আল্লাহ তাআলার কাছে হাজারো শুকরিয়া জ্ঞাপন করি এ জন্য যে তিনি আমাদেরকে সুস্থ রেখেছেন, আলহামদুলিল্লাহ। আমাদের উচিত, সর্বাবস্থায় আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া জ্ঞাপন করা।
আজকে মুমিনের কিছু বৈশিষ্ট্য নিয়ে আলোকপাত করব। মুমিন তাকেই বলে- ’যে আল্লাহ তাআলার একত্ববাদে পূর্ণ আন্তরিকতার সঙ্গে বিশ্বাস স্থাপন করে এবং তার নির্দেশ মেনে চলে আর সে অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করে।’ আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন-
‘প্রকৃত মুমিন তারাই যারা আল্লাহ ও তার রাসুলের প্রতি ঈমান আনার পর আর সন্দেহে পড়ে না এবং নিজেদের মাল ও জান দিয়ে আল্লাহর পথে জেহাদ করে, এরাই সত্যবাদী।’ (সুরা হুজরাত : আয়াত ১৫)
মহান রাব্বুল আলামিন পবিত্র কুরআনে একজন মুমিন পুরুষ ও একজন মুমিন নারীর মাঝে কি কি বৈশিষ্ট্য থাকা প্রয়োজন তাও উল্লেখ করেছেন। যেভাবে আল্লাহ তাআলা বলেন-
‘নিশ্চয় মুসলিম পুরুষ ও মুসলিম নারী, মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারী, অনুগত পুরুষ ও অনুগত নারী, সত্যবাদী পুরুষ ও সত্যবাদী নারী, ধৈর্যশীল পুরুষ ও ধৈর্যশীল নারী, বিনয়ী পুরুষ ও বিনয়ী নারী, রোজা পালনকারী পুরুষ ও রোযা পালনকারী নারী, নিজেদের লজ্জাস্থানের হেফাযতকারী পুরুষ ও সুরক্ষাকারী নারী এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণকারী পুরুষ ও স্মরণকারী নারী, তাদের সবার জন্য আল্লাহর ক্ষমা ও মহা পুরস্কার প্রস্তুত করে রেখেছেন।’ (সুরা আহযাব : আয়াত ৩৫)
উক্ত আয়াতে নারী-পুরুষ উভয়কে আল্লাহ তাআলা এ সব বৈশিষ্ট্য অবলম্বন করে চলার তাগিদ দিয়েছেন। ইসলামের শত্রুরা এই অপবাদ দেয় যে, ইসলামে পুরুষের চেয়ে নারীর মর্যাদা কম। এই আয়াত এমন অপবাদকে কার্যকরীভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে।
পবিত্র কুরআনের শিক্ষা অনুযায়ী নারীরা পুরুষের মতোই মহান আল্লাহর কাছে সমমর্যাদাশীল। তবে আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি লাভ করতে হলে প্রথম যে বিষয় এখানে উল্লেখ করা হয়েছে তাহলো আল্লাহ পাকের পূর্ণ আনুগত্য। কেননা আনুগত্যের নামই হচ্ছে ইসলাম। আল্লাহ এবং আল্লাহর রাসুল যা বলেছেন তার পরিপূর্ণ আনুগত্য করলেই আমরা প্রকৃত মুমিন হতে পারব। আর যখন আমরা আনুগত্যশীল হব তখন আমাদের হৃদয়ে কোনো ধরণের পাপ দানা বাঁধতে পারবে না। হাদিসে এসেছে-
– রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন- ‘মুমিন মহব্বত ও দয়ার প্রতীক। ওই ব্যক্তির মধ্যে কোনো কল্যাণ নেই, যে কারো সঙ্গে মহব্বত রাখে না এবং মহব্বত প্রাপ্ত হয় না।’ (মুসনাদে আহমাদ)
– রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন- ‘ওই ব্যক্তি তার ঈমানকে দৃঢ় করল যে কাউকে ভালবাসল আল্লাহর জন্য, কাউকে ঘৃণা করল আল্লাহর জন্য, কাউকে কোনো কিছু দিল আল্লাহর জন্য আর কাউকে কোনো কিছু দেয়া থেকে বিরত থাকল শুধু আল্লাহর জন্য।’ (তিরমিজি)
মুমিনদের জান্নাতের সুসংবাদ
আসলে একজন মুমিনের জীবনে সব চাওয়া-পাওয়া কেবল আল্লাহর সন্তুষ্টির খাতিরেই হয়ে থাকে। তার ব্যক্তিগত কোনো কামনা-বাসনা থাকে না আর এমন ব্যক্তিদেরই আল্লাহ তাআলা জান্নাতের সুসংবাদ দিয়েছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন-
– ‘আপনি মুমিনদেরকে সুসংবাদ দিন যে, তাদের জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে বড় অনুগ্রহ রয়েছে।’ (সুরা আহযাব : আয়াত ৪৭)
– ‘মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারীদের আল্লাহ এমন সব বাগানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে গুলোর পাদদেশ দিয়ে নদনদী বয়ে যাবে। সেখানে তারা চিরকাল থাকবে আর তিনি তাদেরকে চিরস্থায়ী বাগানসমূহে পবিত্র গৃহেরও প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তবে সবচেয়ে বড় হলো আল্লাহর সন্তুষ্টি। এটাই মহান সফলতা।’ (সুরা আত তাওবা: আয়াত ৭২)
– আল্লাহ ঈমানদার পুরুষ ও ঈমানদার নারীদের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেনে জান্নাতের, যার তলদেশে প্রবাহিত হয় স্রোতধারা। তারা সে চিরদিন এগুলোরই মাঝে থাকবে। আর এসব জান্নাতে থাকবে পরিচ্ছন্ন থাকার ঘর। বস্তুত এ সমুদয়ের মাঝে সবচেয়ে বড় হল আল্লাহর সন্তুষ্টি। এটিই হল মহান সফলতা।’ (সুরা তাওবাহ : আয়াত ৭২)
সুতরাং আসুন, আগে যা করেছি তার জন্য আল্লাহর দরবারে ক্ষমা চেয়ে নিজেকে পরিশুদ্ধ করার চেষ্টা করি,তাই সময় থাকতে নিজেদের ভুলত্রুটি থেকে মহান আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাই। তাওবাহ-ইসতেগফার করি। কেননা তাওবাহ-ইসতেগফার যে মুমিন নারী-পুরুষের অন্যতম বৈশিষ্ট্য।
আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে মুমিনের সব বৈশিষ্ট্য ও গুণাবলী নিজেদের জীবনে বাস্তবায়ন করার তাওফিক দিন। আল্লাহ তাআলার সব আদেশ-নিষেধ মেনে চলার তাওফিক দিন। আমিন।
লেখক: বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ লেখক ও কলামিস্ট হাফিজ মাছুম আহমদ দুধরচকী, সাবেক ইমাম ও খতিব কদমতলী মাজার জামে মসজিদ সিলেট।