সফিকুল ইসলাম স্টাফ রিপোর্টার লালমনিরহাট
আশ্রয়ণ প্রকল্প-২-এর অধীনে পঞ্চম পর্যায়ের দ্বিতীয় ধাপে লালমনিরহাটকে ভূমিহীন ও গৃহহীন মুক্ত জেলা হিসেবে ঘোষণা করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জেলায় ধাপে ধাপে ৫ হাজার ৮৫৭টি ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে দুই শতক জমিসহ সেমি পাকা ঘর দেয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার (১১ জুন) সকালে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হয়ে জেলার ভূমিহীন মানুষদের সুখ-দুঃখের গল্প শুনেন। এ সময় সাহেরন বেওয়া নামে একজন গৃহকর্মীর সঙ্গে কুশল বিনিময়কালে তার মাইক কেড়ে নেয়ায় ক্ষেপে যান প্রধানমন্ত্রী। তখনেই দ্রুত আবার তাকে মাইক দিতে নির্দেশ দেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে হাত তুলে মোনাজাত করায় প্রধানমন্ত্রীও হাত তুলে মোনাজাতে শরিক হন।
ওই সময় প্রধানমন্ত্রী বলে ওঠেন, এই এই, কেড়ে নাও কেন, পড়তেছে। একি! এটা কেমন কথা হলো?
এরপর ওই বৃদ্ধার কাছে মাইক্রোফোনটি আবার ফিরিয়ে দেয়া হয়। তখন তিনি প্রধানমন্ত্রীর জন্য দোয়া করতে থাকেন। এ সময় তিনি প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে নিজেকে অসহায় দাবি করে ঘর পাওয়ায় কেঁদে কেঁদে প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান।
তার বক্তব্যের শেষে প্রধানমন্ত্রী তাকে আরও ভাল থাকার ব্যবস্থা করবেন বলে জানান। শেষে প্রধানমন্ত্রী আবারও উষ্মা প্রকাশ করে বলেন, ‘মোনাজাত করতেছে, মাইকটা টেনে নিয়ে গেলো, হোয়াট ইজ দিস?’
এ সময় উপস্থিত অন্য কেউ হাত না তুললেও প্রধানমন্ত্রী ওই বৃদ্ধার সঙ্গে হাত তুলে দোয়া করেন। কুশল বিনিময়ের এক পর্যায়ে বৃদ্ধার কান্না দেখে প্রধানমন্ত্রীও কেঁদে ফেলেন।
শাহেরন বেওয়া তার বক্তব্যে বলেন, আগে মানুষের জমিতে অস্থায়ী ঘরে থাকতাম, এখন স্থায়ী ঠিকানা পেয়েছি। নিজেদের বাড়িতে বসবাস করছি। আমার একটা ছেলে পাগল, সন্তানদের নিয়ে ঘরে থাকতে পারি, নিজের একটু জায়গা হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্পে। আগে অন্যের জমিতে থাকতে হতো ছনের ঘরে, দুর্বিষহ কেটেছে ৪০ বছর। জীবনের ক্লান্তি লগ্নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেয়া ঘর পেয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। তিনি জানান, স্বপ্নেও ভাবি নাই, নিজের পাকা বাড়ি হবে। সবকিছু স্বপ্নের মতো লাগতেছে।
এর আগে বেলা ১২টায় গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে ঈদের উপহার হিসেবে লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার মুইষামুড়ি এলাকায় সুবিধাভোগীদের সঙ্গে কথা বলেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলতে পেরে দরিদ্র এসব মানুষ বেশ খুশি হয়েছেন। অনেকে এজন্য প্রধানমন্ত্রীকে মা হিসাবে সম্বোধন করে জানিয়েছেন ধন্যবাদ, মঙ্গল কামনায় করেছেন প্রাণ ভরে দোয়া ।
মহিষামুড়ি আশ্রয়ণে ঘরের পাশাপাশি তাদের জীবন মান উন্নোয়নে অনেককে সেলাই মেশিন প্রশিক্ষণ, গরু মোটাতাজাকরণ ও মৎস্য চাষেরও প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। কৃষিবিভাগ থেকে কোনো কোনো পরিবারের জন্য করা হয়েছে পুষ্টিবাগান। বিদ্যুৎ বিভাগ পরিবারগুলোর মাঝে বিনামূল্যে বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়েছে। এছাড়াও জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল দপ্তর থেকে প্রতি ১০ পরিবারের জন্য একটি করে নলকুপ স্থাপন করেছেন।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন লালমনিরহাট স্থানীয় সংসদ সদস্য নুরুজ্জামান আহমেদ ও মতিয়ার রহমান এমপি, রংপুর বিভাগীয় কমিশনার জাকির হোসেন, পুলিশের রংপুর রেঞ্জের ডিআইজি আব্দুল বাতেন, জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ উল্লাহ, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আবু বক্কর সিদ্দিক শ্যামল, সাবেক সংসদ সদস্য সফুরা বেগম রুমি, লালমনিরহাট জেলা পুলিশ সুপার সাইফুল ইসলাম, লালমনিরহাট পৌরসভার পৌর মেয়র, রেজাউল করিম স্বপন, কালীগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রাকিবুবুজ্জামান আহমেদ, কালীগঞ্জ উপজেলা পরিষদের নির্বাহী কর্মকর্তা জহির ইমাম প্রমুখ।
প্রধানমন্ত্রী আজ আরও সাড়ে ১৮ হাজার বাড়ি হস্তান্তর করবেন
ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্তদের ঘরবাড়ি তৈরি করে দেব : প্রধানমন্ত্রী
ফরিদপুরের বাখুন্ডায় কুমার নদের কচুরিপানা অপসারণ, মৎস্য অবমুক্ত ও বৃক্ষ রোপন করা হয়েছে। এছাড়া নদে ময়লা আবর্জনা না ফেলা, চায়না দুয়ারিসহ কারেন্ট জাল ব্যবহার না করাসহ জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় এই অভিযান পরিচালিত হয়।
মঙ্গলবার (১১ জুন) দিনব্যাপী সদর উপজেলার গেরদা ইউনিয়নের বাখুন্ডা বাজার এলাকায় স্থানীয় কয়েকশ মানুষের অংশগ্রহণে কুমার নদের দুষণ রক্ষায় এ কর্মসূচি পালন করা হয়।
এর আগে সকালে বাখুন্ডা বাজার এলাকায় নদের কচুরিপানা অপসারণ, পরিষ্কার-পরিছন্নতা ও পরিবেশ রক্ষায় বৃক্ষরোপন কর্মসূচি বিষয়ক আলোচনা সভায় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) ইয়াছিন কবিরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন জেলা প্রশাসক মো. কামরুল আহসান তালুকদার। এ সময় উপস্থিত ছিলেন সদর উপজেলা চেয়ারম্যান শামসুল আলম চৌধুরী, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তামান্না তাসনিম, গেরদা ইউপি চেয়ারম্যান শাহ মোহম্মদ এমার হকসহ এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ, বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাবৃন্দ।
জেলা প্রশাসক মো. কামরুল আহসান তালুকদার তার বক্তব্যে বলেন, নদীতে কচুরিপানা জমে থাকায় নদীর পানি দুষিত হয়ে যাচ্ছে। নদীতে দেশীয় মাছ উৎপাদনে ঘাটতি হচ্ছে। এছাড়া নদীর পানি ব্যাবহারের অনুপযোগী হওয়ায় কোন কাজে মানুষ সেগুলো ব্যবহার করতে পারে না। জেলা প্রশাসনের আয়োজনে গতবছর থেকে কুমার নদের কচুরিপানা অপসারণসহ নদীর দুষণ রক্ষায় নানা কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে। জেলাবাসীর সহযোগীতায় এগুলো অপসারণ করা সম্ভব হচ্ছে।
এ সময় এলাকার জনগণ, মাছচাষিসহ বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা বাখুন্ডা বাজার এলাকায় কুমার নদে জমে থাকা কচুরিপানা অপসারণে সহযোগিতা করেন। পরে বাজারের বর্জ্য নদীতে না ফেলার অনুরোধ করে ও তাদের মাঝে প্লাস্টিকের ডাস্টবিন বিতরণ করা হয়। এছাড়া নদীর পাড়, বাজার ও স্কুল-কলেজ প্রাঙ্গণসহ বিভিন্নস্থানে ২০০ বৃক্ষ রোপন করা হয়।