মোঃ আনোয়ার হোসেন,
বোয়ালমারী (ফরিদপুর) প্রতিনিধি :
ফরিদপুরের বোয়ালমারীতে ৪ বছর কর্মস্থলে না গিয়েই বেতন ভাতা উত্তোলন করছেন ঝুমা মন্ডল নামে এক মিডওয়াইফ (গর্ভবতি রোগি ডেলিভারী নার্স)। ওই নার্স তার কর্মস্থলে উপস্থিত না থাকায় উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১৪ কিলোমিটার দূরে রূপাপাত ইউনিয়ন উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রে সেবা নিতে আসা শত শত প্রসূতি ও নবজাতক স্বাস্থ্য সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে বলে জানা গেছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা যায়, বোয়ালমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আওতায় প্রতিটি ইউনিয়নে একটি করে উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্র রয়েছে। নার্স ঝুমা মন্ডল উপজেলার রূপাপাত ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের মিড ওয়াইফ হিসেবে ২০২১ সালে যোগদান করেন। যোগদানের পর থেকে প্রায় চার বছর ওই স্বাস্থ্য কেন্দ্রটিতে দেখা মিলেনি তার। বিষয়টি নিয়ে সরেজমিনে গেলে এলাকাবাসী এসব অভিযোগ করেন।
জানা যায়, সরকার গ্রাম্য পর্যায়ে গর্ভবতী নারী, বয়ঃসন্ধি প্রাপ্ত কিশোরীদের স্বাস্থ্য, পুষ্টি, পরিবার পরিকল্পনা, এসআরএইচআর, গর্ভকালীন, মাতৃদুগ্ধ পান, মাতৃমৃত্যু ও শিশুমৃত্যু রোধে প্রাথমিক জ্ঞান বিকাশ ও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে প্রান্তিক মানুষের সেবায় ইউনিয়ন উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রে মিডওয়াইফ নিয়োগ দেন। অনেক স্বাস্থ্য কেন্দ্র থেকে বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে শহরের হাসপাতালে ডেপুটেশনে থাকেন মিডওয়াইফরা।
অনুসন্ধানে দেখা যায়, রূপাপাত ইউনিয়ন উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রের মিডওয়াইফ ঝুমা মন্ডল কর্মস্থলে দায়িত্ব পালন না করে ডেপুটেশনের নামে কোনো প্রকার অফিস আদেশ না নিয়েই উপজেলা হাসপাতালে নিয়োজিত রয়েছেন। আর এ কারণে স্বাস্থ্য সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে প্রান্তিক জনসাধারণ। তবে তিনি (ঝুমা) অফিস আদেশ নিয়েই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সেবা দিচ্ছেন বলে দাবি করেছেন।
এ ব্যাপারে মিডওয়াইফ ঝুমা মন্ডল বলেন, ‘তৎকালীন উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার নির্দেশে ২০২১ সাল থেকে আমি ডেপুটেশনে বোয়ালমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কাজ করছি।’ ডেপুটেশন আদেশ আছে কিনা? জানতে চাইলে তিনি বলেন, উর্ধতন কর্মকর্তার মৌখিক নির্দেশে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দায়িত্ব পালন করছি। আপনারা উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলতে পারেন।
রূপাপাত উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রের উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার (অতিরিক্ত দায়িত্ব) ডা. নুরুল ইসলাম বলেন, আমি এখানে ছাড়াও আরো দুইটা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে দায়িত্ব পালন করি। সাধারণত মিডওয়াইফরা গর্ভবতি রোগিদের ডেলিভারী সেবা দিয়ে থাকেন। এ স্বাস্থ্য কেন্দ্রে কয়েক বছর রোগিরা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। আমি ঝুমার ব্যাপারে কয়েকবার উপজেলা হাসপাতালের সাবেক ও বর্তমান স্বাস্থ্য কর্মকর্তাকে বলেও কোন কাজ হয়নি।
বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে বোয়ালমারী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (দায়িত্বপ্রাপ্ত) ডা. মাহমুদুর রহমান বলেন, আমি দায়িত্বপ্রাপ্ত হওয়ার পর থেকে পূর্ববর্তী যে স্ট্যাফ পেয়েছি, তাদের দিয়েই হাসপাতালের কার্যক্রম এগিয়ে নিচ্ছি। অভিযোগ উঠার পর থেকে ঝুমা মন্ডলের ফাইল যাচাই করে দেখা গেছে, তার (ঝুমার) বোয়ালমারী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কাজ করার কোনো অফিস আদেশ নেই। কর্মস্থল ছেড়ে সে কী ভাবে কাজ করছে এ বিষয়ে আমার জানা নেই।
তৎকালীন বোয়ালমারী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. খালেদুর রহমান বলেন, মৌখিক নির্দেশে ডেপুটেশন আনার কোনো সুযোগ নেই। ঝুমা মন্ডলের কর্মস্থলে হয়তো কোনো সমস্যা থাকার কারণে তাকে সাময়িক স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কাজ করতে বলা হয়েছিল। তবে এর চেয়ে বেশি কিছু আমার মনে পড়ছে না।
রবিবার (১৫ ডিসেম্বর) দুপুরে ফরিদপুর সিভিল সার্জন ডা. সাজেদা বেগম (পলিন) বলেন, নির্বাহী আদেশ ছাড়া স্বাস্থ্য বিভাগের কারো কর্মস্থল ছেড়ে অন্যত্রে কাজ করার সুযোগ নেই। তবে তাকে হইতো প্রয়োজনে মৌখিকভাবে উপজেলা দপ্তরে আনা হয়েছিল। হতে পারে ওই সময় কোন চিঠি করা হয়নি। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এমনটা করলে তাকে জবাবদিহি করতে হবে। এ বিষয়ে দ্রুতই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।