কুড়িগ্রামে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা উপেক্ষা করে চলছে ৯২টি অবৈধ ইট ভাটা।
নুর মোহাম্মদ রোকন বিশেষ প্রতিনিধিঃ
উচ্চ হাইকোর্টের নির্দেশনার পরও কুড়িগ্রামে ৯২টি অবৈধ ইটভাটার কার্যক্রম বন্ধ হয়নি।পরিবেশের ছাড়পত্র ও লাইসেন্স ছাড়াই চলছে অবৈধ ৯২টি ইট ভাটায় ইট প্রস্তুতের কার্যক্রম। হাইকোর্টের নির্দেশ উপেক্ষা করে প্রশাসনের নাকের ডগায় কিভাবে চলছে এসব অবৈধ ভাটার কার্যক্রম-এমন প্রশ্ন সর্বত্র। দ্রুত এসব ইটভাটা বন্ধ না করলে পরিবেশের মারাত্মক বিপর্যয় ডেকে আনবে এমন আশঙ্কা বিশেষজ্ঞদের।
বিচারপতি আশফাকুল ইসলাম ও বিচারপতি সোহরাওয়ার্দীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ গত ৭ নভেম্বর জেলার অবৈধ ইটভাটার কার্যক্রম সাত দিনের মধ্যে বন্ধে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছেন। নির্দেশনা বাস্তবায়নের অগ্রগতি জানিয়ে জেলা প্রশাসককে দুই সপ্তাহের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দিতে বলা হলেও অবৈধ ইট ভাটা বন্ধে খুব একটা তৎপর নয় কর্তৃপক্ষ।
এ বিষয়ে কুড়িগ্রাম জেলার রেল-নৌ, যোগাযোগ ও পরিবেশ উন্নয়ন গণকমিটি পরিবেশ রক্ষায় অবৈধ ভাবে গড়ে ওঠা সকল ইট ভাটা বন্ধের দাবি জানিয়ে লিখিত অভিযোগ করেছে পরিবেশ অধিদপ্তরে।
জেলা পরিবেশ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে জেলার ৯ টি উপজেলার ১১৩ টি ইটভাটার মধ্যে মাত্র ২১ টি বৈধ ইট ভাটা এবং ৯২ টি অবৈধভাবে পরিচালনা করা হচ্ছে। এরমধ্যে নাগেরশ্বরীতে ২১ টি, উলিপুরে ২৩ টি, সদর উপজেলায় ১৬ টি, রৌমারীতে ১০টি, ফুলবাড়িতে ৫ টি, রাজারহাটতে ২ টি, ভুরুঙ্গামারীতে ৫টি, চিলমারীতে ৪ টি, রাজিবপুরে ৬ টি ইট ভাটা অবৈধভাবে পরিচালিত হচ্ছে। ওইসব ইটভাটার কোনটিরই লাইসেন্স ও ছাড়পত্র নেই। এরমধ্যে ৪৭ টি ইট ভাটা কখনোই পরিবেশের ছাড়পত্র সংগ্রহ করেনি।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, উচ্চ আদালতের নির্দেশনা দেয়ার পর জেলা প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তরের সম্বয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার মাধ্যমে অবৈধ ইটভাটাগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে শুরু করেছে। তবে সেই কার্যক্রম অত্যন্ত ধীরগতির। নভেম্বর থেকে ডিসেম্বরের ১০ তারিখ পর্যন্ত মাত্র ৩ টি ভাটায় অভিযান করা হয়। নাগেশ্বরী উপজেলার ১টি, উলিপুর উপজেলায় ১টি ও চিলমারী উপজেলায় ১টি অবৈধ ইটভাটায় ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান চালানো হয়েছে। এ সময় মেসার্স এসএফবি ব্রিকস নামীয় ইটভাটা ও মেসার্স কেবি ব্রিকস এর কার্যক্রম পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়া হয়। এছাড়াও চিলমারীতে এসএন ব্রিকস এ অভিযান চালিয়ে ২ লক্ষ টাকা জরিমানা করা হয়।
কুড়িগ্রামে ৯২ টি লাইসেন্স ও ছাড়পত্র বিহীন অবৈধ ভাটায় ইটভাটা স্থাপন-প্রস্তুত ও পরিচালনায় সরকারি নির্দেশনা না মেনে অধিকাংশ ভাটায় জমির উপরিভাগের মাটি খনন করা হচ্ছে, তাতে করে জমির গুনগত মান ও উর্বরতা হ্রাস পাচ্ছে । প্রায় সব ইটভাটাই স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা, মসজিদ-মন্দির ও ফসলি জমি ঘেষে স্থাপন করা হয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রাতের রাধারে চলছে ভেকু দিয়ে জমি থেকে টপ সয়েল কাঁটার কাজ।
কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজের (উদ্ভিদ বিঙ্গান) প্রভাষক মীর্জা মোহাম্মদ নাসিরউদ্দিন বলেন, ইট ভাটায় ফসলি জমির উপরিভাগ (টপ সয়েল) কেটে নেয়ার কারণে মাটিতে বিভিন্ন ধরনের জৈব পদার্থ, বিভিন্ন ধরনের উপকারী অনুজীব এছাড়াও বায়ু চলাচলের জন্য বিভিন্ন প্রনালী নষ্ট হয় যার ফলে ওই জমির গুনাগুন ৪-৫ বছরের সঠিক অবস্থায় আসে না।
সরেজমিনে দেখা যায়, জেলার সদর উপজেলার গর্ভের দোলায় অবৈধ ভাবে গড়ে উঠেছে ৭ টি ইট ভাটা। ঐতিহাসিক এই গর্ভের দোলা একসময় ফসল উৎপাদন, মাছ ও জলজ প্রাণীর জন্য অভয়ারণ্য ছিল। কিন্তু বর্তমানে এখানে ওইভাবে ফসল উৎপাদন সম্ভব হচ্ছে না। গত বছরেরও পুড়ে গেছে একরের পর একর ধানের ফসল।
এছাড়াওদ নদী ও বিল-ঝিলের পাশের ফলসি জমির উপরের মাটি (টপ সয়েল) এক শ্রেণির মধ্যস্বত্তভোগীদের সহায়তায় ইটভাটায় যাচ্ছে। অনেকে অতিলোভের আশায় জমির উপরের মাটি (টপ সয়েল) ইটভাটা মালিকদের কাছে বিক্রি করছেন।
অবৈধ ইট ভাটা উচ্ছেদ জন্য আবেদনকারী, রেল-নৌ, যোগাযোগ ও পরিবেশ উন্নয়ন গণকমিটি, কুড়িগ্রাম এর সাবেক সহ-সভাপতি ও স্থানীয় কলেজ শিক্ষক, মোঃ আব্দুল কাদের বলেন, আইনের তোয়াক্কা না করে ও পরিবেশগত ছাড়পত্র ছাড়া ফসলি জমিতে গড়ে তোলা হয়েছে ইটভাটা। এছাড়া ভেকু দিয়ে ২/৩ ফসলি জমির টপসয়েল কেটে নেয়া হচ্ছে। এতে স্বাস্থ্য ঝুঁকির পাশাপাশি চরম ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে পরিবেশ। একইসঙ্গে উর্বরতা হারাচ্ছে ফসলি জমি। বছরের পর বছর এভাবে চললেও মাথা ব্যথ্যা নেই প্রশাসনের। জনশ্রুতি আছে, ইটভাটা মালিকদের সঙ্গে প্রশাসনের কর্তা ব্যক্তিদের অনৈতিক লেন-দেন রয়েছে। তাই বছরের পর বছর ইটভাটাগুলো বহাল তবিয়তে রয়েছে।
ইটভাটা মালিক সমিতি কুড়িগ্রাম জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক লুৎফর বকসী বলেন, যে সকল ইটভাটা এখন অবৈধ হয়েছে সেগুলো একসময় বৈধ ছিল। সরকার হুট করে নতুন সিদ্ধান্ত নেয়ায় ঐসকল ইটভাটা অবৈধ হয়েছে। তারপরও আমরা সরকারের সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানাই। সরকারের ভিশন হচ্ছে ২০২৫ সালের পর মাটি দিয়ে ইট তৈরি করা যাবে না। আমরাও ব্লোক ইট তৈরির চিন্তা ভাবনা করছি। ইতোমধ্যে ব্লোক ইট তৈরি করা শুরু করেছি। পর্যায়ক্রমে সকল ভাটা পরিবেশ বান্ধব ব্লোক ইট তৈরি করা হবে। তবে সেজন্য সরকারকে সময় দিতে হবে। আমরা সময় চেয়ে যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত আবেদনও করেছি।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ১ কিলোমিটারের মধ্যে ইটভাটা স্থাপন পুরোপুরি নিষিদ্ধ কিন্তু জেলার ইটভাটগুলো স্থাপনে সে নিয়ম মানা হয়নি। কুড়িগ্রাম সদররে টগরাইহাটে ডিকে ব্রিকস, প্রাঃ লুৎফর রহমান রনি সহ জেলার একাধিক ইট ভাটা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি অবস্থিত। পরিবেশ ও প্রতিবেশের মারাত্মক ক্ষতি হলেও ইটভাটা মালিকরা তা মানে না। নিজের স্বার্থে দেশের কি হলো সেটা তাদের কাছে বিবেচ্য নয়।
জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক রেজাউল করিম জানান, হাইকোর্টের নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের অবৈধ ইট ভাটার বন্ধের কার্যক্রম অব্যাহত আছে। জেলা প্রশাসনের সহায়তায় আমাদের অবৈধ ইট ভাটার কার্যক্রম বন্ধ ও উচ্ছেদের অভিযান চলছে। তবে দরপ্তের নিজস্ব ম্যাজিস্ট্রেট কম ও জনবল সংকটের কারণে বেশি- বেশি অভিযান সম্ভব হচ্ছে না বলে জানান তিনি।
কুড়িগ্রাম জেলার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ বলেন, ইটভাটাগুলোর সাথে কথা বলা হয়েছে। ইতোপূর্বে কিছু ইটভাটা সনদ নবায়নের আবেদন করেছে। আমরা কিছু ছাড়পত্রহীন ইটভাটায় অভিযান চালিয়েছি। আগামী দিনে অভিযান অব্যাহত থাকবে।
নীলফামারীর ডিমলার পঞ্চবটি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়টি নির্দিষ্ট সময়ের আগেই ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।
মোঃ হাবিবুল হাসান হাবিব,ডিমলা (নীলফামারী) প্রতিনিধি –
নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার ঝুনাগাছ চাপানী ইউনিয়নের পঞ্চবটি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়টি নির্দিষ্ট সময়ের আগেই ছুটি ঘোষনা করা হয়েছে। বুধবার (১৫ই ফেব্রুয়ারি) দুপুর আড়াইটার দিকে কোন কারণ ছাড়াই বিদ্যালয়টি ছুটি ঘোষনা করেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ হারুন-অর-রশিদ। এতে অভিভাবকসহ ম্যানেজিং কমিটির সদস্যদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, দুপুর আড়াইটার সময় স্কুলের প্রধান ফটকে বড় একটি তালা ঝোলা। শিক্ষকের কক্ষ, ছাত্র-ছাত্রীদের কক্ষসহ বিদ্যালয়ের মূল ফটকে আরো একটি তালা ঝুলানো হয়েছে। স্কুলের মাঠেটি নোংরা আবর্জনায় পরিপূর্ণ ।
এলাকাবাসী জগদীশ চন্দ্র রায় বলেন, স্যারেরা লেখাপড়া করে শিক্ষক হয়েছেন, এই স্কুলে লেখাপড়ার যে হালচাল তাতে আমাদের ছেলে-মেয়েদের ভবিষ্যৎ অন্ধকার। আমরা গরীব মানুষ, ছেলে মেয়েদের বাহিরে পড়ানোর সামর্থ্য আমাদের নেই। তাই বাধ্য হয়ে এই স্কুলেই লেখাপড়া করানো হচ্ছে।
গীতা রানী বালা বলেন, স্যারেরা লেখাপড়া করে শিক্ষিত হয়েছেন, আমাদের ছেলে-মেয়েরা কি হবে সেটা ঈশ্বরই বলতে পারে ! এই স্কুলের লেখাপড়ার মান ভালো নয়।
এ বিষয়ে মুঠোফোনে প্রধান শিক্ষককে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, ভাই আড়াইটায় নয়, তিনটার সময় বন্ধ করে চলে এসেছি। আর আমাদের প্রথম শিফটের স্কুল তাই ছুটি দিয়েছি। তিনটার সময় ছুটি দিতে পারেন কিনা? জানতে চাইলে তিনি এর কোন উত্তর দিতে পারেননি।
প্রাথমিক সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা সাজ্জাদুজ্জামান বলেন, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের নির্দিষ্ট সময়ের আগে ছুটি না দিতে বারংবার নিষেধ করা হলেও তারা ওই কাজটি করেই যাচ্ছে। এ বিষয়ে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নূর মোহাম্মদ বলেন, কোন নিয়ম না মেনে প্রধান শিক্ষক নিজের খেয়ালখুশি মতো ছুটি দিয়েছে। এবিষয়ে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।