চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার আওতাধীন পশ্চিম চাম্বল বাংলাবাজার বেইলি ব্রিজ যেন এক ‘মরণ ফাঁদ’।
আলমগীর ইসলামাবাদী চট্টগ্রাম মহানগর প্রতিনিধিঃ
চট্টগ্রামের বাঁশখালী প্রধান সড়কের সাথে গন্ডামারা ইউনিয়নের প্রায় ৫০ হাজার লোকের যাতায়াতের মাধ্যম উপজেলার চাম্বল ও গন্ডামারা ইউনিয়নের গুরুত্বপূর্ণ সংযোগ সড়কের জলকদর খালের উপর নির্মিত বাংলাবাজার বেইলি ব্রিজটি। দীর্ঘদিন ধরে সংস্কারবিহীন পড়ে থাকায় ব্রিজের অবস্থা এখন খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। গন্ডামারা ইউনিয়নের বিশাল জনগোষ্ঠী বিশেষ করে পূর্ব-পশ্চিম বড়ঘোনার লোকজনের উপজেলা সদরের সাথে যোগাযোগের বিকল্প মাধ্যম বাংলাবাজার বেইলি ব্রিজের বেশ কয়েকটি পাটাতন ভেঙে যায় এবং মূল স্ট্রাকচার থেকে পাটাতন সরে যাওয়ায় প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার কবলে পড়ছে যানবাহন ও যাত্রী সাধারণ।
এর আগে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অধীনে জি.ও.বি ফান্ড হতে বাংলাবাজার বেইলি ব্রিজ সংস্কারের জন্য ৫০ লক্ষ টাকার টেন্ডার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে অনুমোদন দেওয়া হয়। দীর্ঘসূত্রিতার শেষে নড়বড়ে কাজ করে দায়সারাভাবে চলে যায় টিকাদার।সেতুটি সংস্কারের পর থেকেই অতিরিক্ত মালামাল বোঝাই ট্রাকসহ বিভিন্ন যানবাহন চলাচল করে। এতে বছর যেতে না যেতেই মূল স্ট্রাকচার থেকে প্রায় পাঁচ থেকে ছয় ইঞ্চি পরিমাণ দূরত্বে পাটাতন সরে গিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ে ব্রিজটি। ব্যস্ততম বেইলি ব্রিজ দিয়ে প্রতিদিনই গন্ডামারায় নির্মিত এস. আলমের কয়লাবিদ্যুৎ প্রকল্পের কাজে নিয়োজিত ভারী যানবাহন চলাচল করায় মারাত্মক ঝুঁকির কবলে পতিত হচ্ছে ব্রিজটি। অতিরিক্ত মাল বোঝাই ট্রাক পারাপারের সময় ব্রিজের পাটাতন ভেঙে যাচ্ছে বলে জানায় স্থানীয়রা। অনেক সময় ভেঙে যাওয়া পাটাতনে ছোট ছোট যানবাহনের চাকা ডুকে গিয়ে দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে যানবাহন মালিক ও সাধারণ যাত্রীরা। তারপরও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ওই ব্রিজের উপর দিয়ে সকল ধরনের যানবাহন চলাচল করে। ব্রিজের দ্রুত সংস্কার করা না হলে উপজেলা সদরের সাথে গন্ডামারা ইউনিয়নের বিশাল জনগোষ্ঠীর যাতায়াত ব্যাহত হবে।
হাফেজ মোহাম্মদ ওয়াহিদুল্লাহ নামে স্থানীয় এক পথচারী বলেন, উপজেলার চাম্বল বাজার থেকে রহমানিয়া সড়কের বাংলাবাজার ব্রিজটি চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়ায় যাত্রীরা চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। ব্রিজের ভাঙা পাটাতনে গাড়ির চাকা আটকে পড়ায় দীর্ঘ যানজটের কবলে পড়ে সাধারণ যাত্রী। এ ব্রিজ দিয়ে প্রতিদিন কমপক্ষে ৩০ হাজার মানুষ যাতায়াত করে। এছাড়া ১৫-২০টিরও অধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নিয়মিত যাতায়াত করে থাকেন।
বাঁশখালী উপজেলা প্রকৌশলী (এলজিইডি) কর্মকর্তা কাজী ফাহাদ বিন মাহমুদ বলেন, ‘বাংলাবাজার বেইলি ব্রিজের পাটাতন ভেঙে যাওয়ার বিষয়ে আমি অবগত হয়েছি। বেইলি ব্রিজ সংস্কারের জন্য আমাদের আপাতত বরাদ্দ নেই। তবে বাঁশখালীর সমস্ত স্টিল ব্রিজ ও অন্যান্য সেতুর সংস্কারের জন্য আমাদের আলাদা একটি প্রজেক্ট রয়েছে। বাংলাবাজার বেইলি ব্রিজের সংস্কারের জন্য আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের বরাবর প্রস্তাব পাঠিয়েছি।
চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামীলীগের কান্ডারী কে হতে যাচ্ছেন ?
আলমগীর ইসলামাবাদী চট্টগ্রাম মহানগর প্রতিনিধিঃ
দীর্ঘ ১৭ বছর পর গত ১২ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনের দ্বিতীয় বারের মত সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন সদ্য প্রয়াত সংসদ সদস্য মোছলেম উদ্দিন আহমদ এমপি । ওইদিনের সম্মেলনে কেন্দ্রীয় নেতারা সভাপতি পদে পুনরায় মোছলেম উদ্দিন আহমদ এমপি এবং সাধারণ সম্পাদক হিসেবে পুনরায় মফিজুর রহমানের নাম ঘোষণা করেন।
সম্মেলনের দুই মাস পূর্ণ হলেও এখনো পর্যন্ত পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়নি। এরই মধ্যে গত ৫ ফেব্রুয়ারি মোছলেম উদ্দিন আহমদ মারা যাওয়ায় দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগে নেতৃত্বের সংকট সৃষ্টি হয়েছে। মোছলেম উদ্দিন আহমদের মৃত্যুতে সভাপতি পদে কে আসছেন কে হবেন চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের অভিবাভক তাই নিয়ে নতুন করে শুরু হয়েছে নানা জল্পনা–কল্পনা। সম্মেলনের পর পূর্ণাঙ্গ কমিটি না হওয়ায় বর্তমানে দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে এখন শুধুমাত্র সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান ছাড়া আর কোন অভিবাভক নেই।
বর্তমানে বিএনপির সরকার বিরোধী আন্দোলনের মোকাবেলায় আওয়ামী লীগের প্রতিটি ইউনিটের নেতাকর্মীদের রাজপথে থাকার জন্য কেন্দ্র থেকে নির্দেশনা দেয়া হলেও দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোছলেম উদ্দিন আহমদের মৃত্যুতে নতুন করে সংকট সৃষ্টি হয়েছে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলায়। তাঁর মৃত্যুর পরপরই জেলা সভাপতি পদের শীর্ষ পদের জন্য একাধিক নেতা কেন্দ্রে নানানমুখী তৎপরতা শুরু করেছেন। অনেকেই কেন্দ্রীয় নেতাদের সাথে যোগাযোগের জন্য ঢাকায় অবস্থান করছেন। সাংসদ মোছলেম উদ্দিন আহমদের মৃত্যুর পরপরই জেলা আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন নেতা সভাপতি পদের ব্যাপারে নিজেদের আগ্রহের কথা জানান। গত ১২ ডিসেম্বর জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনকে ঘিরে সভাপতি হিসেবে নিজেদের আগ্রহের কথা গণমাধ্যম কে জানিয়েছিলেন।
এখনও তারা সেই পদের ব্যাপারে আগ্রহী বলে জানা গেছে। জেলার সিনিয়র নেতাদের মধ্যে সভাপতি পদে আলোচনায় সবার আগে যার নাম শোনা যাচ্ছে তিনি হলেন দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগে যিনি দীর্ঘকাল নেতৃত্ব দিয়েছেন বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ প্রয়াত আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবুর জ্যেষ্ঠ সন্তান ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ। তিনি যদি কোনও কারণে জেলার নেতৃত্বে আসতে রাজী না হন, তাহলে এই পদে আছেন দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতা–চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি আবু সুফিয়ান, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহসভাপতি–পটিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী, চন্দনাইশ থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম চৌধুরী, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহ সভাপতি–রূপালী ব্যাংকের সাবেক পরিচালক আবুল কালাম চৌধুরী এবং দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহসভাপতি ও কুয়েতের সাবেক রাষ্ট্রদূত এস এম আবুল কালাম।
উল্লেখ্য, প্রয়াত সাংসদ মোছলেম উদ্দিন আহমদ ১৯৮৮তে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছিলেন। এরপর থেকে তিনি একনাগাড়ে দীর্ঘ ২৫ বছর সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। ২০১২ সালের ৪ নভেম্বর দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের তৎকালীন সভাপতি আখতারুজ্জামান চৌধুরীর মৃত্যুর পর ২০১৩ সালে সাধারণ সম্পাদক থেকে মোছলেম উদ্দিন আহমদকে দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং মফিজুর রহমানকে সাধারণ সম্পাদক করে কেন্দ্র থেকে পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়। দীর্ঘ ৯ বছর সভাপতির দায়িত্বপালনরত অবস্থায় গত ৫ ফেব্রুয়ারি ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে রাত সাড়ে ১২টায় মৃত্যু বরণ করেছেন মোছলেম উদ্দিন আহমদ।
তিনি দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের তিনবারে ২৫ বছর সাধারণ সম্পাদক ও দুই মেয়াদে ৯ বছর সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। সর্বশেষ গত ১২ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত সম্মেলনে দ্বিতীয়বারের মতো সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিল এবং দ্বিতীয় মেয়াদে মফিজুর রহমান সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। জানা গেছে, নতুন কমিটির সভাপতি, সহ সভাপতি থেকে শুরু করে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, সাংগঠনিক সম্পাদক, কোষাধ্যক্ষ, দপ্তর, প্রচার ও প্রকাশনা এবং সদস্যসহ এখন ৭০ পদে পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হবে কেন্দ্র থেকে।
চট্টগ্রামের কেন্দ্রীয় এক শীর্ষ নেতার সাথে কথা বলে জানা গেছে, দক্ষিণ জেলার পূর্ণাঙ্গ কমিটির জন্য জেলার সাবেক নেতাদের অনেকেই এবং তরুণদের অনেকেই কেন্দ্রে নানান ভাবে চেষ্টা–তদিবর করছেন। কমিটি ৭১ সদস্যের কিন্তু নেতা অনেক। সবার তো কমিটিতে স্থান হবে না। জেলা কমিটির সাবেক বেশ কয়েকজন নেতা গণমাধ্যম কে বলেন, আমরা দীর্ঘদিন ধরে জেলার রাজনীতির সাথে জড়িত। আমরা চাই আমাদের ত্যাগের সঠিক মূল্যায়ন হোক। তবে কেন্দ্রীয় একাধিক সূত্র জানায়, জেলার সাবেক নেতাদের মধ্যে ক্লিন ইমেজের নেতাদের পদোন্নতি হতে পারে। একই সাথে জেলার সাবেক যুবলীগ ও ছাত্রলীগের শীর্ষ পদের ত্যাগীদেরও দক্ষিণ জেলার নতুন কমিটিতে স্থান হতে পারে।