এম এ সাত্তার; কক্সবাজার প্রতিনিধি
ককবাজার শহরের প্রধান সড়কে রিকশাভ্যানে ভ্রাম্যমাণ দোকান পণ্য সাজিয়ে বসেছে। সড়কের ব্যস্ত স্থানগুলো দখল করে মৌসুমি ফল, মাছ, পোষাক/কাপড়, সবজি ও হরেক রকমের পণ্য বিক্রি করা হচ্ছে। ভ্যানের দখল থেকে বাদ পড়েনি জেলার পর্যটন এলাকা পৌরশহরের প্রবেশমুখ লিংক রোডও। যেখানে খুশি সেখানেই পার্কিং, ভ্যানগাড়িতে ভ্রাম্যমাণ ব্যবসায়ী দাঁড়িয়ে পড়ায় রাস্তাজুড়ে তৈরি হচ্ছে বিশৃঙ্খল জটলা। এতে ভোগান্তিতে পড়ছে পথচারিরা।
স্থানীয় লোকজন, ব্যবসায়ী ও পথচারিরা জানিয়েছেন, শহরের ব্যস্ত সড়কগুলো এখন রিকশাভ্যানের দখলে। এসব ভ্যানে জুতা সেন্ডেল, মৌসুমি ফল, সবজি, পোশাক নিয়ে সাজিয়ে বসছেন ভ্রাম্যমাণ ব্যবসায়ীরা।
সরেজমিন দেখা যায়, পৌরশহরের মেইন বাসস্ট্যান্ড থেকে বাজারঘাটা হয়ে ৬নং রাস্তার মাথা (গুমগাছতলা) যেতে ফুটপাতে চলছে নানা ধরণের ব্যবসা। এছাড়া শহরের প্রত্যেক ফুটপাতে দেখা যায় ভ্রাম্যমাণ হকারদের রিক্সাভ্যান গাড়ির যন্ত্রতন্ত্র পার্কিং।
পথচারী ফারুক আহমেদ বলেন, ফুটপাত এখন দখলদারদের হাতে। রাস্তার দুই পাশে যেসব ফুটপাত আছে, তা বর্তমানে হকারদের দখলে, তাদের দোকানে সারা দিন ভিড় লেগেই থাকে। ফলে পথচারীদের হাঁটার কোনো সুযোগ নেই। আর এসব ফুটপাত দখল হয়ে যাওয়ায় বেশির ভাগ পথচারীই রাস্তা দিয়ে হেঁটে যায়, যা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। এর ফলে যানজটেরও সৃষ্টি হয়। ফুটপাত দিয়ে হাঁটা পথচারীদের নাগরিক অধিকার কিন্তু ফুটপাতে হাঁটাও কেড়ে নিয়েছে অবৈধ দখলদারেরা। এসব রোধ করার জন্য এগিয়ে আসছে না কেউ।
শহরের বাস টার্মিনাল, ডলফিন ডলফিন মোড়, সুগন্ধা পয়েন্ট, লাল দীঘির পাড়, বাজারঘাটা, ভোলা বাবুর পেট্রোল পাম্প, খানেকা মসজিদ সড়ক, হাসপাতাল সড়ক, বাটা রোড, বাজার ঘাটা, এন্ডাসন রোড, হকার মার্কেট (উত্তর) রোড, পৌরসভার মার্কেট রোড, গোল দীঘির পাড়, বার্মিজ স্কুল মোড়, কালুর দোকান, রাস্তার মাথা, পিটিআই স্কুল, আলির জাহাল, কোর্ট রোড, কোর্ট বিল্ডিং এলাকার যেখানে খুশি সেখানেই দাঁড়িয়ে পড়ছে ভ্যান ও ভ্রাম্যমাণ হকার্স।
সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত এসব ভ্যান দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যাচ্ছে। ভ্যানের দৌরাত্ম্য সবচেয়ে বেশি লালদীঘির পাড়, ভোলা বাবুর পেট্রোল পাম্প, বাটা রোড, বাজার ঘাটা, এন্ডাসন রোড, ডলফিন মোড় এলাকায়। এমনিতেই খুরুশকুল রাস্তার মাথা থেকে ৬ নং রাস্তার মাথা পর্যন্ত সড়কে ফুটপাতের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া মুশকিল। এর মধ্যে ভ্যান দাঁড়ানোর কারণে পথচারিদের রাস্তা দিয়েই চলাচল করতে হয়। রাস্তার ওপর দাঁড়িয়েই ভ্যান থেকে পণ্য কেনাকাটা করেন ক্রেতারা। এতে রাস্তায় তৈরি হচ্ছে কৃত্রিম জটলা। সৃষ্টি হচ্ছে যানজটের। সাধারণ পথচারিদের চলাচল বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
অপর দিকে, দেশ-বিদেশের মানুষ পর্যটনের রাজধানী খ্যাত জেলা কক্সবাজার শহরে আসা-যাওয়া করেন সদর উপজেলার ঝিলংজা ইউনিয়নের লিংক রোড হয়ে বাস টার্মিনাল দিয়ে। ফলে অসংখ্য যানবাহন এবং হাজারো মানুষের আসা-যাওয়ায় ওই এলাকা ব্যস্ত থাকে। এই সড়কের দুই পাশজুড়ে বিভিন্ন গাড়ির পার্কিং, প্রতিদিন অসংখ্য ভ্যানে মৌসুমি ফল, পোশাক, ভ্রাম্যমাণ দোকান বসে। এতে রাস্তাটি সংকুচিত হয়ে পড়ে। মেইন রোডের ওপর দাঁড়িয়ে কেনাকাটা করতে গিয়ে বাড়ছে দুর্ঘটনার ঝুঁকি।
শহরের কোর্ট রোডের মসজিদ মার্কেট এলাকায় দাঁড়ানো ভ্যানের ভ্রাম্যমাণ ফল ব্যবসায়ী আবুল কালাম সোমবার (২৪ নভেম্বর) বলেন, ‘আগে একটি দোকানে চাকরি করতাম। এখন নিজে ভ্যান দিয়ে ব্যবসা করি। দোকানের সামনে দাঁড়ালে ব্যবসায়ীরা আপত্তি করেন। এ ছাড়া আর কেউ কিছু বলে না।’
পান বাজার রোড মুহাম্মদিয়া ফার্মেসির এক কর্মচারী বলেন, ‘রাস্তা হচ্ছে যান চলাচলের জন্য। কিন্তু রাস্তার ওপর যত্রতত্র ভ্যান দাঁড় করিয়ে ব্যবসা শুরু করা হচ্ছে। এতে আমাদের কাস্টমারের গাড়ি পার্কিংয়ের জায়গা থাকে না। বিশেষ করে অফিস টাইমে রাস্তা ও ফুটপাত দখল করে ব্যবসা করায় বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষের চলাফেরা করতে অসুবিধা হয়। সাথে নারী শিশুরা বিব্রতকর অবস্থায় পড়ে।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কক্সবাজার পৌরসভার সাবেক এক কাউন্সিলর বলেন, প্রশাসনের পক্ষ থেকে ‘রাস্তায় ব্যবসা করার জন্য কাউকে অনুমতি দেওয়া হয় না। রাস্তার উপর অবৈধ ব্যবসায়ী ও হকারদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হলেও এদের নিভৃত করা যায় না।
কক্সবাজার ট্রাফিক পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার জসীমউদ্দীন বলেন, এ বিষয়ে খোঁজ নেব। ফুটপাতে কোনো ধরনের দখল হতে দেওয়া হবে না। আমরা এ বিষয়ে কঠোর ভূমিকায় থাকব। রাস্তা ও ফুটপাত দখল করে গাড়ি ও পথচারী চলাচলে নিয়মিতভাবে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়ে থাকে। এরই ধারাবাহিকতায় দুর্গাপূজার আগেও অভিযান পরিচালনা করেছি।
রাস্তা ও ফুটপাত দখলের বিরুদ্ধে
আমাদের অভিযান অব্যাহত
থাকবে।