বান্দরবান পাহাড়ে বসন্তের ছোঁয়ায় দৃষ্টি কাড়ঁছে আমের মুকূলের ঘ্রাণে।
আবুবকর ছিদ্দীক বান্দরবান জেলা প্রতিনিধি:
কবি লিখেছিলেন, ‘ফাল্গুনে বিকশিত কাঞ্চন ফুল, ডালে ডালে পুঞ্জিত আম্রমুকুল’। কবির ভাষায় ফাল্গুন এসেছে সুবাস ছড়াচ্ছে আম্রমুকুল। গাছে গাছে ফুটেছে আমের মুকুল। প্রকৃতিতে এখনো ফাল্গুন ; কিন্তু এরই মধ্যে গাছে গাছে ফুটেছে আমের মুকুল। চারদিকে ছড়িয়ে পড়েছে এই মুকুলের ঘ্রাণ। বাতাসে মিশে সৃষ্টি করছে মৌ মৌ গন্ধ।
আর এই মিষ্টি গন্ধ মানুষের মনকে বিমোহিত করে শোনাচ্ছে মধুমাসের আগমনী বার্তা। গাছে শোভা পাচ্ছে কেবলই মুকুল। যেন হলুদ আর সবুজের মহামিলন। মুকুলে ছেয়ে আছে গাছের প্রতিটি ডালপালা। চারদিকে ছড়াচ্ছে সেই মুকুলের সুবাসিত পাগল করা ঘ্রাণ।
সরেজমিনে দেখা যায়, জেলার বিভিন্ন যায়গায় দেখা যাচ্ছে,রাজার মাঠ, পার্বত্যজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বাংলা, বান্দরবান জেলা প্রশাসক কার্যালয়, বান্দরবান পুলিশ সুপার কার্যালয়, সদর এসপি সার্কেল, এল জি ই ডি ভবন, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী,বান্দরবান আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।
শহরে, পাহাড়ের পাদদেশে চিম্বুক, রোয়াংছড়ি, বাঘমারা, ডুলুপাড়া ও কানা পাড়াসহ সড়কে পাশে ও গ্রামের গাছে গাছে শোভা পাচ্ছে আগাম আমের মুকুলের ঘ্রাণে মৌমাছির আহরণে কোকিলের ডাকে শুভা পাচ্ছে আমের মুকুল । শহর থেকে শুরু করে গ্রামের বসতবাড়ির আঙ্গিনার আম গাছগুলোতে সুন্দর দৃশ্য দেখা যাচ্ছে।
থোকা থোকা মুকুলের ভারে ঝুলে পড়েছে আম গাছের ডালাপালা। আমের মুকুলের ঘ্রাণ বইছে পুরো সবখানে। চারদিকে ছড়িয়ে পড়েছে এই মুকুলের ঘ্রাণ। কোনো কোনো গাছে আমের মুকুল থেকে বেরিয়েছে ছোট ছোট আম গুটি। গাছে মুকুলের সঙ্গে গুটি আমের দেখাও মিলছে। । বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছে এর সুগন্ধ। গ্রামগঞ্জ সর্বত্র আমগাছ তার মুকুল নিয়ে হলদে রং ধারণ করে সেজেছে এক অপরূপ সাজে আমাদের বান্দরবান । গাছে গাছে অজস্র মুকুল দেখে খুশি এলাকার মানুষ।
কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, বান্দরবান জেলা জুড়ে অর্থ বছরে ১৫.৭৫ হেক্টর জমিতে ফলন হয়েছে। বিভিন্ন জাতের আম উৎপাদন হবে । কিন্তু চলতি বছর আমের অবাদি-অনবাদি জমিতে কতটুকু ফলন হয়েছে তা জরিপ করা হয়নি বলে জানিয়েছেন কৃষিবিভাগ।
আরেক চাষি লালকিম বম বলেন, পাঁচ একর জায়গা জুড়ে প্রায় ৬-৭ হাজার বিভিন্ন জাতের আম চারা রোপন করেছি। তবে দেশী জাতের আম গাছে মুকুল ধরতে শুরু করেছে। কিন্তু রাংগোয়েই জাতের কিছু কিছু গাছের আম খাওয়ার উপযোগী হয়েছে। এখনও পর্যন্ত শিলাবৃষ্টি আর কালবৈশাখী ঝড় হয়নি। আমের মুকুল ভরা মৌসুমে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের মতো কোন কিছু হলেই ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে জানান বাগান মালিকরা।
বান্দরবান জেলার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক মোঃরফিকুল ইসলাম বলেন, আমের প্রকৃত ফলন পেতে হলে অবশ্যই আম গাছে কমপক্ষে দুইবার ইমিডাক্লোরোপিড গ্রুপের কীটনাশক ও ম্যানকোজেব গ্রুপের ছত্রাকনাশক অনুমোদিত মাত্রায় স্প্রে করতে হবে। প্রথমবার আমের মুকুল আসার পর কিন্তু ফুল ফোটার আগে, দ্বিতীয়বার আমের সাইজ মটরদানার মত হলে। এ ব্যাপারে কৃষকদের পরামর্শ পাশাপাশি প্রশিক্ষণ প্রদান কৃষি বিভাগ পক্ষ হতে অব্যাহত রেখেছে।
“আল্লাহকে রাজি-খুশি করার উদ্দেশ্যেই চরমোনাই মাহফিল প্রতিষ্ঠা হয়েছে”- উদ্বোধনী বয়ানে পীর সাহেব চরমোনাই এ কথা বলেন।
আলমগীর ইসলামাবাদী চট্টগ্রাম মহানগর প্রতিনিধিঃ
৯৯তম চরমোনাই বার্ষিক ফাল্গুন মাহফিলের আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হলো
আমীরুল মুজাহিদীন আলহাজ্ব হযরত মাওলানা মুফতী সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম পীর সাহেব চরমোনাইর উদ্বোধনী বয়ানের মাধ্যমে চরমোনাইর তিনদিনব্যাপী ফাল্গুন মাহফিল আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়েছে আজ।
উদ্বোধনী বয়ানে পীর সাহেব চরমোনাই বলেন, চরমোনাই মাহফিল দুনিয়াবি উদ্দেশ্যে নয় বরং পথভোলা মানুষকে আল্লাহর সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়ার জন্যই এই মাহফিল প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। সুতরাং এখানে দুনিয়াবি কোনো উদ্দেশ্য সাধনের জন্য আসার প্রয়োজন নেই। যদি এমন কেউ এসে থাকেন তবে নিয়ত পরিবর্তন করে আত্মশুদ্ধির জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করুন।
আজ ১৫ ফেব্রুয়ারি’২৩ বুধবার বাদ জোহর চরমোনাই মাদরাসার মূল মাঠসহ মোট ৬টি মাঠ নিয়ে অনুষ্ঠিত চরমোনাইর বার্ষিক মাহফিলের উদ্বোধনী অধিবেশনে পীর সাহেব চরমোনাই আরো বলেন, যারা চরমোনাইতে নতুন এসেছেন, তারা দুনিয়ার ধ্যান-খেয়াল বিদায় করে দিয়ে আখেরাতের খেয়াল-ধ্যান অন্তরে যায়গা দেন। দিল
থেকে বড়ত্ব এবং আমিত্ব ভাব বের করে দিয়ে আল্লাহর কুদরতি পায়ে নিজেকে বিলীন করে দিতে হবে। সদা-সর্বদা আল্লাহর জিকিরের মাধ্যমে দিলকে তরতাজা রেখে আল্লাহর ওলী হয়ে চরমোনাই থেকে বিদায় নেয়ার প্রস্তুতি নিতে হবে। পীর সাহেব চরমোনাই তাঁর উদ্বোধনী বয়ান শেষে মাহফিলের নিয়ম-কানুন সম্পর্কে বিশদ বর্ণনা করেন।এবছর মাহফিলে ভারতের দেওবন্দ, সৌদিআরব ও পাকিস্তানের বিশিষ্ট ওলামায়ে কেরাম অংশ নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ বয়ান পেশ করবেন।
গতকাল মধ্যরাতে কওমি মাদরাসার সম্মিলিত শিক্ষা বোর্ড আল-হাইয়াতুল উলইয়া লিল জামিয়াতুল কওমিয়া বাংলাদেশ-এর চেয়ারম্যান ও বেফাকের সভাপতি আল্লামা মাহমুদুল হাসান শায়খে যাত্রাবাড়ি চরমোনাই মাদরাসায় উপস্থিত হয়ে মাহফিলের সার্বিক বিষয়ে খোঁজ খবর নেন এবং প্রয়োজনের পরামর্শ প্রদান করেন।
মাহফিলে আগত মুসল্লীদের ৬,০০০ হালকায় বিভক্ত করে হাতে-কলমে সালাত ও ইসলামের বুনিয়াদি বিষয়ে বাস্তব প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। মাহফিলে আগত মুসল্লীদের প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য ১০০ শয্যাবিশিষ্ট অস্থায়ী মাহফিল হাসপাতাল স্থাপন করা হয়েছে। এতে ১১ জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের অধীনে আরো ৪০ জন চিকিৎসকের সমন্বয়ে চিকিৎসা সেবা পরিচালিত হচ্ছে। ৬ টি অ্যাম্বুল্যান্স ও ১ টি স্পীডবোর্ড মাহফিল হাসপাতালে কার্যক্রমে নিয়োজিত রয়েছে। মাঠে অসুস্থ হয়ে পড়া রোগীকে মাহফিল হাসপাতালে পৌঁছানোর জন্য নিযুক্ত রয়েছে বিশেষ স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী।
ছয়টি মাঠে মাহফিলের শৃঙ্খলা রক্ষায় প্রায় ১০ হাজার স্বেচ্ছাসেবক নিযুক্ত করা হয়েছে। নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত রয়েছে বাংলাদেশ মুজাহিদ কমিটির নিজস্ব নিরাপত্তা বাহিনী। সারাদেশ থেকে আগত মুসল্লীদের খাবারের জন্য প্রত্যেকটি মাঠের চারিদিকে সুপেয় নিরাপদ পানির ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
তিনদিনব্যাপী বিশাল এ মাহফিলে দ্বিতীয় দিন সারাদেশ থেকে আগত ওলামায়ে কিরামদের নিয়ে ওলামা সম্মেলন ও শেষদিন সকালে সারাদেশ থেকে আগত ছাত্র-জনতাকে নিয়ে ছাত্র গণজমায়েত অনুষ্ঠিত হবে ইনশাআল্লাহ।
১৮ ফেব্রুয়ারী’২৩ শনিবার সকাল ৮.৩০টায় হযরত পীর সাহেব চরমোনাই’র আখেরি বয়ানের মধ্য দিয়ে তিন দিনব্যাপী বিশাল এ মাহফিলের কার্যক্রম সমাপ্ত হবে।