নিজস্ব প্রতিবেদকঃ নাম নন্দীতা রানী সাহা। গণপূর্ত অধিদপ্তরের তত্ত্ববধায়ক প্রকৌশলী (সংস্থাপন)। বাবা-মায়ের দেওয়া নামে তেমন কেউ-ই চেনেন না গণপূর্ত অধিদপ্তরে। এ অধিদপ্তরের অনেকেই নন্দীতা রানীকে নিয়োগ ও পদোন্নতি বাণিজ্যের দুর্নীতির “রানী” হিসেবেই চিনেন। বিগত বিএনপি সরকারের আমলে ২১ তম বিসিএস’র মাধ্যমে নিয়োগ পান তিনি। অবৈধ উপায়ে সম্পদের পাহাড় বানানোর লক্ষ্যে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ‘মূল’ লোক বনে গেছেন দুর্নীতির এ রানী। টাকার বিনিময়ে বিএনপি সময়কালে মির্জা আব্বাসের হাতে নিয়োগপ্রাপ্ত অফিস সহায়কদের পদোন্নতি দিতে কম্পিউটার পরীক্ষায় ১০ মার্ক পাবে না এমন লোকজনকে পদোন্নতি দিতে তালিকায় তৈরি করেন নন্দীতা রানী সাহা।
মূলতঃ নিজেকে আওয়ামী লীগের লোক বলে পরিচয় দিয়ে বিএনপির এজেন্ডা বাস্তবায়ন করেন নন্দীতা রানী সাহা এমন অভিযোগ গণপূর্ত অধিদপ্তরের কর্মচারী ইউনিয়নের নেতাদের। বিভিন্ন লোকজনের কাছে নন্দীতা রানী সাহার ভাষ্য, সবকিছু ম্যানেজ করে দীর্ঘদিন অধিদপ্তরের টিকে আছি। যদি ম্যানেজ না করতে পারতাম তাহলে কত আগেই বান্দরবন, খাগড়াছড়ি থাকতে হত। নন্দীতা রানী সাহা এর পদোন্নতি বাণিজ্যর বিষয়ে গণপূর্ত অধিদপ্তরে নন্দীতা রানীকে নিয়ে আলোচনার ঝড় উঠে। তাঁর স্বেচ্ছাচারিতা ও পদোন্নতি বাণিজ্যর বিষয়ে অনেকে মুখ খুলে কিছু বলতে চাইলেও বলতে পারছেন না। তথ্যদাতার নাম জানতে পারলেই ভয়াবহ স্থানে বদলী করা হবে এমন আতঙ্কে ভুগছেন অনেকেই। তাঁরা মুখ খুলতে না পারলেও এককথায় এ দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা থেকে মুক্তি চান।
অভিযোগ রয়েছে, নন্দীতা রানী সাহা বিভিন্ন মানুষকে প্রকাশ্য বলে বেড়াচ্ছেন মন্ত্রণালয় ও তাঁর উর্ধতন কর্মকর্তাদের উপঢৌকন দিয়ে-ই নিয়োগ ও পদোন্নতি দেন। তাঁদের খুশি না করলে কোন কাজ তাঁর একার পক্ষে করা সম্ভব না বলেও জানান নন্দীতা রানী সাহা। একই ভাবে মন্ত্রণালয়ের স্যারদের ম্যানেজ করে-ই আমি সব কাজ করি এমন গল্পও শোনান নন্দীতা রানী সাহা।এসব অভিযোগ থাকার পরও নন্দীতা রানী সাহা পদোন্নতি কমিটির মিটিং ডেকেছেন। অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এ মিটিংয়ে নন্দীতা রানী সাহা যাদের কাছ থেকে টাকা নিয়েছেন তাঁদেরকে পদোন্নতি দিবেন। পদোন্নতির লক্ষে ৯৫ জন পরিক্ষা দিলেও এর মধ্যে থেকে টাকা লোকজনের তালিকায় পদোন্নতি দিবেন নন্দীতা রানী সাহা। সেই অনুযায়ী এর আগেই তিনি যাদের কাছ থেকে টাকা নিয়েছেন তাঁদের তালিকা করে রেখেছেন। এর আগে ২০২০ সালের জানুয়ারি মাসে পদোন্নতি পরীক্ষায় প্রায় দেড় শতাধিক পরীক্ষার্থী অংশ নিলেও সেখানে মাত্র চারজন উত্তীর্ণ হয়েছিল। এখান থেকেই প্রমান হয় নন্দীতা রানী সাহা কত বড় দুর্নীতির আশ্রয় নিয়েছেন।
অধিদপ্তরের কয়েকজন কর্মকর্তা বলেন, একই কর্মস্থলে একজন কর্মকর্তা সর্বোচ্চ ৩ বছর থাকার কথা। কিন্তু নন্দীতা রানী সাহার রহস্যময় খুঁটির জোরে ৫ বছরের বেশি সময় ধরে গণপূর্ত অধিদপ্তরে বহাল তবিয়তে দুর্নীতির জাহাজ চলু রেখেছেন। এমনকি চাকরি জীবনে কখনো সে ঢাকার বাহিরে বদলী হন নি। এ নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে আসলে তাঁর খুঁটির জোর কোথায়?। ঢাকায় আরো কয়েক বছর থাকতে বিভিন্ন প্রভাবশালী মহলে জোর তদ্বির চালাচ্ছেন নন্দীতা রানী সাহা।
অধিদপ্তর সূত্র জানায়, নন্দীতা রানী সাহা যোগদানের আগে ২০১৫ সালে দশ ক্যাটাগরিতে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। ওই বিজ্ঞপ্তিতে বিভিন্ন পদে ৪৫৫ টি শূণ্যপদ রাখা হয়। দীর্ঘদিন ধরে এমসিকিউ, লিখিত পরীক্ষা ও ভাইভা নেওয়া হয়। পরীক্ষা কমিটির চেয়ারম্যান নন্দীতা রানী সাহা অধীনে অনুষ্ঠিত নিয়োগ পরীক্ষার বিরুদ্ধে দুর্নীতির নানা অভিযোগ উঠেছে। এই অবস্থায় চলতি বছরের ৭ এপ্রিল ৮ ক্যাটাগরিতে নিয়োগ পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করা হয়। সেই অনুযায়ি ৩৬৪ জনকে নিয়োগ দেওয়া হয়। এর মধ্যে মাত্র ১৮ জনকে নিয়োগ দেওয়া হয় মুক্তিযোদ্ধা কোটায়। যা বিধিমালা পরিপন্থি। সূত্র মতে, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপন ও বর্তমান সরকারের প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা মোতাবেক প্রতিটি পদে আলাদা আলাদা ভাবে কোটা বন্টন করতে হবে। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধা ৩০%, মহিলা কোটা ১৫%, উপজাতি ৫%, এতিমখানা নিবাসী ও শারীরিক প্রতিবন্ধী ১০%, আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা কোটা ১০% এবং জেলা কোটা ৩০% নিয়ম থাকলেও সরকারের নীতিমালাকে উপেক্ষা করে কোনো কোটা বাস্তবায়ন করা হয়নি। সংশ্লিষ্ট কোটার চাকুরীপ্রার্থীরা টাকা দিতে রাজি না হওয়া এসব কোটা পূরণ করা সম্ভব হয়নি বলে অধিদপ্তরের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা কর্মচারীরা জানান। সূত্র মতে, দুর্নীতির উল্লেখযোগ্য কয়েকপ্রার্থীর নাম না বললেই নয়, অফিস সহকারী-নিয়োগ ক্রমিক-৭ তানিয়া আক্তার। নিয়োগের পূর্বে তিনি অফিস সহায়ক হিসেবে নন্দীতা রানী সাহার সাথে কর্মরত ছিলেন। তার নিয়োগপত্রে নন্দীতা রানীর নিজের মোবাইল নম্বর ব্যবহার করে নিয়োগপত্র দেন। যা অন্য কোনো প্রার্থীর ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়নি। নিয়োগ, পদোন্নতি দুর্নীতি ও অবৈধ লেনদেনের ব্যাপারে নন্দীতা রানীকে সার্বিক সহযোগীতা করেছেন ২০১৭ সালে অবসরে যাওয়া সাবেক কল্যান কর্মকর্তা হাবিবুর রহমান। নন্দীতা রানী সাহা তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (সংস্থাপন) ডিপিসি মিটিংয়ের সম্মানি ভাতা পান ৩ হাজার টাকা। একজন যুগ্মসচিব একই মিটিং এট সম্মানি ভাতা নিলেও কিন্তু অবসরপ্রাপ্ত কল্যাণ কর্মকর্তা (স্টোনোগ্রাফার হতে পদোন্নতিপ্রাপ্ত) হাবিবুর রহমানকেও দেন সম্মানি ভাতা ৩ হাজার টাকা। কি প্রজ্ঞাপনে এই কর্মকর্তাকে ২০১৭ সাল থেকে এ পর্যন্ত লক্ষ লক্ষ টাকার এই বিল প্রদান করেছেন এমন প্রশ্ন অধিদপ্তরের অনেকের। এ বিলগুলো নির্বাহী প্রকৌশলী গণপূর্ত বিভাগ-৪ আব্দুল গনি রোড থেকে পরিশোধ করা হয়েছে।