“ঐতিহাসিক দরগাহ মেলা”
আহমেদ হানিফ –
সংস্কার ও কুসংস্কারের বলয়ে আবদ্ধ রয়েই যেন হাজার বছর অতিক্রম করছে বাঙালি জাতিসত্তার মানুষ,কালের পরিক্রমায় মানুষের মানসে লালিত পালিত নানান লোকজ কৃষ্টি, আর বিশ্বাসের মাধ্যমে এদেশের যেন সংস্কৃতি নতুনত্ব পায়।মানুষ হারিয়ে যায় হাজার বছর আগের কোনো মিথের কাছে যেখানে কিছু নিয়ম নীতির চর্চায় ফুটিয়ে তোলা হয় তাদের সংস্কৃতির। বাংলার সহজ সরল মানুষের চোখে সব সময় অলৌকিক শক্তির প্রতি বিশ্বাস,ভক্তি ও ভালোবাসার কমতি দেখতে পাবেন না।
নানান ধরণের রীতি রেওয়াজকে নিয়েই চলছে এদেশের মানুষের সহজ সরল জীবনাচার।
কথায় যেমন, আছে বিশ্বাসে মিলায় বস্তু,তর্কে বহুদূর। তেমনি মানুষের সরল মনে এই বিশ্বাসটাই প্রবল, মানুষ বিশ্বাসের মাধ্যমে খণ্ডাতে চায় তার নিয়তির লেখাকে,তাই মানুষ ছুটে চলে তার বিশ্বাসের স্থানের সন্ধানে।যখন মানুষ তার মানসের চিন্তিত স্থানের খোঁজ পায় তখন ভক্তি সহকারে মিশে যেতে চায় তার লক্ষ্যের পাণে।নিজেকে উৎসর্গ করে দিয়ে হলেও মানুষ তার বিশ্বাসের স্থানের সাথে নিজের অস্তিত্ব মিলিয়ে ফেলতে দ্বিধাবোধ করে না।লাল সালু উপন্যাসের মজিদের চরিত্রের উপস্থাপন না হলেও মানুষের বিশ্বাস তাকে বাধ্য করে নানা ধরণের নিয়ম নীতির আবদ্ধতায় চলতে আর বিশ্বাসের স্থান তৈরি করতে নতুন প্রজন্মের মানুষের মধ্যে।
আজ তেমনি সংস্কার ও বিশ্বাসের গল্প শুনাবো-
একবিংশ শতাব্দীর মানুষের মনে জেগে উঠা বিশ্বাসের ইতিহাস, নানান রীতিনীতি কিংবা পরিবর্তনের ইতিহাসের মেলবন্ধনের নাম ‘দর্গা মেলা”। ময়মনসিংহ জেলার মুক্তাগাছা উপজেলার শুক পাটুলী গ্রামের এক সুপ্রাচীন মাটির ঢিবির উপরে অবস্থিত এক দরগাহকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হয় এ অঞ্চলের সহজ সরল মানুষের বিশ্বাস ও নানান রীতি নীতি।
আনুমানিক ৩০০ বছরের আগের এক অলিয়ে কেরামের আগমনের মাধ্যমে এ স্থানটি জনসাধারণের নিকট পরিচিত লাভ করে,কথিত আছে এই স্থানটি জুড়ে এক সময় বসবাস করত জিন,পরীরা তাদের নিকট হতেই অলির স্থান লাভ ও আশেপাশের মানুষের মাঝে ধর্মীয় রীতিনীতির প্রচার করতেন।তাদের ইলম শিক্ষা দিতেন।আধ্যাত্মিক সাধকের নাম শাহ কালু দেওয়ান।দরগাহ’র খাদেমের সাথে কথা বলেও উনার আগমন স্থান ও পিতা মাতার নাম জানা সম্ভব হয়নি।তার মৃত্যুর পরেই তার ভক্ত,অনুসারীরা নিজেদের মনের আশা,দুঃখ ও পাওয়ার আকুতি নিয়ে দরগাহে নানান জিনিসের মানত করতেন।এই মানত পূরণের জন্য এলাকার মানুষ সেই মাটির উঁচু ঢিবির উপর জড়ো হয়ে নিজেদের মতো রান্নাবান্না করে ফকির ও অন্যান্য মানুষকে ভোজন করিয়ে থাকেন।এই দিনটি বছরের একটা সময়ে অনুষ্ঠিত হয় এই দিনের উপলক্ষে বিশাল বড় মেলার আয়োজন করেন স্থানীয় ও অন্যান্য এলাকার মানুষ।
এবার ২৬৮ তম বৎসরের উদযাপন দেখতে ফেলাম,তিন দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের সূচনা হয় ৩০ এ পৌষ, পহেলা মাঘ ও দুশরা মাঘ।হাজার হাজার মানুষের পদচারণায় মুখরিত ছিলো দরগাহ ও দরগাহস্থ মাঠের পরিবেশ।
দরগাহ আগমন করা ও মানত করা মানুষের বরাতে জানতে পারলাম দরগাহ যে খাবারের আয়োজন চলে সে খাবারে পাশের একটা পুকুরের পানি দিতে হয়,পুকুরের পানি না দিলে নাকি খাবার গুলো পরিপূর্ণতা পায় না।একেবারে পানি না দিলেও চাল কিংবা অন্যান্য উপকরণ হলেও পুকুরের পানি দিয়ে ধুয়ে নিতে হয়।দরগাহের বয়োবৃদ্ধ খাদেমের ভাতিজা ফজলুল হকের বরাতে জানতে পারি দরগাহ কেন্দ্রিক নানান অলৌকিক ঘটনার,তার মধ্যে দরগাহে এসে না বলে কিছু নিয়ে গেলে নাকি তাদের অমঙ্গল হয়, জিন পরীরা নানা ভাবে সমস্যা করে,দরগাহের খেদমতে তাদের দায়িত্বটা বংশ পরম্পরায় চলে আসছে।
মানত করা কতক লোকের বয়ানে জানতে পেরেছি তারা নিজেদের শোক-দুঃখ, অসুস্থতা থেকে সুস্থতা লাভের জন্য মানত করে এবং সুস্থ হয়ে উঠার পর দরগাহে এসে খাবার তেরি করে বিলিয়ে দেয়।
কথিত আছে, মুরগী বা অন্যান্য পশু এখানে এনেই জবেহ করতে হয় অন্য স্থান হতে জবেহ করলে মানত শুদ্ধ হয় না।আরও কথিত আছে যার ভালোর জন্য মানতের রান্না করা হয় সে এ খাবার খেতে পারেনা।খেলে তার মানত শুদ্ধ ভাবে হবে না।
এমন নানান স্থানে, নানান মানুষের বিশ্বাসের মাধ্যমে মানুষের মাঝে চলে আসছে নানা সংস্কারও সংস্কৃতি।
বিশ্বাসের মাধ্যমেই চলছে মানুষের জাগতিক জীবনবোধ।সুন্দরে, বিচিত্র সংস্কৃতি ও সম্প্রীতির বলয়ে আবদ্ধ থেকে চলুক এদেশের মানুষের জীবনাচার এই প্রার্থনা করি।
ময়মনসিংহে বিট পুলিশং সমাবেশ ও গ্রাম পুলিশের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ অনুষ্ঠিত হয়।
মাহাবুবুল আলম সোহাগ, ময়মনসিংহঃ
ময়মনসিংহ রেঞ্জ পুলিশের ডিআইজি দেবদাস ভট্টাচার্য্য বলেছেন, জনগনের দোড়গৌড়ায় পুলিশী সেবা পৌছে দেয়াই হলো বিট পুলিশিং। ছোটখাট সমস্যা সমাধানের জন্য থানায় আসার প্রয়োজন নেই। সংশ্লিষ্ট এলাকার বিট অফিসারের নেতৃত্বে স্থানীয়ভাবে আলোচনার মাধ্যমে নিরসন করা সম্ভব। এতে সময় ও অর্থ দুইদিক থেকেই ক্ষতিগ্রস্থরা রক্ষা পাবেন। পুলিশের কোন নম্বর না থাকলে ৯৯৯ নম্বরে ফোন করলে তাৎক্ষণিক পুলিশ আপনার পাশে এসে হাজির হবে। ময়মনসিংহে বিট পুলিশিং সমাবেশ ও গ্রাম পুলিশের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ অনুষ্ঠানে রেঞ্জ ডিআইজি দেবদাস ভট্টাচার্য্য বিপিএম প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ সব কথা বলেন। পুলিশ সুপার মাছুম আহাম্মদ ভূঞা পিপিএম এর সভাপতিত্বে রবিবার বিকালে নগরীর শিকারীকান্দায় ২৬ নং বিটে কোতোয়ালি মডেল থানা পুলিশের আয়োজনে এই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
কোতোয়ালি সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শাহীনুল ইসলাম ফকিরের সঞ্চালনায় সমাবেশে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্যে জেলা প্রশাসক মোঃ মোস্তাফিজার রহমান জাতির জনকের কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উন্নত দেশ গড়তে চেষ্টা করছেন। উন্নত দেশ গড়তে হলে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ দরকার। বাংলাদেশ পুলিশ সমাজে শান্তিপির্ণ পরিবেশ বজায় রাখতে কাজ করছে। এছাড়া বিশেষ অতিথি হিসেবে ময়মনসিংহ জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ইউসুফ খান পাঠান, সদর উপজেলা ভাইস পরিষদের চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান, পূজা উদযাপন পরিষদের নেতা সংকর সাহা, ময়মনসিংহ প্রেসক্লাবের নবনির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক অমিত রায়, ডঃ ইদ্রিছ আলী খান, জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের সাবেক কমান্ডার মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রব, জেলা কমিউনিটি পুলিশিংয়ের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা মটর মালিক সমিতির সভাপতি মমতাজ উদ্দিন মন্তা,কাউন্সিলর শফিকুল ইসলাম, ঘাগড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাইদুর রহমান।
এর আগে স্বাগত বক্তব্যে কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি শাহ কামাল আকন্দ বলেন, কোতোয়ালি মডেল থানায় থানায় জিডি কিংবা মামলা করতে কোন টাকা লাগে না। কোন পুলিশ যদি সেবার নামে কাউকে হয়রানী বা কারো কাছ থেকে টাকা দাবি, আদায় করে তাহলে তার চাকুরী থাকবে না।সেই উদ্যোগ নেয়া হবে।
সভাপতির বক্তব্যে পুলিশ সুপার মাছুম আহাম্মদ ভুঞা বলেন, এক সময় এসপির চেয়ারে বসতেন ব্রিটিশ আর পরবর্তীতে পাকিস্তানিরা। জাতির জনকের নেতৃত্বে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর আমরা বসছি। বিট পুলিশিং সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনায় বলেন, হয়রানী ও দুর্নীতিমুক্ত পুলিশ গঠনে কাজ করছি। আগামী দুইমাসের মধ্যে সিসি ক্যামেরার আওতায় পুরো নগরীকে আনা হবে। মাদকমুক্ত সমাজ গঠনে পুলিশ কঠোর অবস্থানে। মাদকের সাথে পুলিশ জড়িত হলে তাকেও ছাড় দেয়া হবেনা।
এছাড়া সমাবেশে কাউন্সিলর মনোয়ার হোসেন বিপ্লব, মুক্তিযোদ্ধা আবুল কালাম, সিরতা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সাইদুর রহমান, ভাবখালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুস ছাত্তার সোহেল। সমাবেশে বিভিন্ন ইউনিয়ন কমিউনিটি পুলিশিংয়ের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকগণ উপস্থিত ছিলেন। সমাবেশে উত্তম ও ভাল কাজ করার জন্য তিনজন গ্রাম পুলিশকে ক্রেস্ট ও সম্মাননা দেয়া হয়েছে। পরে অসহায়দের মাঝে শীতবস্ত্র কম্বল বিতরণ করা হয়। পরে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন করা হয়।