Dhaka ০১:১৫ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বগুড়ার ঐতিহ্যবাহী পোড়াদহ মেলায় এ বছরও নিষিদ্ধ ছিলো বাঘাইড় মাছ কেনাবেচা । 

  • Reporter Name
  • Update Time : ০৫:৫৭:৫৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৬ ফেব্রুয়ারী ২০২৩
  • ৫৭২ Time View
বগুড়ার ঐতিহ্যবাহী পোড়াদহ মেলায় এ বছরও নিষিদ্ধ ছিলো বাঘাইড় মাছ কেনাবেচা । 
আর.এ রাশেদ, বিশেষ প্রতিনিধিঃ
পূর্ব বগুড়া তথা গাবতলীর ঐতিহ্যবাহী পোড়াদহ মেলা নানা আয়োজনে সম্পন্ন হয়েছে। এই মেলাকে ঘিরে উৎসবের আমেজ ছড়িয়ে পড়েছিলো বগুড়া জেলা ছাড়াও আশেপাশের জেলাগুলোতেও। প্রায় ৩০০ বছরের ঐতিহ্য বগুড়া সদর থেকে প্রায় ১১ কিলোমিটার পূর্বে ইছামতি নদীর তীরে পোড়াদহ এলাকায় এ মেলা বসে। ফলে মেলাটি সবার কাছে ‘পোড়াদহ’ মেলা নামেই সর্বাধিক পরিচিত। মেলাস্থলে ছিল একটি বিশাল বটবৃক্ষ। সেখানে একদিন হঠাৎ এক সন্ন্যাসীর আবির্ভাব ঘটে। পরে সেখানে আশ্রম তৈরি করেন সন্ন্যাসীরা। একপর্যায়ে স্থানটি পূণ্যস্থানে পরিণত হয় হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষের কাছে। প্রতি বছর বাংলা সনের মাঘ মাসের শেষ অথবা ফাল্গুন মাসের প্রথম বুধবার উক্ত স্থানে সন্ন্যাসী পূজার আয়োজন করেন হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন। কালের আবর্তে স্থানটিতে লোকজনের উপস্থিতি বাড়তেই থাকে। এভাবে গোড়াপত্তন ঘটে পোড়াদহ মেলার। ধর্মের গণ্ডি পেরিয়ে সব ধর্মের মানুষের মেলবন্ধনে পরিণত হয় এই মেলা। মেলাটি একদিনের। তবে উৎসবের আমেজ থাকে সপ্তাহব্যাপী। নতুন জামাই-বউ ও স্বজনরা মিলে এ উৎসব করেন। প্রতি বছরের মতো এবারের মেলারও মূল আকর্ষণ ছিলো দেশি-বিদেশি বিভিন্ন প্রজাতির বড় বড় মাছ। তবে এবারো মেলায় বাঘাইর মাছ বিক্রি ও প্রদর্শন নিষিদ্ধ রয়েছে। গ্রামীণ জীবনে টাটকা মাছের স্বাদ দিতেই মেলার এ আয়োজন।
মেলায় আসা সবচেয়ে বড় ব্লাক কার্প মাছের ওজন ৪০ কেজি। নাটোরের বিল এলাকা থেকে মাছটি কিনে এনেছেন গোলাবাড়ীর মাছ ব্যবসায়ী বজলুর রহমান। দাম হেঁকেছেন ৮০ হাজার টাকা।
মাছ ছাড়াও বড় বড় মিষ্টি আর কাঠের তৈরি ফার্নিচার উঠেছিলো মেলায়। ফার্নিচার কেনাবেচা মেলার দিনে চললেও মূলত মেলার পরের দুই দিনেও পুরোদমে কেনাবেচা হয়। এ ছাড়াও বিভিন্ন আসবাবপত্র, বড়ই, কৃষি সামগ্রী ও খাদ্যদ্রব্য হাট-বাজারের মতোই ক্রয়-বিক্রয় হয়।
মেলার স্থান পোড়াদহ এলাকায় হলেও লোকজনের বাড়তি হওয়ায় মেলাটি ছড়িয়ে পড়েছে বিভিন্ন স্থানে। পোড়াদহ মেলাকে ঘিরে মেলা বসে সুবোধ বাজার, দূর্গাহাটা, বাইগুনী, দাঁড়াইল, তরনীহাট, পেরীহাটসহ আশপাশের বিভিন্ন স্থানে। মেলায় নাগরদোলা, চরকি, সার্কাস, মোটরসাইকেল খেলাসহ শিশুদের জন্য অন্যান্য খেলায় মুখরিত ছিলো।
মেলায় সংবাদ সংগ্রহাকে সারিয়াকান্দি থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) আশরাফুল আলম এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ঐতিহ্যবাহী এই মেলায় বিভিন্ন ধরনের মাছের অনেক দোকান বসেছে। অনেক বড় বড় মাছ আমদানী হয়েছে। আমি এতো বড় বড় মাছ‌‌‌ এর আগে কখনো দেখিনি।
এ ব্যাপারে মেলার পরিচালক স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল মজিদ বলেন, জেলা প্রশাসনের অনুমতিক্রমে মেলাটি সুন্দর ও সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে এলাকার যুবসমাজের সহযোগিতায় মেলাটি সুষ্ঠু ভাবে সম্পন্ন হয়েছে।
এ ব্যাপারে গাবতলী মডেল থানার ওসি সনাতন চন্দ্র সরকার বলেন, পোড়াদহ মেলাটি সুন্দর ও সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দ্বারা কঠোর নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। মেলায় কোনো জুয়া কিংবা অশ্লীল নাচ-গান করার চেষ্টা হলে তা কঠোর হস্তে দমন করা হবে।
এ বিষয়ে ইউএনও মো. আফতাবুজ্জামান-আল-ইমরান বলেন, মেলায় বাঘাইড় মাছ বেচাকেনা নিষেধ রয়েছে। বন সংরক্ষণ অধিদপ্তর বাঘাইড় মাছ বেচাকেনা নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন। কেউ মেলায় বাঘাইড় মাছ বেচার জন্য প্রদর্শন করলে এক বছরের কারাদন্ড অথবা ৫০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে অর্থদন্ড দন্ডিত হবে।
Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

আলোচিত

বোয়ালমারীতে চার বছর কর্মস্থলে না গিয়েও বেতন ভাতা নিচ্ছে উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রের ঝুমা !

বগুড়ার ঐতিহ্যবাহী পোড়াদহ মেলায় এ বছরও নিষিদ্ধ ছিলো বাঘাইড় মাছ কেনাবেচা । 

Update Time : ০৫:৫৭:৫৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৬ ফেব্রুয়ারী ২০২৩
বগুড়ার ঐতিহ্যবাহী পোড়াদহ মেলায় এ বছরও নিষিদ্ধ ছিলো বাঘাইড় মাছ কেনাবেচা । 
আর.এ রাশেদ, বিশেষ প্রতিনিধিঃ
পূর্ব বগুড়া তথা গাবতলীর ঐতিহ্যবাহী পোড়াদহ মেলা নানা আয়োজনে সম্পন্ন হয়েছে। এই মেলাকে ঘিরে উৎসবের আমেজ ছড়িয়ে পড়েছিলো বগুড়া জেলা ছাড়াও আশেপাশের জেলাগুলোতেও। প্রায় ৩০০ বছরের ঐতিহ্য বগুড়া সদর থেকে প্রায় ১১ কিলোমিটার পূর্বে ইছামতি নদীর তীরে পোড়াদহ এলাকায় এ মেলা বসে। ফলে মেলাটি সবার কাছে ‘পোড়াদহ’ মেলা নামেই সর্বাধিক পরিচিত। মেলাস্থলে ছিল একটি বিশাল বটবৃক্ষ। সেখানে একদিন হঠাৎ এক সন্ন্যাসীর আবির্ভাব ঘটে। পরে সেখানে আশ্রম তৈরি করেন সন্ন্যাসীরা। একপর্যায়ে স্থানটি পূণ্যস্থানে পরিণত হয় হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষের কাছে। প্রতি বছর বাংলা সনের মাঘ মাসের শেষ অথবা ফাল্গুন মাসের প্রথম বুধবার উক্ত স্থানে সন্ন্যাসী পূজার আয়োজন করেন হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন। কালের আবর্তে স্থানটিতে লোকজনের উপস্থিতি বাড়তেই থাকে। এভাবে গোড়াপত্তন ঘটে পোড়াদহ মেলার। ধর্মের গণ্ডি পেরিয়ে সব ধর্মের মানুষের মেলবন্ধনে পরিণত হয় এই মেলা। মেলাটি একদিনের। তবে উৎসবের আমেজ থাকে সপ্তাহব্যাপী। নতুন জামাই-বউ ও স্বজনরা মিলে এ উৎসব করেন। প্রতি বছরের মতো এবারের মেলারও মূল আকর্ষণ ছিলো দেশি-বিদেশি বিভিন্ন প্রজাতির বড় বড় মাছ। তবে এবারো মেলায় বাঘাইর মাছ বিক্রি ও প্রদর্শন নিষিদ্ধ রয়েছে। গ্রামীণ জীবনে টাটকা মাছের স্বাদ দিতেই মেলার এ আয়োজন।
মেলায় আসা সবচেয়ে বড় ব্লাক কার্প মাছের ওজন ৪০ কেজি। নাটোরের বিল এলাকা থেকে মাছটি কিনে এনেছেন গোলাবাড়ীর মাছ ব্যবসায়ী বজলুর রহমান। দাম হেঁকেছেন ৮০ হাজার টাকা।
মাছ ছাড়াও বড় বড় মিষ্টি আর কাঠের তৈরি ফার্নিচার উঠেছিলো মেলায়। ফার্নিচার কেনাবেচা মেলার দিনে চললেও মূলত মেলার পরের দুই দিনেও পুরোদমে কেনাবেচা হয়। এ ছাড়াও বিভিন্ন আসবাবপত্র, বড়ই, কৃষি সামগ্রী ও খাদ্যদ্রব্য হাট-বাজারের মতোই ক্রয়-বিক্রয় হয়।
মেলার স্থান পোড়াদহ এলাকায় হলেও লোকজনের বাড়তি হওয়ায় মেলাটি ছড়িয়ে পড়েছে বিভিন্ন স্থানে। পোড়াদহ মেলাকে ঘিরে মেলা বসে সুবোধ বাজার, দূর্গাহাটা, বাইগুনী, দাঁড়াইল, তরনীহাট, পেরীহাটসহ আশপাশের বিভিন্ন স্থানে। মেলায় নাগরদোলা, চরকি, সার্কাস, মোটরসাইকেল খেলাসহ শিশুদের জন্য অন্যান্য খেলায় মুখরিত ছিলো।
মেলায় সংবাদ সংগ্রহাকে সারিয়াকান্দি থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) আশরাফুল আলম এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ঐতিহ্যবাহী এই মেলায় বিভিন্ন ধরনের মাছের অনেক দোকান বসেছে। অনেক বড় বড় মাছ আমদানী হয়েছে। আমি এতো বড় বড় মাছ‌‌‌ এর আগে কখনো দেখিনি।
এ ব্যাপারে মেলার পরিচালক স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল মজিদ বলেন, জেলা প্রশাসনের অনুমতিক্রমে মেলাটি সুন্দর ও সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে এলাকার যুবসমাজের সহযোগিতায় মেলাটি সুষ্ঠু ভাবে সম্পন্ন হয়েছে।
এ ব্যাপারে গাবতলী মডেল থানার ওসি সনাতন চন্দ্র সরকার বলেন, পোড়াদহ মেলাটি সুন্দর ও সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দ্বারা কঠোর নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। মেলায় কোনো জুয়া কিংবা অশ্লীল নাচ-গান করার চেষ্টা হলে তা কঠোর হস্তে দমন করা হবে।
এ বিষয়ে ইউএনও মো. আফতাবুজ্জামান-আল-ইমরান বলেন, মেলায় বাঘাইড় মাছ বেচাকেনা নিষেধ রয়েছে। বন সংরক্ষণ অধিদপ্তর বাঘাইড় মাছ বেচাকেনা নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন। কেউ মেলায় বাঘাইড় মাছ বেচার জন্য প্রদর্শন করলে এক বছরের কারাদন্ড অথবা ৫০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে অর্থদন্ড দন্ডিত হবে।