“দীর্ঘসময় অপেক্ষার পর কাটা তারের বেড়া ঠেকাতে পারেনি দুই বাংলার মিলন মেলা“
জসীমউদ্দীন ইতি, (ঠাকুরগাঁও) প্রতিনিধিঃ
ঠাকুরগাঁও জেলা শহর থেকে প্রায় ৬০ কিলোমিটারের দূরে সীমান্তবর্তী হরিপুর রানীশংকৈল উপজেলার কোচল – গোবিন্দপুর বর্ডারে ছিল শুক্রবার পাথর কালী মেলা আর এই কালীর মেলাকে কেন্দ্র করে মেলা কমিটির আয়েজনে হয় দুই বাংলার মিলন মেলা প্রতি বছরের ন্যায় এবারোও এই মেলার আয়োজন করেন মেলা কমিটি। প্রতিবেশী দেশ ভারতে এবং বাংলাদেশে থাকা আন্তীয় স্বজনরা অপেক্ষায় থাকেন প্রিয় মানুষদের এক নজর দেখার জন্য। শুক্রবার সকালে আন্তার আন্তীয়দের এক পলক দেখার জন্য দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে আসেন এই এলাকায় তাদের স্বজনরা। ভোর ছয়টায় থেকে আসতে শুরু করেন বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা নারী- পুরুষ। মিলন মেলায় দেখতে আসা লোকজনের চোখে মুখে ছিল আনন্দের অশ্রু। মেলা স্থানে কথা হয়, শাধন রায় ( ৬০) লালমনির হাটের এক বৃদ্ধা জানান ২০ বছর আগে তার বড় ছেলে বাড়ি থেকে পালিয়ে যায় প্রতিবেশি দেশ ভারতে সেখানে গিয়ে আর কোনদিন বাড়িতে আসেনি ভারতেই বিয়ে করে বসবাস করে আছেন বাড়ি করেছেন তার এখন ১ মেয়ে দুই ছেলে নাতী নাতনীদের সাথে ফোনে কথা হয়েছে তাদেরকে দেখার জন্য দূর থেকে এসেছেন। মিলন মেলায় কথা হয় বগুড়া থেকে আসা নির্মলেন্দু বাবু( ৬৫) এর সাথে তিনি বলেন দেশ ভাগের কিছুদিন আগে তার বাবা মা ভাই বোন সবাই ভারতে গিয়ে বসবাস করছেন কিন্তু তিনি যান নি কারন তখন তিনি নতুন বিয়ে করেছেন শশুর বাড়ির লোকজন তাকে যেতে দেয়নি। গত ৮ বছর আগে তার বাবা মার যায় পরের বছরে তার মাও মারা যান তার পরও তিনি বাবা মায়ের কাছে টাকার অভাবে যেতে পারেন নি, কারণ ভারতে এখন গেলেতে পাসপোর্ট করে যেতে হয় এগুলো খরচ করার মত সামর্থ তার নেই। তার ভাই ভাতিজা গুলো কয়েক বছর আগে তাদের বাসায় এসেছিল বেড়াতে তখন তারা তাদের মোবাইল নাম্বার দিয়ে যায় নতখন থেকে তাদের সাথে প্রতিনিয়ত মোবাইল ফোনে কথা হয় আমার এখন অনেক বয়স হয়েছে কখন কি হয়ে যায় তাই আমার ভাই ভাতিজা গুলো আমাকে দেখার জন্য ব্যাকুল হয়ে আছে তাদের অনুরোধে আজকে তাদের দেখতে এসেছি। কথা হয় মেলা কমিটির লোকজনের সাথে তার জানায় গত দুই বছর করোনার কারনে মেলার কোন পারমেশন ছিলনা,দীর্ঘ দিন ধরে দুই বাংলার আত্মীয় স্বজনদের দেখা করার সোভাগ্য হয়নি এবার হয়েছে তাই প্রীয় মানুষটিকে এক পলক দেখার জন্য দেশের দৃঢ় দুরান্ত থেকে আসা লোকজন গুলো গত কয়েক দিন ধরে এই এলাকায় থাকা আন্তীয় স্বজনদের বাড়িতে আগাম এসে ভীড় করছেন। এ ব্যাপারে কথা হরিপুর এবং রানীশংকৈল থানার অফিসার ইনচার্জদের সাথে তারা বলেন মিলন মেলায় যেন শান্তি পুর্ণ ভাবে হয়, যদি কেউ বিশৃংখলা করার চেষ্টা করেন তাহলে তার বিরুদ্ধে আমরা আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করতে বাধ্য থাকবো। হরিপুর রানীশংকৈল উপজেলার নির্বাহী অফিসার বলেন, মিলন মেলা যেন শান্তি পুর্ণ ভাবে হয় কেউ যেন কোন অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটাতে পার সে ব্যাপারে আমাদের আইন শৃঙ্খলা বাহীনিকে নির্দেশ দেওয়া আছে।
পাথরকালী মিলন মেলার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক বলেন, মেলা টি যাতে শান্তি পুর্ণ ভাবে হয় সে ব্যাপারে আমরা প্রশাসনের সহ-সর্ব মহলের কাছে সহযোগিতা চেয়েছি,তারা আমাদের আশ্বস্ত করেছেন।
জসীমউদ্দীন ইতি
ঠাকুরগাঁও
০১৭৫১-০৭৯৮২৩
“১৯৭১ সালের ( ৩ই ডিসেম্বর ) পাকিস্তানি হানাদার মুক্ত হয়েছিল দেশের উত্তরাঞ্চলীয় জেলা ঠাকুরগাঁও।”
মোহাম্মদ মিলন আকতার, ঠাকুরগাঁও জেলা প্রতিনিধি –
স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের মরণপণ লড়াই আর মুক্তিকামী জনগণের দুর্বার প্রতিরোধে ১৯৭১ সালের নভেম্বরের শেষ থেকেই পিছু হটতে শুরু করে পাকিস্তানি সৈন্যরা। তুমুল লড়াই ও তীব্র প্রতিরোধের ফলে পাকিস্তানি বাহিনী টিকে থাকতে পারেনি দেশের উত্তরের জেলা ঠাকুরগাঁয়ে। অবশেষে এ অঞ্চলের স্বাধীনকামী মানুষেরা নিজ মাতৃভূমির অঞ্চল ঠাকুরগাঁওকে ১৯৭১ সালের ৩ ডিসেম্বর পাকিস্তানি বাহিনী থেকে মুক্ত করতে সক্ষম হয় । এ কারণেই আজকের দিনটিকে পাকিস্তানি হানাদার মুক্ত দিবস হিসেবে পালন করা হয়। প্রতিবারের মতো এবারো নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে দিবসটি পালিত হচ্ছে। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালরাতের পর সারা দেশের মতো ঠাকুরগাঁয়েও পাকিস্তানি সৈন্যরা আক্রমণ করে নিরস্ত্র বাঙালির ওপর। গ্রামে গ্রামে নির্বিচারে হত্যা, ধর্ষণ, লুণ্ঠনে মেতে ওঠে তারা।
ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার জাটিভাঙ্গা ও রাণীশংকৈলে খুনিয়া দীঘির পাড়ে মুক্তিকামীদের নির্বিচারে হত্যা করা হয়। ১৭ এপ্রিল জগন্নাথপুর, গড়েয়া শুখাপনপুকুরী এলাকার মুক্তিকামী মানুষ ভারত অভিমুখে যাত্রাকালে স্থানীয় রাজাকাররা তাদের আটক করে। পরে তাদের পাথরাজ নদীর তীরে গুলি করে হত্যা করা হয়।
একইভাবে রাণীশংকৈল উপজেলার খুনিয়া দীঘির পাড়ে গণহত্যা চালানো হয়। পাকিস্তানি বাহিনী ঠাকুরগাঁও জেলার বালিয়াডাঙ্গী , হরিপুর, পীরগঞ্চ ও রাণীশংকৈল উপজেলার স্বাধীনকামী ও নিরীহ সাধারণ মানুষকে লাইনে দাঁড় করিয়ে গুলি করে হত্যা করে। নির্বিচারে হত্যার কারণে পরবর্তীকালে এটি খুনিয়া দীঘি নামে পরিচিতি লাভ করে।
১৯৭১ সালের ১৫ এপ্রিলের মধ্যেই আধুনিক অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত পাকিস্তানি বাহিনীর দখলে চলে যায় ঠাকুরগাঁও। কিন্তু পাকিস্তানি বাহিনীকে প্রতিরোধে সংগঠিত হতে থাকে ঠাকুরগাঁওয়ের মুক্তিকামী মানুষরাও।
স্কোয়াড্রন লিডার এম খাদেমুল বাশারের নেতৃত্বে ৬ নম্বর সেক্টরের অধীন তৎকালীন ঠাকুরগাঁও মহকুমার মুক্তিকামী মানুষেরা ঝাঁপিয়ে পড়ে নিজ মা মাতৃকার মাটিকে হানাদারমুক্ত করতে।
২৯ নভেম্বর ঠাকুরগাঁওয়ের তৎকালীন পঞ্চগড় থানা প্রথম শত্রুমুক্ত হয়। পঞ্চগড় হাতছাড়া হওয়ার পর মনোবল ভেঙে পড়ে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর।
২ ডিসেম্বর রাতে ঠাকুরগাঁয়ে প্রচন্ড গোলাগুলি শুরু হয়। মুক্তিযোদ্ধাদের প্রাণ -পণ লড়াইয়ে সে রাতেই শত্রুবাহিনী ঠাকুরগাঁও থেকে পিছু হটতে শুরু করে। অবস্থান নেয় ২৫ মাইল নামক স্থানে।
৩ ডিসেম্বর ভোররাতে শত্রুমুক্ত হয় ঠাকুরগাঁও শহর। সকাল থেকেই ঠাকুরগাঁও শহরে মানুষ জড়ো হতে থাকে। শহরের বিভিন্ন স্থানে বের হয় আনন্দ মিছিল। হাজার মানুষের কণ্ঠে ‘জয় বাংলা’ স্লোগানে মুখরিত হয় ঠাকুরগাঁওয়ের পথঘাট।
৩/১২/২০২২