বরিশালে ডাকাতিতে সহায়তা করায় আ.লীগের ৫ নেতাকর্মী বহিষ্কার করা হয়েছে।
রমজান আহম্মেদ রঞ্জু, বরিশাল ব্যুরো চীফ –
বরিশাল : ডাকাতিতে সহায়তা করার অভিযোগে বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার
ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতিসহ পাঁচ নেতাকর্মীকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
রোববার (২৫ ডিসেম্বর) মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের জরুরি সভার
সিদ্ধান্তে বহিষ্কার করা হয় বলে সভাপতি ও পৌরমেয়র মো. কামাল উদ্দিন খান
জানিয়েছেন। বহিষ্কৃতরা হলেন- উপজেলার দরিচর খাজুরিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী
লীগের সভাপতি ও ইউপি সদস্য সালাম দেওয়ান, ওই ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ড
আওয়ামী লীগ সভাপতি শহীদ দেওয়ান, ইউনিয়ন যুবলীগ আহ্বায়ক মোশারেফ আকন
ও দলীয় কর্মী বাচ্চু এবং কাশেম দেওয়ান। উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও
পৌরমেয়র মো. কামাল উদ্দিন খান জানান, অনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার
অভিযোগে তাদের স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে। অনৈতিক কর্মকাণ্ড কী জানতে
চাইলে তিনি বলেন, পেপার পত্রিকায় যে অভিযোগ এসেছে, সেই কারণে তাদের
বহিষ্কার করা হয়েছে। এর আগে, ৭ ডিসেম্বর উপজেলার চর খাজুরিয়া গ্রাম থেকে
একটি দেশীয় তৈরি একনলা বন্দুক ও দুই রাউন্ড কার্তুজসহ আটক করে পুলিশ। ওই
দিন মেহেন্দিগঞ্জ থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আরিফুর রহমান জানান, নাইম
দেওয়ানের নামে চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, বিস্ফোরক দ্রব্যে ও হত্যাসহ বিভিন্ন
অভিযোগে ১৩/১৪টি মামলা রয়েছে। কয়েকটি মামলায় তার নামে গ্রেফতারি পরোয়ানা
রয়েছে। রাতে নাইমের ঘরে অভিযান চালানো হয়। এ সময় তাকে গ্রেফতার করা হয়।
তার স্বীকারোক্তি অনুযায়ী ঘর তল্লাশি করে একটি দেশীয় তৈরি একনলা বন্দুক ও
দুই রাউন্ড কার্তুজ উদ্ধার করা হয়েছে। এ ঘটনায় থানার এসআই রফিকুল ইসলাম
বাদী হয়ে অস্ত্র ও বিস্ফোরক দ্রব্যে আইনে মামলা করা হয়েছে। মামলায়
একমাত্র নাইমকে আসামি করা হয়েছে। এসআই আরিফ আরও জানান, নাইম
জিজ্ঞাসাবাদে ডাকাত দলের গডফাদারসহ অন্যান্য সদস্যদের পরিচয় প্রকাশ
করেছে। সাম্প্রতি এ সংক্রান্ত একটি ভিডিও ভাইরাল হয়। ভিডিওতে দেখা যায়,
ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের নামোল্লেখ করে আওয়ামী লীগ ও যুবলীগ নেতাদের
অভিভাবক বলছেন নাঈম। গডফাদার হিসেবে যাদের নাম বলেছেন তারা হলেন-
দড়িরচর-খাজুরিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও স্থানীয় সংসদ সদস্য
পঙ্কজ দেবনাথের অনুসারী সালাম দেওয়ান, ৮ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের
সভাপতি ও ইউপি সদস্য শহীদ দেওয়ান এবং ৭ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য,
ইউনিয়ন যুবলীগের আহ্বায়ক মোশাররফ আকন। ওই ৩ জন ছাড়াও নাঈমের দেওয়া
স্বীকারোক্তিতে আরও দুইজনের নাম এসেছে ডাকাতের গডফাদার হিসেবে। এরা
হলেন- বাচ্চু এবং কাশেম দেওয়ান। ক্ষমতাসীন দলের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত এই
দুইজন অবশ্য দলীয় কোনো পদ-পদবীতে নেই। এসব নেতাদের নিয়মিত ডাকাতির ভাগ
দেওয়ার পাশাপাশি মাসিকভিত্তিতে টাকা দিতে হয়, এমন কথোপকথনও ছড়িয়ে পড়ে
ওই ভিডিওর মাধ্যমে। বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ওই ভিডিও ভাইরাল হলে
বিষয়টি নিয়ে তোলপাড় হয়।
মোবা: 01620-849601
তারিখ: 26/12/2022
বরিশাল সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের চেয়ার-টেবিলও ঘুষ খায়!
রমজান আহম্মেদ (রঞ্জু), বরিশাল ব্যুরো চীফ –
বরিশাল : পদে পদে টাকা না দিলে কাজ হয় না বরিশাল সাব রেজিস্ট্রি ও সেটেলমেন্ট
অফিসে। এসব অফিসের বিভিন্ন পদের কর্মচারীরা ঘুষ বাণিজ্যে জড়িত বলে
অভিযোগ পাওয়া গেছে। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়ছেন সাধারণ মানুষ। তবে ঘুষ
বাণিজ্যের বিষয়ে জানতে চাইলে সবকিছু অস্বীকার করে অভিযুক্তরা। বরিশাল সাব
রেজিস্ট্রি অফিসের তৃতীয় তলায় দলিল সার্স দিতে আসা এক গ্রাহক সরকারি ফি
জমা দেবার সঙ্গে সঙ্গে তা কাড়াকাড়ি করে ভাগাভাগি করে নেয় তল্লাশিকারক
খন্দকার নাছির উদ্দিন ও জাহিদ হাসান। সরকারি টাকা কোষাগারে জমা না দিয়ে
কাড়াকাড়ি-ভাগাভাগি কেন করলেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তারা জানান, কোনো টাকা
ভাগাভাগি হয়নি, বিষয়টি সম্পূর্ণই মজা করেছেন বলে দাবি করেন তারা। তবে
গ্রাহকদের অভিযোগ, বিভিন্ন কাজে সরকারি ফি নির্দিষ্ট থাকলেও অতিরিক্ত ফি
ছাড়া কোনো কাজই হয় না। আবু বকর নামে এক ভুক্তভোগী বলেন, ‘সাব রেজিস্ট্রে
অফিসে টাকা ছাড়া কোনো করা যায়। প্রতিটি টেবিলের জন্য নির্দিষ্ট টাকা বরাদ্দ
থাকে। টাকা না পৌঁছালে কোনো দলিলের কাজ আগায় না। অতিরিক্ত টাকা দেয়া এ
অফিসের নিয়ম। তন্ময় রাড়ি নামে আরেক ভুক্তভোগী জানান, তিন মাস ঘুরে সরকারি
ফি জমা দিয়ে দলিল ঠিক করতে চেয়েছেন তিনি। পরে না পেরে ঘুষ দিয়ে কাজ করাতে
হয়েছে তাকে। করিম হোসেন নামে এক সেবাগ্রহীতা বলেন, ‘আমরা শহরে থেকেই সাব
রেজিস্ট্রি অফিসের অনিয়মের বিরুদ্ধে কিছু করতে পারি না। গ্রাম থেকে আসা
মানুষদের আরও সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। এ বিষয়ে সময় সংবাদের সঙ্গে কথা
বলতে চাননি জেলা রেজিস্ট্রার। তবে বরিশাল সাব রেজিস্ট্রি অফিসের রেকর্ড
কিপার বিধান চন্দ্র সুতার তল্লাশিকারকদের নির্দিষ্ট ফির চেয়ে বেশি টাকা নেবার
বিষয়টি স্বীকার করে জানান, যথাযথ প্রমাণ পেলে ব্যবস্থা নেবেন তিনি। শুধু
বরিশাল সাব রেজিস্ট্রি অফিসই নয়, সেটেলমেন্ট অফিসেরও একই অবস্থা।
সেখানেও ছোট-বড় সব কাজের বিনিময়েই চলছে অতিরিক্ত টাকার লেনদেন। এমনকি
ছদ্মবেশে গেলে সময়ের প্রতিবেদকের কাছেও ৫০০ টাকার বিনিময়ে সব কাজ করে
দেবার কথা জানান অফিসের সার্ভে সহায়ক মজিবর রহমান। যদিও পরে সবকিছু
অস্বীকার করেন তিনি। তিনি বলেন, ‘আমি কোনো ঘুষ বাণিজ্য করিনি। আমি কারোর
কাছে টাকা চাইনি।’ এ বিষয়ে জানতে চাইলে বরিশাল সেটেলমেন্ট অফিসের সহকারী
সেটেলমেন্ট অফিসার বিকাশ চন্দ্র হাওলাদার বলেন, ‘অফিসের কেউ যদি ঘুষ
বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত থাকে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
বরিশাল জেলায় জমির মৌজার সংখ্যা প্রায় ১ হাজার ৫০টি। এ ছাড়া ৬৯টি ইউনিয়ন ভূমি
অফিস ও ১০টি উপজেলা ভূমি অফিস রয়েছে।
মোবা: 01620-849601
তারিখ: 26/12/2022