“চট্টগ্রামে দুটি গার্মেন্ট বন্ধ শ্রমিকদের সড়ক অবরোধ”
মোঃ ইব্রাহিম শেখ চট্টগ্রাম ব্যুরোঃ
চট্টগ্রাম নগরের বাকলিয়া এলাকার পোশাক কারখানা ডিপ অ্যাপারেলস।
সেখানে কাজ করেন ৬ শতাধিক শ্রমিক। প্রায় ৩ মাস ধরে প্রতিষ্ঠানটির অধীনে থাকা দুইটি কারখানায় কোন
কার্যাদেশ নেই। যে কারণে বাধ্য হয়ে বুধবার রাতে সকালে আগে থেকে কোন ঘোষণা না দিয়ে কারখানা বন্ধ
করে দিয়েছে মালিকপক্ষ। এরমধ্যে শ্রমিকদের কয়েক মাসের বেতন বকেয়াও আছে। আর বৃহস্পতিবার সকালে
এসে কারখানার সামনে তালা দেখে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেন শ্রমিকরা। এক পর্যায়ে তারা রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ
করতে থাকেন।
বৃহস্পতিবার দুপুরে এই প্রতিবেদন লেখার সময় পর্যন্ত শ্রমিকদের বিক্ষোভ চলছে। এতে করে ওই রাস্তা দিয়ে
চলাচল করা সাধারণ মানুষ ও ব্যবসায়ীরা ভোগান্তিতে পড়েছেন।
জানা যায়, শ্রমিকরা কারখানা সংলগ্ন মেরিন ড্রাইভ ও নতুন চাক্তাই সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছেন।
তারা বলছেন, মালিকপক্ষ যতক্ষণ বৈঠকে বসে বকেয়া বেতন পরিশোধের আশ্বাস দেবে না ততক্ষণ সড়ক
অবরোধ করে বিক্ষোভ চালিয়ে যাবেন তারা। এসময় পুলিশ গিয়ে তাদেরকে আশ্বস্ত করার চেষ্টা করলেও তারা
শুনছেন না।
শ্রমিকরা বলছেন, তাদেরকে আগে থেকে কোন কিছুই না জানিয়ে কারখানা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।
তাদের কয়েক মাসের বেতন বকেয়া আছে। তার উপর অন্য কারখানাগুলোতে এখন লোক নিচ্ছে না। তাদের
রুটি রোজগারের কোন ব্যবস্থা না হলে তারা রাস্তা ছাড়বেন না।
তবে মালিকপক্ষের দাবি, বর্তমানে পোশাক কারখানাটিতে কোন কাজের অর্ডার নেই। আয় না থাকায় ৬শ’
শ্রমিকের বেতন চালাতে হিমশিম খাচ্ছে মালিক। তাই তারা কারখানা বন্ধ করে শ্রমিক ছাঁটাইয়ের মতো সিদ্ধান্ত
নিতে বাধ্য হয়েছে।
বাকলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুর রহিম বলেন, হঠাৎ কারখানা বন্ধের প্রতিবাদে শ্রমিকরা সড়ক
অবরোধ করেছে। আমরা বুঝিয়ে শুনিয়ে তাদেরকে কয়েক দফা রাস্তা থেকে সরিয়ে দিচ্ছি। ইতোমধ্যে শ্রমিকদের
সাথে মালিকপক্ষের বৈঠক হয়েছে। আগামী ১২ ডিসেম্বরের মধ্যে বকেয়া টাকা পরিশোধের একটা কথা বলেছে
মালিকরা। শ্রমিকরা এটাও মানতে চাচ্ছেন না।
“চট্রগ্রাম গুমাই বিলে ধান কাটার উৎসব”
মোঃ ইব্রাহিম শেখ চট্টগ্রাম ব্যুরোঃ
শস্যভাণ্ডার খ্যাত রাঙ্গুনিয়ার গুমাই বিলে আমন ধানের বাম্পার ফলন
হয়েছে। পেকে গেছে ধান। এখন চলছে ধান কাটার উৎসব। প্রায় তিন হাজার হেক্টর আয়তনের এই বিলে এক
মৌসুমে উৎপাদিত ধান দিয়ে সারা দেশের আড়াই দিনের খাদ্যের চাহিদা মেটানো যায়।
উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্যমতে, রাঙ্গুনিয়ায় আমন আবাদ হয়েছে ১৫ হাজার ৩২০ হেক্টর জমিতে। ধান
কাটতে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের জন্য কৃষকদের উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে। ভর্তুকি মূল্যে কম্বাইন হারভেস্টার
মেশিন কিনতে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। এই মেশিনে এক কানি জমির ধান কাটতে ব্যয় হয় আড়াই হাজার থেকে তিন
হাজার টাকা। যেখানে শ্রমিক দিয়ে ধান কাটতে খরচ হয় ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কারিমা আক্তার বলেন, গুমাই বিলে ধান কাটা শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যে ১৫ ভাগ ধান
কাটা হয়ে গেছে। আগামি সপ্তাহের দিকে পুরোদমে ধান কাটা হবে। এবছর ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। আশা
করি, ধানের উৎপাদন রেকর্ড ছাড়িয়ে যাবে।
দেখা গেছে, গুমাই বিলের চারদিকে পাকা ধানের সমারোহ। কেউ ধান কাটছেন আবার কেউবা ধান মাড়াইয়ে
ব্যস্ত। মাঠে কৃষকের পাশাপাশি ব্যস্ত কৃষাণীরাও। সাগর মিয়া নামে এক চাষি বলেন, এবার ৭ হেক্টর জমিতে
আমন চারা রোপণ করেছেন। ধান পেকেছে, এখন কেটে ঘরে তোলার কাজ চলছে।
কৃষক সেকান্দর মিয়া বলেন, বাজারে হাইব্রিড জাতের ধান প্রতি কেজি ২৭ টাকা এবং সাদা পাঞ্জা ৩০ টাকায়
বিক্রি হয়। এই দাম কমলে কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। জামান নামের এক চাষি বলেন, ধান কাটার জন্য শ্রমিকরা
বেশি মজুরি চায়। প্রতি কানি (২০ গন্ডা) জমির ধান কাটতে দিতে হয় ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা।
ধান কাটার এ মৌসুমে নেত্রকোনা, নোয়াখালী, ময়মনসিংহ, রংপুর, সাতকানিয়া, বাঁশখালীসহ দেশের বিভিন্ন
স্থানের শ্রমিকেরা এখানে আসেন। দৈনিক দুইবেলা খাবার এবং সাড়ে তিন শ থেকে চার শ টাকা মজুরিতে গুমাই
বিলে ধান কাটেন তারা। ভোর থেকে সকাল পর্যন্ত চলে ধান কাটার উৎসব।
সকালের খাবার খাওয়ার সময় কাঁধে করে বাড়ির উঠানে বয়ে আনা হয় সেই ধান। সেখানে চলে ধান মাড়াইয়ের
কাজ। এরপর সোনালী ধানে ভরে ওঠে কৃষকের গোলা।