এম এ সাত্তার
বাংলাবাজার জিসি-খুরুশকুল জিসি ভায়া পিএমখালী ইউপি-অফিস সড়ক। ছনখোলা মালিপাড়া রাস্তার মাথা টু ছনখোলা ঘাটবাজার ভায়া খুরুশকুল (প্রধানসড়ক) কুলিয়াপাড়া পর্যন্ত সংযোগ সড়ক নির্মাণ (সম্প্রসার) কাজে ধীরগতির কারণে বেহাল দশা। ছবি: দৈনিক আশ্রয় প্রতিদিন।
পিএমখালী ইউপির দক্ষিণ-পশ্চিম সীমানা বাংলাবাজার জিসি-খুরুশকুল জিসি ভায়া পিএমখালী- ইউপি- অফিস সড়ক, পুনঠাসন চেইনেজ ০০০ মিঃ টু ১১৯৫০ মিটার। আবার চেরাংঘর বাজার থেকে ছনখোলা ঘাটবাজার হয়ে খুরুশকুল ইউপি’র প্রধানসড়ক কুলিয়াপাড়া পিচ রাস্তার মাথা পর্যন্ত
সংযোগ সড়ক সম্প্রসার প্রকল্পের কাজ চলছে ধীরগতিতে। দুইবছর পেরিয়ে গেলেও এই রাস্তার কাজ শেষ হয়েছে মাত্র ৩০/৪০ পার্সেন্ট। বর্ষার সময় বৃষ্টিপাতের কারণে খুঁড়ে রাখা সড়কে সৃষ্টি হয়েছে বড় বড় খানাখন্দ। এতে যানবাহন চলাচলের অনুপযোগী হয়ে এ সড়কগুলো এখন যেন মরণ ফাঁদে পরিণত হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, উল্লেখযোগ্য সড়কগুলো সম্প্রসারণ প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে প্রায় দুই বছর আগে। জেলা সদরের অন্যান্য ইউনিয়নের মানুষ তাদের গ্রামীণ জনপদ অবকাঠামো উন্নয়নোত্তর সুবিধা ভোগ করতে পারলেও পিএমখালীবাসীর ভাগ্যে এখনও জোটেনি পাকা রাস্তার পূর্ণ সুযোগ সুবিধা। যে কারণে বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষকে ভোগ করতে হচ্ছে দুর্ভোগ। কাঁচা সরু রাস্তা, প্রবল বৃষ্টিপাতে সৃষ্টি হওয়া খানাখন্দে সড়কটি যেন মরণ ফাঁদে পরিণত হয়েছে। সংস্কারের জন্য সড়ক খুঁড়ে রাখায় ভোগান্তির মাত্রা বেড়েছে আরও বেশি। ১০/১৫ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে ব্যয় হচ্ছে অতিরিক্ত সময়। বাড়ছে জ্বালানি খরচ, নষ্ট হচ্ছে গাড়ির যন্ত্রাংশ। দুর্ঘটনার শিকার হয়ে ভাঙ্গছে মানুষের হাত পা। এমন পরিস্থিতিতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয়রা।
বাংলাবাজার জিসি প্রান্ত থেকে খুরুশকুল জিসি ভায়া পিএমখালী- ইউপি- অফিস সড়ক পর্যন্ত রাস্তা সংস্কার ০০০ মি-১১৯৫০ মিটার সংযোগ সড়কের জন্য প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে ১৩কোটি ৮৭ লাখ ৭৩ হাজার ২০৯ টাকার। কাজের মুল্য ধরা হয় ১২কোটি ৪৮ লাখ ৯৫ হাজার ৮৮৮ টাকা। ২০২৪ সালের ১১ নভেম্বর প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও কাজ হয়েছে মাত্র ৩০-৪০ ভাগ। ছনখোলা মালিপাড়া রাস্তা মাথা থেকে ছনখোলা ঘাটঘর বাজার হয়ে খুরুশকুল ইউপি’র প্রধান কুলিয়াপাড়া রাস্তার মাথা পর্যন্ত সংস্কার প্রকল্প সড়কের তথ্য না পাওয়ায় বিস্তারিত লিখা সম্ভব হয়নি।
সম্প্রতিক সময়ে রাস্তায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কোন লোকবল নেই। তবে কয়েকদিন ধরে বাংলাবাজার জিসি- পিএমখালী ইউপি অফিস সড়কে কয়েক শ্রমিককে ধীরগতিতে কাজ করছে ঠিকাদার মোঃ ইউনুচ এন্ড ব্রাদার্স প্রাইভেট লিঃ, পাঁচলাইশ চট্টগ্রাম। প্রকল্প
বাস্তবায়নকারী সংস্থা এলজিইডি কক্সবাজার। তাও নামমাত্র শ্রমিক আর যন্ত্রপাতি দিয়ে চলছে সড়ক উন্নয়ন সম্প্রসারণ প্রকল্পের কাজ। সংস্কার কাজের ধীরগতির কারণে পুরো সড়কেই খানাখন্দের সৃষ্টি হয়েছে। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়ছেন এ সড়ক চলাচলকারী যাত্রীরা। একটু বৃষ্টি হলেই ভোগান্তি বাড়ে বহুগুণ। এতে এ সড়ক চলাচলে যাত্রীদের পড়তে হচ্ছে ভোগান্তিতে, ঘটছে দুর্ঘটনা।
ড্রাইভার হাবিবুর রহমান হাবি নামে একজন বলেন, রাস্তাঘাটের সুফল জেলার অন্যান্য ইউনিয়নে মানুষ পেলেও পিএমখালীর মানুষ সামান্যটুকুও পায়নি। সড়কের নির্মাণকাজ শুরু করলেও কাজের কোনো অগ্রগতি নেই। সংস্কারকাজের কারণে ভাঙা ও খানাখন্দের সৃষ্টি হয়েছে। যেন মরণ ফাঁদ তৈরি করে রেখেছে। বাংলাবাজার থেকে চেরাংঘর পর্যন্ত সড়কে চলাচল করলে অসুস্থ হয়ে যায় যে কোন মানুষ।
পিএমখালীর নয়াপাড়া গ্রামের সালেহউদ্দিন রানা নামে একজন বলেন, সড়কে চলাচলের কোনো উপায় নেই খানাখন্দের কারণে। অসুস্থ মানুষ নিয়ে সড়কে চলাচল করলে মৃত্যুঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। দুর্ঘটনার কবলে পড়ছে প্রতিদিন কেউ না কেউ। কাজ বন্ধ রাখার কারণ খতিয়ে দেখে দ্রুতগতিতে সড়ক সংস্কার কাজ সমাপ্ত করার দাবি জানাচ্ছি।
ছনখোলা এলাকার ছৈয়দ ড্রাইভার বলেন, গাড়ি চালাই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে। যাত্রীদের নিরাপত্তা ও নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়েই গাড়ি চালান এই ঝুঁকিপূর্ণ সড়কটিতে। প্রায়ই গাড়ি দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। সরু সড়কের কারণে দুটি গাড়ি পাশাপাশি চলতে পারে না। দ্রুত সংস্কারকাজ শেষ করার দাবি জানাচ্ছি।
তবে, কাজ শুরু হয়েছে, অতি দ্রুত প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন করা হবে বলে জানিয়েছে ঠিকাদারের প্রতিনিধি সাইফুল ইসলাম সাইফ। তিনি বলেন, এ প্রকল্পের কাজ শুরু হওয়ার পর থেকে কিছু দুর্বৃত্ত মোটা অংকের টাকা দাবি করে আসছিল। তাদের সাথে বসে এই বিষয়ে সমঝোতা করতে বারবার চাপ সৃষ্টি করতে চেয়েছিলেন একটি পক্ষ। তাদের অন্যায় আবদারের সাড়া না দেয়ায় রাস্তার কাজে আনা ৫/৬ হাজার ইট নিয়ে যায় ওই দুর্বৃত্তরা। পরে স্থানীয় একটি পুকুরপাড়ে ইট গুলো দেখতে পাওয়া যায় (ছবি সংগ্রহ আছে)। খবর নিয়ে জানতে পারি কে বা কারা ইট গুলো গায়েব করেছে। সিডিউল অনুযায়ী শতভাগ কাজ করার পরও প্রকল্পকাজে দুর্নীতি হচ্ছে বলে গুজব ও মিথ্যা অভিযোগ তুলে রাস্তায় কর্মরত শ্রমিকদের মারধর করা হয়েছে। এবং এলজিইডির অফিসারদেরকেও নাজেহাল করেন। রাস্তার কাজের মাল নিয়ে আসা গাড়ির চাবি ছিনিয়ে নিয়ে ড্রাইভারকে শারীরিক নির্যাতন করেন দুর্বৃত্তরা। যে কারণে এই জরুরী রাস্তার সংস্কার কাজ বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়েছিল ঠিকাদার। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি সহ এক ডজনের অধিক চাঁদাবাজ তার কাছ থেকে চাঁদা দাবি করেছে। এরা কারা খোলাসা ভাবে বলতে অপরাগতা প্রকাশ করলেও এদের প্রত্যেকের কল রেকর্ড সংরক্ষিত আছে বলে জানায় সাইফ ।
সদর উপজেলা এলজিইডির উপ সহকারী প্রকৌশলী হেলাল উদ্দিন বলেন, ওই রাস্তার কাজ একটি বিশেষ বাহিনীর অনুরোধে কিছুদিন বন্ধ আছে। কয়েক দিনের ভিতরে কাজ শুরু হবে।