মু. মোশাররফ হোসেন
দেশের বৃদ্ধাশ্রম হোক নিরাপদ ও শান্তিময়। ঘরছাড়া অসহায় বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের জন্য আশ্রয়কেন্দ্রের নাম বৃদ্ধাশ্রম। মা-বাবা বহু কষ্ট করে গায়ের ঘাম পায়ে ফেলে সন্তান মানুষ করে, কিন্তু এমন এক সময় অর্থাৎ যখন বৃদ্ধ/ বৃদ্ধা বয়স হয় এবং সন্তান যখন বিয়ে করে বৌ নিয়ে আসে। বর্তমান পরিসংখান অনুযায়ী বাংলাদেশের অধিকাংশ ছেলেরা বিদেশ থাকে আর বৌরা মা-বাবাকে সহ্য করতে পারেনা, দেখা যায় মা-বাবা সন্তানের কাছে বোঝা হয়ে দাঁড়ায় তখন একটু শান্তির জন্য বৃদ্ধ/বৃদ্ধা বয়সে সেচ্ছায় অথবা সন্তারা ইচ্ছা করেই একটু শান্তির জন্য বৃদ্ধাশ্রমে রেখে আসে।
বৃদ্ধদের আরাম আয়েশ ও বিনোদনব্যবস্থা নিয়ে বৃদ্ধাশ্রমের শুরু হলেও, আজো বৃদ্ধাশ্রম নামটি শুনলেই চোখের সামনে ধরা দেয় ক্রন্দনরত মায়ের মুখ, ম্রীয়মান বাবার দুর্বল চাহনি। মনে পড়ে যায় নচিকেতার বিখ্যাত গান-
ছেলে আমার মস্ত মানুষ
মস্ত অফিসার
মস্ত ফ্ল্যাটে যায় না দেখা
এপার ওপার ।
নানান রকম জিনিস
আর আসবাব দামি দামি
সবচেয়ে কম দামি”
ছিলাম একমাত্র আমি।
ছেলের আমার
আমার প্রতি অগাধ সম্ভ্রম,
আমার ঠিকানা
হয়েছে তাই বৃদ্ধাশ্রম!
গানের এই চিত্র দেখতে পাওয়া যায় প্রায় প্রতিটি বৃদ্ধাশ্রমের প্রত্যেক সদস্যদের।
আমাদের দেশে সরকারি এবং বেসরকারি অনেক বৃদ্ধাশ্রম গড়ে উঠেছে। সরকারি বৃদ্ধাশ্রম গুলোতে আশ্রায় নিতে গেলে আগে সরকারি দলের আমলাদের সহযোগিতা নিতে হয় নইলে সেখানে সুযোগ পাওয়া যায়না তবে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে সুযোগ মিললেও সেখানে দেখা যায় সেবার নামে ব্যাবসা এবং অনৈতিক কর্মকাণ্ড।
ইতিমধ্যে বিভিন্ন গণমাধ্যমে দেখা দেখা যাচ্ছে মানবসেবার আড়ালে মিল্টন সমাদ্দারের ‘চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এজ কেয়ার’ নামে বৃদ্ধাশ্রমে চলছে মানব সেবার অনৈতিক ককর্মকাণ্ড। রাস্তা থেকে অসুস্থ, অসহায় ভবঘুরেদের তুলে নিয়ে এসে বিভিন্ন ধরনের ভিডিও করে সাহায্যের জন্য ফেসবুক এবং মিডিয়াই একাধিক মোবাইল নাম্বার এবং ব্যাংক একাউন্ট দিয়ে প্রচার করতেন।
তার আবেদনে সাড়া পেয়ে দেশ বিদেশ থেকে কোটি কোটি টাকা জমা হত। এমনকি তার এই প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন মানুষ সরাসরি অনুদান দিয়ে আসতেন। তার এই মানবিক কাজের জন্য তিনটি রাষ্ট্রীয় পুরস্কারও পেয়েছেন এই মিল্টন সমাদ্দার।
কিন্তু মানবিকতার আড়ালে ভয়াবহ প্রতারণার জাল বিস্তার করেছেন এই মিল্টন সমাদ্দার। প্রকৃতপক্ষে তিনি যে কয়জনকে লালন-পালন করছেন, তার চেয়ে প্রচার করছেন কয়েক গুণ বেশি।সবচেয়ে ভয়ঙ্কর তথ্য হচ্ছে, মিল্টনের বিরুদ্ধে রয়েছে অসহায় মানুষকে আশ্রয় দেওয়ার নামে তাদের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বিক্রির অভিযোগ।
মিল্টন সমাদ্দারের ব্যক্তি জীবনেও নৈতিকতা বা মানবিকতার বালাই নেই। কিশোর বয়স থেকেই ছিলেন অর্থলোভী। প্রতিবেশী, চিকিৎসক কিংবা সাংবাদিকরা বিভিন্ন সময় তার কাছে শারীরিক লাঞ্ছনার শিকার হয়েছেন। এমনকি নিজের জন্মদাতা পিতাকেও বেধড়ক মারধরের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে মানবসেবার অন্তরালে যে নির্মম ও বর্বরোচিত চিত্র ফুটে উঠেছে তা অত্যন্ত ভয়াবহ ও নেক্কারজনক। মানবসেবা পরম ধর্ম, কিন্তু মানবসেবার নামে মুখোশের আড়ালে রাস্তা থেকে অসুস্থ, অসহায় ও নিরীহ মানুষকে তুলে এনে চিকিৎসার নামে অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বিক্রির যে অভিযোগ মিল্টন সমাদ্দারের বিরুদ্ধে উঠেছে তা অত্যন্ত ভীতিকর, ন্যক্কারজনক ও মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন।
গুরুতর অসুস্থদের হাসপাতালে না নিয়ে নিজ প্রতিষ্ঠানে আটকে রাখা, ভুয়া ডাক্তার দিয়ে মৃত্যু সার্টিফিকেট তৈরি করা কিংবা মরদেহের শরীরে কাটাছেঁড়ার যে তথ্য মিডিয়াই উঠে এসেছে তার যথাযথ তদন্ত হওয়া উচিত বলে মানবাধিকার কমিশন মনে করেন।
দেশের বৃদ্ধাশ্রম হোক নিরাপদ ও শান্তিময় সেই প্রত্যাশায় দেশে যতগুলো বৃদ্ধাশ্রম আছে সেগুলোর দিকে নজর দিয়ে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছি। সাথে সাথে এই মিল্টন সমাদ্দারের সকল তথ্য তদন্ত করে তাকে আইনের আওতায় এনে এমন শ্বাস্তি দেওয়া হোক যাতে করে এই মিল্টন সমাদ্দারের মত আর কোন লোক সমাজে যেন নতুন করে গড়ে উঠে এমন নির্মম বর্বরোচিত কর্মকাণ্ড করতে না পারে।
লেখকঃ মুহা, মোশাররফ হোসেন।