Dhaka ০১:৩৭ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

“মেহেরপুরে সম্প্রসারণ প্রকল্পের ব্লাক বেঙ্গল ছাগল বিলুপ্তি”

  • Reporter Name
  • Update Time : ০৭:৪৭:১১ অপরাহ্ন, সোমবার, ২১ নভেম্বর ২০২২
  • ৩৪৮ Time View
“মেহেরপুরে সম্প্রসারণ প্রকল্পের ব্লাক বেঙ্গল ছাগল বিলুপ্তি”
স্টাফ রিপোর্টারঃ
পৃথিবীতে প্রায় ৩’শ ছাগলের জাত রয়েছে। মাংসের স্বাদ ও চামড়ার গুণগত মানের জন্য বিশ্বের সেরাদের মধ্যে ৫ টি জাতের ছাগলকে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম ব্লাক বেঙ্গল ছাগল। অধিক মাংস উৎপাদন ও অধিক মুনাফার আশায় খামারিরা অন্য জাতের ছাগল পালনে আগ্রহী। যেকারণে মেহেরপুরসহ সারাদেশ থেকে ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগল বিলুপ্তির পথে। প্রায় ৪ বছর পূর্বে দেশীয় ঐতিহ্য সংরক্ষণ ফিরিয়ে আনার উদ্যোগের অংশ হিসেবে মৎস্য ও প্রাণি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগলের উন্নয়ন সম্প্রসারণ প্রকল্প চালু করা হয়।
যা বাস্তবায়নের দায়িত্ব ছিল প্রাণি সম্পদ এবং বিএলআরআই এর। কিন্তু প্রাণি সম্পদের কর্মকর্তা কর্মচারী ও বিএলআরআই এর সংশ্লিষ্ট দায়িত্ব প্রাপ্তদের দুর্নীতি, খাম-খেয়ালিপনা ও স্বেচ্ছাচারিতার কারণে প্রকল্পের মেয়াদ শেষেও সারা বাংলাদেশের ন্যায় মেহেরপুরেও ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগল সম্প্রসারণের পরিবর্তে সম্পূর্ণ বিলুপ্ত হয়ে গেছে। অথচ এ ছাগলের জাত সংরক্ষণ ও সম্প্রসারণের জন্য সরকার কোটি কোটি টাকা ব্যয় করেছে। সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, ব্লাক বেঙ্গল ছাগলের উন্নত জাত সংরক্ষণ ও উন্নয়ন গবেষণা প্রকল্প (বিএলআরআই) তত্ত্বাবধানে থাকা ৩০ জন প্রকল্প খামারিদের মাঝে নেই কোন ব্লাক বেঙ্গল ছাগল।
প্রতি উপজেলায় ১০ জন সিজিএফ, ২ জন বাককিপারের তত্ত্বাবধানে প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হলেও বরাদ্দকৃত প্রণোদনা হতে বঞ্চিত বলে খামারিদের অভিযোগ। প্রকল্পে ছাগলের ঘর, দুধ ও ঔষধ বাবদ প্রতিটি সিজিএফ খামারিদের ৫৮ হাজার ৮’শ টাকা বরাদ্দ থাকলেও ৩ বছরে মাত্র ৬ জন খামারিকে ছাগলের ঘর দেওয়া হয়েছে। অনিয়ম দুর্নীতির তথ্য সংগ্রহ করতে যাওয়ায় তড়িঘড়ি করে ৪ টি ছাগলের ঘরের কাজ শেষ করা হয়েছে। বাককিপার খামারিদের জন্য ৩৮ হাজার ৮’শ টাকা বরাদ্দ থাকলেও মেহেরপুর সদর উপজেলার একজন খামারি মাত্র ২০ হাজার টাকা পেয়েছেন। আর অন্যদের নামমাত্র খাবার দেওয়া হয়েছে।অভিযোগ রয়েছে, রিসার্চ এসোসিয়েটেড (বিএলআরআই) এর কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান মুন্না ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগল প্রকল্পের ওজন মাপার স্কেল, ভ্যাকসিন ও ঔষধ বাইরে বিক্রি করে দেন।অথচ জেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তাসহ অন্যান্য  কর্মকর্তারা কেউ ব্যাপারটা জানেই না। মুজিবনগরের বাককিপার খামারি সুকেন মন্ডল বলেন, প্রাণি সম্পদের কর্মকর্তারা ছাগলের খাবারের বস্তা, প্লাস্টিকের মাচা, আর কিছু মেয়াদোত্তীর্ণ ঔষুধ দিয়ে ছবি তুলে নিয়ে চলে যায়। এরপরে আর কোন যোগাযোগ না করার কারণে সরকারের দেওয়া পাঠা দু’টি বিক্রি করে দিয়েছি।
আশরাফপুর গ্রামের খামারি জাহিদ জানান, সরকারি ভাবে আমাকে দু’টি পাঠা দেওয়া হয়েছিল।প্রকল্পের রিসার্চ এসোসিয়েটেড (বিএলআরআই) মোস্তাফিজুর রহমান মুন্না আমার বাড়িতে এসে পাঠা দু’টো নিয়ে গেছে। পরে শুনলাম পাঠা নিয়ে যাওয়ার এমন কোন নিয়ম নেই। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন বলেন, ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগলের মেলা হলেও পুরস্কার দেয়া হয় না ব্লাক বেঙ্গল ছাগলের খামারিদের। রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীদের খুশি করতে পুরষ্কার দেওয়া হয় অন্য জাতের ছাগল পালনকারী খামারিদের। এবিষয়ে রিসার্চ এসোসিয়েটেড (বিএলআরআই) মোস্তাফিজুর রহমান মুন্নার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোন মন্তব্য করতে রাজী হননি। মেহেরপুর জেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা সাইদুর রহমান জানান, প্রকল্প মেয়াদ শেষ হয়েছে। এখানে কোন দুর্নীতি হয়নি। সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাব তিনি বলেন, দেশ আধুনিক হয়েছে সকলেই চাই ছাগল থেকে অতিরিক্ত মাংস উৎপাদন করতে। তাই ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগল পালনে অনেকে আগ্রহ হারিয়েছেন। তবে সরকারের দেওয়া পাঠা গেল কোথায় এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি কোন মন্তব্য করতে রাজী হননি।
ব্লাক বেঙ্গল ছাগলের উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ প্রকল্পের পিডি শরিফুল হক এর সাথে মুঠো ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি পূর্বেই অনুরোধ করেন, প্রকল্প নিয়ে নেগেটিভ রিপোর্ট না করে পজিটিভ রিপোর্ট করাবার জন্য। মাঠে ব্লাক বেঙ্গল ছাগল বিলুপ্তি তাহলে  পজিটিভ রিপোর্ট কিভাবে করব এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগলের বৈশিষ্ট্যগুলো তুলে ধরেন। যাতে করে মানুষ ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগল পালন করে। ১৯৪ টি উপজেলায় ৪৭ কোটি টাকা বাজেট রয়েছে।তাহলে প্রথম পর্যায়ে সরকারি এই ৪৭ কোটি টাকার কি ফলাফল পাওয়া গেল এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অনেক দরিদ্র মানুষ উপকৃত হয়েছে, ছাগল পালনের ঘর বানিয়ে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু প্রকল্পের যে উদ্দেশ্য ব্লাক বেঙ্গল ছাগল পালনকে সম্প্রসারিত করা এটার অগ্রগতি কতটুকু হলো এ প্রশ্নটিই তিনি এড়িয়ে যান।
বিএলআরআই এর ব্লাক বেঙ্গল ছাগলের জাত উন্নয়ন ও সংরক্ষণ প্রকল্পের পিডি সাদিক আহমেদ এর সাথে যোগাযোগ করে, অনিয়ম ও দুর্নীতির তথ্য চাইলে, তিনি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার অনুমতি ছাড়া কথা বলতে রাজী হননি।
মাজিদ আল মামুন
মেহেরপুর প্রতিনিধি
০১৯১৫৩৫১৪৯৮
Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

আলোচিত

বোয়ালমারীতে চার বছর কর্মস্থলে না গিয়েও বেতন ভাতা নিচ্ছে উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রের ঝুমা !

“মেহেরপুরে সম্প্রসারণ প্রকল্পের ব্লাক বেঙ্গল ছাগল বিলুপ্তি”

Update Time : ০৭:৪৭:১১ অপরাহ্ন, সোমবার, ২১ নভেম্বর ২০২২
“মেহেরপুরে সম্প্রসারণ প্রকল্পের ব্লাক বেঙ্গল ছাগল বিলুপ্তি”
স্টাফ রিপোর্টারঃ
পৃথিবীতে প্রায় ৩’শ ছাগলের জাত রয়েছে। মাংসের স্বাদ ও চামড়ার গুণগত মানের জন্য বিশ্বের সেরাদের মধ্যে ৫ টি জাতের ছাগলকে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম ব্লাক বেঙ্গল ছাগল। অধিক মাংস উৎপাদন ও অধিক মুনাফার আশায় খামারিরা অন্য জাতের ছাগল পালনে আগ্রহী। যেকারণে মেহেরপুরসহ সারাদেশ থেকে ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগল বিলুপ্তির পথে। প্রায় ৪ বছর পূর্বে দেশীয় ঐতিহ্য সংরক্ষণ ফিরিয়ে আনার উদ্যোগের অংশ হিসেবে মৎস্য ও প্রাণি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগলের উন্নয়ন সম্প্রসারণ প্রকল্প চালু করা হয়।
যা বাস্তবায়নের দায়িত্ব ছিল প্রাণি সম্পদ এবং বিএলআরআই এর। কিন্তু প্রাণি সম্পদের কর্মকর্তা কর্মচারী ও বিএলআরআই এর সংশ্লিষ্ট দায়িত্ব প্রাপ্তদের দুর্নীতি, খাম-খেয়ালিপনা ও স্বেচ্ছাচারিতার কারণে প্রকল্পের মেয়াদ শেষেও সারা বাংলাদেশের ন্যায় মেহেরপুরেও ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগল সম্প্রসারণের পরিবর্তে সম্পূর্ণ বিলুপ্ত হয়ে গেছে। অথচ এ ছাগলের জাত সংরক্ষণ ও সম্প্রসারণের জন্য সরকার কোটি কোটি টাকা ব্যয় করেছে। সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, ব্লাক বেঙ্গল ছাগলের উন্নত জাত সংরক্ষণ ও উন্নয়ন গবেষণা প্রকল্প (বিএলআরআই) তত্ত্বাবধানে থাকা ৩০ জন প্রকল্প খামারিদের মাঝে নেই কোন ব্লাক বেঙ্গল ছাগল।
প্রতি উপজেলায় ১০ জন সিজিএফ, ২ জন বাককিপারের তত্ত্বাবধানে প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হলেও বরাদ্দকৃত প্রণোদনা হতে বঞ্চিত বলে খামারিদের অভিযোগ। প্রকল্পে ছাগলের ঘর, দুধ ও ঔষধ বাবদ প্রতিটি সিজিএফ খামারিদের ৫৮ হাজার ৮’শ টাকা বরাদ্দ থাকলেও ৩ বছরে মাত্র ৬ জন খামারিকে ছাগলের ঘর দেওয়া হয়েছে। অনিয়ম দুর্নীতির তথ্য সংগ্রহ করতে যাওয়ায় তড়িঘড়ি করে ৪ টি ছাগলের ঘরের কাজ শেষ করা হয়েছে। বাককিপার খামারিদের জন্য ৩৮ হাজার ৮’শ টাকা বরাদ্দ থাকলেও মেহেরপুর সদর উপজেলার একজন খামারি মাত্র ২০ হাজার টাকা পেয়েছেন। আর অন্যদের নামমাত্র খাবার দেওয়া হয়েছে।অভিযোগ রয়েছে, রিসার্চ এসোসিয়েটেড (বিএলআরআই) এর কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান মুন্না ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগল প্রকল্পের ওজন মাপার স্কেল, ভ্যাকসিন ও ঔষধ বাইরে বিক্রি করে দেন।অথচ জেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তাসহ অন্যান্য  কর্মকর্তারা কেউ ব্যাপারটা জানেই না। মুজিবনগরের বাককিপার খামারি সুকেন মন্ডল বলেন, প্রাণি সম্পদের কর্মকর্তারা ছাগলের খাবারের বস্তা, প্লাস্টিকের মাচা, আর কিছু মেয়াদোত্তীর্ণ ঔষুধ দিয়ে ছবি তুলে নিয়ে চলে যায়। এরপরে আর কোন যোগাযোগ না করার কারণে সরকারের দেওয়া পাঠা দু’টি বিক্রি করে দিয়েছি।
আশরাফপুর গ্রামের খামারি জাহিদ জানান, সরকারি ভাবে আমাকে দু’টি পাঠা দেওয়া হয়েছিল।প্রকল্পের রিসার্চ এসোসিয়েটেড (বিএলআরআই) মোস্তাফিজুর রহমান মুন্না আমার বাড়িতে এসে পাঠা দু’টো নিয়ে গেছে। পরে শুনলাম পাঠা নিয়ে যাওয়ার এমন কোন নিয়ম নেই। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন বলেন, ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগলের মেলা হলেও পুরস্কার দেয়া হয় না ব্লাক বেঙ্গল ছাগলের খামারিদের। রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীদের খুশি করতে পুরষ্কার দেওয়া হয় অন্য জাতের ছাগল পালনকারী খামারিদের। এবিষয়ে রিসার্চ এসোসিয়েটেড (বিএলআরআই) মোস্তাফিজুর রহমান মুন্নার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোন মন্তব্য করতে রাজী হননি। মেহেরপুর জেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা সাইদুর রহমান জানান, প্রকল্প মেয়াদ শেষ হয়েছে। এখানে কোন দুর্নীতি হয়নি। সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাব তিনি বলেন, দেশ আধুনিক হয়েছে সকলেই চাই ছাগল থেকে অতিরিক্ত মাংস উৎপাদন করতে। তাই ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগল পালনে অনেকে আগ্রহ হারিয়েছেন। তবে সরকারের দেওয়া পাঠা গেল কোথায় এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি কোন মন্তব্য করতে রাজী হননি।
ব্লাক বেঙ্গল ছাগলের উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ প্রকল্পের পিডি শরিফুল হক এর সাথে মুঠো ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি পূর্বেই অনুরোধ করেন, প্রকল্প নিয়ে নেগেটিভ রিপোর্ট না করে পজিটিভ রিপোর্ট করাবার জন্য। মাঠে ব্লাক বেঙ্গল ছাগল বিলুপ্তি তাহলে  পজিটিভ রিপোর্ট কিভাবে করব এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগলের বৈশিষ্ট্যগুলো তুলে ধরেন। যাতে করে মানুষ ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগল পালন করে। ১৯৪ টি উপজেলায় ৪৭ কোটি টাকা বাজেট রয়েছে।তাহলে প্রথম পর্যায়ে সরকারি এই ৪৭ কোটি টাকার কি ফলাফল পাওয়া গেল এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অনেক দরিদ্র মানুষ উপকৃত হয়েছে, ছাগল পালনের ঘর বানিয়ে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু প্রকল্পের যে উদ্দেশ্য ব্লাক বেঙ্গল ছাগল পালনকে সম্প্রসারিত করা এটার অগ্রগতি কতটুকু হলো এ প্রশ্নটিই তিনি এড়িয়ে যান।
বিএলআরআই এর ব্লাক বেঙ্গল ছাগলের জাত উন্নয়ন ও সংরক্ষণ প্রকল্পের পিডি সাদিক আহমেদ এর সাথে যোগাযোগ করে, অনিয়ম ও দুর্নীতির তথ্য চাইলে, তিনি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার অনুমতি ছাড়া কথা বলতে রাজী হননি।
মাজিদ আল মামুন
মেহেরপুর প্রতিনিধি
০১৯১৫৩৫১৪৯৮