খুলনার দাকোপের বাজুয়ায় নৌকা চলছে গাড়িতে অস্তিত্ব সংকটে উপজেলার সকল নদী।
মোঃ শামীম হোসেন- খুলনা –
খুলনার দাকোপের বাজুয়ায় নৌকা চলছে গাড়িতে অস্তিত্ব সংকটে উপজেলার সকল নদী। বাজুয়া এলাকায় নৌকা গাড়িতে চলতে প্রায় সময় দেখা যায় আগে মানুষ চলতো নৌকায় এখন নৌকা চলে গাড়িতে। কথা শুনে অবাক হওয়ার কিছুই নাই বলে অভিমত ব্যক্ত করেন বাজুয়া এলাকার প্রবীন বৃদ্ধ পুলিনী হালদার তিনি বলেন কালে কালে আর কি দেখবো আগে বাজুয়ার মানুষের চলাচলের একমাত্র যানবাহন ছিলো নৌকা আর আজ সেই নৌকা চলছে গাড়িতে। আধুনিকতার ছোঁয়ায় সব যেন উল্টো হয়ে যাচ্ছে। এলাকা ঘুরে দেখা যায় দখল, কচুড়ি পানা ও দূষণে স্বাভাবিক গতি হারিয়ে মরা খালে পরিণত হয়েছে উপজেলার প্রায় সব নদী। বাজুয়ার চুনকুড়ি-কচা নদী দীর্ঘদিন ধরেই নদীটির গলায় ফাঁস দেওয়ার আয়োজন চললেও রক্ষায় এগিয়ে আসেনি কেউ। তবে পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, প্রকল্প প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। প্রকল্প পাস হলেই নদীটি উদ্ধার ও সংস্কার করা হবে। জানা যায়, দাকোপ উপজেলার বাজুয়া স্লুইচ গেট দিয়ে কচা, চুনকুড়ি সংলগ্ন এলাকা হয়ে পোদ্দার গঞ্জ গেট দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে নদীটি। সেখান থেকে নদীটি পশুর নদীতে গিয়ে মিশেছে। নদীটি এখন কচুড়ি পানাতে ভরে গেছে। এক সময় এই নদী দিয়ে নৌকা চালিয়ে শত শত মানুষ জীবন-জীবিকা নির্বাহ করতো। এখন আর নৌকা চালানোর কোন উপায় নেই। একদিকে দখলদারদের দখলের দাপটে নদীর দুইকুল দখল করে পুকুর, বাড়ি, ঘর করে নিজেদের দখলে রেখে নদীর আয়তন কমিয়ে ফেলেছে অন্য দিকে কচুড়িপানায় নদী ব্যবহারের উপায় নাই। এক সময় এই নদীতে নৌকা চালাতো কচা গ্রামের সুব্রত তিনি বলেন এখন আর নদী দিয়ে নৌকা চালানোর উপায় নাই। নদীটি সংস্কারের অভাবে মৃত প্রায়। আমার বাবা, ঠাকুরদা নৌকা চালিয়েছে তাদের সাথে আমিও নৌকা চালিয়েছি এখন শুধু গল্প ছাড়া আর কিছুই না। সরেজমিন উপজেলার বাজুয়া, দাকোপ, কৈলাশগঞ্জ, লাউডোব, বানিশান্তা ইউনিয়নসহ সকল এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ বন্ধ করে দখলদাররা ভবন নির্মাণ, ময়লা ফেলার ভাগাড় ও মাছ চাষসহ নানা কাজে ব্যবহার করছেন। কোথাও কোথাও নদীর দুই পাশ দখল করে সরু করা হয়েছে। কোথাও স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে। আবার কোথাও নেটপাটা ও বাঁশের বেড়া দিয়ে নদীর প্রবাহ আটকে মাছ চাষ করছেন স্থানীয় প্রভাবশালীরা। নদীর প্রকৃত সীমানা যেমন চিহ্নিত নেই, তেমনি কে কোথায় কতটুকু দখলে নিয়েছে তারও পুরোপুরি হিসাব কেউ দিতে পারেননি। ফলে এক সময়ের প্রবাহমান নদীটি অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে। বাজুয়া রাস্তা দিয়ে ব্যাটারি ভ্যানে নৌকা নিয়ে যাওয়া নৌকার মালিক গৌতম মন্ডল বলেন নৌকা এখন আর নদী দিয়ে চালানোর উপায় নাই নৌকা এখন গাড়িতে নিয়ে যেতে হচ্ছে।কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন নদীর যে অবস্থা তাতে নৌকা চালানো সম্ভব নয়। এলাকার নদী এখন ভূমি দখলদারদের হাতে এছাড়া নদীর প্রায় জায়গায় কচুরি পানা, নেটজাল, পাটা ফলে নদী দিয়ে এখন আর নৌকা চালানোর উপায় নাই তাই গাড়িতে করে নৌকা এলাকার বাহিরে বিক্রয় করে দিয়েছি সেখানে নৌকা পৌছে দিচ্ছি। বাজুয়া এলাকার ৬ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য দীনবন্ধু মন্ডল বলেন, এক সময় নদীতে স্রোত ছিল, লঞ্চ, ট্রলার চলতো এখন আর তার উপায় নাই । নদীপাড়ের লোকজন নানা অজুহাতে তা দখল করেছে। এখন মরা খালে পরিণত হয়েছে। দীর্ঘদিনেও খনন কিংবা নদী সংরক্ষণে উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। ফলে এলাকার নদীগুলো অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে। এলাকার কৃষকদের তরমুজ, ধানসহ কৃষি ফসল উৎপাদনে ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখিন হচ্ছে। বাজুয়া এলাকার প্রবীন আওয়ামীলীগ নেতা অশোক রায় তারক বলেন, প্রভাবশালীরা নদী দখল করে বহুতল ভবন নির্মাণ করেছেন। কিন্তু নদীরক্ষার দায়িত্বে থাকা প্রতিষ্ঠান কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। এজন্য নদী দখলে কেউ পিছিয়ে নেই। যার যতটুকু সুযোগ আছে, সে ততটুকু দখল করে বসে আছে। নাম প্রকাশ না করে কৈলাশগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদ ভবনসংলগ্ন এলাকার এক বাসিন্দা বলেন, নেটপাটা দিয়ে নদীর পানি প্রবাহ আটকে রেখে মাছ চাষ করছে এলাকার কতিপয় ব্যক্তি। তারা জালিয়াতির মাধ্যমে এটিকে খাল দেখিয়ে ডিসি অফিস থেকে লিজ নিয়েছিল। পরে বিষয়টি জানাজানি হলে লিজ বাতিল করে ডিসি অফিস। কিন্তু আজও অবৈধ নেটপাটা রয়ে গেছে। এভাবেই মাছ চাষ চলছে। এলাকার মানুষ পানিতেও নামতে পারে না। ওইসব প্রভাবশালীরা পানিতে নামলেই মারধর করে। স্থানীয়রা আরও জানান, স্বাভাবিক পানি প্রবাহ বন্ধ হওয়ায় নদী মরা খালে পরিণত হয়েছে। ছোট ছোট খাল হিসেবে যে যার মতো দখল করেছেন। অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ ও খনন ছাড়া নদীকে বাঁচানো সম্ভব নয়। দীর্ঘদিন ধরে এলাকার নদী ও পরিবেশ নিয়ে কাজ করা সংগঠনের নেতা কৈলাশগঞ্জের কৃতি সন্তান, অন্যায়ের প্রতিবাদী ওয়ার্কার্স পার্টিরনেতা গৌরাঙ্গ রায় ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, মূলত নদীটা যাদের দেখার কথা, সেই কর্তৃপক্ষ দেখেও না দেখার ভান করে থাকে। অনৈতিক সুযোগ নিয়েই স্থানীয় প্রভাবশালীদের দখল করার সুযোগ দিয়ে থাকে। তিনি আরও বলেন, নদী সংরক্ষণ আইন আছে, তবে সুষ্ঠু প্রয়োগ হয় না। এজন্য শুধু দাকোপ উপজেলা নয়; সকল এলাকার অনেক নদীই আজ দখল হয়ে রয়েছে। নদীগুলো মারা যাওয়ার ফলে পরিবেশ, চাষাবাদ ও জীববৈচিত্র্য ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আমরা দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে আসলেও কর্তৃপক্ষ নড়েচড়ে না বসায় কোনো পরিবর্তন হচ্ছে না। এই বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড দাকোপ নির্বাহী প্রকৌশলী বলেন, দাকোপের সকল নদী খনন ও দখলমুক্ত করার জন্য একটি প্রকল্প প্রস্তাবনা মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি। প্রকল্প পাস হলেই নদী রক্ষার কাজ শুরু হবে।