“জয়পুরহাটে পানিফল চাষ,খরচের তুলনায় ৪ গুন লাভ”
মোঃ জাহিদুল ইসলাম, কালাই (জয়পুরহাট) সংবাদদাতাঃ
নিজের জমি বলতে কিছুই নেই মেহেদী হাসানের। অন্যের জমি বর্গাচাষ করেন। চার সদস্যের পরিবারের সামান্য আয়ে ভরণ-পোষণ চলত কোন রকম ভাবে । পরে পরিতাক্ত জলাশয় ও সামান্য নিচু জমিগুলো অল্প টাকায় বর্গা নিয়ে চাষ করে ভাগ্য বদলে যায় মেহেদীর। তার বাড়ি জয়পুরহাট জেলার পাঁচবিবি উপজেলার গতনশহর গ্রামে। গত ৪ বছর ধরে পানিফল চাষে তিনি লাভবান হয়েছেন। জয়পুরহাটের প্রতিটি উপজেলায় পানিফল চাষ হচ্ছে। স্থানীয় ভাষায় এটাকে পানি সিঙ্গাড়া বলে। বহু পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ এ ফলের ক্রেতার চাহিদাও ভালো । প্রতি বছর বৃদ্ধি পাচ্ছে এর উৎপাদন। পানিফল চাষের জন্য পরিতাক্ত জলাশয় জমির চাহিদাও বাড়ছে।
পানিফল চাষি মেহেদী হাসান বলেন, স্থানীয় খাল-বিল, নদী, ডোবা ও পুকুরের পানিতে পানিফল চাষ করা হয়। যা বাজারেসবচেয়ে সস্তা ফল।তিনি ৪ বছর ধরে পানিফল চাষ করেন এবং বীজতলা নির্মাণ করেন। এ বছর বিঘা প্রতি ৭-৮ হাজার টাকা (৬ মাসের জন্য) বর্গা নিয়ে ৫ বিঘা জমিতে পানি ফল চাষ করেছেন। বিঘা প্রতি পানিফল চাষে ৮-১০ হাজার খরচ হয়। আয় হয় সমস্ত খরচ বাদ দিয়ে ৩০-৪০হাজার টাকা। স্বল্প সময়ে কম পরিশ্রমে অধিক ফলন হওয়ায় অনেকেই আগ্রহ করে চাষ করছেন।তবে সরকারিভাবে সহায়তা পেলে কৃষকরা আরো বেশি লাভবান হতে পারবেন। একই এলাকার পানিফল চাষি আনিছ মন্ডল তিনি বলেন,মেহেদী হাসান এর চাষ করা দেখে আমি গত বছর ১০ কাঠা জমিতে চাষ করা শুরু করেছিলাম।লাভ করেছিলাম ১৫ হাজার টাকা।তাই এইবছর আমরা চার ভাই মিলে বাড়ির সামনে পরিতাক্ত ৩ বিঘা জলাশয়ে পানিফল চাষ করছি।গত বছরের চেয়ে বেশি ফলও হয়েছে। তিনি আরও বলেন, চলতি বছর এ পর্যন্ত তিনবার পানিফল সংগ্রহ করে প্রায় ২০ হাজার টাকার মতো বিক্রি করেছেন। বাজারে এখন পানিফলের দাম ৮শত থেকে হাজার টাকা মণ। জয়পুরহাটে ফলটি পাইকারি বিক্রি করেন তিনি। এছাড়া স্থানীয় ব্যবসায়ীরা তার কাছ থেকে কিনে নিয়ে খুচরা বিক্রি করেন।
আষাঢ় মাসের বৃষ্টিতে যখন জলাশয়গুলোতে পানি জমে তখন ওই পানিতে পানিফলের চারা ছেড়ে দেওয়া হয়। পানিতে ছাড়ার তিন মাস পরই ফল পাওয়া যায়। ভাদ্র মাস থেকে গাছে ফল আসা শুরু করে। আর কার্তিক মাসের শেষ পর্যন্ত ফল বিক্রি করা যায়। শুরুতে ফল কম আসায় মাসে দু-তিনবার ফল সংগ্রহ করা যায়। তবে গাছে বেশি ফল আসা শুরু হলে প্রতি সপ্তাহেই সংগ্রহ করা হয়। এ বিষয়ে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক শফিকুল ইসলাম বলেন, জয়পুরহাট জেলায় এবার প্রায় ১০ হেক্টর জমিতে পানিফলের চাষ হয়েছে। যা গত বছরের চেয়ে দ্বিগুণ। পুষ্টিগুণে ভরপুর এই ফলের বাজারেও রয়েছে ব্যাপক চাহিদা। পানিফল চাষে খরচ কম লাভ বেশি হওয়ায় চাষিরা এদিকে ঝুঁকছেন। পানিফল পরিকল্পিত উপায়ে চাষের ব্যবস্থা করা হলে দেশের অধিকাংশ জেলায় কৃষকরা ট্রাকযোগে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে বিক্রি করতে পারবেন। এতে তাদের ভাগ্য বদলে যাবে।কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। তাই পতিত এসব জমি ফেলে না রেখে পানিফল চাষের পরামর্শ তার।
মোঃ জাহিদুল ইসলাম
কালাই, (জয়পুরহাট)
০১৭৮৫-৩৫২৫৫৮