Dhaka ০৫:০০ অপরাহ্ন, রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

খুলনার পাখি পথ দেখাচ্ছে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে।

  • Reporter Name
  • Update Time : ০৮:৪২:৩৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২২
  • ৬৮০ Time View
খুলনার পাখি পথ দেখাচ্ছে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে।
মোঃ শামীম হোসেন- খুলনা
পাখি দত্ত (৩০)। তৃতীয় লিঙ্গের একজন মানুষ। সাফল্যের সিঁড়ি বেয়ে তিনি এখন পথ দেখাচ্ছেন সমাজে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে। এ প্রতিবেদককে পাখি তার হার না মানা জীবনের গল্প ও স্বপ্নের কথা শুনিয়েছেন। গত ৯ ডিসেম্বর মহিলা অধিদপ্তর আয়োজিত অনুষ্ঠানে পাখি’র হাতে জয়িতা পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়। সামাজিক উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের সফলতায় তিনি এ পুরস্কারে মনোনীত হন। এ অনুষ্ঠানে সাতজন জয়িতাকে পুরস্কৃত করা হয়। পাখি দত্ত খুলনা নগরীর সোনাডাঙ্গা সাত্তার মিয়া সড়কে বাস করেন। বাবা হারা পাখি দত্ত মা রিনা রাণী দত্তের প্রেরণায় আজ তৃতীয় লিঙ্গের সম্প্রদায়ের সামাজিক উন্নয়নে কাজ করে চলেছেন। তার ছোট বোন উপমা দত্ত চতুর্থ শ্রেণিতে লেখাপড়া করছেন। তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ হয়েও তিনি পরিবারের হাল ধরে এগিয়ে যাচ্ছেন সামনের দিকে। ২০০৫ সালে তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের সমাজের মূলস্রোতে ফিরিয়ে আনতে গড়ে ওঠে জাতীয় সংগঠন ‘বন্ধু সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার সোসাইটি।’ ২০১৭ সালে ‘বন্ধু’ পরিবারের সদস্য হিসেবে কাজ শুরু করেন পাখি দত্ত। ২০২০ সাল পর্যন্ত এখানেই কাজ করেছেন তিনি। ২০১৮ সালের শেষের দিকে নিজ উদ্যোগে তিনি গড়ে তোলেন ‘নক্ষত্র মানব কল্যাণ সংস্থা। বর্তমানে তিনি বন্ধুর ইএলএমসি প্রকল্পের ভলেন্টিয়ার হিসেবে যুক্ত আছেন। পাখি দত্তের অনুভুতি কি এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘পুরস্কার পেতে সবার ভালো লাগে। অবহেলিত জনগোষ্ঠীর সহযোগিতা করতে এ পুরস্কার আমাকে অনুপ্রেরণা যোগাবে। আমি মায়ের অনুপ্রেরণায় এ পর্যন্ত আসতে পেরেছি। আমাকে সার্বিকভাবে সহযোগিতা করেছেন বিভাগীয় গুরুমা পান্না হিজড়া ও গুরুমা শিল্পী হিজড়া। সফলতার পেছনে এদের নাম না বললে আমার অনুশোচনা থেকেই যায়। একই সঙ্গে আমার সংগঠন ‘নক্ষত্র মানব কল্যাণ সোসাইটি’র সদস্যদের কাছে আমি কৃতজ্ঞ। সজল আহমেদ, ইসতিয়াক মাহমুদ, আল আমিন শরীফ, শহিদুল ইসলাম সুমন, মো. রানা, সুদেব মন্ডল প্রমুখের কাছ আমি কৃতজ্ঞ।’সমাজে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর ক্ষমতায়ন ও উন্নয়নের জন্য কাজ করছে তার নিজস্ব  সমাজকল্যাণমূলক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘নক্ষত্র মানব কল্যাণ সংস্থা।’ সংগঠনটি সমাজের পিছিয়ে পড়া নারী-পুরুষ, পথশিশু, হিজড়া/ট্রান্সজেন্ডার জনগোষ্ঠীসহ সব প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে কাজ করে। পাশাপাশি তাদেরকে সমাজের মূল স্রোতধারায় ফিরিয়ে এনে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে। সমাজের তৃতীয় লিঙ্গের অসহায় দরিদ্র মানুষের মানবেতর জীবনযাপন পাখি দত্তকে ব্যাথিত করে। তিনি বলেন, ‘প্রায়ই ভাবি আমার যদি সমর্থ্য থাকতো তাহলে অসহায় দরিদ্র প্রতিবেশীর জীবনমান উন্নয়নে একটি কর্মসূচি হাতে নিতাম। সেখানে তাদের সম্পৃক্ত করে দিতাম যাতে তারা নিজেরাই তাদের জীবনমানের উন্নয়ন করতে পারেন।’পাখি দত্ত বলেন, ‘নিজের দায়িত্ববোধ থেকে সমাজের হত দরিদ্র মানুষের কল্যাণে কাজ করতে গিয়ে আমার অভিজ্ঞতা হয়েছে। অন্যকে সাহায্য করার সমর্থ নেই তাই চুপ করে বসে থাকবো এটি একটি ভুল ধারণা। চেষ্টা অব্যাহত রাখলে মানুষ আপনার ভালো কাজে সম্পৃক্ত হবে, আপনার ভালো কাজে সহযোগিতার হাত সম্প্রসারিত করবে। আগামীর পরিকল্পনা সম্পর্কে পাখি দত্ত বলেন, ‘সমাজসেবার পাশাপাশি আমার একটি ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা রয়েছে। বিশেষ করে তৃতীয় লিঙ্গ ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠী যারা রয়েছেন তারা কোথাও তাদের লিঙ্গ পরিচয়ের কারণে কর্মসংস্থানের সুযোগ পান না। তাই ভবিষ্যতে একটি সুপারশপ প্রতিষ্ঠা করার ইচ্ছা রয়েছে। যাতে এখানে তৃতীয় লিঙ্গ ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মানুষ কাজ করতে পারেন। আমাদের এই ক্ষুদ্র মানবিক কার্যক্রম পরিচালনা করতে দেশ বিদেশে আপনাদের সবার সহযোগিতা ও পরামর্শ কামনা করছি। যে সংস্থার কল্যাণে পাখি দত্ত জয়ীতা হওয়ার গৌরব অর্জন করেছেন সেই সংস্থার নাম হলো খুলনা মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর। ওই অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক হাসনা হেনা বলেন, ‘সমাজ উন্নয়ন ক্ষেত্রে পাখি দত্তের অবদান রয়েছে। সেই অবদানের স্বীকৃতি স্বরুপ তিনি খুলনা জেলায় জয়ীতা নির্বাচিত হন। পিছিয়ে পড়া তৃতীয় লিঙ্গের জনগোষ্ঠীকে পাখি দত্ত সমাজের মূল স্রোতে ফিরিয়ে আনার জন্য কাজ করে চলেছেন। যেটা সমাজের জন্য খুবই ইতিবাচক। বাজার থেকে চাঁদা কালেনশন করা, বাচ্চা নাচানোসহ নানা ধরনের চিরাচরিত কর্মকাণ্ডের বাইরে এসে পাখি দত্ত সমাজ উন্নয়নে অবদান রাখছেন। তার কর্মকাণ্ড সমাজে তৃতীয় লিঙ্গ সম্পর্কে গতানুগতিক ধারণা পাল্টে দিতে সহায়তা করবে। সমাজ তাদের গ্রহণ করতে উৎসাহিত হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘তৃতীয় লিঙ্গের পিছিয়ে পড়া মানুষগুলোর জীবনমান উন্নয়নে পাখি দত্তের চলমান কর্মকাণ্ড আগামীতেও অব্যাহত থাকুক এই কামনা আমাদের সবার।’
রূপসায় বীর নিবাস নির্মাণে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে।
মোঃ শামীম হোসেন- খুলনা –
রূপসা উপজেলায় মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য প্রধানমন্ত্রীর উপহারের বীর নিবাস নির্মাণে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। এক বছর আগে প্রথম ধাপের ১২টি নিবাসের নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করা হলেও অনেক নিবাসের নির্মাণ কাজের ৫০ শতাংশ এখনো সম্পন্ন হয়নি। আর যা সম্পন্ন হয়েছে সেসব বীর নিবাসে সিডিউল মোতাবেক মালামাল ব্যবহার করা হয়নি। এসব অনিয়মের প্রতিকার চেয়ে ভুক্তভোগী মুক্তিযোদ্ধারা উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর লিখিত অভিযোগ করেও পাননি কোন প্রতিকার। উপজেলার আনন্দ গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা মরহুম নুর মিয়া ফকিরের ছেলে মোঃ হযরত আলী বলেন, আমার আব্বার নামে বরাদ্দ বীর নিবাসের কাজের শুরু থেকে ঠিকাদার মাসুদ প্রতিটি ক্ষেত্রে অনিয়ম করতে থাকে। সিডিউল মোতাবেক ঘরের থাই গ্লাস, গ্রীল দেয়নি। এছাড়া নিম্ন মানের পানির ট্যাংকি ও সিলিং ফ্যান এবং অন্যান্য সামগ্রী ব্যবহার করা হয়েছে। শুধু তাই নয় ইট, বালু সিমেন্ট ব্যবহারেও ব্যাপক অনিয়ম করা হয়েছে। ঘরের ওয়ালে বড় ধরণের ফাটল হলেও তা মেরামত না করে সেখানে পুটিং করে রং দিয়ে ঢেকে দিয়েছে। এসব ব্যাপারে পিআইও ও ইউএনও বরাবর লিখিত অভিযোগ করেও কোন ফল পাইনি। বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ মুনছুর আলী বিশ্বাস বলেন এক বছর আগে আমার নামে বরাদ্দ করা বীর নিবাসে নিম্ন মানের ইট, বালু ও সিমেন্ট ব্যবহার করার প্রতিবাদ করায় ছাদ পর্যন্ত করে এক বছর ধরে ফেলে রেখেছে ঠিকাদার। বিল্ডিংয়ের বিভিন্ন স্থানে শাওলা পড়ে গেছে।বীর মুক্তিযোদ্ধা সন্তোষ কুমার চিন্তাপাত্র বলেন, উপজেলায় বীর নিবাস নির্মাণ কাজের উদ্বোধন হয় ২০২১ সালের ১৬ ডিসেম্বর। উপজেলা নির্বাহী অফিসার আমার বাড়িতেই এর উদ্বোধন করেন। শুরু থেকে ঠিকাদার অনিয়ম করতে থাকে। তাদের অনিয়মের সাথে আপোষ করতে না পেরে আমি বাধ্য হয়ে নিজ খরচে অনেক কাজ করিয়েছি। তিনি বলেন ভিত ৫ফুট খোডার নিয়ম থাকলেও মাত্র দেড় ফুট খুঁড়ে কাজ শুরু করে। এসময় তাদের কাজ বন্ধ করে আমি নিজ অর্থে লেবার দিয়ে কাজ করায়। পরবর্তীতে ইট, বালু, সিমেন্ট এবং রড ব্যবহারে ব্যাপক অনিয়ম করতে থাকে। তারপরও এখনো তারা নির্মাণ কাজের অর্ধেকও করতে পারেনি। শুধু যে আমার এখানে অনিয়ম করা হয়েছে তা নয়। এ উপজেলার প্রতিটি বীর নিবাস নির্মাণে অনিয়ম-দুর্ণীতি করা হচ্ছে। ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি আরো বলেন, অনিয়ম, দুর্শাসন ও দুর্ণীতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করলেও স্বাধীন দেশের এই উম্মুক্ত দুর্ণীতির কাছে হার মানতে হচ্ছে। ইতোপূর্বে এ ব্যাপরে মুক্তিযোদ্ধা সন্তান হযরত আলী, মুক্তিযোদ্ধা মুনসুর আলী বিশ্বাস, সন্তোষ কুমার চিন্তাপাত্র, কাজী মোঃ ইয়াহিয়া, বজলুর রশিদ আজাদ, হাসান মাহামুদ ও টুকু মিনা উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন। তবে অদ্যবদি তারা কোন প্রতিকার পাননি বলে জানিয়েছেন। উপজেলা নির্বাহী অফিসার (চ.দ) সাজ্জাদ হোসেন বলেন, বীর নিবাস নির্মাণে অনিয়ম করলে ঠিকাদারকে ছাড় দেওয়া হবেনা। তার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। উপজেলা চেয়ারম্যান মোঃ কামাল উদ্দীন বাদশা বলেন, এই ঠিকাদার বীর নিবাস নির্মাণে ব্যাপক অনিয়ম করছে। স্বচ্ছতার সাথে সময় মত কাজ শেষ করতে না পারলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

আলোচিত

বোয়ালমারীতে চার বছর কর্মস্থলে না গিয়েও বেতন ভাতা নিচ্ছে উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রের ঝুমা !

খুলনার পাখি পথ দেখাচ্ছে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে।

Update Time : ০৮:৪২:৩৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২২
খুলনার পাখি পথ দেখাচ্ছে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে।
মোঃ শামীম হোসেন- খুলনা
পাখি দত্ত (৩০)। তৃতীয় লিঙ্গের একজন মানুষ। সাফল্যের সিঁড়ি বেয়ে তিনি এখন পথ দেখাচ্ছেন সমাজে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে। এ প্রতিবেদককে পাখি তার হার না মানা জীবনের গল্প ও স্বপ্নের কথা শুনিয়েছেন। গত ৯ ডিসেম্বর মহিলা অধিদপ্তর আয়োজিত অনুষ্ঠানে পাখি’র হাতে জয়িতা পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়। সামাজিক উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের সফলতায় তিনি এ পুরস্কারে মনোনীত হন। এ অনুষ্ঠানে সাতজন জয়িতাকে পুরস্কৃত করা হয়। পাখি দত্ত খুলনা নগরীর সোনাডাঙ্গা সাত্তার মিয়া সড়কে বাস করেন। বাবা হারা পাখি দত্ত মা রিনা রাণী দত্তের প্রেরণায় আজ তৃতীয় লিঙ্গের সম্প্রদায়ের সামাজিক উন্নয়নে কাজ করে চলেছেন। তার ছোট বোন উপমা দত্ত চতুর্থ শ্রেণিতে লেখাপড়া করছেন। তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ হয়েও তিনি পরিবারের হাল ধরে এগিয়ে যাচ্ছেন সামনের দিকে। ২০০৫ সালে তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের সমাজের মূলস্রোতে ফিরিয়ে আনতে গড়ে ওঠে জাতীয় সংগঠন ‘বন্ধু সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার সোসাইটি।’ ২০১৭ সালে ‘বন্ধু’ পরিবারের সদস্য হিসেবে কাজ শুরু করেন পাখি দত্ত। ২০২০ সাল পর্যন্ত এখানেই কাজ করেছেন তিনি। ২০১৮ সালের শেষের দিকে নিজ উদ্যোগে তিনি গড়ে তোলেন ‘নক্ষত্র মানব কল্যাণ সংস্থা। বর্তমানে তিনি বন্ধুর ইএলএমসি প্রকল্পের ভলেন্টিয়ার হিসেবে যুক্ত আছেন। পাখি দত্তের অনুভুতি কি এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘পুরস্কার পেতে সবার ভালো লাগে। অবহেলিত জনগোষ্ঠীর সহযোগিতা করতে এ পুরস্কার আমাকে অনুপ্রেরণা যোগাবে। আমি মায়ের অনুপ্রেরণায় এ পর্যন্ত আসতে পেরেছি। আমাকে সার্বিকভাবে সহযোগিতা করেছেন বিভাগীয় গুরুমা পান্না হিজড়া ও গুরুমা শিল্পী হিজড়া। সফলতার পেছনে এদের নাম না বললে আমার অনুশোচনা থেকেই যায়। একই সঙ্গে আমার সংগঠন ‘নক্ষত্র মানব কল্যাণ সোসাইটি’র সদস্যদের কাছে আমি কৃতজ্ঞ। সজল আহমেদ, ইসতিয়াক মাহমুদ, আল আমিন শরীফ, শহিদুল ইসলাম সুমন, মো. রানা, সুদেব মন্ডল প্রমুখের কাছ আমি কৃতজ্ঞ।’সমাজে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর ক্ষমতায়ন ও উন্নয়নের জন্য কাজ করছে তার নিজস্ব  সমাজকল্যাণমূলক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘নক্ষত্র মানব কল্যাণ সংস্থা।’ সংগঠনটি সমাজের পিছিয়ে পড়া নারী-পুরুষ, পথশিশু, হিজড়া/ট্রান্সজেন্ডার জনগোষ্ঠীসহ সব প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে কাজ করে। পাশাপাশি তাদেরকে সমাজের মূল স্রোতধারায় ফিরিয়ে এনে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে। সমাজের তৃতীয় লিঙ্গের অসহায় দরিদ্র মানুষের মানবেতর জীবনযাপন পাখি দত্তকে ব্যাথিত করে। তিনি বলেন, ‘প্রায়ই ভাবি আমার যদি সমর্থ্য থাকতো তাহলে অসহায় দরিদ্র প্রতিবেশীর জীবনমান উন্নয়নে একটি কর্মসূচি হাতে নিতাম। সেখানে তাদের সম্পৃক্ত করে দিতাম যাতে তারা নিজেরাই তাদের জীবনমানের উন্নয়ন করতে পারেন।’পাখি দত্ত বলেন, ‘নিজের দায়িত্ববোধ থেকে সমাজের হত দরিদ্র মানুষের কল্যাণে কাজ করতে গিয়ে আমার অভিজ্ঞতা হয়েছে। অন্যকে সাহায্য করার সমর্থ নেই তাই চুপ করে বসে থাকবো এটি একটি ভুল ধারণা। চেষ্টা অব্যাহত রাখলে মানুষ আপনার ভালো কাজে সম্পৃক্ত হবে, আপনার ভালো কাজে সহযোগিতার হাত সম্প্রসারিত করবে। আগামীর পরিকল্পনা সম্পর্কে পাখি দত্ত বলেন, ‘সমাজসেবার পাশাপাশি আমার একটি ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা রয়েছে। বিশেষ করে তৃতীয় লিঙ্গ ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠী যারা রয়েছেন তারা কোথাও তাদের লিঙ্গ পরিচয়ের কারণে কর্মসংস্থানের সুযোগ পান না। তাই ভবিষ্যতে একটি সুপারশপ প্রতিষ্ঠা করার ইচ্ছা রয়েছে। যাতে এখানে তৃতীয় লিঙ্গ ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মানুষ কাজ করতে পারেন। আমাদের এই ক্ষুদ্র মানবিক কার্যক্রম পরিচালনা করতে দেশ বিদেশে আপনাদের সবার সহযোগিতা ও পরামর্শ কামনা করছি। যে সংস্থার কল্যাণে পাখি দত্ত জয়ীতা হওয়ার গৌরব অর্জন করেছেন সেই সংস্থার নাম হলো খুলনা মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর। ওই অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক হাসনা হেনা বলেন, ‘সমাজ উন্নয়ন ক্ষেত্রে পাখি দত্তের অবদান রয়েছে। সেই অবদানের স্বীকৃতি স্বরুপ তিনি খুলনা জেলায় জয়ীতা নির্বাচিত হন। পিছিয়ে পড়া তৃতীয় লিঙ্গের জনগোষ্ঠীকে পাখি দত্ত সমাজের মূল স্রোতে ফিরিয়ে আনার জন্য কাজ করে চলেছেন। যেটা সমাজের জন্য খুবই ইতিবাচক। বাজার থেকে চাঁদা কালেনশন করা, বাচ্চা নাচানোসহ নানা ধরনের চিরাচরিত কর্মকাণ্ডের বাইরে এসে পাখি দত্ত সমাজ উন্নয়নে অবদান রাখছেন। তার কর্মকাণ্ড সমাজে তৃতীয় লিঙ্গ সম্পর্কে গতানুগতিক ধারণা পাল্টে দিতে সহায়তা করবে। সমাজ তাদের গ্রহণ করতে উৎসাহিত হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘তৃতীয় লিঙ্গের পিছিয়ে পড়া মানুষগুলোর জীবনমান উন্নয়নে পাখি দত্তের চলমান কর্মকাণ্ড আগামীতেও অব্যাহত থাকুক এই কামনা আমাদের সবার।’
রূপসায় বীর নিবাস নির্মাণে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে।
মোঃ শামীম হোসেন- খুলনা –
রূপসা উপজেলায় মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য প্রধানমন্ত্রীর উপহারের বীর নিবাস নির্মাণে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। এক বছর আগে প্রথম ধাপের ১২টি নিবাসের নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করা হলেও অনেক নিবাসের নির্মাণ কাজের ৫০ শতাংশ এখনো সম্পন্ন হয়নি। আর যা সম্পন্ন হয়েছে সেসব বীর নিবাসে সিডিউল মোতাবেক মালামাল ব্যবহার করা হয়নি। এসব অনিয়মের প্রতিকার চেয়ে ভুক্তভোগী মুক্তিযোদ্ধারা উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর লিখিত অভিযোগ করেও পাননি কোন প্রতিকার। উপজেলার আনন্দ গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা মরহুম নুর মিয়া ফকিরের ছেলে মোঃ হযরত আলী বলেন, আমার আব্বার নামে বরাদ্দ বীর নিবাসের কাজের শুরু থেকে ঠিকাদার মাসুদ প্রতিটি ক্ষেত্রে অনিয়ম করতে থাকে। সিডিউল মোতাবেক ঘরের থাই গ্লাস, গ্রীল দেয়নি। এছাড়া নিম্ন মানের পানির ট্যাংকি ও সিলিং ফ্যান এবং অন্যান্য সামগ্রী ব্যবহার করা হয়েছে। শুধু তাই নয় ইট, বালু সিমেন্ট ব্যবহারেও ব্যাপক অনিয়ম করা হয়েছে। ঘরের ওয়ালে বড় ধরণের ফাটল হলেও তা মেরামত না করে সেখানে পুটিং করে রং দিয়ে ঢেকে দিয়েছে। এসব ব্যাপারে পিআইও ও ইউএনও বরাবর লিখিত অভিযোগ করেও কোন ফল পাইনি। বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ মুনছুর আলী বিশ্বাস বলেন এক বছর আগে আমার নামে বরাদ্দ করা বীর নিবাসে নিম্ন মানের ইট, বালু ও সিমেন্ট ব্যবহার করার প্রতিবাদ করায় ছাদ পর্যন্ত করে এক বছর ধরে ফেলে রেখেছে ঠিকাদার। বিল্ডিংয়ের বিভিন্ন স্থানে শাওলা পড়ে গেছে।বীর মুক্তিযোদ্ধা সন্তোষ কুমার চিন্তাপাত্র বলেন, উপজেলায় বীর নিবাস নির্মাণ কাজের উদ্বোধন হয় ২০২১ সালের ১৬ ডিসেম্বর। উপজেলা নির্বাহী অফিসার আমার বাড়িতেই এর উদ্বোধন করেন। শুরু থেকে ঠিকাদার অনিয়ম করতে থাকে। তাদের অনিয়মের সাথে আপোষ করতে না পেরে আমি বাধ্য হয়ে নিজ খরচে অনেক কাজ করিয়েছি। তিনি বলেন ভিত ৫ফুট খোডার নিয়ম থাকলেও মাত্র দেড় ফুট খুঁড়ে কাজ শুরু করে। এসময় তাদের কাজ বন্ধ করে আমি নিজ অর্থে লেবার দিয়ে কাজ করায়। পরবর্তীতে ইট, বালু, সিমেন্ট এবং রড ব্যবহারে ব্যাপক অনিয়ম করতে থাকে। তারপরও এখনো তারা নির্মাণ কাজের অর্ধেকও করতে পারেনি। শুধু যে আমার এখানে অনিয়ম করা হয়েছে তা নয়। এ উপজেলার প্রতিটি বীর নিবাস নির্মাণে অনিয়ম-দুর্ণীতি করা হচ্ছে। ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি আরো বলেন, অনিয়ম, দুর্শাসন ও দুর্ণীতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করলেও স্বাধীন দেশের এই উম্মুক্ত দুর্ণীতির কাছে হার মানতে হচ্ছে। ইতোপূর্বে এ ব্যাপরে মুক্তিযোদ্ধা সন্তান হযরত আলী, মুক্তিযোদ্ধা মুনসুর আলী বিশ্বাস, সন্তোষ কুমার চিন্তাপাত্র, কাজী মোঃ ইয়াহিয়া, বজলুর রশিদ আজাদ, হাসান মাহামুদ ও টুকু মিনা উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন। তবে অদ্যবদি তারা কোন প্রতিকার পাননি বলে জানিয়েছেন। উপজেলা নির্বাহী অফিসার (চ.দ) সাজ্জাদ হোসেন বলেন, বীর নিবাস নির্মাণে অনিয়ম করলে ঠিকাদারকে ছাড় দেওয়া হবেনা। তার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। উপজেলা চেয়ারম্যান মোঃ কামাল উদ্দীন বাদশা বলেন, এই ঠিকাদার বীর নিবাস নির্মাণে ব্যাপক অনিয়ম করছে। স্বচ্ছতার সাথে সময় মত কাজ শেষ করতে না পারলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।