বলিপাড়া ফাউন্ডেশন অ্যাওয়ার্ড পেলেন কর্মকর্তা আজাদ কবির।
মেহেদি হাসান নয়ন, বাগেরহাট –
জীববৈচিত্র্য রক্ষায় কাজ করে “বালিপাড়া ফাউন্ডেশন অ্যাওয়ার্ড” পেয়েছেন সুন্দরবনের করমজল বন্য প্রানী প্রজনন কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আজাদ কবির। বলিপাড়া ফাউন্ডেশন – ভারতের আসাম-ভিত্তিক একটি সংস্থা। যা সংরক্ষণ এবং টেকসই জীবিকার জন্য কাজ করে মানুষ ও প্রাকৃতিক পরিবেশের মধ্যে সম্প্রীতি রক্ষায় অবদানের জন্য ভারতের আসাম-ভিত্তিক সংস্থা বালিপাড়া ফাউন্ডেশন থেকে আজাদ কবিরসহ আরো ছয় বাংলাদেশিসহ ১৫ জন পুরস্কার পেয়েছেন। অন্য আটজন ভুটান ও নেপাল সহ দক্ষিণ এশীয় অঞ্চল থেকে একই পুরস্কার পেয়েছেন। রবিবার (১৩ ডিসেম্বর) ইন্ডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশ (আইইউবি) বিশ্ববিদ্যালয়ের মিলনায়তনে বলিপাড়া ফাউন্ডেশন আয়োজিত ১০ম ইস্টার্ন হিমালয়ান ন্যাচারনমিক্স ফোরামের প্রথম দিনে এই পুরস্কার প্রদান করা হয়। বাংলাদেশের বিজয়ীরা হলেন– বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞ ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক এম মনিরুল এইচ খান, ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকোর চেয়ারম্যান গোলাম মাঈনউদ্দিন, বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, খাগড়াছড়ির পার্বত্য পিটাছড়া বনাঞ্চল সংরক্ষণে কাজ করা মাহফুজ আহমেদ রাসেল, প্রাকৃতিক কৃষি বিপণন কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা দেলোয়ার জাহান, বন বিভাগের রেঞ্জার ও করমজল কুমির প্রজননকেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হাওলাদার আজাদ কবির এবং আইইউবির উপ-উপচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমদ খান।
দশম ইস্টার্ন নেচারনোমিকস ফোরামের তিন দিনের (১১-১৩ ডিসেম্বর) আয়োজনে প্রথম দিন দুটি প্যানেল আলোচনা হয়। সেখানে বক্তব্য দেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী এবং ভারতের সাবেক পররাষ্ট্রসচিব শ্যাম সরণ। বালিপাড়া ফাউন্ডেশন ২০১৩ সালে প্রথম তাদের নামে পদক ঘোষণা করে। এর পর থেকে এখন পর্যন্ত হিমালয়ের পূর্বাঞ্চলে সমৃদ্ধ জীববৈচিত্র্য রক্ষায় অসামান্য ভূমিকা রাখা ১২০ জনকে পুরস্কৃত করেছে সংগঠনটি। পুরস্কারপ্রাপ্ত তৃণমূল পর্যায়ের এসব কর্মী ও নেতার প্রচেষ্টায় এখন পর্যন্ত দুই হাজার হেক্টরের বেশি এলাকায় পুনর্বনায়ন এবং ৬০০টির বেশি বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতিকে রক্ষা করা সম্ভব হয়েছে। এছাড়া তাদের কাজের জন্য ২ হাজার ৮০০-এর বেশি লোকের জীবিকা সুরক্ষিত হয়েছে। সুন্দরবন বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আজাদ কবির বলেন, মূলত আমি বন্যপ্রাণী নিয়ে কাজ করছি। বিলুপ্ত প্রজাতির লবন পানীর কুমির এবং বাটাগুর বাস্কা জাতের কচ্ছপের অবস্থান টিকিয়ে রাখতে বনের ভিতরে সরকারি ভাবে একটি প্রজনন কেন্দ্র করা হয়েছে, সেখানে লবন পানির কুমিরের বাচ্চা উৎপাদন করে লালন পালন করে পরিবেশের সাথে খাপ খায়িয়ে চলার মতো করে সুন্দরবনের নদিতে অবমুক্ত করে থাকি। এ পযন্ত ৫০০টি লবন পানির কুমিরের বাচ্চা উৎপাদন করা হয়েছে যার মধ্যে ২০০টি সুন্দরবনের নদী খালে অবমুক্ত করা হয়েছে। প্রকৃতির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ জীবনযাপনের টেকসই পদ্ধতি উদ্ভাবনে অবদানের জন্য ৫০ টির মতো বাংলাদেশি ব্যক্তি ও সংস্থা এই পুরস্কার পাচ্ছে।
২০১৩ সালে প্রবর্তিত বার্ষিক পুরস্কারে দেশের মোট ৫০টি প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিকে স্বীকৃতি দেওয়া হচ্ছে। রুরাল ফিউচার রিওয়াইল্ডিং, ফুড ফর দ্য ফিউচার, ফরেস্ট গার্ডস অ্যান্ড রেঞ্জার্স, লাইফটাইম সার্ভিস, ন্যাচারনোমিক্স, গ্রিন জার্নালিস্ট, গ্রিন লিডার ও ইয়াং ন্যাচারালিস্ট ক্যাটাগরিতে এ পুরস্কার দিয়ে আসছে। ২০১৬ সালে, বালিপাড়া ফাউন্ডেশন আসামের “হাতির দেশ” জুড়ে বন পুনরুদ্ধারের জন্য একটি উচ্চাভিলাষী যাত্রা শুরু করে, উদালগুড়ি জেলা থেকে অরুণাচল প্রদেশ – আসাম – ভুটান সীমান্ত বরাবর সোনিতপুর পর্যন্ত একটি বেল্ট থেকে বিস্তৃত একটি বেল্ট।