“ঐতিহাসিক চট্টগ্রাম পলোগ্রাউন্ড ময়দানে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা”
আলমগীর ইসলামাবাদী চট্টগ্রাম মহানগর প্রতিনিধি –
দীর্ঘ দশ বছর পর পলোগ্রাউন্ডের মাঠে বক্তব্য দিতে এসেই আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশাল জনসমুদ্রের উদ্দেশ্যে বলেছেন, ‘অনেরা ক্যান আছন? গম আছন নি? তোয়ারার লাই আঁরতে পেট পুরের।’ রোববার (৪ ডিসেম্বর) দুপুর তিনটা ৪৫ মিনিটে পলোগ্রাউন্ড মাঠে চট্টগ্রাম মহানগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের উদ্যোগে এই জনসভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন দলের সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘এই চট্টগ্রামের সাথে আমার অনেক স্মৃতি। করোনার কারণে দীর্ঘদিন সমাবেশ করতে পারিনি। তাই আপনাদের কাছে ছুটে আসলাম। এই স্মৃতিময় চট্টগ্রামে আমরা বারবার ছুটে আসতাম। আমার বাবা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু যখন জেল থেকে মুক্তি পেতেন আমাদের চট্টগ্রামে বেড়াতে নিয়ে আসতেন।’প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘চট্টগ্রামে আসলেই ছুটে যেতাম এম এ আজিজ চাচা, জহুর আহমেদ চাচার বাসায়। এখন তারা নেই। সব স্মৃতি মনে আছে।’ পলোগ্রাউন্ডের সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী এর আগে বিকেল ৩টা ১০ মিনিটের দিকে হাজার হাজার নেতাকর্মীদের অপেক্ষার প্রহর শেষে পলোগ্রাউন্ড মাঠের জনসভায় এসে উপস্থিত হন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ভাটিয়ারতে বাংলাদেশ মিলেটারি একাডেমিতে রাষ্ট্রপতি কুচকাওয়াজের অনুষ্ঠানে অংশ গ্রহণ শেষে তিনি হেলিকপ্টারে করে এম এ আজিজ স্টেডিয়ামে নামেন। সেখান থেকে সিআরবি হয়ে পলোগ্রাউন্ডে মাঠে আসেন। মাঠে এসেই ৩০টি প্রকল্পের উদ্বোধন করেন এবং চার প্রকল্পের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী। এরআগে বেলা ১২টা থেকেই চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীনের সঞ্চালনায় ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দীন চৌধুরীর সভাপিত্বে ইতোমধ্যে চট্টগ্রামের স্থানীয় এমপি, কেন্দ্রীয় নেতারা বক্তব্য দেওয়ার মাধ্যমে শুরু হয় জনসভার আনুষ্ঠানিকতা। বক্তব্যে নেতারা চট্টগ্রামের উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রীর নেয়া নানা প্রকল্পের ফিরিস্তি তুলে ধরছেন। আগামীতেও প্রধানমন্ত্রীর মনোনীত নৌকার প্রার্থীদের ভোট দিয়ে জয়ী করার আহ্বান জানান। এদিন সকাল আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দুপুরের জনসভায় যোগ দিতে সকাল থেকেই নেতাকর্মীরা পলোগ্রাউন্ডমুখী স্রোতে যুক্ত হয়েছেন। ভোরের আলো ফুটতেই চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলা থেকে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা রং বেরংয়ের টি শার্ট ও বাদ্য যন্ত্র নিয়ে জনসভাস্থলের আশাপাশে এসে অবস্থান নিতে থাকেন। এরপর সিআরবি, পুরোনো রেলস্টেশন, টাইগারপাস দিয়ে বানের স্রোতের মত নেতাকর্মীরা সমাবেশস্থরে প্রবেশ করছেন। এসময় স্লোগোনে-স্লোগানে মুখর জনসভাস্থল ও চট্টগ্রামের রাজপথ। রোববার (৪ ডিসেম্বর) দুপুর তিনটায় পলোগ্রাউন্ড মাঠে চট্টগ্রাম মহানগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের উদ্যোগে এই জনসভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখবেন দলের সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। চট্টগ্রাম নগরে দীর্ঘ এক দশক পর আওয়ামী লীগ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জনসভাকে কেন্দ্র করে বেশ কয়েকদিন ধরেই উৎসবের আমেজ শুরু হয়েছে। চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের উদ্যোগে ৪৩টি সাংগঠনিক ওয়ার্ড থেকে কমলা রংয়ের টি শার্ট পরে হাজার হাজার নেতাকর্মীরা সমাবেশস্থলে প্রবেশ করতে থাকেন। এছাড়া চট্টগ্রামের সংসদ সদস্যরা তাঁদের নির্বাচনী এলাকা থেকে হাজার হাজার নেতা-কর্মী নিয়ে সমাবেশ প্রাঙ্গণে এসেছেন। বিভিন্ন উপজেলা থেকে আসা নেতা-কর্মীরা নির্ধারিত রঙের টুপি ও গেঞ্জি পরে সমাবেশে হাজির হয়েছেন। রোববার সকাল ৯টার দিকে পলোগ্রাউন্ড মাঠে প্রবেশের মূল গেট খুলে দিলে প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানিয়ে হাজার হাজার নেতাকর্মী প্রবেশ করতে থাকনে। রৌদ উপক্ষো করে পুরুষদের পাশাপাশি নারীরাও মাঠে অবস্থান নিতে শুরু করেছেন। সবার মুখে স্লোগান, ঢাকঢোলে পুরো জনসভাস্থলে সৃষ্টি হয়েছে উৎসবের আমেজ। হাজার হাজার নেতাকর্মীর জনসভাস্থলে প্রবেশ নিয়ে রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
এদিকে জনসভাকে কেন্দ্র করে প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিচ্ছিদ্র নিরাপত্তা বেষ্টনী তৈরি করা হয়েছে। পুলিশ, র্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিপুলসংখ্যক সদস্য দায়িত্ব পালন করছেন। বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে বসানো হয়েছে চেকপোস্ট। জনসভাস্থলসহ পুরো চার কিলোমিটার এলাকা সিসিটিভির আওতায় আনা হয়েছে। বসানো হয়েছে বড় পর্দার মনিটর। তিন শতাধিক মাইকে প্রচার হচ্ছে জনসভার কার্যক্রম। সরাসরি সম্প্রচার করা হবে বিটিভিসহ আওয়ামী লীগের ফেসবুক পেজে। সবশেষ ২০১২ সালের ২৮ মার্চ পলোগ্রাউন্ড মাঠে আওয়ামী লীগসহ ১৪ দলের মহাসমাবেশে যোগ দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ১০ বছর ৯ মাস পর একই মাঠে আবার ভাষণ দেবেন তিনি। এ উপলক্ষে শুধু পলোগ্রাউন্ড মাঠ নয়, নগরের টাইগারপাস, লালখানবাজার, কাজীর দেউড়ি, নিউমার্কট এলাকা তোরণে ছেয়ে গেছে।