ঝিকরগাছা হাসপাতালে অভাবের তাড়নায় নবজাতক শিশু বিক্রয়
শাহাবুদ্দিন মোড়ল ঝিকরগাছা যশোর :
যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জন্ম নেওয়া পুত্র সন্তান অভাবের তাড়নায় পড়ে টাকার বিনিময়ে বিক্রয় করলো মা ডলি বেগম (৩০)। তিনি লক্ষিপুর গ্রামের হযরত আলীর মেয়ে এবং গোয়ালহাটি (ছুটিপুর) গ্রামের ফিরোজ হোসেনের স্ত্রী।
ঘটনা সূত্রে জানা যায়, স্বামীর সাথে দিঘদিন যাবৎ পারিবারিক সমস্যার কারণে ডলি বেগম তার পিত্রালয়ে বসবাস করেন। তার স্বামীর ঘরে পূর্বে আরও দুইটা সন্তান রয়েছে। হঠাৎ করে বৃহস্পতিবার (১৩ অক্টোবর) দিবাগত রাতে সন্তান হওয়ার জন্য প্রসব বেদনা শুরু হলে তিনি শুক্রবার (১৪অক্টোবর) সকাল ৬টা ২০মিনিটের সময় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হন। পরবর্তীতে সকাল ৮টা ১০মিনিটের সময় নরমাল ভাবে একটি ফুটফুটে পুত্র সন্তানের জন্ম দেন। সন্তান জন্ম নেওয়ার পর তিনি একটু সুস্থ্য হলেই তার বাচ্চাটাকে বিক্রয় করে দেওয়ার কথা বললে হাসপাতালে ভর্তি থাকা মনিরামপুর উপজেলার সালামতপুর শেখপাড়া গ্রামের ইদ্রিস আলীর স্ত্রী আফিয়া বেগম নামের আর এক রোগী তার বাচ্চাকে ক্রয় করতে রাজি হন। বাচ্চাটার মূল্য ধরা হয় বিশ হাজার টাকা এবং বাচ্চার মায়ের হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য খরচ দিতে হবে প্রায় পাঁচ হাজার টাকা দিতে হবে। এমতাবস্থায় আফিয়া বেগম রাজি হয়ে বাচ্চার মাকে বলে আমার নিকট এখন দুই হাজর টাকা আছে সেটা তুমি রাখো। আর ঔষধের জন্য যা খরচ হচ্ছে সেটা আমি করছি। আর বাদ বাকি বিশ হাজার টাকা আমি তোমাকে আগামী রবিবার (১৬ অক্টোবর) তোমাকে দিবে। এটা বলে একশত টাকার ননজুডিশিয়াল স্ট্যাম্পের উপর না-দাবীপত্র লিখে আফিয়া বেগমের মেয়ে পিংকীর নিকট হস্তান্তর করার জন্য সন্তানের মাতা সহ তিনজন স্বাক্ষীকে স্বাক্ষর করিয়ে নেন। পরে শিশু বাচ্চাটিকে আফিয়া বেগমের মেয়ে পিংকী তাদের বাড়ি পায়রাডাঙ্গা গ্রামে নিয়ে যায়। হঠাৎ করে বাচ্চাটি অসুস্থ হয়ে পড়লে তারা বাচ্চাটিকে যশোরসহ এলাকায় চিকিৎসা সেবা দেওয়ার একপর্যায়ে শনিবার ফজরের নামজের পর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা বাচ্চাটিকে মৃত ঘোষনা করেন। পরে বাচ্চাটিকে পারিবারিক ভাবে সরকারি কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে।
ঘটনার বিষয়ে বাচ্চার মা ডলি বেগমের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, এটি আমার ৩য় সন্তান। অভাবের তাড়নায় বাচ্চাটার ভরণপোষন করতে পারবো না বলে আমি ওদেরকে দিয়ে দিয়েছি। তখন বাচ্চা বিক্রয়ের বিষয়ে টাকার নেওয়ার কথা বললে তিনি বলেন, আমি দুই হাজার টাকা হাতে পেয়েছি। আর বিশ হাজার টাকা দেওয়ার কথা রয়েছে কিন্তু আমি টাকা নিবো না। ওদেরকে আমার বাচ্চা আমার স্ব-ইচ্ছায় দিয়ে দিয়েছি।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা অফিসার মোঃ রশিদুল আলম বলেন, এই ঘটনা আমার অজান্তে ঘটেছে। পরবর্তীতে আমি যখন বিষয়টি শুনতে পেয়েছি, তখন আমি আমার স্টাফদের ডেকে সর্তক করে দিয়েছি, যেনো ভবিষ্যৎ-এ এমন ঘটনা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মধ্যে না ঘটে।