এনজিওর চড়াসুদ দিতে গিয়ে সহায়সম্বল হীন হচ্ছে নিম্ন মধ্যবৃত্ত পরিবার।
স্টাফ রিপোর্টার, (আলী আফজাল আকাশ) :
বিশ্বব্যাপী দুর্ভিক্ষের আসন্ন সম্ভাবনা চরম সম্ভাবনাময় বাংলাদেশের নামটিও ঘুরে ফিরে উচ্চারিত হচ্ছে দুর্ভিক্ষের দেশের তালিকায়।এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে কিছু অসাধু এনজিও ব্যবসায়ীরা ভিষণ তৎপর হয়ে পড়েছে। মন্দাকে কাজে লাগিয়ে তাদের ফায়দা লুটতে তারা ব্যস্ত। কিছু কিছু এনজিও অফিসের কর্মকাণ্ড দেখে এরকমই মনে হয়েছে। দেশে দুর্ভিক্ষ আরো ভয়াবহ আকার ধারণ করুক এজেন্ডা নিয়েই মাঠে নেমেছে এনজিও কর্মীরা। তাদের ঋণের ফাঁদ এমনভাবে পেতেছে সাধারণ মানুষের বোঝার উপায় নেই, তারা সর্বস্ব হারিয়ে নিঃস্ব হচ্ছে দিন দিন। এই অসাধু এনজিওদের তালিকায় নাম উঠে এসেছে ব্যুরো বাংলাদেশ ও শক্তি ফাউন্ডেশন সহ আরো অনেক এনজিওর।
ঋণ প্রতারণা
এই এনজিওগুলি ঋণ দিচ্ছে , তাদের এজেন্টদের মাধ্যমে। এসব এনজিওর এজেন্ট দের বলা হয় সভানেত্রী , এক একজন সভানেত্রীর বাসায় ঋণের আসর বসানো হয় বিভিন্ন ভাবে। কোমলমতি মহিলাদেরকে ঋণের ফাঁদে ফেলা হয়। এই সভানেত্রীর মাধ্যমে নিরীহ অসহায় গ্রস্থ মহিলাদেরকে ঋণের ফাঁদে ফেলে তাদের সর্বস্ব কেড়ে নেওয়া হয় সুকৌশলে। ঋণগ্রহীতাদেরকে বুঝানো হয় এক রকম কিন্তু বাস্তবিকভাবে কাজ করা হয় অন্যরকম। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ঋণগ্রহীতা প্রতিবেদককে জানান ঋণ নেয়ার বিভিন্ন নিয়ম কানুন সম্পর্কে। কেউ যদি ঋণ নিতে চায় তাকে প্রথমে সদস্য হতে হবে। সদস্য হওয়ার পর যিনি ঋণ নেবেন তাকে জমা দিতে হবে যত টাকা নিবেন তার ১০%। ১০% জমা হবার পর কেউ ১৫ দিন পর কেউ ২০ দিন পর কেউ আবার একমাস পর ঋণ পেয়ে থাকেন। ঋণ উত্তোলনের সময় সভানেত্রীকে দিতে হয় ১০ হাজার থেকে ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত ঋণের জন্য পাঁচশত টাকা। তিরিশ হাজার থেকে এক লক্ষ টাকা নিলে দিতে হয় ১ হাজার টাকা। এরপর প্রতি লাখে বাড়তে থাকে এক হাজার টাকা করে। এই টাকাটা ঋণগ্রহীতা দেন সভানেত্রীকে। এনজিওর যারা কর্মচারী আছেন তাদের নির্দেশে। এখানেই শেষ নয় , ঋণ উত্তোলনের পর দিতে হবে ঋণ বিমার টাকা , সেটাও সদস্যকেই দিতে হবে।
সুদের হার
কোন এনজিও ১২.৫০% সুদে ঋণ দিচ্ছে , কোন এনজিও ১৩.৫০% হারে ঋণ দিচ্ছে , আবার কোন এনজিও ১৩.৬০ পার্সেন্ট হারে ঋণ দিচ্ছে। এটা হচ্ছে তাদের মুখের কথা ও কাগজে লিখা একটি ফাইল ওয়ার্ক মাত্র। বাস্তবে তারা সুদ নিচ্ছে কেউ ৪0% এর অধিক কেউ ৫০% এর অধিক। আর এই উচ্চ হারের সুদ গুনতে গুনতে একটি অসহায় ঋণগ্রস্থ মানুষ হারায় তার সর্বস্ব। এভাবেই লক্ষ লক্ষ মানুষের কাছ থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে এক শ্রেণীর প্রতারক এনজিও ব্যবসায়ীরা।
ঋণ প্রতারণার কৌশল
উল্লেখ করা হয়েছে ১০% জমা দিয়ে ঋণ নিতে হয়। প্রথমে তারা ১০% টাকা সাত দিন থেকে ১৫ দিন ব্যবসা করে , কিছুটা টাকা আয় করে নেয়। এরপর ঋণ আবেদনকারীকে ঋণ দেয়া হয়। যে ব্যক্তি ১০ হাজার টাকা ঋণ নেবে , ওই ব্যক্তি আগেই দিয়েছে এক হাজার টাকা। মানে ১০ ভাগ হারে। যখন ঋণ গ্রহীতা ঋণ উত্তোলন করল , সে যদি ১০ হাজার টাকা উত্তোলন করে , ওই ঋণগ্রহীতা মূলত পাবে নয় হাজার টাকা। কারণ তিনি আগেই ১ হাজার টাকা অর্থাৎ ১০% জমা দিয়েছিলেন। এখানেই শেষ নয় , এরপর আছে সভানেত্রীর ৫০০ টাকা , ঋণ বিমার ৩৫০ টাকা। তাহলে ঋণগ্রহীতা কত টাকা মুলত পেল ? ঋণগ্রহীতা ঋণ পেল ৮১৫০ টাকা , ঋণ গ্রহীতা কে শোধ করতে হবে বারো হাজার পাঁচশত টাকা। সর্বনিম্ন , ঋণগ্রহীতা ঋণ গ্রহণ করলো ৮১৫০ টাকা পরিশোধ করতে হবে ৪৩৫০ টাকার বেশি। খাতা কলমের ঋণ সাড়ে ১২% হলেও বাস্তবে একটু হিসাব করে দেখুন সুদের হার টা কত ? এভাবেই অসাধু এনজিও হাতিয়ে নিচ্ছে লক্ষ লক্ষ অসহায় মানুষের কাছ থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা , আর নিরীহ অভাবগ্রস্থ মানুষগুলো হারাচ্ছে তাদের সর্বস্ব।
বীমা প্রতারণা
বীমার নাম করে এনজিও গুলি ঋণ বিমার যে টাকাটা গ্রাহকের কাছ থেকে জমা নিচ্ছে , সেই ঋণ বীমার টাকাটা তাদের ফান্ডে অফেরত যোগ্য অবস্থায় থেকেই যাচ্ছে। অসাধু এনজিওরা ঋণ বিমার টাকা দিয়ে করছে না কারন ঋণের বীমা , প্রাথমিকভাবে আমরা অনুসন্ধানে নামলে , যখন জিজ্ঞাসা করি ঋণ বীমা সম্পর্কে , আমাদেরকে তারা ঋণ বীমার কোন কাগজ দেখাতে পারে নাই।
ষড়যন্ত্র নয় তো?
প্রাথমিকভাবে আমরা যখন অনুসন্ধানে নামি ব্যুরো বাংলাদেশ ও শক্তি ফাউন্ডেশন এর পথ অনুসরণ করতে থাকি , আমাদের সামনে কিছুটা অসংগতি প্রকাশ পায়। আমাদের ক্যামেরায় ধরা পড়ে অনেক কিছু। আমরা যখন এনজিওর ব্রাঞ্চ অফিসে যাই , কিছুতেই আমাদের সামনে মুখ খুলতে রাজি হচ্ছিল না। কোনরকম কোন সহযোগিতা না করে আমাদের কে হুমকি ধামকি দেওয়া হচ্ছিল। তাদের হুমকি দেখে আমাদের সন্দেহটা আরো বেড়ে যায়, আমরা অনুসন্ধানের আরো গভীরে যাই। এরপর একের পর এক উঠে আসতে থাকে তাদের প্রতারণা ও বেআইনি কর্মকাণ্ডের চিত্র।