নাজমুল হক, নওগাঁ প্রতিনিধি :
নওগাঁর বদলগাছী উপজেলার কোলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জমি আদালতের নির্দেশ উপেক্ষা করে জোরপূর্বক দখল ও গাছ কাটার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে। এ বিষয়ে বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক এসিল্যান্ডকে অবহিত করলে তিনি নোটিশের মাধ্যমে দখলকার্য বন্ধ রাখতে বললে সেই নোটিশকেও তোয়াক্কা করেনি। সরকারি জমির গাছ কাটা ও জমি দখলের অভিযুক্ত ব্যাক্তিরা হল কোলা গ্রামের মৃত মোকছেদ আলীর ছেলে মামুন হোসেন ও মৃত জিন্নাতুল ইসলামের ছেলে রিপন হোসেনসহ তাদের ঘনিষ্টরা।
জানা গেছে, রিপন হোসেনের বাবা মৃত জিন্নাতুল ইসলাম বিদ্যালয়ের উক্ত জায়গা পরিতক্ত থাকা অবস্থায় কিছু অংশে একটি দোকানঘর নির্মান করে মুদী ব্যবসা করে আসছিল। পরে বাকি অংশ দখল করার চেস্টা করলে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বাধা দেয়। এরপর জিন্নাতুল ইসলাম ওই দমি মালিকানা দাবী করে আদালতে মামলা করেন। তাদের দায়ের করা মামলায় আদালত বিদ্যালয়ের পক্ষে আপিলসহ দুই বার রায় প্রদান করেন। জমিটি অদ্যবদী বিদ্যালয়ের দখলে আছে। সকল রেকডে বিদ্যালয়ের নাম ও খাজনা পরিশোধ আছে। এরপরও মৃত মোকছেদ আলীর ছেলে মামুন হোসেন দিং ও মৃত জিন্নাতুল ইসলামের ছেলে রিপন হোসেন দিং বাদী হয়ে গত ২৫ সেপ্টেম্বর ২০০৩খ্রি. আবারও একটি বাটোয়ারা মামলা করেন।
গত ২৩ মার্চ ২০২৪ খ্রি. ব্যবসায়ী রিপন হোসেনের নেতৃত্বে ২০ থেকে ৩০ অজ্ঞাত ব্যাক্তিদের সঙ্গে নিয়ে আদালতের রায় পেয়েছে মর্মে ঢোল পিটিয়ে চলমান দোকানে তালা ঝুলে দেন। এই ঘটনায় ঈদের পূর্বে ব্যবসায়ীরা বিপাকে পরেন। পরর্তীতে বিদ্যালয়ের পক্ষে প্রধান শিক্ষক রায় বাতিলের জন্য উচ্চ আদালতে আপিল করেন। আপিলের নোটিশ দেওয়ার পরে উপজেলা সহকারী কমিশনার ভুমি কর্মকর্তা( এসিল্যান্ড) কাজ বন্ধের নির্দেশ প্রদান করার পরেও অভিযুক্ত রিপন জোরপূর্বক অবৈধভাবে আদালতকে উপেক্ষা করে প্রাচীর নির্মাণ সহ বিদ্যালয়ের রোপনকৃত মেহগনি ও ফলজ ১০ থেকে ১২ টি গাছ কেটে ফেলে। এছাড়াও বিদ্যালয়ের ভাড়াটিয়া ব্যাবসায়িদের বিভিন্ন ভয়ভীতি দেখিয়ে ৪৫ দিনের মধ্যে দোকানঘর ছেড়ে দিতে হবে মর্মে স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নিয়ে তালা খুলে দেয়।
ভাড়াটিয়া সাইকেল মেকার মিলন হোসেন বলেন, বিদ্যালয়ের রোপনকৃত মেহগনীসহ ফলজ ১০-১২টি গাছ ছিল। এই গাছের নিচেই আমার দোকান। জমিটির নাকি রিপন ও মামুনরা রায় পেয়েছে তাই গাছ কেটে নিয়ে গেছে এবং জমিটি ফাঁকা অংশে পাঁচির তুলে দখল করছে। আমরা সাধারণ ব্যাবসায়ি বেশী কিছু বললে ব্যাবসা বন্ধ করে দিবে তাই ভয়ে কিছু বলি না ।
এ বিষয়ে ব্যবসায়ী দুলাল হোসেন বলেন, আমারা প্রায় ৪০ বছর যাবত এখানে দোকানঘর নির্মাণ করে ব্যাবসা করে আসছি এবং নিয়মিত বিদ্যালয়কে ভাড়া প্রদাণ করি। হঠাৎ করে ঈদের কয়েক দিন পূর্বে জমির উপর আদালতের রায় পেয়েছি এখনই সব মালামাল বের করে ঘর ছেড়ে দিতে হবে নিদের্শ দেন। এটা নাকি আদালতের নির্দেশ। আমি ভয়ে আতংকে কিছু মালামাল বের করার পর ওই অবস্থায় জোড় করে তালা ঝুলিয়ে দেয়। পরে বিভিন্ন ভয়ভীতি দেখিয়ে স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নিয়ে তালা খুলে দিলেও অনেক মালামাল পাওয়া যায়নি। এই দোকান দিয়ে আমাদের পরিবার চলে। তাদের এমন আচরনে আতংকের মধ্যে আছি।
এ বিষয় অভিযুক্ত রিপন হোসেন এর সাথে কথা বলতে গেলে তিনি সাংবাদিকদের উপর চড়াও হয়ে বলেন, আপনারা কি নাজির সাহেব এর চেয়েও বড়, নাজির সাহেব আমাকে জমি দখল দিয়ে গেছেন, যদি কিছু বলার থাকে তাহলে আদালতেই বলবো আপনাদের সাথে কোন কথা বলতে পারবো না ।
এ বিষয়ে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুজাউল ইসলাম বলেন, এই জমির বিরুদ্ধে তারা এক সময় মামলা করেছিল। ওই মামলায় প্রাথমিক ও আপিল দুই বায় বিদ্যালয়ের পক্ষে। তারপরও নিজেরাই বাদী-বিবাদী হয়ে এক তরফা রায় এনে জোড় পূর্বক জমি দখল করছেন। এসিল্যান্ড স্যার নিজেও নোটিশ দিয়েছে জমিতে কোন কাজ না করার কিন্তু তারা কিছুই মানছেনা। মূলত তাদের উদ্দেশ্য জমি যারই হোক তারা দখলে রাখতে চায়।
এ বিষয়ে বদলগাছী উপজেলা সহকারী কমিশনার ভুমি কর্মকর্তা(এসিল্যান্ড) মোসাঃ আতিয়া খাতুন জানান, আদালত কর্তৃক নোটিশ পাওয়ার পরে কাজ বন্ধের জন্য নোটিশ করা হয়েছে এর পরেও যদি কোন প্রকার কার্যক্রম করে তাহলে আইনানুগ ব্যবস্থ্যা নেওয়া হবে।