মোঃজুয়েল মিয়া, দোয়ারাবাজার(সুনামগঞ্জ):
আবহমান বাংলার ঐতিহ্যের অবিচ্ছেদ্য অংশ পিঠা। কৃষ্টি সভ্যতা ও ঐতিহ্যের সংরক্ষণ ও প্রসারে আল মদিনা একাডেমি আয়োজন করে ‘পিঠা উৎসব’। পিঠা উৎসবের পাশাপাশি একাডেমির বার্ষিক পরিকল্পনা নিয়ে অনুষ্ঠিত হয় অভিভাবক সমাবেশ। ক্যাম্পাসে সাজ সাজ রব আর উচ্ছ্বাসে তৃতীয় মাত্রা যুক্ত করে নবাগতদের উষ্ণ অভ্যর্থনা ‘নবীন বরণ’।
শনিবার ( ২০ জানুয়ারি) সুনামগঞ্জ জেলার দোয়ারাবাজার উপজেলার নরসিংপুর ইউনিয়নে প্রতিষ্ঠিত আল মদিনা একাডেমির ক্যাম্পাস ত্রিমাত্রিক উৎসবে মুখরিত হয়ে উঠে। পিঠা উৎসব, অভিভাবক সমাবেশ আর নবীন বরণকে কেন্দ্র করে ক্যাম্পাস বর্ণীল সাজে সজ্জিত হয়। একদিকে বরণ ঢালা সাজিয়ে উষ্ণ অভ্যর্থনায় বরণ করা হয় নবাগত শতাধিক ছাত্র ছাত্রীকে, অন্যদিকে অভিভাবক সমাবেশে একাডেমির বার্ষিক কর্মপরিকল্পনা জেনে উচ্ছ্বসিত হন শুভাকাঙ্ক্ষীরা, অবশেষে সকলে পিঠা উৎসবে যুক্ত হয়ে রসনার স্বাদ আস্বাদন করে বেজায় খুশি সুধীজন।
নবীন বরণ:
ঘড়ির কাঁটায় তখন ঠিক সাড়ে দশটা। নবীন বরণ মঞ্চের সাউন্ড সিস্টেম সচল হয়ে উঠে। সাজানো গোছানো মঞ্চে আগ থেকেই সারিবদ্ধভাবে বসা ছোট্ট সোনামনিদের চোখে মুখে আনন্দের স্রোত। হাতে হাতে চকলেট আর রঙিন বেলুন পেয়ে তারা আরো মহাখুশি। একে একে নতুন ভর্তিকৃত শতাধিক ছাত্র ছাত্রীদের উপহার প্রদানের মধ্য দিয়ে শিক্ষক- মোহাম্মদ হাসান আলী, গোলাম সামদানী সুমন, জুয়েল আহমদ, জাবেদুল হাসান, ইয়াকুব আল হাসান, নিলুফা ইয়াসমিন, রুমেনা বেগম, ফেরদৌসী খানম, আফসারা বেগম তামান্না, হানিফা জান্নাত বুশরা নবীন ছাত্র ছাত্রীদের বরণ করে নেন।
অভিভাবক সমাবেশ :
২০২৪ সালকে ‘মান সম্পন্ন শিক্ষা আর শৃঙ্খলায় আপোষহীন’ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে অনুষ্ঠিত হয় অভিভাবক সমাবেশ।
দোয়ারা শিক্ষা ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মাস্টার রফিজ আলী সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন। বক্তব্য রাখেন ফাউন্ডেশনের সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট সিরাজুল ইসলাম, একাডেমি পরিচালক রফিকুর রহমান, প্রিন্সিপাল হাসান আলী প্রমুখ।
ট্রেজারার তোফাজ্জল হোসাইনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সমাবেশে উপস্থিত অভিভাবকগণ কর্তৃক উত্থাপিত বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন একাডেমিক কো-অর্ডিনেটর ভাইস প্রিন্সিপাল গোলাম সামদানী সুমন । অতপর অভিভাবক ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের বিভিন্ন পরামর্শ সাদরে গ্রহণ করা হয়। কর্তৃপক্ষ একাডেমির ২০২৪ সালের কর্ম পরিকল্পনা পেশ করেন এবং শিক্ষার গুণগত মান সংরক্ষণ ও শৃঙ্খলা রাক্ষায় আপোষহীনতার কথা পূণর্ব্যক্ত করে সকলের সহযোগিতা কামনা করেন। এতে অভিভাবকদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন- সৌদি প্রবাসি কালা মিয়া, ঈসমাইল সানি, ফখর উদ্দীন, মারুফ আহমদ প্রমূখ।
পিঠা উৎসব:
আবহমান বাংলার ঐতিহ্যের সংরক্ষণ ও প্রসারের লক্ষ্যে শিক্ষার্থীদের উদ্যোগে আয়োজন করা হয়েছে পিঠা উৎসব।
গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা মিলে এ উৎসবের আয়োজন করেছেন। পিঠা উৎসবটি উপচেপড়া ভীড়ে কার্যত এক মিলনমেলায় পরিনত হয়।
পিঠা উৎসব ঘুরে দেখা যায়, বিদ্যালয়ের আঙিনায় সাতটি স্টল সাজানো হয়েছে নানা রকমের পিঠা দিয়ে। নকশি, চিতই, রস পিঠা, ডিম চিতই, দোল পিঠা, ভাপা পিঠা, পাটিসাপটা, পাকান, আন্দশা, কাটা পিঠা, ছিট পিঠা, গোকুল, ইলিশ পিঠা, চুটকি, মুঠি, জামদানি, হাড়ি পিঠা, চাপড়ি, পাতা পিঠা, ঝুড়ি পিঠা,বিফরুল,নারকেল পুলি,সবজিরুল,সবজি পুলিসহ নানা স্বাদের হরেক রকমের পিঠা।
নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী সামিয়া রহমান জানায়, ‘বাহারি রকমের এতো পিঠা একসঙ্গে কখনো দেখা হয়নি। আজ ক্লাস নেই। নিজেদের তৈরি পিঠা বিক্রি করার পাশাপাশি শিক্ষক ও সহপাঠীদের সঙ্গে পিঠা খাচ্ছি। এতে আমাদের খুব আনন্দ হচ্ছে।
আল মদিনা একাডেমির পরিচালক রফিকুর রহমান বলেন, ‘পিঠা-পুলি আমাদের লোকজ ও নান্দনিক সংস্কৃতিরই প্রকাশ। কালের বিবর্তনে আর আধুনিকতার ছোঁয়ায় শহর কেন্দ্রীক জীবন জীবিকার কারণে এই দেশজ উৎসব কমে গেছে। পিঠা উৎসবের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা বাঙালির নানা রকমের পিঠার সঙ্গে পরিচিত হতে পারে।’
বিপুল সংখ্যক অভিভাবক, দর্শনার্থী, ছাত্রছাত্রী, শুভাকাঙ্ক্ষী ও শিক্ষকদের উপস্থিতে ফিতা কেটে পিঠা উৎসবের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন দোয়ারা শিক্ষা ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ও হাজী কনু মিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রফিজ আলী, সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট সিরাজুল ইসলাম, সদস্য খলিলুর রহমান, আলহাজ্ব আতাউর রহমান, পরিচালক রফিকুর রহমান, প্রিন্সিপাল হাসান আলী, মাষ্টার ইয়াকুব আলী, মাষ্টার আব্দুল আউয়াল, মাষ্টার শফিকুল ইসলাম, মাষ্টার রুহুল আমিন,মাষ্টার আব্দুর রউফ, ওলিউর রহমান, আবিদ রনি, ভাইস প্রিন্সিপাল গোলাম সামদানী সুমন, সহকারি শিক্ষক জুয়েল আহমদ, সানোয়ার রহমান দুলাল, মাও সাইফুর রহমান, হাফেজ খলিলুর রহমান, হাফেজ বেলাল হোসাইন, মকবুল হোসাইন, ডাঃ সাইফুল ইসলাম, ফখর উদ্দিন, ইসমাইল হোসাইন,ফয়জুল ইসলাম বকুল,সাজিদুর রহমান, মারুফ আহমদ,আল আমিন হোসাইন প্রমুখ।
উৎসবে স্টল পারফরমেন্সের জন্য বিজয়িদের হাতে পুরষ্কার তুলে দেন অতিথিবৃন্দ। এতে ১ম হয় লোকবাংলা, ২য় হয় বর্ণমালা এবং ৩য় হয় রেফলেসিয়া স্টল। বিশেষ পুরস্কার লাভ করে রসের হাড়ি, বাহারিকা, পিঠা বিলাস ও মধুমিতা স্টল।
উৎসবে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে পরিবেশিত হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।