একটু নীরব। এদিকে গণমাধ্যমগুলোর অনেকেই প্রতিবেদন প্রকাশ করাটাকে ঝুঁকিমুক্ত হিসাবে দেখতে চাইছে না । কারণ, সাধারণ সম্পাদক হতে চাইবার লড়াইয়ে কার্যত অনেক নেতাই ইচ্ছেপোষণ করায়, জট পাকিয়ে ফেলেছে, বেড়েছে সংকট। বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক বাস্তবতায় সংবাদকর্মীরা দলিয় সংবাদ কর্মীর মত করে হওয়ায়, দেশের শ্রেষ্ঠ রাজনৈতিক দলের জন্য সেরা পর্যায়ের নেতৃত্বকে তাই তুলেধরত এক প্রকার উপেক্ষা করাই হচ্ছে জাতীয় গণমাধ্যমে। এটি স্পষ্ট হয়েছে। বিশেষত, যারা এই পদের জন্য লড়াই করছেন, তাদের অনুসারীর মত করে সংবাদকর্মীরাও হওয়াতে, তথ্য সরবরাহে কৃপণ থাকা হচ্ছে। গণমাধ্যমগুলোর সম্পাদক কিংবা হেড অব নিউজেরাও বলা শুরু করছেন, আওয়ামী লীগ যাকে খুশী সাধারণ সম্পাদক করুক, আমাদের কারোর ব্যক্তিগত আক্রোশে পড়ার অর্থ নেই। সূত্রমতে, আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতাদের অনেকেই এবার সাধারণ সম্পাদক হতে চান। অথচ, যখনই তাদের সামনে যেয়ে এ বিষয়ে কথা বলতে তাগিদ রাখা হচ্ছে, তখন ধরি মাছ না ছুই পানির মত করেই তাঁরা দায়সারা পর্যায়ের সাক্ষাৎকার দিচ্ছেন। কিন্তু, ভেতরের খবর ভিন্ন।
যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র সফর থেকে ফিরে এসে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দীপ্ত উচ্চারণে যেয়ে সর্বশেষ সংবাদ সম্মেলনে আগামী ডিসেম্বরে নতুন করে দল পুনর্গঠিত হবে, তা ঘোষণা করার পরও রহস্যজনক কারণে দেশের সংবাদমাধ্যমগুলো আওয়ামী লীগের আসন্ন নতুন কমিটি ও নীতি নির্ধারণ পর্যায়ের পদগুলো নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশে মেতে নেই, তা বলাবাহুল্য। গবেষণা, অনুসন্ধান করতে যেয়ে সত্যান্বেষী সাংস্কৃতিক মন উঁকি দিয়ে জানান দিয়েছে, দলের দুই একজন নেতা চাইছেন, এই ইস্যুতে কোন আলাদা প্রতিবেদন করলে তাদের সাধারণ সম্পাদক পদ নিশ্চিত হয় না। বরং, প্রতিবেদনগুলোয় যৌক্তিক বিষয়গুলো তুলে ধরলে তাঁরা সাধারণ সম্পাদকের পদের দৌড় থেকে ছিটকে পড়বে। এদিকে এখন বাংলাদেশে কার্যত অতি মাত্রায় রাজনৈতিক উত্তাপ না থাকলেও, দেশের অপর বৃহৎ রাজনৈতিক শক্তি বিএনপি ও তাদের সমমনা সংগঠনের পক্ষ থেকে চেষ্টা একটা চলছে। একান্ন বছরের বাংলাদেশে কয়েকবার করে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসা বাংলাদেশ জাতীয়তবাদী দল বিএনপি বলতে চাইছে, “আমরা ওয়ার্ম আপ করছি, খেলা হবে।” বিএনপির কয়েকজন নেতা ইতোমধ্যে ঘোষণা করেছেন যে, আগামী ১০ ডিসেম্বরের পর হতে বাংলাদেশ চলবে বিএনপি দলিয় চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার কথায়। অন্যদিকে টানা তিন মেয়াদের ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের বর্তমান সাধারন সম্পাদক ওবায়দুল কাদের অতি সম্প্রতি এক সমাবেশে বিএনপির উদ্দেশে প্রতিউত্তরে বলেছেন, “আসুন, খেলা হবে।” খেলা হবে ! দক্ষিণ এশিয়ার রাজনৈতিক সমাবেশগত বলিষ্ঠ উক্তি হিসাবে “খেলা হবে” জায়গা নিয়েছে। শুরুটা অবশ্য বরেণ্য রাজনীতিক এ কে এম শামসুজ্জোহা পুত্র সাংসদ শামীম ওসমানের মুখ থেকেই ফেরে। ❝খেলা হবে❞ ও এই উক্তির রাজনৈতিক শ্লেষ, সূত্রমতে, এপার বাংলা ছাড়িয়ে ওপার বাংলায় গিয়েও ঠেকেছিল। বিএনপি আন্দোলনের মাধ্যমে কিছু করতে চায় তা স্পষ্ট। ১২ অক্টোবর থেকে দেশের বিভিন্ন জায়গায় সমাবেশ করবে তাঁরা। ১০ ডিসেম্বরে ঢাকায় মহাসমাবেশ করার পর তাঁরা জানুয়ারী থেকে নাশকতার রাজনীতিকে সঙ্গী করবে, তা অনুমেয়। আওয়ামী লীগের জন্য তাই প্রাসঙ্গিক বাস্তবতায় আসছে ডিসেম্বরের জাতীয় সম্মেলন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, নতুন নেতৃত্ব দ্বারা তাদের প্রধান ও প্রথম কাজ হবে, বুদ্ধিবৃত্তিক ও মাঠ দখলের রাজনীতিকে আশ্রয় দিয়ে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করা। কাজেই খেলা হবে, এমন উক্তি অর্থবহ প্রেক্ষাপটে আসন্ন, তা বুঝতে কারোর বাকিও নেই বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা মত দিচ্ছেন। যদিও ক্ষুরধার বিশ্লেষণ ও ব্যাখায় যেয়ে রাজনৈতিক ধারাভাষ্যকারদের অনেকেই বলছেন, বাংলাদেশের দ্বিদলিয় রাজনৈতিক শক্তির মধ্যকার আর খেলা অনুষ্ঠিত হবে কিনা, তা নিয়ে সন্দেহ থাকলেও খেলা খোদ আওয়ামী লীগের মধ্যেই চলছে। তাঁরা বলছেন, “খেলা হবে, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হওয়ার লড়াইয়েও।” —- এমন মত কিংবা আলোচনা রয়েছে আওয়ামী লীগের কয়েক কোটি নেতাকর্মীদের মাঝেও। এদিকে প্রখ্যাত কলাম লেখক প্রয়াত সাংবাদিক আব্দুল গাফফার চৌধুরী রাজনৈতিক ধারাভাষ্য দিতে যেয়ে গেল একযুগে বারবার করে বলেছেন যে, “দলের জন্য, দেশের জন্য এবং বৈশ্বিক সমঝোতা- সমন্বয় মিলিয়ে দলের লেজেন্ডারি রাজনীতিক প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা প্রায় সব দিক আগলিয়ে রাখার জন্য শ্রেষ্ঠ সত্তা, তাই সেখানে গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকেও অন্যদের কাজও সহজ হয়ে যাচ্ছে বা যায়।” কলামিস্ট আয়শা সাম্প্রতিক সময়ে আওয়ামী লীগের রাজনীতি নিয়ে লিখিত ধারাভাষ্যে বলেন, ” টানা তিন মেয়াদে ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগের সামনে সাতটি চ্যালেঞ্জ দাঁড়িয়ে গেছে। এর মধ্যে প্রথম চ্যালেঞ্জ হলো প্রধান প্রতিপক্ষ বিএনপি ও তাদের সমর্থিত রাজনৈতিক শক্তিকে মোকাবিলা করা। দুই নম্বর চ্যালেঞ্জ হল, বৈশ্বিক শক্তির চাপ সামলিয়ে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ধরে রাখা। তিন-এ রয়েছে জনশ্রেণির আস্থা অর্জনে ধারাবাহিকতা রক্ষা করা। চার, অভ্যন্তরীণ সংকট কাটিয়ে ক্রেডিবল একটি কাউন্সিল বা সম্মেলনের মধ্য দিয়ে দলকে পুনর্গঠন করা। পাঁচ নম্বর চ্যালেঞ্জ হিসেবে আওয়ামী লীগের সামনে রয়েছে রাজনৈতিক জোটকে পুনরায় গুরুত্ব দিয়ে সমমনাদের মূল্যায়ন করার বিষয়টি। ছয় নম্বর চ্যালেঞ্জ হিসেবে দলটির সামনে রয়েছে- প্রশাসনিক দায়িত্বে থাকা সে সব আমলাদের শনাক্ত করা, যারা একটি বিশেষ শক্তির স্বার্থ সংরক্ষণে কাজ করে যাচ্ছে বা যেতে পারে। সবশেষ, সাত নম্বরে রয়েছে, সুশীল সমাজের নামে রাজনৈতিক উচ্চাভিলাষীদের উপদ্রব প্রতিহত করা”।
ধারণা করা হচ্ছে, আগামী বছরের শেষভাগে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের সম্ভাবনাই বেশী। যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফিরে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী আরো স্পষ্ট করেছেন। তিনি বলেছেন, নতুন নেতৃত্ব দিয়েই আগামী দিনের রাজনীতি কোন পথে চলবে তা নির্ধারণ করা হবে। নতুন নেতৃত্ব দ্বারা আমরা রাজনৈতিক অবস্থান স্পষ্ট করব। তিনি বলেন, বিএনপি রাজনৈতিক কর্মসূচী দিচ্ছে। দিতে থাকুক। এই প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য আবদুর রাজ্জাক বলছেন, “এবারের সম্মেলন খুব গুরুত্বপূর্ণ। সম্মেলন থেকেই নির্বাচনের হাওয়াও শুরু হবে।” সূত্র এবং কঠিন বাস্তবতা বলছে, আওয়ামী লীগ একটি ভাগ্যবান দল ,যারা শেখ হাসিনার মত একজন বিশ্বনেত্রী পেয়েছেন। সঙ্গত প্রেক্ষাপটের আলোকে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের সকলজনাই বলছেন, আওয়ামী লীগের আসন্ন কাউন্সিলে শেখ হাসিনা সভানেত্রী হিসাবে থাকবেন তা নিয়ে প্রশ্ন তোলা বোকামি হলেও, দলের সাধারন সম্পাদক পদ নিয়ে দলটি নতুন নেতার সন্ধান করতে যাচ্ছে বলে অনুমিত হয়।
এদিকে বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের শারীরিক সামর্থ্য নিয়ে আগের মত করে দলের জন্য ভুমিকা না রাখতে পারলেও তাঁকে প্রতিদিনই সংবাদমাধ্যম কর্তৃক তাঁর অবস্থান স্পষ্ট করতে দেখা যায়। অনেকের কাছে এই প্রশ্নও রয়েছে যে, তিনি কি এমন গুরুদায়িত্ব নিয়ে পুনরায় সাধারণ সম্পাদক হয়ে বহাল থাকতে চান কিনা ! আয়শার সাত চ্যালেঞ্জের দিক পর্যালোচনা করলে আওয়ামী লীগের জন্য একজন খুবই দক্ষ, সৎ, দূরদৃষ্টিসম্পন্ন সাধারণ সম্পাদকের দরকার। যিনি মুলত সেনাপতি হয়ে শেখ হাসিনার দেশ পরিচালনা কে মসৃণ করতে নিজ দলের হয়ে শ্রেষ্ঠ মুখপাত্র হয়ে সবদিক ঠিক রাখবেন। সমন্বয় করবেন। বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের গেল দুই মাসে নিজের গতি বাড়িয়েছেন। এতে করে বোঝা যাচ্ছে যে, তিনি পুনরায় এই দায়িত্বে থাকার মানসে আছেন। অন্যদিকে, এবারের কাউন্সিলে নতুন সাধারণ সম্পাদক হিসাবে কে নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন, তা নিয়ে জোর গুঞ্জনই কেবল নয়, ভেতরে ভেতরে অনেক নেতার সুপ্ত বাসনা প্রকাশ্যে চলে আসছে। যে তালিকায় জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী ও বাহাউদ্দীন নাসিমের নাম রয়েছে। “আওয়ামী লীগে শীর্ষ পদ নিয়ে গেল ৩১ বছরে নিজেদের মধ্যে যুদ্ধ করেনি। শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের আগে কামাল হোসেন- মালেক উকিলেরা অবশ্য একটি কাউন্সিলে চেয়ার ছোড়াছোড়ি করেছেন। আজকের সময়ে উক্তিময় কৃষ্টি ‘খেলা’ তাই শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দলের মধ্যে হয় নি, হবেও না। তবে, দলের জন্য সেরাটা দিতে যেয়ে স্বপ্ন দেখেন অনেকেই। সেই স্বপ্ন পূরণ করতে হলে জাতীয় মুখপাত্র হওয়াটাও অত সহজ নয়। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হওয়া মানে একটি দেশের অন্যতম প্রধান মুখপাত্র হয়ে যাওয়া। তাঁর চলন- বলন পরখ করতে হবে, প্রত্যুপন্নমতি হওয়া, দূরদৃষ্টি ও চরিত্র থাকতে হবে , দেশপ্রেম আছে কিনা, বক্তা হওয়া—সবই প্রয়োজন। তিনি যখন কথা বলছেন, তখন উপস্থিত সুধী, দেশবাসী তাকে টিভিতে কিংবা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেখছে, যেন তাঁর কথা উপেক্ষা করে মানুষ না চলে যায়— এমন করে বলছিলেন, সমাজ ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানী আহসান আহমেদ। ” তবে, দলের তিন প্রেসিডিয়াম সদস্যের মধ্য থেকে এবার নতুন সাধারণ সম্পাদক কে দেখা যাবে বলে আলোচনা ক্রমশ বাড়ছে। যে তিন নেতার নাম আলোচনার তুঙ্গে রয়েছে, তাঁরা হলেন- এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন, ডক্টর আব্দুর রাজ্জাক ও জাহাঙ্গীর কবির নানক।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিল্লি সফর, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র ও জাপান সফরের পরই আওয়ামী লীগ ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিতব্য সম্মেলন নিয়ে মেতে যাবে বলে দলের নীতি নির্ধারণ পর্যায়ের একজন নেতা সংশ্লিষ্ট সুত্রকে বলছেন, “শেখ হাসিনা যেভাবে বলবেন সেভাবেই দলকে সুগঠন করা হবে এবং তিনি জানেন কী করতে হবে !” সাধারণ সম্পাদক পদে অন্যান্যদের মধ্যে যাদের নাম উচ্চারিত হচ্ছে তাঁরা হলেন, মাহবুব উল আলম হানিফ, মির্জা আজম, দীপু মনি, হাছান মাহমুদ ও ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপস।
দলের গুরুত্বপূর্ণ অপরাপদ পদ নিয়েও চলছে নানা বিশ্লেষণ। দপ্তর সম্পাদক থেকে শুরু করে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদের জন্যও নেপথ্যে চাওয়া-পাওয়ার লড়াই চলছে। আওয়ামী লীগের জাতীয় কাউন্সিলে সাংগঠনিক পদ নিয়ে ফিরতে পারেন তাজউদ্দীন আহমেদ তনয় সোহেল তাজও। শামীম ওসমানও কারণে অকারণে বিভিন্ন সভায় বক্তব্য বাড়িয়েছেন কেন, তা নিয়ে অনুসন্ধানী প্রেক্ষাপট জানাচ্ছে যে, সাম্প্রতিক সময়ে নারায়ণগঞ্জে কেন রাজনৈতিক সংঘাত হল এবং এর সুন্দর সমাধানে শামীম ওসমান কাজ করতে পারলে তাঁর দলের হয়ে গুরুত্ব বাড়ে বলে মনে করার রহস্যময় দিক রয়েছে। আওয়ামী লীগের আসন্ন সম্মেলন নিয়ে বিভিন্ন পদে অনুমাননির্ভর নানাজনের নাম আসলেও নীতিনির্ধারকরা বলছেন, প্রবীণ-নবীনের সংমিশ্রনে আগামী কেন্দ্রীয় কাউন্সিলে নতুন নেতৃত্ব গঠিত হবে। তবে গতবারের কেন্দ্রীয় কমিটি ও মন্ত্রিসভার মতো এবারও বড় চমক আনতে পারেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। চমক হিসাবে এই মুহূর্তে সবচাইতে বড় আলোচনায় রয়েছেন দলটির সভাপতিমন্ডলীর সদস্য এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন। যিনি সাধারণ সম্পাদক পদে অধিষ্ঠিত হতে পারেন। দলের ত্যাগী নেতা ওবায়দুল কাদের থেকে যাবেন, নাকি তিনি আসবেন এই পদে—এমন আলোচনা গুরুত্বসহকারে আওয়ামী লীগের মধ্যে বেড়েছে। বাংলাদেশের রাজনৈতিক বাস্তবতায় আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে তুলকালাম কান্ড প্রতিহত করার সত্যিকারের চ্যালেঞ্জ আওয়ামী লীগের রয়েছে। দলটি চাইবে একটি ক্রেডিবল সম্মেলন করতে। তবে দলের মধ্যে পদ পেতে ব্যকুল হওয়ার লড়াই রয়েছে। বিএনপি চাইছে আগামী ডিসেম্বর মাসেই রাজনীতির ময়দান নিয়ন্ত্রনে নিতে। অতঃপর আগামী বছরের জুনের মধ্যে তাঁরা সফল হতে চায়। অন্যদিকে আওয়ামী তাদের জাতীয় সম্মেলন করবার মধ্য দিয়ে রাজনীতির মাঠে এমনিতেই থাকছে। অপরদিকে বিএনপির কাউন্সিল করার কোন খবর পাওয়া যায়নি। সূত্রমতে, তাদের কাউন্সিল করতে গেলেই শীর্ষ নেতৃত্ব ইস্যুতে সংকট বেড়ে যাবে। কারণ, যারা দলের পরিচালনায় রয়েছে, তাদের কে বৈধতা কোনভাবেই নির্বাচন কমিশন দিতে পারবে না। বিএনপি তাই ডু অর ডাই সূত্র কে নিয়ে এগিয়ে যেতে চায়। আওয়ামী লীগও নতুন কমিটি দ্বারা দল পুনর্গঠন করে নতুন বছর থেকে সবকিছু সামাল দিতে চাইবে, বলাই বাহুল্য।
সূত্র: কেএইচএন রিসার্চ টিম, দেশের একমাত্র রাজনৈতিক গবেষণা সংস্থা।