একজন মুমিনের মূল্যবান সম্পদ হলো সুন্দর ব্যবহার। সুন্দর ব্যবহার, ভালো আচরণের মাধ্যমে মানুষ আল্লাহতায়ালার এমন নৈকট্য অর্জন করে, যা অনেক অনেক নফল ইবাদতের চেয়েও বড় মাকামে পৌঁছে দেয়। তাই আমরা দেখি,প্রত্যেক নেককার মানুষই ইবাদতের পাশাপাশি সুন্দর ব্যবহার, মানুষের সঙ্গে ভালো আচরণকে অনেক বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন।সুন্দর ব্যবহার ও আচার-আচরণ বলতে আমরা বুঝি কারও সঙ্গে ভালোভাবে কথা বলা।
দেখা হলে সালাম দেওয়া।কুশলাদি জিজ্ঞাসা করা। কর্কশ ভাষায় কথা না বলা। ঝগড়া-ফ্যাসাদে লিপ্ত না হওয়া।
ধমক বা রাগের সুরে কথা না বলা।পরনিন্দা না করা। কাউকে অপমান-অপদস্ত না করা। উচ্চ আওয়াজে কথা না বলা।গম্ভীর মুখে কথা না বলা।সর্বদা হাসিমুখে কথা বলা। অন্যের সুখে সুখী হওয়া এবং অন্যের দুঃখে দুঃখী হওয়া।
এ ছাড়া কারও বিপদ-আপদে সহানুভূতি ও সহমর্মিতা প্রকাশ করাও সুন্দর আচরণের অন্তর্ভুক্ত।মানুষের সঙ্গে ভালো আচরণ করার নির্দেশ দিয়ে আল্লাহতায়ালা বলছেন, ‘আর ইবাদত কর আল্লাহর,শরিক কর না তাঁর সঙ্গে অপর কাউকে।
পিতা-মাতার সঙ্গে সৎ ও সদয় ব্যবহার কর এবং নিকটাত্মীয়, এতিম-মিসকিন, প্রতিবেশী, অসহায় মুসাফির এবং নিজের দাস-দাসীর সঙ্গেও।নিশ্চয়ই আল্লাহ পছন্দ করেন না দাম্ভিক-গর্বিতজনকে। (সূরা নিসা, আয়াত : ৩৬)।
প্রিয় রসুল (সা.) বলেছেন, ‘কোমলতা যেখানেই থাকবে সেটাই হবে সৌন্দর্যমণ্ডিত।আর যেখান থেকেই তা উঠিয়ে নেওয়া হবে,সেটাই হবে দোষযুক্ত। (সহিহ মুসলিম)।
হুজুরপাক (সা.) আরও বলেছেন,‘যে তোমার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে তুমি তার সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন কর।যে তোমাকে বঞ্চিত করে তুমি তাকে দান কর।আর যে তোমার ওপর জুলুম করে তুমি তাকে ক্ষমা কর।(মুসনাদে আহমদ)।
আরেকটি হাদিসে নবীজী (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা দোজখের আগুন থেকে বেঁচে থাক, একটি খেজুর দিয়ে হলেও।যদি তা না পাও তাহলে মধুর ভাষা ও সুন্দর ব্যবহারের বিনিময়ে জাহান্নাম থেকে বাঁচ। ’ (বোখারি)।
উত্তম চরিত্রের ফজিলত সম্পর্কে নূরনবী (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি মানুষের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করে সে ওই ব্যক্তির চেয়ে বেশি মর্যাদায় পৌঁছে যায়,যে রাতে দাঁড়িয়ে তাহাজ্জুদ পড়ে এবং দিনে রোজা রাখে। ’ (মুসনাদে আহমাদ)।
হাসিমুখে মানুষের সঙ্গে কথা বলাও সুন্দর ব্যবহারের অন্তর্ভুক্ত।কেউ যদি কারও সঙ্গে হাসিমুখে কথা বলে সেও উত্তম ব্যবহারের ফজিলত অর্জন করবে।
আল্লাহর হাবিব (সা.) বলেছেন, ‘কেউ যদি এই নিয়তে তার ভাইয়ের সঙ্গে হাসিমুখে কথা বলে যে,আমার হাসিমুখ দেখে আমার ভাইয়ের মুখেও হাসি ফুটবে, এর বিনিময়ে কেয়ামতের কঠিন দিন আল্লাহতায়ালা তাকে খুশি করবেন। (মুসনাদে আহমাদ)।
মানুষের সঙ্গে ঝগড়া-বিবাদ করা ভালো চরিত্রের পরিচয় নয়।তাই কেউ যেন কারও সঙ্গে ঝগড়া না করে সে উপদেশ দিয়ে নবীজী (সা.) বলেছেন, ‘আমার কোনো উম্মত যদি হকের ওপর থেকেও শুধু ঝগড়া থেকে বাঁচার জন্য নীরব থাকে,আমি নবী তার জন্য জান্নাতে একটি বাড়ির নিশ্চয়তা দিচ্ছি।কেউ যদি ঠাট্টাচ্ছলেও মিথ্যা বলা থেকে বেঁচে থাকে,তার জন্য জান্নাতের সর্বোচ্চ স্থানে বাড়ির গ্যারান্টি দিচ্ছি। ’ (আবু দাউদ)।
আল্লাহতায়ালা প্রিয় নবীজীর উসিলায় আমাদের সবাইকে অপর মানুষের সঙ্গে ভালো-সুন্দর-নম্র, ভদ্র আচরণের মাধ্যমে নেককার বান্দা হওয়ার তাওফিক দান করুন! আমিন।
লেখক: বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ লেখক ও কলামিস্ট হাফিজ মাছুম আহমদ দুধরচকী, সাবেক ইমাম ও খতিব কদমতলী মাজার জামে মসজিদ সিলেট।