“আগামী বছরে ডলার সংকট কেটে যাবে- মুজিবনগরে সালমান এফ রহমান”
মাজিদ আল মামুন, মেহেরপুরঃ
আগামী জানুয়ারি মাস থেকে আমাদের যে ডলারের সংকট রয়েছে তা কেটে যাবে। রমজান মাসের পূর্বে প্রয়োজনীয় যা কিছু আমদানি করার কথা ছিল সেগুলি আমদানি হবে। রমজান মাসে কোন সমস্যা হবে না। আন্তর্জাতিক বাজারে সব কিছুর মূল্য বেড়ে গেছে। আমরা যখন আমদানি করছি তখন সেটার একটা ইফেক্ট আসছে। ঐতিহাসিক মুজিবনগরে আইএফআইসি ব্যাংকের ১০০০ তম উপশাখা উদ্বোধন অনুষ্ঠানের পূর্বে মুজিবনগর স্মৃতিসৌধে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে আইএফআইসি ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা’র বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান ফজলুর রহমান এমপি এ কথা বলেন।
পরে মেহেরপুরের ঐতিহাসিক মুজিবনগরে আইএফআইসি ব্যাংকের ১০০০ তম উপশাখার উদ্বোধন করেন।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের মাননীয় প্রতিমন্ত্রী ও মেহেরপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অধ্যাপক ফরহাদ হোসেন এমপি। শনিবার (২৬ নভেম্বর), সকাল ১০ টার দিকে হেলিকপ্টারযোগে সালমান এফ রহমান মুজিবনগর এসে পৌঁছেন এবং সাড়ে ১০ টার দিকে মুজিবনগর স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।
এসময় মেহেরপুর জেলা প্রশাসক ড. মোহাম্মদ মুনসুর আলম খান, পুলিশ সুপার রাফিউল আলম, মেহেরপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও গাংনী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এম এ খালেক, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এডভোকেট আব্দুস সালাম, সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এডভোকেট ইয়ারুল ইসলাম, মুজিবনগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার অনিমেষ বিশ্বাস, আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ, আইএফআইসি ব্যাংকের উর্দ্ধতন কর্মকর্তা, কর্মচারীবৃন্দ ও গণমাধ্যম কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
“মেহেরপুরে কুমড়া বড়ি তৈরির ধুম পড়েছে”
স্টাফ রিপোর্টারঃ
মাস কলাইয়ের ডাল কয়েক ঘন্টা ভিজিয়ে রেখে মিলে ভাঙ্গানোর পর তার সাথে পাকা চাল কুমড়া, মুলা কিংবা অন্যান্য সবজি ভাল করে ফেনিয়ে মিশিয়ে তৈরী করা হয় শীত কালের উপাদেয় খাবার কুমড়া বড়ি। গত ১ সপ্তাহ পূর্বে কিছুটা শীতের আমেজ শুরু হয়েছে যদিও হাড়কাঁপানো শীত এখনো শুরু হয়নি। তবুও মেহেরপুরের অনেকেই কুমড়া বড়ি তৈরি ও বাজারজাত করণের কাজ শুরু করেছেন গৃহিণীরা। মুখরোচক হওয়ায় ভোজন বিলাসীরা শোল, টাকি, ফাতাসি, টেংরা মাছ, ডিমসহ বিভিন্ন মাছ কুমড়া বড়ি দিয়ে রান্না করে খেতে পছন্দ করেন মেহেরপুরের বাসিন্দারা। যদিও দেশের অন্যত্র বড়ি চেনেনা।
মেহেরপুর সদর, গাংনী ও মুজিবনগর উপজেলায় বিভিন্ন এলাকার প্রায় প্রতিটা পরিবার কুমড়ো বড়ি তৈরি করে থাকেন।
কেউ কেউ তা বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন। কুমড়ার বড়ি সবচেয়ে বেশি তৈরি হয় গাংনী উপজেলায়। এ উপজেলার প্রতিটা পরিবারের একেকজন একেকটা কুমড়া বড়ি তৈরির কারিগর।
জেলার প্রায় প্রতিটা গ্রামেই রয়েছে কুমড়া থেকে বড়ি তৈরির উপযোগী মেশিন। অনেক রাইচ মিলেও এ মেশিন রয়েছে। ভোর থেকে শুরু করে সকাল ৯ টা অবধি এসব মেশিন দ্বারা কুমড়া থেকে বড়ি তৈরির উপযোগী করা হয়ে থাকে।
গাংনী উপজেলার মাইলমারী গ্রামের কয়েকজন মিল মালিক জানান, বছরের প্রায় ২/৩ মাস আমরা কুমড়া বড়ি তৈরির জন্য কুমড়া কুটে থাকি।
অনেকে মাসকলাইয়ের পাশাপাশি খেশারী, ছোলা ও এ্যাংকর ডাল ভিজিয়ে ধুয়ে পরিষ্কার করে মিলে ভাঙ্গিয়ে থাকে। এর পর খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠে এগুলি পাকা কুমড়া দিয়ে ভাল করে ফেনিয়ে পলিথিনের প্যাকেটে ভরে পলিথিনের নিচের দিকের কোনা পরিমান মতো কেটে সে অংশ দিয়ে টিনের তৈলাক্ত মাচায় কিংবা মইয়ের উপর বাঁশের চাটাই দিয়ে তার উপর বড়ি দেয়। কুমড়া বড়ি তৈরিতে এ এলাকার মহিলারা পাকা উস্তাদ। তারা কুমড়া বড়ি রোদে শুকিয়ে শক্ত হয়ে গেলে উঠিয়ে রাখে। উঠিয়ে রাখার জন্য ২/৩ দিন রোদে রাখে যাতে করে সকল বড়ি সমান ভাবে রোদ পায়। ভাল রোদ হলে দুই দিনেই শুকিয়ে যায় কুমড়া বড়ি। শুকোনোর পর বাড়ির পুরুষ সদস্যরা সেগুলি পার্শ্ববর্তী বাজারসহ স্থানীয় হাট বাজারে বিক্রি করেন। এমনকি কুষ্টিয়া ও চুয়াডাঙ্গা জেলাতেও বিক্রি করে থাকে।
কয়েকজন কুমড়া বড়ি তৈরির মহিলা জানান, গত বছরের চেয়ে এবার সব ধরণের ডালের দাম বেড়েছে। তাছাড়া মাসকলাই সোনার হরিণ হওয়ায় এখনো অনেকেই মাশকলাইয়ের ডালের বড়ি তৈরী শুরু করেন নি। উপকরণের দাম বাড়ায় ক্রেতাকে বেশি দামে কুমড়া বড়ি কিনতে হবে। তরা আরো জানান, সংসারে অনেক খরচ। তাই বসে না থেকে কুমড়ো বড়ি তৈরী করি। ছেলেরা হাট বাজারে এগুলি বিক্রি করে। এতে বাড়তি কিছু আয় আসে। এ বাড়তি আয় টুকু সংসার পরিচালনায় সহায়ক ভূমিকা রাখে। এক নাগারে বৃষ্টি হলে কিংবা কুয়াশা বেশি হলে বড়ি পঁচে যায়। তখন আমাদের অনেক ক্ষতি হয়ে যায়।
সোনাপুর গ্রামের হীরা জানান, স্থানীয় ক্রেতাদের পাশাপাশি ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার মানুষ কুমড়া বড়ি কিনে নিয়ে যান। এমনকি প্রবাসীরাও দেশে আসলে আবার বিদেশে যাওয়ার সময় কিনে নিয়ে যান কুমড়া বড়ি। মালশাদহ গ্রামের আয়েশা আক্তার জানান, এলাকার প্রতিটা বাড়িতেই কুমড়া বড়ি তৈরি করা হয়ে থাকে যা আগামী ১ বছরে বিভিন্ন মাছের সাথে রান্ন করে খাওয়া হয়। গাংনী-কাথুলী মোড়ের মমতাজ খাতুন জানান, ছোটবেলা থেকে দেখে আসছি মায়েরা কুমড়ার বড়ি দিচ্ছে। খেতে অসম্ভব সুস্বাদু হওয়ায় সে ঐতিহ্যকে ধরে রেখেছি। কুমড়ার বড়ি তেলে ভেজে গুড়া করে মরিচ, লবন, সরিষার তেল, পেয়াজ দিয়ে ভাতের সাথে অসাধারণ লাগে। লক্ষ্ণীনারায়ণপুর গ্রামের আনোয়ারা খাতুন জানান, ৭/৮ টা কুমড়া রেখেছি। মাসকলাই ঘরে উঠলেই শুরু করবো বড়ি দেওয়ার কাজ। মাইলমারী গ্রামের ফারহানা জানান, প্রায় ২০ টি কুমড়া ছিল। পাড়ার মহিলা ও আত্মীয়-স্বজনের চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে তা বিলি করতে করতে আর ৫ টি রয়েছে। কাজীপুর এলাকার মাসকলাই আসলেই তা ক্রয় করে বড়ি দেবো। উল্লেখ্য, মেহেরপুরের কুমড়া বড়ি এখন দেশের গন্ডি পেড়িয়ে যাচ্ছে সিংগাপুর, মালেশিয়া, কুয়েত, মরিচা, ব্রুনাই, ইতালি, সৌদি আরব, দুবাই, কাতার, ইরাকসহ বিভিন্ন দেশে।
মাজিদ আল মামুন
মেহেরপুর প্রতিনিধি
০১৯১৫৩৫১৪৯৮