Dhaka ০৮:৫৬ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বরিশাল শেরে-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন ওয়ার্ডে রোগীর চাপ: সঙ্কট চিকিৎসকের।

  • Reporter Name
  • Update Time : ০৯:০০:০৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ জানুয়ারী ২০২৩
  • ৬৫০ Time View

বরিশাল শেরে-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের
মেডিসিন ওয়ার্ডে রোগীর চাপ: সঙ্কট চিকিৎসকের।
রমজান আহম্মেদ (রঞ্জু), ব্যুরো চীফ, বরিশাল –
বরিশাল : দক্ষিণাঞ্চলের সর্ববৃহৎ চিকিৎসা সেবা কেন্দ্র বরিশাল শেরে-
ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (শেবাচিম)। এই হাসপাতালের
মেডিসিন ওয়ার্ডে যেন তিল ধারণের ঠাঁই নেই। ধারণ ক্ষমতার তিনগুণের
বেশি রোগীর চিকিৎসা সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছে চিকিৎসকরা। ফলে
চিকিৎসক সঙ্কটে প্রতিনিয়ত রোগী মৃত্যুর অভিযোগ উঠছে। এ নিয়ে
রোগীর স্বজন ও হাসপাতালের চিকিৎসকদের মধ্যে প্রতিদিনই ঘটছে
হামলা পাল্টা হামলার ঘটনা। প্রতিষ্ঠার প্রায় ৫৫ বছর পার হলেও
চিকিৎসক সঙ্কট ঘোচাতে পারেনি প্রতিষ্ঠানটি। ফলে ৫শ’ শয্যার
চিকিৎসক দিয়ে ১ হাজার বেডে প্রায় ২৫শ’ রোগীর চিকিৎসা সেবা
কার্যক্রম চলছে। সবশেষ রোববার (২২ জানুয়ারি) চিকিৎসকের অবহেলায়
রোগী মৃত্যুর অভিযোগে নিহতের স্বজনরা হাসপাতালের মেডিসিন ওয়ার্ডের
চিকিৎসকদের টেবিলের গ্লাস ভাংচুরের ঘটনা ঘটায়। এনিয়ে রোগীর স্বজন
ও চিকিৎসকদের মধ্যে বাকবিতণ্ডা থেকে শুরু করে বিষয়টি পুলিশ পর্যন্ত
গড়ায়। সোমবার (২৩ জানুয়ারি) হাসপাতালের মেডিসিন ওয়ার্ডে সরজমিনে
গিয়ে দেখা যায়, রোগীর চাপ এত বেশি যে ওয়ার্ডে পা ফেলার জায়গা নেই।
ওয়ার্ডে বেড সংকুলান না হওয়ায় হাঁটার জায়গায় রোগীর বিছানা করে দেওয়া
হয়েছে। ফলে ভোগান্তি আর চরম চিকিৎসক সঙ্কটের মধ্য দিয়ে চিকিৎসা
নিয়ে বাড়ি ফিরছে এই অঞ্চলের রোগীরা। মহিলা মেডিসিন ওয়ার্ডে
কর্তব্যরত সেবিকা নিপা আক্তার বলেন, ওয়ার্ডে মোট ৭২ টি বেড রয়েছে।
সেখানে ৭২ বেডের বিপরীতে প্রতিদিন গড়ে ২২০ থেকে ২৫০ জন রোগী
চিকিৎসা নিচ্ছে। এত রোগীর চিকিৎসা সেবা দিতে চিকিৎসক, ইন্টার্ন ও
নার্সদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। হাসপাতালের মহিলা মেডিসিন ওয়ার্ডে
চিকিৎসাধীন ঝালকাঠির শাফিয়া বেগম অভিযোগ করে বলেন, ভালো
চিকিৎসার আশায় ঝালকাঠি থেকে বরিশাল মেডিকেলে ভর্তি হইছি, কিন্তু
চার দিন পার হলেও বড় ডাক্তারের দেখা পাইছি এক দিন। এছাড়া সব সময়

ইন্টার্ন চিকিৎসকরা আইসা দেখে। একই অভিযোগ আমতলী থেকে গাইনী
সমস্যায় চিকিৎসা নিতে আসা মিনারা বেগমের। তিনি বলেন, মাঝে মাঝে
রেজিস্ট্রার ও সহকারী রেজিস্ট্রার ছাড়া কোনো বড় ডাক্তার আসেনি
দেখতে। এছাড়াও হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ড ঘুরে দেখা গেছে, রোগীর চাপ
দ্বিগুণ থাকায় হাসপাতালের মেঝেতে শুয়ে চিকিৎসা নিচ্ছে হাজারের বেশি
রোগী। হাসপাতালের পরিচালক ডা. সাইফুল ইসলাম বলেন, হাসপাতালে যে
পরিমাণ চিকিৎসক রয়েছে তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম। ৫ শয্যার
হাসপাতালকে ১ হাজার শয্যায় উন্নীত করা হলেও বাড়ানো হয়নি চিকিৎসক।
বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসক রয়েছে ৫শ’ রোগীর। সেখানেও ২২৪টি
পদের বিপরীতে ৪২ জন চিকিৎসকের পদ শূন্য রয়েছে। অথচ ১ হাজার
বেডের হাসপাতালে প্রতিদিন চিকিৎসা নিচ্ছে প্রায় ২৫শ’ রোগী। হিসাব
অনুযায়ী হাসপাতালে প্রায় ৩শ’ চিকিৎসকের পদ শূন্য রয়েছে। এছাড়া
হাসপাতালের বহির্বিভাগে প্রতিদিন ২৫শ’ থেকে ৩ হাজার রোগী চিকিৎসা
নিচ্ছে। হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, ১৯৬৮ সালে ২৫০ শয্যা নিয়ে
হাসপাতালটির যাত্রা শুরু হয়। পরে হাসপাতালটিকে ৫শ’ শয্যায় উন্নীত করা
হয়। সবশেষ ২০১৩ সালে ১ হাজার শয্যায় উন্নীত করা হলেও বাড়েনি সেই
পরিমাণ চিকিৎসক। বর্তমানে হাসপাতালের মেডিসিন ওয়ার্ডের কার্যক্রম
নতুন ভবনে চালু করা হলেও বাড়ানো হয়নি চিকিৎসক। হাসপাতালটি
প্রতিষ্ঠাকালীন ২২৪ জন চিকিৎসাকের পদ থাকলেও প্রতিষ্ঠার ৫৫ বছর
পরে এসেও সেই জনবলের পূর্ণতা পায়নি প্রতিষ্ঠানটি। হাসপাতাল সূত্র
অনুযায়ী পরিচালক, উপ-পরিচালক, আবাসিক চিকিৎসক, রেজিস্ট্রার,
সহকারী রেজিস্ট্রারসহ ২২৪ জন চিকিৎসকের পদ থাকলেও সেই পদের
বিপরীতে সবশেষ তথ্য অনুযায়ী চিকিৎসক রয়েছে মাত্র ১৮২ জন। ৪২ জন
চিকিৎসকের পদ এখনও শূন্য রয়েছে। হাসপাতালের প্রশাসনিক শাখা সূত্রে
জানা গেছে, হাজার শয্যার বিপরীতে হাসপাতালে প্রতিদিন গড়ে দেড় থেকে দুই
হাজার রোগী চিকিৎসা নেয়। গত ২২ জানুয়ারি হাসপাতালে ভর্তি রোগীর
সংখ্যা ছিল ২১৫৬ জন। এর আগে ২১ জানুয়ারি ভর্তি ছিল ২১২৩ জন। যা
শীতের সময় কিছুটা কম থাকলেও গরমে আরও বেড়ে যায়। এই রোগী বিপরীতে
মাত্র ১৮২ জন চিকিৎসক দিয়ে সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি।
সোমবার (২৩ জানুয়ারি) হাসপাতালের সবশেষ হিসাব অনুযায়ী (৫০০ শয্যার

জন্য) চিকিৎসকদের ৪২টি পদই শূন্য রয়েছে। এরমধ্যে উপ-পরিচালকের
একটি পদের একটিই শূন্য রয়েছে। ডেন্টালের জুনিয়র কনস্যালটেন্টের
একটি পদের মধ্যে একটি শূন্য রয়েছে। আবাসিক সার্জন ৮টি মধ্যে ১টি পদ
খালি রয়েছে। রেজিস্ট্রার ৩৩টি পদের মধ্যে ২১ জন থাকলেও ১২টি পদ
এখনও শূন্য রয়েছে। সহকারী রেজিস্ট্রার ৬৬টি পদের মধ্যে ৪৫ জন
থাকলেও শূন্য রয়েছে ২১টি পদ। ইমারজেন্সি মেডিকেল অফিসার (ইএমও)
১০টি পদের মধ্যে ৯ জন থাকলেও ১টি পদ শূন্য রয়েছে। এছাড়াও মেডিকেল
অফিসার (বহিঃ) বিভাগ, এমও সহকারী সার্জন, এম ওবিটিসি, এমও
রেডিওলজিস্ট, এমও স্বতন্ত্র, রক্তরোগ, এমও রেডিওথেরাপিস্ট, ডেন্টাল
সার্জন ৪৬টি পদের মধ্যে ৪৪ জন থাকলেও এখনও শূন্য রয়েছে ২টি পদ।
এছাড়া চারটি ক্লিনিক্যাল প্যাথলজিস্ট পদের মধ্যে ২টি পদ শূন্য রয়েছে।
ইনডোর মেডিকেল কর্মকর্তা (আইএমও) ২০টি পদের মধ্যে ১টি পদ শূন্য
রয়েছে। চিকিৎসকের ৪২টি শূন্য পদের ভোগান্তির চিত্র চোখে পড়ে
হাসপাতালের ওয়ার্ডগুলোতে। প্রতিটি ওয়ার্ডেই রোগী ও রোগীর স্বজনদের
অভিযোগ ডাক্তার আসেনি। এমন অভিযোগ প্রসঙ্গে হাসপাতালের পরিচালক
ডা. এইচ এম সাইফুল ইসলাম বলেন, দীর্ঘদিন ধরেই হাসপাতালে তীব্র
চিকিৎসক সঙ্কট চলছে। কেননা দক্ষিণাঞ্চলের সব উপজেলার রোগীই এই
হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসেন। ফলে অনেক সময় চাপ সামলাতে না পেরে
রোগী রেফার করে ঢাকায় প্রেরণ করি। তিনি আরও বলেন, হাসপাতালের
চিকিৎসক সঙ্কটের বিষয়টি নিয়ে মন্ত্রণালয়ের সচিব মহোদয়ের সঙ্গে
একাধিকবার কথা বলেছি। তিনি বিষয়টি দেখবেন বলে আশা দিয়েছেন।
তারিখঃ ২৩-০১-২৩
মোবাঃ ০১৬২০-৮৪৯৬০১

বরিশালে মুক্তিযোদ্ধার দুই ছেলেকে কারাদণ্ড, যা বললেন ইউএনও।
রমজান আহম্মেদ (রঞ্জু), ব্যুরো চীফ, বরিশাল –
বরিশালের বাবুগঞ্জে আব্দুল হালিম নামে এক বীর মুক্তিযোদ্ধার জমির ওপর দিয়ে
সরকারি ড্রেন নির্মাণে বাধা দেওয়ায় তার দুই ছেলেকে তিন মাসের সশ্রম কারাদণ্ড
দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। সোমবার (২৩ জানুয়ারি) দুপুরে বরিশালের বাবুগঞ্জ
উপজেলার ৪নং চাঁদপাশা ইউনিয়নে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় মোট ৯ জনকে আটক করা
হয়েছে। ঘটনার সময়ে চকলেট বোমা বিস্ফোরণ ঘটানো হয় বলে প্রশাসন থেকে দাবি
করা হয়েছে। তবে ভুক্তভোগী মুক্তিযোদ্ধার পরিবারের দাবি, ইউপি নির্বাচনে স্থানীয়
মেম্বারের পক্ষে কাজ না করায় আক্রোশের শিকার হচ্ছেন তারা। বরিশাল
মেট্রোপলিটন এয়ারপোর্ট থানা পুলিশের পরিদর্শক (তদন্ত) লোকমান হোসেন জানান,
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ঘটনাস্থলে ছিলেন। তার নির্দেশে ৯ জনকে এখন পর্যন্ত
আটক করা হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নুসরাত ফাতিমা বলেন,
চাঁদপাশা ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের আরজী কালিকাপুর গ্রামের বাসিন্দা বীর
মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হালিম কিছু সরকারি জমি দখল করে নিজের দাবি করেন। আমরা
সেই জমিতে সরকারি ড্রেন নির্মাণ করবো। ওখান থেকে ড্রেন হলে বর্ষায় ওই
এলাকায় জলাবদ্ধতা হবে না। জমি নিজের দাবি করে তিনি অতিরিক্ত জেলা
ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলাও করেছেন। কিন্তু আমি সেই আদালত থেকে কাজ করার
অনুমতি নিয়ে এসেছি। তাছাড়া বীর মুক্তিযোদ্ধাকে ক্ষতিপূরণ দিতে চেয়েছি। তিনি
নেননি। আজ কাজ শুরু করলে তার পরিবারের লোকজন ও বহিরাগত কিছু লোক বাধা দেন।
তারা আমার ওপর ও পুলিশের ওপর হামলার চেষ্টাও করেন। ইউএনও বলেন, দলবদ্ধ
লোকজন চকলেট বোমা বিস্ফোরণ ঘটান। এজন্য তাদের আটক করা হয়েছে। তাছাড়া
তারা বোমা কোথায় পেলেন সেটিও খতিয়ে দেখা দরকার। এ ঘটনায় বীর মুক্তিযোদ্ধার
দুই ছেলে নাইম হাসান ও মাইনুল ইসলামকে তিন মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। তবে
পাল্টা অভিযোগ করেছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হালিম। তিনি বলেন, ইউপি
নির্বাচনে বর্তমান ইউপি সদস্য মোসলেম উদ্দিনের বিরোধিতা করায় আমার বাড়ির
ওপর থেকে তিনি ফসলি জমির পানি নিষ্কাশনের ড্রেন নির্মাণ করাচ্ছেন। আমার
ক্রয়কৃত ও পৈতৃক সূত্রে পাওয়া ৪২ শতক জমির ওপরে গত ৫ বছর আগে বাড়ি তৈরি
করি। আমি এ বিষয়ে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একটি মামলা করেছি।
মামলা নং-০৪/২০২৩। তিনি বলেন, আমার জমি ছাড়া পাশের অব্যবহৃত জমি থেকেও ওই
পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা যায়। কিন্তু ইউপি সদস্যের ইন্ধনে

উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে আমাদের ভিটাবাড়ি নষ্ট করে ড্রেন নির্মাণ করছে প্রশাসন।
আব্দুল হালিম বলেন, ইউপি সদস্যের কথা মতো আমাদের নির্যাতন করছে উপজেলা
প্রশাসন। তারা আমার পরিবারের সদস্যদের ধরে নিয়ে গেছে। আমাদের ফাঁসানোর চেষ্টা
করছে। আমি প্রধানমন্ত্রীর সাহায্য চাই। বিনা কারণে আমার ১০ লাখ টাকার সম্পদ
নষ্ট করেছে। আমার ছেলেদের সাজা দিয়েছে। মুক্তিযোদ্ধার পরিবারকে হয়রানি করার
বিচার চাই। এ অভিযুক্ত ইউপি সদস্য মোসলেম উদ্দিনের মুঠোফোনে কল করেও তার
বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

তারিখ: ২৩-০১-২০২৩
মোবাইল: ০১৬২০৮৪৯৬০১

Tag :

One thought on “বরিশাল শেরে-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন ওয়ার্ডে রোগীর চাপ: সঙ্কট চিকিৎসকের।

  1. I may need your help. I’ve been doing research on gate io recently, and I’ve tried a lot of different things. Later, I read your article, and I think your way of writing has given me some innovative ideas, thank you very much.

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

আলোচিত

বোয়ালমারীতে চার বছর কর্মস্থলে না গিয়েও বেতন ভাতা নিচ্ছে উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রের ঝুমা !

বরিশাল শেরে-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন ওয়ার্ডে রোগীর চাপ: সঙ্কট চিকিৎসকের।

Update Time : ০৯:০০:০৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ জানুয়ারী ২০২৩

বরিশাল শেরে-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের
মেডিসিন ওয়ার্ডে রোগীর চাপ: সঙ্কট চিকিৎসকের।
রমজান আহম্মেদ (রঞ্জু), ব্যুরো চীফ, বরিশাল –
বরিশাল : দক্ষিণাঞ্চলের সর্ববৃহৎ চিকিৎসা সেবা কেন্দ্র বরিশাল শেরে-
ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (শেবাচিম)। এই হাসপাতালের
মেডিসিন ওয়ার্ডে যেন তিল ধারণের ঠাঁই নেই। ধারণ ক্ষমতার তিনগুণের
বেশি রোগীর চিকিৎসা সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছে চিকিৎসকরা। ফলে
চিকিৎসক সঙ্কটে প্রতিনিয়ত রোগী মৃত্যুর অভিযোগ উঠছে। এ নিয়ে
রোগীর স্বজন ও হাসপাতালের চিকিৎসকদের মধ্যে প্রতিদিনই ঘটছে
হামলা পাল্টা হামলার ঘটনা। প্রতিষ্ঠার প্রায় ৫৫ বছর পার হলেও
চিকিৎসক সঙ্কট ঘোচাতে পারেনি প্রতিষ্ঠানটি। ফলে ৫শ’ শয্যার
চিকিৎসক দিয়ে ১ হাজার বেডে প্রায় ২৫শ’ রোগীর চিকিৎসা সেবা
কার্যক্রম চলছে। সবশেষ রোববার (২২ জানুয়ারি) চিকিৎসকের অবহেলায়
রোগী মৃত্যুর অভিযোগে নিহতের স্বজনরা হাসপাতালের মেডিসিন ওয়ার্ডের
চিকিৎসকদের টেবিলের গ্লাস ভাংচুরের ঘটনা ঘটায়। এনিয়ে রোগীর স্বজন
ও চিকিৎসকদের মধ্যে বাকবিতণ্ডা থেকে শুরু করে বিষয়টি পুলিশ পর্যন্ত
গড়ায়। সোমবার (২৩ জানুয়ারি) হাসপাতালের মেডিসিন ওয়ার্ডে সরজমিনে
গিয়ে দেখা যায়, রোগীর চাপ এত বেশি যে ওয়ার্ডে পা ফেলার জায়গা নেই।
ওয়ার্ডে বেড সংকুলান না হওয়ায় হাঁটার জায়গায় রোগীর বিছানা করে দেওয়া
হয়েছে। ফলে ভোগান্তি আর চরম চিকিৎসক সঙ্কটের মধ্য দিয়ে চিকিৎসা
নিয়ে বাড়ি ফিরছে এই অঞ্চলের রোগীরা। মহিলা মেডিসিন ওয়ার্ডে
কর্তব্যরত সেবিকা নিপা আক্তার বলেন, ওয়ার্ডে মোট ৭২ টি বেড রয়েছে।
সেখানে ৭২ বেডের বিপরীতে প্রতিদিন গড়ে ২২০ থেকে ২৫০ জন রোগী
চিকিৎসা নিচ্ছে। এত রোগীর চিকিৎসা সেবা দিতে চিকিৎসক, ইন্টার্ন ও
নার্সদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। হাসপাতালের মহিলা মেডিসিন ওয়ার্ডে
চিকিৎসাধীন ঝালকাঠির শাফিয়া বেগম অভিযোগ করে বলেন, ভালো
চিকিৎসার আশায় ঝালকাঠি থেকে বরিশাল মেডিকেলে ভর্তি হইছি, কিন্তু
চার দিন পার হলেও বড় ডাক্তারের দেখা পাইছি এক দিন। এছাড়া সব সময়

ইন্টার্ন চিকিৎসকরা আইসা দেখে। একই অভিযোগ আমতলী থেকে গাইনী
সমস্যায় চিকিৎসা নিতে আসা মিনারা বেগমের। তিনি বলেন, মাঝে মাঝে
রেজিস্ট্রার ও সহকারী রেজিস্ট্রার ছাড়া কোনো বড় ডাক্তার আসেনি
দেখতে। এছাড়াও হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ড ঘুরে দেখা গেছে, রোগীর চাপ
দ্বিগুণ থাকায় হাসপাতালের মেঝেতে শুয়ে চিকিৎসা নিচ্ছে হাজারের বেশি
রোগী। হাসপাতালের পরিচালক ডা. সাইফুল ইসলাম বলেন, হাসপাতালে যে
পরিমাণ চিকিৎসক রয়েছে তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম। ৫ শয্যার
হাসপাতালকে ১ হাজার শয্যায় উন্নীত করা হলেও বাড়ানো হয়নি চিকিৎসক।
বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসক রয়েছে ৫শ’ রোগীর। সেখানেও ২২৪টি
পদের বিপরীতে ৪২ জন চিকিৎসকের পদ শূন্য রয়েছে। অথচ ১ হাজার
বেডের হাসপাতালে প্রতিদিন চিকিৎসা নিচ্ছে প্রায় ২৫শ’ রোগী। হিসাব
অনুযায়ী হাসপাতালে প্রায় ৩শ’ চিকিৎসকের পদ শূন্য রয়েছে। এছাড়া
হাসপাতালের বহির্বিভাগে প্রতিদিন ২৫শ’ থেকে ৩ হাজার রোগী চিকিৎসা
নিচ্ছে। হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, ১৯৬৮ সালে ২৫০ শয্যা নিয়ে
হাসপাতালটির যাত্রা শুরু হয়। পরে হাসপাতালটিকে ৫শ’ শয্যায় উন্নীত করা
হয়। সবশেষ ২০১৩ সালে ১ হাজার শয্যায় উন্নীত করা হলেও বাড়েনি সেই
পরিমাণ চিকিৎসক। বর্তমানে হাসপাতালের মেডিসিন ওয়ার্ডের কার্যক্রম
নতুন ভবনে চালু করা হলেও বাড়ানো হয়নি চিকিৎসক। হাসপাতালটি
প্রতিষ্ঠাকালীন ২২৪ জন চিকিৎসাকের পদ থাকলেও প্রতিষ্ঠার ৫৫ বছর
পরে এসেও সেই জনবলের পূর্ণতা পায়নি প্রতিষ্ঠানটি। হাসপাতাল সূত্র
অনুযায়ী পরিচালক, উপ-পরিচালক, আবাসিক চিকিৎসক, রেজিস্ট্রার,
সহকারী রেজিস্ট্রারসহ ২২৪ জন চিকিৎসকের পদ থাকলেও সেই পদের
বিপরীতে সবশেষ তথ্য অনুযায়ী চিকিৎসক রয়েছে মাত্র ১৮২ জন। ৪২ জন
চিকিৎসকের পদ এখনও শূন্য রয়েছে। হাসপাতালের প্রশাসনিক শাখা সূত্রে
জানা গেছে, হাজার শয্যার বিপরীতে হাসপাতালে প্রতিদিন গড়ে দেড় থেকে দুই
হাজার রোগী চিকিৎসা নেয়। গত ২২ জানুয়ারি হাসপাতালে ভর্তি রোগীর
সংখ্যা ছিল ২১৫৬ জন। এর আগে ২১ জানুয়ারি ভর্তি ছিল ২১২৩ জন। যা
শীতের সময় কিছুটা কম থাকলেও গরমে আরও বেড়ে যায়। এই রোগী বিপরীতে
মাত্র ১৮২ জন চিকিৎসক দিয়ে সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি।
সোমবার (২৩ জানুয়ারি) হাসপাতালের সবশেষ হিসাব অনুযায়ী (৫০০ শয্যার

জন্য) চিকিৎসকদের ৪২টি পদই শূন্য রয়েছে। এরমধ্যে উপ-পরিচালকের
একটি পদের একটিই শূন্য রয়েছে। ডেন্টালের জুনিয়র কনস্যালটেন্টের
একটি পদের মধ্যে একটি শূন্য রয়েছে। আবাসিক সার্জন ৮টি মধ্যে ১টি পদ
খালি রয়েছে। রেজিস্ট্রার ৩৩টি পদের মধ্যে ২১ জন থাকলেও ১২টি পদ
এখনও শূন্য রয়েছে। সহকারী রেজিস্ট্রার ৬৬টি পদের মধ্যে ৪৫ জন
থাকলেও শূন্য রয়েছে ২১টি পদ। ইমারজেন্সি মেডিকেল অফিসার (ইএমও)
১০টি পদের মধ্যে ৯ জন থাকলেও ১টি পদ শূন্য রয়েছে। এছাড়াও মেডিকেল
অফিসার (বহিঃ) বিভাগ, এমও সহকারী সার্জন, এম ওবিটিসি, এমও
রেডিওলজিস্ট, এমও স্বতন্ত্র, রক্তরোগ, এমও রেডিওথেরাপিস্ট, ডেন্টাল
সার্জন ৪৬টি পদের মধ্যে ৪৪ জন থাকলেও এখনও শূন্য রয়েছে ২টি পদ।
এছাড়া চারটি ক্লিনিক্যাল প্যাথলজিস্ট পদের মধ্যে ২টি পদ শূন্য রয়েছে।
ইনডোর মেডিকেল কর্মকর্তা (আইএমও) ২০টি পদের মধ্যে ১টি পদ শূন্য
রয়েছে। চিকিৎসকের ৪২টি শূন্য পদের ভোগান্তির চিত্র চোখে পড়ে
হাসপাতালের ওয়ার্ডগুলোতে। প্রতিটি ওয়ার্ডেই রোগী ও রোগীর স্বজনদের
অভিযোগ ডাক্তার আসেনি। এমন অভিযোগ প্রসঙ্গে হাসপাতালের পরিচালক
ডা. এইচ এম সাইফুল ইসলাম বলেন, দীর্ঘদিন ধরেই হাসপাতালে তীব্র
চিকিৎসক সঙ্কট চলছে। কেননা দক্ষিণাঞ্চলের সব উপজেলার রোগীই এই
হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসেন। ফলে অনেক সময় চাপ সামলাতে না পেরে
রোগী রেফার করে ঢাকায় প্রেরণ করি। তিনি আরও বলেন, হাসপাতালের
চিকিৎসক সঙ্কটের বিষয়টি নিয়ে মন্ত্রণালয়ের সচিব মহোদয়ের সঙ্গে
একাধিকবার কথা বলেছি। তিনি বিষয়টি দেখবেন বলে আশা দিয়েছেন।
তারিখঃ ২৩-০১-২৩
মোবাঃ ০১৬২০-৮৪৯৬০১

বরিশালে মুক্তিযোদ্ধার দুই ছেলেকে কারাদণ্ড, যা বললেন ইউএনও।
রমজান আহম্মেদ (রঞ্জু), ব্যুরো চীফ, বরিশাল –
বরিশালের বাবুগঞ্জে আব্দুল হালিম নামে এক বীর মুক্তিযোদ্ধার জমির ওপর দিয়ে
সরকারি ড্রেন নির্মাণে বাধা দেওয়ায় তার দুই ছেলেকে তিন মাসের সশ্রম কারাদণ্ড
দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। সোমবার (২৩ জানুয়ারি) দুপুরে বরিশালের বাবুগঞ্জ
উপজেলার ৪নং চাঁদপাশা ইউনিয়নে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় মোট ৯ জনকে আটক করা
হয়েছে। ঘটনার সময়ে চকলেট বোমা বিস্ফোরণ ঘটানো হয় বলে প্রশাসন থেকে দাবি
করা হয়েছে। তবে ভুক্তভোগী মুক্তিযোদ্ধার পরিবারের দাবি, ইউপি নির্বাচনে স্থানীয়
মেম্বারের পক্ষে কাজ না করায় আক্রোশের শিকার হচ্ছেন তারা। বরিশাল
মেট্রোপলিটন এয়ারপোর্ট থানা পুলিশের পরিদর্শক (তদন্ত) লোকমান হোসেন জানান,
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ঘটনাস্থলে ছিলেন। তার নির্দেশে ৯ জনকে এখন পর্যন্ত
আটক করা হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নুসরাত ফাতিমা বলেন,
চাঁদপাশা ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের আরজী কালিকাপুর গ্রামের বাসিন্দা বীর
মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হালিম কিছু সরকারি জমি দখল করে নিজের দাবি করেন। আমরা
সেই জমিতে সরকারি ড্রেন নির্মাণ করবো। ওখান থেকে ড্রেন হলে বর্ষায় ওই
এলাকায় জলাবদ্ধতা হবে না। জমি নিজের দাবি করে তিনি অতিরিক্ত জেলা
ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলাও করেছেন। কিন্তু আমি সেই আদালত থেকে কাজ করার
অনুমতি নিয়ে এসেছি। তাছাড়া বীর মুক্তিযোদ্ধাকে ক্ষতিপূরণ দিতে চেয়েছি। তিনি
নেননি। আজ কাজ শুরু করলে তার পরিবারের লোকজন ও বহিরাগত কিছু লোক বাধা দেন।
তারা আমার ওপর ও পুলিশের ওপর হামলার চেষ্টাও করেন। ইউএনও বলেন, দলবদ্ধ
লোকজন চকলেট বোমা বিস্ফোরণ ঘটান। এজন্য তাদের আটক করা হয়েছে। তাছাড়া
তারা বোমা কোথায় পেলেন সেটিও খতিয়ে দেখা দরকার। এ ঘটনায় বীর মুক্তিযোদ্ধার
দুই ছেলে নাইম হাসান ও মাইনুল ইসলামকে তিন মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। তবে
পাল্টা অভিযোগ করেছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হালিম। তিনি বলেন, ইউপি
নির্বাচনে বর্তমান ইউপি সদস্য মোসলেম উদ্দিনের বিরোধিতা করায় আমার বাড়ির
ওপর থেকে তিনি ফসলি জমির পানি নিষ্কাশনের ড্রেন নির্মাণ করাচ্ছেন। আমার
ক্রয়কৃত ও পৈতৃক সূত্রে পাওয়া ৪২ শতক জমির ওপরে গত ৫ বছর আগে বাড়ি তৈরি
করি। আমি এ বিষয়ে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একটি মামলা করেছি।
মামলা নং-০৪/২০২৩। তিনি বলেন, আমার জমি ছাড়া পাশের অব্যবহৃত জমি থেকেও ওই
পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা যায়। কিন্তু ইউপি সদস্যের ইন্ধনে

উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে আমাদের ভিটাবাড়ি নষ্ট করে ড্রেন নির্মাণ করছে প্রশাসন।
আব্দুল হালিম বলেন, ইউপি সদস্যের কথা মতো আমাদের নির্যাতন করছে উপজেলা
প্রশাসন। তারা আমার পরিবারের সদস্যদের ধরে নিয়ে গেছে। আমাদের ফাঁসানোর চেষ্টা
করছে। আমি প্রধানমন্ত্রীর সাহায্য চাই। বিনা কারণে আমার ১০ লাখ টাকার সম্পদ
নষ্ট করেছে। আমার ছেলেদের সাজা দিয়েছে। মুক্তিযোদ্ধার পরিবারকে হয়রানি করার
বিচার চাই। এ অভিযুক্ত ইউপি সদস্য মোসলেম উদ্দিনের মুঠোফোনে কল করেও তার
বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

তারিখ: ২৩-০১-২০২৩
মোবাইল: ০১৬২০৮৪৯৬০১