বুলেট ট্রেন রেলপথ নির্মাণ করে দিতে চায় চীন।
মোঃ ইব্রাহিম শেখ চট্টগ্রাম ব্যুরোঃ
ব্যয়বহুল হওয়ায় ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে বুলেট ট্রেন চলাচলের
উপযোগী রেলপথ নির্মাণ থেকে সরকার সরে এলেও এই প্রকল্প নিয়ে আগ্রহ দেখিয়েছে চীন।
চীনের রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানি চায়না রেলওয়ে ডিজাইন কর্পোরেশন এই রেলপথ নির্মাণে আগ্রহ
দেখিয়ে রেলপথ মন্ত্রণালয়কে প্রস্তাব দিয়েছে। তবে এর বিনিময়ে বুলেট ট্রেন রেলপথের ৮০
শতাংশ মালিকানা চেয়েছে তারা।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, মন্ত্রণালয়কে দেওয়া চায়না রেলওয়ে ডিজাইন কর্পোরেশনের প্রস্তাবে
বলা হয়েছে, ঢাকা-চট্টগ্রাম হাইস্পিড রেলপথটি তৈরি করা হবে বিল্ড ওন অপারেট মডেলে।
রেলপথটি নির্মাণের জন্য বাংলাদেশ হাইস্পিড রেলওয়ে লিমিটেড নামে একটি কোম্পানি গঠন
করা হবে। রেলপথ নির্মাণ ও তা পরিচালনার দায়িত্ব এ কোম্পানির হাতেই ন্যস্ত করা হবে।
কোম্পানিতে ২০ শতাংশ শেয়ার থাকবে বাংলাদেশের। ৮০ শতাংশ শেয়ারের মালিক হবে চীন
সরকারের অধীন কোম্পানি চায়না রেলওয়ে ডিজাইন কর্পোরেশন। কোম্পানিতে দুই দেশ কিছু
অর্থ জোগান দেবে মূলধন হিসেবে। নির্মাণ ব্যয়ের একটি বড় অংশ সংগ্রহ করা হবে ব্যাংক ঋণের
মাধ্যমে। কোম্পানির শেয়ার মালিকানার ভিত্তিতে বাংলাদেশ ও চীন এর ঋণ শোধ করবে।
এই রেলপথ নির্মাণে ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছে প্রায় ১ হাজার ১১০ কোটি ডলার। প্রস্তাব
অনুযায়ী, ব্যয়ের ২০ শতাংশ বা ১৬৯ কোটি ডলার দেবে বাংলাদেশ। ৩৪ কোটি ডলার মূলধন
সরবরাহ করবে বাংলাদেশ সরকার। ঋণ নেওয়া হবে ১৩৫ কোটি ডলার। ৮০ শতাংশ হিসাবে
চীন দেবে ৬৭৭ কোটি ডলার। ১৩৫ কোটি ডলার মূলধন দেবে চীন। ঋণ নেওয়া হবে ৫৪২
কোটি ডলার।
গত মাসে রেলপথ মন্ত্রণালয়ে এই প্রস্তাব দেয় চায়না রেলওয়ে ডিজাইন কর্পোরেশন। এতে জয়েন্ট
ভেঞ্চার কোম্পানি দ্বারা রেলপথটির নকশা প্রণয়ন, যাবতীয় কেনাকাটা ও নির্মাণকাজ করার
কথা বলা হয়েছে। এছাড়া রেলপথটি পরিচালনা, ব্যবস্থাপনা ও রক্ষণাবেক্ষণের পাশাপাশি ওই
কোম্পানি পরিচালনার জন্য একটি যৌথ ব্যবস্থাপনা বোর্ড গঠনের কথা বলা হয়েছে।
প্রস্তাব নিয়ে মতামত জানাতে রেলওয়েকে নির্দেশ দিয়েছে রেলপথ মন্ত্রণালয়। রেলপথ মন্ত্রণালয়
সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভায়ও সম্প্রতি চীনের প্রস্তাবটি নিয়ে আলোচনা হয়। সভায়
চীনের প্রস্তাবের বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরেন স্থায়ী কমিটির সভাপতি এবিএম ফজলে করিম
চৌধুরী। এখন রেলওয়ের মতামত পেলে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে রেলপথ মন্ত্রণালয়।
চীনের প্রস্তাবের বিষয়ে রেলওয়ের একজন কর্মকর্তা জানান, ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে হাইস্পিড
রেলপথ নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা নিয়ে বিভিন্ন ধরনের প্রস্তাব পাচ্ছি আমরা। প্রস্তাবগুলো
পর্যালোচনা করে দেখা হচ্ছে। এরপর এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
সূত্র জানায়- রেলপথে চট্টগ্রাম-ঢাকার দূরত্ব ৩২১ কিলোমিটার। এই রুটে এখন ‘দ্রুতগামী’ ট্রেন
সোনার বাংলা কিংবা সুবর্ণ এক্সপ্রেসে চড়ে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা যেতে ৬ ঘণ্টার বেশি সময় লাগে।
ট্রেন চলে ঘণ্টায় ৬০ কিলোমিটার গতিতে। বিদ্যমান রেলসেবার মানোন্নয়নে ২০১৭ সালে বুলেট
ট্রেন চালুর প্রকল্প হাতে নেয় রেলওয়ে। ব্যয় ধরা হয় ৯৬ হাজার কোটি টাকা।
প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানান- বুলেট ট্রেন প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথের দূরত্ব ৩২১
কিলোমিটার থেকে কমে ২২৭ কিলোমিটারে নেমে আসবে। ৬ ঘণ্টা নয়, মাত্র ৫৫ মিনিটেই বুলেট
ট্রেনে চড়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম যাতায়াত করা সম্ভব হবে। ঘণ্টায় ৩০০ কিলোমিটার গতিতে বুলেট
ট্রেন ছুটবে। এ জন্য সম্ভাব্যতা যাচাই এবং বিশদ নকশা প্রণয়নের কাজ করা হয়।
প্রায় ১১০ কোটি টাকা ব্যয়ে এই প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাই এবং বিশদ নকশা প্রণয়নের কাজ শেষ
করে গত বছরের অক্টোবরে রেলওয়েকে জমা দেয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। নভেম্বরে তা মন্ত্রণালয়ে
পাঠানো হয়। তবে ব্যয়বহুল হওয়ায় চলতি বছরের জানুয়ারিতে ‘এই প্রকল্প এখনই বাস্তবায়ন
করা হবে না’ বলে জানান রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন।