Dhaka ০৮:৩৪ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

দিনাজপুরের খানসামায় ইউনিয়ন ভুমি অফিসে ১০ টাকার ভূমি উন্নয়ন কর ৩৬০০ টাকা, বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ।

  • Reporter Name
  • Update Time : ০৬:০৫:১৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১২ জানুয়ারী ২০২৩
  • ৪৭৩ Time View

দিনাজপুরের খানসামায় ইউনিয়ন ভুমি অফিসে ১০ টাকার ভূমি উন্নয়ন কর ৩৬০০ টাকা, বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ।
শফিকুল ইসলাম সোহাগ, খানসামা (দিনাজপুর) প্রতিনিধি –
দিনাজপুরের খানসামা উপজেলার আঙ্গারপাড়া  ইউনিয়ন ভূমি অফিসটি বর্তমানে দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে। টাকা ছাড়া কোনো কাজ হয় না বলে অভিযোগ অনেকের। ভূমি অফিসের কর্মকর্তা, কর্মচারী ও দালালদের বিরুদ্ধে রয়েছে জমির খাজনা আদায়ের নামে ঘুষ-দুর্নীতির মাধ্যমে অর্থবাণিজ্য। এ ছাড়াও জমিসংক্রান্ত বিভিন্ন সমস্যার সমাধান নিতে আসা লোকজনের সাথে দাম্ভিকতার সহিত কথা বলাসহ বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ। এসব অভিযোগের বিষয়ে সরেজমিন তদন্ত করে তার প্রতিকার চেয়ে উপজেলা সহকারী কমিশনার ভূমি কর্মকর্তার কাছে একটি  অভিযোগও করা হয়েছে। অভিযোগ করেছেন, উপজেলার আঙ্গারপাড়া ইউনিয়নের ছাতিয়ানগড় গ্রামের বাসিন্দা আবুবক্কর ছিদ্দিক আলী।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলার আঙ্গারপাড়া ইউনিয়নের জমির খাজনা পরিশোধ ও জমিসংক্রান্ত বিভিন্ন সমস্যার সমাধানসহ প্রজাদের বিভিন্ন সেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে উপজেলার ইউনিয়ন ভূমি অফিসটি প্রতিষ্ঠিত। কিন্তু ওই ভূমি অফিসের দায়িত্বরত কর্মকর্তা (তহশিলদার/নায়েব) শাহ্ মো. মোখতার হোসেনের ঘুষ,দুর্নীতির কারণে ওই ভূমি অফিসের সেবার মুখ থুবড়ে পড়েছে। তার কারণে ওই ইউনিয়নের প্রজারা বর্তমানে সেবার বিপরীতে অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত ও হেনস্থার শিকার হচ্ছে চরমভাবে।
অভিযোগে আরো দাবি করা হয়েছে, কোনো প্রজা ওই ভূমি অফিসে জমির খাজনা পরিশোধ করতে গেলে তার কাছে থেকে প্রকাশ্যে চার-পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত আদায় করা হয়। আর ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধের রশিদ কেটে দেয়া হয় মাত্র ১০-১২ টাকার। বাকি পুরো টাকাই পকেটস্থ করেন, তহশিলদার শাহ্ মো. মোখতার হোসেন। তার চাহিদা মতো টাকা না দিলে কারোই কোনো কাজ হয় না। কেউ তার চাহিদা মতো টাকা না দিয়ে প্রতিবাদ করতে গেলে ওই তহশিলদার সেই প্রজাকে অশালীন আচরণ করেন। এমনকি ওই ভূমি অফিসে জমির খাজনা দিতে এসে কয়েক মাস ঘুরেও খাজনা দিতে পারেন না ভুক্তভোগীরা।
এ দিকে আবুবক্কর ছিদ্দিক আলী তার অভিযোগে লিখেছেন আমি গত ইংরাজি ১০-১২-২০২২ তারিখে মো: নজির উদ্দিন গং নামে ৮৮২ খতিয়ানের ৫৬৩৩ নং দাগের ৩৩ শতক জমির ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধ বাবদ ০৩ নং আংগারপাড়া ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা মো. মোখতার হোসেন এর নিকট গেলে তিনি আমাকে ৩,৬০০/- (তিন হাজার ছয়শত) টাকার হিসাব দেন। আমি তাকে উক্ত ৩,৬০০/- (তিন হাজার ছয়শত) প্রদান করি। কিন্তু তিনি ৩৩ শতক জমির ভূমি উন্নয়ন কর মাত্র ১০/- (দশ) টাকার খাজনা রশিদ প্রদান করেন। যার রশিদের নম্বর- ২৭৬০২২০০৫৬৭০ । আমি তাহার নিকট ১০/- (দশ) টাকার খাজনা চেকের কথা জিজ্ঞাসা করিলে সে আমাকে বলে তোমার জমি রেজিস্ট্রি করার প্রয়োজন নেই, তুমি চলে যাও। এখানে এই রকমের খাজনার চেক কাটা হয়। পরবর্তীতে গত ২৬/১২/২০২২ তারিখে বর্ণিত দাগ ও খতিয়ানের ৫ শতক জমির খাজনা কাটতে গেলে আবার ৩,৬০০/- (তিন হাজার ছয়শত) টাকা দাবী করে। এই বিষয়ে আবুবক্কর ছিদ্দিক আলী বলেন, আমি ঘটনার প্রতিকার চেয়ে সহকারী কমিশনার ভূমি কর্মকর্তার কাছে লিখিতভাবে আবেদন করেছি এবং সঠিক বিচার চাই।
ঘটনার বিষয়ে তহশিলদার শাহ্ মো. মোখতার হোসেন সাথে কথা বলতে চাইলে তিনি বলেন- ৩৬০০ টাকা না এটা ২৯৩২ টাকা। উনি যেটা বলেছে সেটা ভুল। উনাকে ২১ তারিখে ১টা চেক দেওয়া হয় সফটওয়্যারের ভুলের কারণে ১২টা দাগ ও ১৩টার পরিমান এক সঙ্গে হয়ে যায়। উনি যখন রেজিট্রিতে যায় তখন দাগের সাথে পরিমান মেলে না। আমার কাছে যখন আসেন তখন আমি বিষয়টি দেখতে পাই। সেটি সফটওয়্যারের সমস্যা। তখন আমি উনাকে বললাম যেহেতু খাজনা নেওয়া আছে ২৯৩২ টাকা, সেহেতু ১০ টাকার একটি চেক প্রদান করি। ওই চেক দিয়ে উনি কাজ সারেন এবং পরবর্তীতে উনি ২৯৩২ টাকার চেকটি নিয়ে গেছেন।
উপজেলা সহকারী কমিশনার ভূমি মারুফ হাসান বলেন, অনলাইনে খাজনা দিতে আবুক্কর ছিদ্দিক গিয়েছিলো ১৩টি দাগে ১৯৪২ টাকা আসে, অনলাইনে ভুল করে ১২টি দাগের স্থানে ১৩টি দাগের বিল চলে আসে। সেই কারনেই এই সমস্যা হয়েছে। আমরা যেকোন তহশিলদারের বিরুদ্ধে অভিযোগ পেলে সত্যতা নিশ্চিত করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
ছবির ক্যাপশন; দিনাজপুরের খানসামার ৩নং আঙ্গারপাড়া ইউনিয়ন ভূমি অফিস।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

আলোচিত

বোয়ালমারীতে চার বছর কর্মস্থলে না গিয়েও বেতন ভাতা নিচ্ছে উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রের ঝুমা !

দিনাজপুরের খানসামায় ইউনিয়ন ভুমি অফিসে ১০ টাকার ভূমি উন্নয়ন কর ৩৬০০ টাকা, বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ।

Update Time : ০৬:০৫:১৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১২ জানুয়ারী ২০২৩

দিনাজপুরের খানসামায় ইউনিয়ন ভুমি অফিসে ১০ টাকার ভূমি উন্নয়ন কর ৩৬০০ টাকা, বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ।
শফিকুল ইসলাম সোহাগ, খানসামা (দিনাজপুর) প্রতিনিধি –
দিনাজপুরের খানসামা উপজেলার আঙ্গারপাড়া  ইউনিয়ন ভূমি অফিসটি বর্তমানে দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে। টাকা ছাড়া কোনো কাজ হয় না বলে অভিযোগ অনেকের। ভূমি অফিসের কর্মকর্তা, কর্মচারী ও দালালদের বিরুদ্ধে রয়েছে জমির খাজনা আদায়ের নামে ঘুষ-দুর্নীতির মাধ্যমে অর্থবাণিজ্য। এ ছাড়াও জমিসংক্রান্ত বিভিন্ন সমস্যার সমাধান নিতে আসা লোকজনের সাথে দাম্ভিকতার সহিত কথা বলাসহ বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ। এসব অভিযোগের বিষয়ে সরেজমিন তদন্ত করে তার প্রতিকার চেয়ে উপজেলা সহকারী কমিশনার ভূমি কর্মকর্তার কাছে একটি  অভিযোগও করা হয়েছে। অভিযোগ করেছেন, উপজেলার আঙ্গারপাড়া ইউনিয়নের ছাতিয়ানগড় গ্রামের বাসিন্দা আবুবক্কর ছিদ্দিক আলী।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলার আঙ্গারপাড়া ইউনিয়নের জমির খাজনা পরিশোধ ও জমিসংক্রান্ত বিভিন্ন সমস্যার সমাধানসহ প্রজাদের বিভিন্ন সেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে উপজেলার ইউনিয়ন ভূমি অফিসটি প্রতিষ্ঠিত। কিন্তু ওই ভূমি অফিসের দায়িত্বরত কর্মকর্তা (তহশিলদার/নায়েব) শাহ্ মো. মোখতার হোসেনের ঘুষ,দুর্নীতির কারণে ওই ভূমি অফিসের সেবার মুখ থুবড়ে পড়েছে। তার কারণে ওই ইউনিয়নের প্রজারা বর্তমানে সেবার বিপরীতে অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত ও হেনস্থার শিকার হচ্ছে চরমভাবে।
অভিযোগে আরো দাবি করা হয়েছে, কোনো প্রজা ওই ভূমি অফিসে জমির খাজনা পরিশোধ করতে গেলে তার কাছে থেকে প্রকাশ্যে চার-পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত আদায় করা হয়। আর ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধের রশিদ কেটে দেয়া হয় মাত্র ১০-১২ টাকার। বাকি পুরো টাকাই পকেটস্থ করেন, তহশিলদার শাহ্ মো. মোখতার হোসেন। তার চাহিদা মতো টাকা না দিলে কারোই কোনো কাজ হয় না। কেউ তার চাহিদা মতো টাকা না দিয়ে প্রতিবাদ করতে গেলে ওই তহশিলদার সেই প্রজাকে অশালীন আচরণ করেন। এমনকি ওই ভূমি অফিসে জমির খাজনা দিতে এসে কয়েক মাস ঘুরেও খাজনা দিতে পারেন না ভুক্তভোগীরা।
এ দিকে আবুবক্কর ছিদ্দিক আলী তার অভিযোগে লিখেছেন আমি গত ইংরাজি ১০-১২-২০২২ তারিখে মো: নজির উদ্দিন গং নামে ৮৮২ খতিয়ানের ৫৬৩৩ নং দাগের ৩৩ শতক জমির ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধ বাবদ ০৩ নং আংগারপাড়া ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা মো. মোখতার হোসেন এর নিকট গেলে তিনি আমাকে ৩,৬০০/- (তিন হাজার ছয়শত) টাকার হিসাব দেন। আমি তাকে উক্ত ৩,৬০০/- (তিন হাজার ছয়শত) প্রদান করি। কিন্তু তিনি ৩৩ শতক জমির ভূমি উন্নয়ন কর মাত্র ১০/- (দশ) টাকার খাজনা রশিদ প্রদান করেন। যার রশিদের নম্বর- ২৭৬০২২০০৫৬৭০ । আমি তাহার নিকট ১০/- (দশ) টাকার খাজনা চেকের কথা জিজ্ঞাসা করিলে সে আমাকে বলে তোমার জমি রেজিস্ট্রি করার প্রয়োজন নেই, তুমি চলে যাও। এখানে এই রকমের খাজনার চেক কাটা হয়। পরবর্তীতে গত ২৬/১২/২০২২ তারিখে বর্ণিত দাগ ও খতিয়ানের ৫ শতক জমির খাজনা কাটতে গেলে আবার ৩,৬০০/- (তিন হাজার ছয়শত) টাকা দাবী করে। এই বিষয়ে আবুবক্কর ছিদ্দিক আলী বলেন, আমি ঘটনার প্রতিকার চেয়ে সহকারী কমিশনার ভূমি কর্মকর্তার কাছে লিখিতভাবে আবেদন করেছি এবং সঠিক বিচার চাই।
ঘটনার বিষয়ে তহশিলদার শাহ্ মো. মোখতার হোসেন সাথে কথা বলতে চাইলে তিনি বলেন- ৩৬০০ টাকা না এটা ২৯৩২ টাকা। উনি যেটা বলেছে সেটা ভুল। উনাকে ২১ তারিখে ১টা চেক দেওয়া হয় সফটওয়্যারের ভুলের কারণে ১২টা দাগ ও ১৩টার পরিমান এক সঙ্গে হয়ে যায়। উনি যখন রেজিট্রিতে যায় তখন দাগের সাথে পরিমান মেলে না। আমার কাছে যখন আসেন তখন আমি বিষয়টি দেখতে পাই। সেটি সফটওয়্যারের সমস্যা। তখন আমি উনাকে বললাম যেহেতু খাজনা নেওয়া আছে ২৯৩২ টাকা, সেহেতু ১০ টাকার একটি চেক প্রদান করি। ওই চেক দিয়ে উনি কাজ সারেন এবং পরবর্তীতে উনি ২৯৩২ টাকার চেকটি নিয়ে গেছেন।
উপজেলা সহকারী কমিশনার ভূমি মারুফ হাসান বলেন, অনলাইনে খাজনা দিতে আবুক্কর ছিদ্দিক গিয়েছিলো ১৩টি দাগে ১৯৪২ টাকা আসে, অনলাইনে ভুল করে ১২টি দাগের স্থানে ১৩টি দাগের বিল চলে আসে। সেই কারনেই এই সমস্যা হয়েছে। আমরা যেকোন তহশিলদারের বিরুদ্ধে অভিযোগ পেলে সত্যতা নিশ্চিত করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
ছবির ক্যাপশন; দিনাজপুরের খানসামার ৩নং আঙ্গারপাড়া ইউনিয়ন ভূমি অফিস।