সন্দ্বীপে দুই প্রকৌশলীর বিদ্যুৎ এর মিটার ও খাম্বা বাণিজ্য।
সন্দ্বীপ প্রতিনিধি –
চট্টগ্রামের সন্দ্বীপে বিদ্যুতের মিটার সংযোগে অতিরিক্ত অর্থ আদায় ও খাম্বা বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে দুই প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে। গত দুই বছরে নির্বাহী প্রকৌশলী ও আবাসিক প্রকৌশলীর ৫ কোটি টাকা আত্মসাৎ।
দীর্ঘ প্রতিক্ষার পর সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে সন্দ্বীপে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হলেও বিদ্যুতের মিটার সংযোগ পাওয়া যেন রীতিমত সোনার হরিন সন্দ্বীপের মানুষের কাছে। সন্দ্বীপে বিদ্যুতের মিটার সংযোগ দিতে অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের অভিযোগ উঠেছে। মিটার সংযোগ দিতে গত দুই বছরে পিডিবি’র আবাসিক প্রকৌশলী ইব্রাহিম খলিল ও নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল ফাত্তাহ মো. মুস্তাফিজুর রহমানের নামে অতিরিক্ত ৫ কোটি টাকা আদায় করা হয়েছে ।
চাহিদা মতে অতিরিক্ত টাকা না দিলে মিটার মিলছেনা এ উপজেলার গ্রাহকদের। বিদ্যুৎ বিভাগের কতিপয় কর্মকর্তা এবং কর্মচারীদের যোগসাজসে গ্রাহকদের কাছ থেকে এসব অতিরিক্ত অর্থ আদায় করছে একটি সিন্ডিকেট। প্রতিটি মিটার সংযোগে আবেদন ফি ও অন্যান্য খরচসহ সরকারী কোষাগারে ৭৬৮ টাকা জমা হলেও গ্রাহকদের কাছ থেকে মিটার প্রতি অতিরিক্ত ৩ হাজার টাকা আদায় করে। পোস্টপেইড মিটারে সর্বসাকুল্যে মিটারসহ ২০৬৮ টাকা হলেও নেয়া হতো ৬-৭ হাজার টাকা। প্রি – পেইড মিটারে সর্বসাকুল্যে মিটারসহ ৬৫৫৮ টাকা হলেও নেয়া হচ্ছে ১০ থেকে ১১ হাজার টাকা।
বিজয়ের মাসে সরকারের বিশেষ বরাদ্দে ৬০০ প্রি – পেইড মিটার আসলেও কোন মধ্যবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবার পায়নি। এতে খরচ ৭৬৮ টাকা হলেও নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল ফাত্তাহ মো. মুস্তাফিজুর রহমান ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা করে বিক্রি করেছেন। এসব সরকারি মিটার থেকেই শুধুই আত্নসাধ করেছেন প্রায় ২৪ লাখ টাকা। তাই সিন্ডিকেটের চাহিদামতে টাকা দিতে না পারলে মিটার পাচ্ছেনা স্থানীয় নিম্ম আয়ের বাসিন্দারা।
সংযোগ দেওয়ার ক্ষেত্রে নিয়মবহির্ভূত আর্থিক লেনদেনের বিষয়টি পিডিবি’র চেয়ারম্যানসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেও কোন সুরাহা পাননি গ্রাহক ও সংযোগ প্রত্যাশীরা।
অভিযোগকারী সাদ্দাম হোসেন বলেন, অতিরিক্ত টাকা ছাড়া সন্দ্বীপে মিটার সংযোগ দেয়া হয় না। সন্দ্বীপের বিদ্যুৎ অফিসের অসাধু কর্মকর্তাদের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও আমাদের এমপি মহোদয়ের বদনাম হচ্ছে। আমরা চাই, অবিলম্বে অভিযোগের ভিত্তিতে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হোক।
এ বিষয়ে সন্দ্বীপ অধিকার আন্দোলন এর সভাপতি হাসানুজ্জামান সন্দ্বীপি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর অর্জনকে বিতর্কিত করতে একটি চক্র কাজ করছে। সন্দ্বীপে বিদ্যুতের এই অফিসারেরা তাদের উদারহণ। আমরা চাই ৫ কোটি টাকা আত্নসাধের দায়ে নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল ফাত্তাহ মো. মুস্তাফিজুর রহমান ও আবাসিক প্রকৌশলী ইব্রাহিম খলিলকে চাকরি থেকে বহিষ্কার করে দুর্নীতির দায়ে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা হোক।
নির্বাহী প্রকৌশলী আবদুল ফাত্তাহ মো.মোস্তাফিজুর রহমান প্রতিটি মিটার সংযোগ পেতে সরকারী ফি মাত্র ৭৬৮ টাকা স্বীকার করে বলেন, একটি মহল আমাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে৷
বিদ্যুৎ বিতরণ দক্ষিণ অঞ্চল প্রধান প্রকৌশলী মো. রেজাউল করিম বলেন, মিটার সংযোগে অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের বিষয়ে অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
প্রসঙ্গত, ২০১৮ সালে ১৪৪ কোটি টাকা ব্যয়ে সাবমেরিন কেবলের মাধ্যমে জাতীয় গ্রিড থেকে সন্দ্বীপে বিদ্যুত সংযোগ দেয়া হয়। দীর্ঘ ৪ বছর অতিবাহিত হলেও এখনো এই দ্বীপ উপজেলাকে পুরোপুরি বিদ্যুত সংযোগের আওতায় আনা সম্ভব হয়নি বলে জানান স্থানীয়রা।