বরিশালে ভোলার গ্যাস সরবরাহের দাবি।
রমজান আহম্মেদ (রঞ্জু), ব্যুরো চীফ, বরিশাল –
পদ্মা সেতু স্থাপনের পর নদীবেষ্টিত দক্ষিণাঞ্চলের সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার বৈপ্লবিক
পরিবর্তন এসেছে। তবে এখনও আশানুরুপ কল-কারখানা গড়ে উঠতে শুরু করেনি এ অঞ্চলে।
শিল্প উদ্যোক্তারা বলছেন, ভোলার গ্যাস পাইপলাইনে সরবরাহ শুরু হলে এ সেক্টরের
উন্নয়নে সমৃদ্ধ হবে বৃহত্তর বরিশাল। তাই পরিস্থিতির উত্তরণে ভোলার গ্যাস পাইপলাইনে
বরিশালে সরবরাহের দাবি তাদের। শিল্প উদ্যোক্তাদের তথ্যানুযায়ী, শুধু বরিশাল শহর নয়,
ভোলা ব্যতিত বিভাগের বাকি ৫ জেলায় যে সব কল-কারখানা রয়েছে, তার বেশিরভাগই
বিদ্যুতের ওপর নির্ভর। আর কিছু আছে সিলিন্ডার গ্যাসসহ অন্য জ্বালানির ওপর নির্ভর
করে চলছে। তবে গত কয়েকবছরে দক্ষিণাঞ্চলের সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থাসহ বিভিন্নখাতে
যে হারে উন্নয়ন হয়েছে তাতে যে পরিমানে কল-কারখানা স্থাপন হওয়ার কথা ছিলো তা বাস্তবে
হয়নি। পটুয়াখালীর কলাপাড়া বাসিন্দা ও ব্যবসায়ী জসীম পারভেজ জানান, পদ্মা সেতু
উদ্বোধনের আগে থেকেই বরিশাল-পটুয়াখালী মহাসড়কের দুইপাশে আমতলী থেকে কুয়াকাটা
পর্যন্ত বিভিন্ন স্থানে শিল্প মালিকরা জমি কিনেছেন। তবে পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর
সইভাবে অবকাঠামো গড়ে ওঠেনি। প্রকৌশলী আতিকুর রহমান বলেন, বর্তমান সরকারের
আমলে দক্ষিণাঞ্চলে বাস্তব উন্নয়ন হয়েছে। ভোলা ব্যতিত বরিশাল বিভাগের বাকি ৫ জেলার
মধ্যে ফেরিবিহীন সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা নিশ্চিত হয়েছে। সবশেষ পদ্মা সেতুর উদ্বোধন
তো এ অঞ্চলে সড়কপথের বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনে দিয়েছে। এছাড়া নৌপথেও পরিবর্তন
আনা হয়েছে, অভ্যন্তরীন বিভিন্ন নৌপথে ড্রেজিং করে সচল করা হয়েছে। এছাড়া পণ্য
পরিবহনের জন্য মংলা বন্দর থেকে বরিশাল হয়ে ঢাকার নৌপথেরও উন্নয়ন ঘটানো হচ্ছে।
যদিও এরইমধ্যে পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় পায়রা সমুদ্র বন্দর চালু হয়েছে, তাপ বিদ্যুৎ
কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হয়ে গেছে এবং আকাশপথেও বিমান চলাচল সচল রয়েছে।
এছাড়া এ অঞ্চলে রয়েছে বিপুল সংখ্যক দক্ষ জনবলও। সবমিলিয়ে বরিশাল অঞ্চল এখন
শিল্প বান্ধব একটি অঞ্চল। যদিও ব্যবসায়ীরা বলছেন, জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধিতে বেড়েছে
বিদ্যুতের দাম। আর এই বিদ্যুৎ ও সিলিন্ডার গ্যাস দিয়ে পণ্য উৎপাদন খরচ বেশি হওয়ায়
প্রতিযোগিতায় এগুতে পারছেন না বিনিয়োগকারীরা। বর্তমানে বরিশাল বিসিকে এলপি গ্যাস
নির্ভর কারখানাগুলোর খরচ ন্যাচারাল গ্যাসের থেকে কয়েকগুণ বেশি। আবার ঢাকায় গ্যাস
নির্ভর কারখানাগুলোর যে খরচ হচ্ছে বিদ্যুৎ দিয়ে সেই ধরনের কারখানা সচল রাখতে ৩-৫
গুণ বেশি খরচ হচ্ছে। ফলে বরিশাল অঞ্চলে কল-কারখানা গড়ে তুলতে ধীরগতি সৃষ্টি হয়েছে
বিনিয়োগকারীদের মাঝে। এ কারণে আগে থেকেই বরিশাল অঞ্চলের বিভিন্ন বিসিকে খালি
থাকা প্লটগুলো এখনও বরাদ্দ নিতে অনীহা রয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। আবার যারা
প্লট বরাদ্দ নিয়েছেন তারাও অবকাঠামো নির্মাণ করছেন না গ্যাসের অজুহাতে। আর যারা
এরইমধ্যে অবকাঠামো গড়ে পণ্য উৎপাদন করছেন, তারা বলছেন বরিশালে অপার সম্ভাবনা
থাকলেও গ্যাস না হলে অন্য বিভাগের সঙ্গে ব্যবসায় মার খেয়ে যেতে হবে। ফলে এর প্রভাব
এ অঞ্চলের মানুষের কর্মসংস্থানের ওপরেও পরবে। বরিশাল চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড
ইন্ডাস্ট্রি এর সভাপতি সাইদুর রহমান রিন্টু বলেন, বিভাগের মধ্যে ভোলাতেই রয়েছে
প্রাকৃতিক গ্যাস। বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চলে এ গ্যাস ছড়িয়ে দিলে পার্শবর্তী বিভাগের জেলার
সাথে আমরাও ব্যবসায়িকভাবে টিকে থাকতে পারব। তাই বিভাগের জেলাগুলোতে পাইপলাইনের
মাধ্যমে সেই গ্যাস সরবরাহের দাবি ব্যবসায়ীদের। আর সরকার বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে
বিবেচনা করছে বলে জানিয়েছেন বরিশালের বিভাগীয় কমিশনার মো. আমিন উল আহসান। তিনি
বলেন, ভোলার গ্যাস যেকোন ফরমেটে বরিশাল বা মূল ভূখণ্ডে শিল্প উদ্যাক্তাদের সহজ করে
ব্যবহারের সুযোগ করে দেওয়ার জন্য সরকারের সক্রিয় বিবেচনাধীন রয়েছে।
তারিখ: ১৫/০১/২০২৩
মোবাঃ ০১৬২০-৮৪৯৬০১
বরিশালের রসুলপুর বস্তির নামে ফের দখলে কীর্তনখোলা নদী।
রমজান আহম্মেদ (রঞ্জু), ব্যুরো চীফ, বরিশাল –
বরিশাল নগরীর কোলঘেঁষে বয়ে যাওয়া স্রোতস্বিনী কীর্তনখোলা নদী কয়েক হাজার দখলদার গিলে
ফেলছে। এবার তারা রসুলপুর বস্তির নামে দখলে নেমেছে। বিআইডব্লিউটিএ ৪ হাজার ৩২০ দখলদারের
তালিকা করলেও এ সংখ্যা আরও বেড়েছে। যদিও এ নদী রক্ষায় পরিবেশবাদীরা দুই যুগ ধরে আন্দোলন
করছেন। সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, রসুলপুর বস্তির নামে নতুন করে সাইনবোর্ড লাগিয়ে
কীর্তনখোলার জায়গা দখলে বাঁধ দেওয়া হয়েছে। ৯নং ওয়ার্ডের একটি অংশে বাঁশ ও টিন দিয়ে ঘিরে ১০
শতাংশ জমির ক্রয়সূত্রে মালিক দাবি করেছেন অজুফা বেগম। স্থানীয়রা জানান, দুই সপ্তাহ ধরে এ
জমিতে বাঁশ দিয়ে পাইলিং করা হচ্ছে। এরপর টিন দিয়ে আটকে দেওয়া হয়েছে। হয়তো এরপর মাটি ভরাট
করা হবে। তারপর স্থাপনা নির্মাণ করা হবে। এ বিষয়ে সাইনবোর্ডে দেওয়া মোবাইল ফোন নম্বরে
ফোন করা হলে অজুফার ছেলে সৈয়দ ইমাম হোসেন রাজু বলেন, আমরা ১৯৯৮ সালে কামরুন্নেছার কাছ
থেকে জমিটি কিনেছি। ২০০০ সালে এটি রেকর্ড করা হয়েছে। ২০২২ সাল পর্যন্ত এ জমির হোল্ডিং
নম্বর, খাজনা, করসহ সব কাগজপত্র নবায়ন করা হয়েছে। আমরা নতুন করে কোনো জায়গা দখল
করিনি। শুধু রসুলপুরই নয়, কীর্তনখোলা নদীর বিভিন্ন স্থানে যে যার মতো করে নদী দখল করছে।
কেউ নদীর পাড়-সীমানা দখল করে গড়ে তুলছে বিভিন্ন স্থাপনা, কেউ আবার নদীর তির দখল করে গড়ে
তুলছে ইট, বালু, পাথর ও কয়লা বিক্রির ডিপো ও লঞ্চ তৈরির ডকইয়ার্ড। নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে
জেগে ওঠা রসুলপুর চর, মোহাম্মদপুর চর, দপদপিয়ার চর, কর্ণকাঠী চর, পলাশপুর চর, খোন্নারের
চর এবং চর বাড়িয়ার চর এবং দপদপিয়া ফেরিঘাটসংলগ্ন এলাকা দখল করেছে প্রভাবশালীরা।
এরপরও দখলদারদের বিরুদ্ধে কার্যকর আইনি ব্যবস্থা নেয়নি প্রশাসন। জেলা প্রশাসন ও
বিআইডব্লিউটিএ সূত্রে জানা গেছে, ১৯৬০ সালে নৌবন্দর প্রতিষ্ঠার জন্য কীর্তনখোলা নদীর
তিরের ৩৬ দশমিক ৮০ একর জমি বিআইডব্লিউটিএর অনুকূলে হস্তান্তর করে জেলা প্রশাসন। কিন্তু
৫৬ বছরেও সীমানা নির্ধারণ করা সম্ভব হয়নি। এর ফলে অধিকাংশ সম্পত্তি নামে-বেনামে দখল করে
নেন প্রভাবশালীরা। নৌবন্দরের উত্তর দিকে জেল খালসহ রসুলপুর এলাকায় ২৮ একরের মধ্যে ২০
একর বেদখল হয়ে আছে। বরিশাল নৌবন্দরের উত্তরে আমানতগঞ্জ খাল থেকে দক্ষিণের রূপাতলী
সিএসডি গোডাউনের খালের দক্ষিণ পাশ পর্যন্ত ৩ দশমিক ৫৭০ কিলোমিটার কীর্তনখোলার তির
বিআইডব্লিউটিএ’র। বাকি অংশ জেলা প্রশাসনের। তবে বন্দরসংলগ্ন নদীর পূর্ব ও পশ্চিম তিরে
উচ্চ জলরেখা থেকে তিরের দিকে ৫০ গজ পর্যন্ত উভয় তিরে ৩৬ দশমিক ৩০ কিলোমিটার ফোরশোর
রয়েছে, যার অর্ধেকই বেদখলে চলে গেছে। জানা গেছে, ইতোমধ্যে কীর্তনখোলার দখলকারী ৪ হাজার
৩২০ জন অবৈধ দখলদারের খসড়া একটি তালিকা তৈরি করেছে বিআইডব্লিউটিএ। সূত্র জানায়, ৩-৪
বছর আগে হাইকোর্টের রায়ে ১০ একর ৮২ শতাংশ জমি পুরোপুরি হাতছাড়া হয়ে যায়
বিআইডব্লিউটিএ’র। এছাড়া পোর্ট রোডের মৎস্য আড়তসংলগ্ন এলাকার কয়েক একর জমি মৌজার
নাম পরিবর্তনের কারণে বেদখলে রয়েছে। একইভাবে ১ একর ২৭ শতাংশ জমির ওপরে
বিআইডব্লিউটিএ’র অনুমতি ছাড়াই মুক্তিযোদ্ধা পার্ক স্থাপন করে বরিশাল সিটি করপোরেশন। যদিও
বিআইডব্লিউটিএ’র দাবি, পার্ক নির্মাণ হলেও এ জমি তাদের দখলেই রয়েছে। এছাড়া ২ একর ৫৭
শতাংশ জমি নদীতে বিলীন হয়েছে বলে তারা দাবি করেন। এ ব্যাপারে বিআইডব্লিউটিএ বরিশালের
নৌবন্দর ও পরিবহণ বিভাগের যুগ্ম পরিচালক আবদুর রাজ্জাক বলেন, নতুন করে জমি দখলের
খবরটি আমার জানা ছিল না। এখন শুনেছি। খোঁজখবর নিয়ে দখলদারদের ডেকে আনা হবে। পরে আইনি
ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এছাড়া নগরীর আমানতগঞ্জ খাল থেকে রূপাতলী দক্ষিণ পাশ পর্যন্ত ৩
দশমিক ৫৭০ কিলোমিটার কীর্তনখোলার তির বিআইডব্লিউটিএ’র। নদী তিরের দিকে ৫০ গজ পর্যন্ত
উভয় তিরে ৩৬ দশমিক ৩০ কিলোমিটার ফোরশোর রয়েছে, যার অর্ধেক বেদখল হয়ে গেছে। ইতোমধ্যে
দখলদারদের একটি খসড়া তালিকা করা হয়েছে। নদীর জায়গা উদ্ধারে জেলা প্রশাসনের সঙ্গে
যৌথভাবে জরিপ চলছে। দখলদারদের চূড়ান্ত তালিকা প্রণয়ন এবং জমি জরিপ কার্যক্রম শেষ হলেই
তাদের আইনানুগ ব্যবস্থা করা হবে। জানা গেছে, ২০১৫ সাল থেকে দখলদারদের তালিকা প্রস্তুতির
কাজ শুরু করেছে বিআইডব্লিউটিএ। ৪ হাজার ৩২০ জন অবৈধ দখলদারের খসড়া তালিকা তৈরি করা
হলেও তা এখনো আলোর মুখ দেখেনি।
তারিখ: ১৫/০১/২০২৩
মোবাইল: ০১৬২০-৮৪৯৬০১