Dhaka ০৮:১৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

“মেহেরপুরে সরিষা ফুলে দুলছে কৃষকের স্বপ্ন।”

  • Reporter Name
  • Update Time : ০৭:৩৯:৪৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ৫ ডিসেম্বর ২০২২
  • ২৬৩ Time View
“মেহেরপুরে সরিষা ফুলে দুলছে কৃষকের স্বপ্ন।”
মাজিদ আল মামুন, মেহেরপুর –
মেহেরপুরের বিভিন্ন এলাকায় সরিষার হলুদ ফুলে ভরে গেছে মাঠের পর মাঠ। কৃষকের রঙিন স্বপ্ন দুলছে শিশির ভেজা হলুদ ফুলের পাপড়িতে। মৌমাছিরাও মেতেছে মাঠে মাঠে সরিষার হলুদ ফুলের মেলায়। সরিষা ফুলের মৌ মৌ গন্ধে মৌমাছিরা মধু সংগ্রহ করবে বলে। মাঠে মাঠে নয়নাভিরাম দৃশ্যের অবতারনা হচ্ছে। তা দেখে দর্শনার্থী ও কৃষকদের মন ভরে যাচ্ছে। সরিষা ক্ষেতের সেলফি তুলে তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট করছেন দর্শনার্থীরা আর হলুদ সরিষা ফুলের মাঝে স্বপ্ন দেখছেন কৃষকেরা। সরিষার বাম্পার ফলনের আশায় কৃষকদের চোখে মুখে অনেকটা হাসির ঝিলিক ফুটে উঠেছে। দেশে ভোজ্যতেলের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় এবং কম খরচে বেশি লাভ হওয়ায় কৃষকেরা সরিষা চাষে ঝুঁকেছেন। মেহেরপুর কৃষি সম্প্রসারণ  অধিদপ্তর সূত্র জানায়, জেলায় চলতি মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রার অতিরিক্ত জমিতে সরিষার আবাদ হয়েছে।
মেহেরপুর সদর উপজেলা কৃষি অফিসার নাসরিন পারভীন জানান, চলতি মৌসুমে উপজেলায় ২ হাজার ৫’শ হেক্টর জমিতে সরিষার চাষ করা হয়েছে। যা গত বছরের তুলনায় ৩’শ হেক্টর বেশি। গাংনী উপজেলা কৃষি অফিসার লাভলী খাতুন জানান, চলতি মৌসুমে উপজেলায় ১ হাজার ৯’শ ৯০ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ করা হয়েছে। যা গত বছরের তুলনায় ৫’শ ৯০ হেক্টর বেশি।
মুজিবনগর উপজেলা কৃষি অফিসার জানান, উপজেলায় ৭’শ ৭৫ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ করা হয়েছে। যা গত বছরের তুলনায় ৪’শ ৭৫ হেক্টর বেশি। আমন ধানের জমি থেকে ধান কেটে নেয়ার পর সেই জমিতেও অনেকে সরিষার চাষ করেছেন।
সরজমিনে জেলার বিভিন্ন গ্রামের কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, কৃষকেরা তাদের অধিকাংশ জমিতে উচ্চ ফলনশীল (উফশি) জাত ও স্থানীয় জাতের সরিষা চাষ করেছেন। ভাল ফলন হলে এবং দাম পেলে আগামী বছর সরিষার আবাদ আরো বাড়বে। পশ্চিম মালশাদহ গ্রামের আব্দুল কাদের জানান, যেসব জমিতে গত বছর আলুর চাষ হয়েছে, সেসবের অধিকাংশ জমিতে এবার সরিষার আবাদ হচ্ছে। প্রতি বিঘা জমিতে ৮ থেকে ১০ মণ সরিষার ফলন হয়ে থাকে। আলুর দাম না পাওয়ায় কৃষকেরা এবার সরিষা ও ভুট্টা চাষে আগ্রহ নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে।
হরিরামপুর গ্রামের আব্দুস সালাম জানান, ভোজ্য তেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় কৃষকদের মধ্যে সরিষা আবাদের প্রতি আগ্রহ বাড়ছে। এ ছাড়া সরিষা চাষের জমিতে ধানের চাষও ভাল হয় এবং বোরো চাষে খরচ কম হয়। এ বছর অনুকূল আবহাওয়া থাকায় সরিষা গাছ বেশ বেড়ে উঠেছে। যে কারণে কৃষকদের চোখে মুখে হাসি-খুশি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। লক্ষ্ণীনারায়ণপুর গ্রামের মাহবুবুর রহমান জানান, প্রতি বিঘা জমিতে উফশী জাতের সরিষার ফলন ১০-১২ মণ পর্যন্ত হয়। বপনের ৭০-৮০ দিনের মধ্যেই ফসল ঘরে তোলা সম্ভব। সরিষার খৈল গবাদি পশু ও মাছের উৎকৃষ্ট খাদ্য হিসেবে বাজারে ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। বর্তমান বাজারে প্রতি মণ সরিষা সাড়ে ৪ হাজার থেকে ৫ হাজার টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। আমঝুপি গ্রামের রুহুল আমীন বলেন, দেশে সবজি ও খাদ্য ভান্ডার হিসেবে মেহেরপুরের ব্যাপক পরিচিতি রয়েছে। এখানকার উৎপাদিত পাতাকপি, ফুলকপি, মরিচ, কুমড়া, শিম, টমেটো, ধান, গম, সরিষা, আলু, বেগুন, পটল, করলা, মুলা, রসুন, পেঁয়াজসহ বিভিন্ন সবজির পাশাপাশি আমের ব্যাপক সুনাম রয়েছে দেশজুড়ে। কিন্তু সার, ডিজেল, কীটনাশকের মূল্য বৃদ্ধি, মজুরি খরচ বৃদ্ধি ও সংকট এবং লাগাতার ধান পাটসহ বেশ কিছু খাদ্যের আশানুরূপ মূল্য না পাওয়ায় কৃষকরা ঝুঁকেছে লাভজনক ফসল সরিষাসহ অন্যান্য ফসল চাষের দিকে।
আশরাফপুর গ্রামের মফিজুল ইসলাম বলেন, কম খরচ, কম পরিশ্রম আর কম সময়ে সরিষা চাষ করা সম্ভব বলে সরিষা অত্যন্ত লাভজনক ফসল। খাসমহল গ্রামের নাজমুল বলেন, অনেকেই কৃষি বিভাগ থেকে বিনামূল্যে কৃষি সহায়তা পেয়ে থাকে। তাছাড়া সেচ কাজের খরচ বেড়ে যাওয়ায় ভারতীয় সীমান্তবর্তী গ্রামগুলোতে পূর্বের চেয়ে বেশি জমিতে সরিষা চাষ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এদিকে কৃষকরা যাতে তাদের ফসলে ভালো ফলন পায় এজন্য কৃষি বিভাগ থেকে সকল ধরনের সহযোগিতা ও পরামর্শ দেওয়া অব্যাহত রয়েছে।
মাজিদ আল মামুন
মেহেরপুর প্রতিনিধি
০১৯১৫৩৫১৪৯৮
Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

আলোচিত

বোয়ালমারীতে চার বছর কর্মস্থলে না গিয়েও বেতন ভাতা নিচ্ছে উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রের ঝুমা !

“মেহেরপুরে সরিষা ফুলে দুলছে কৃষকের স্বপ্ন।”

Update Time : ০৭:৩৯:৪৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ৫ ডিসেম্বর ২০২২
“মেহেরপুরে সরিষা ফুলে দুলছে কৃষকের স্বপ্ন।”
মাজিদ আল মামুন, মেহেরপুর –
মেহেরপুরের বিভিন্ন এলাকায় সরিষার হলুদ ফুলে ভরে গেছে মাঠের পর মাঠ। কৃষকের রঙিন স্বপ্ন দুলছে শিশির ভেজা হলুদ ফুলের পাপড়িতে। মৌমাছিরাও মেতেছে মাঠে মাঠে সরিষার হলুদ ফুলের মেলায়। সরিষা ফুলের মৌ মৌ গন্ধে মৌমাছিরা মধু সংগ্রহ করবে বলে। মাঠে মাঠে নয়নাভিরাম দৃশ্যের অবতারনা হচ্ছে। তা দেখে দর্শনার্থী ও কৃষকদের মন ভরে যাচ্ছে। সরিষা ক্ষেতের সেলফি তুলে তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট করছেন দর্শনার্থীরা আর হলুদ সরিষা ফুলের মাঝে স্বপ্ন দেখছেন কৃষকেরা। সরিষার বাম্পার ফলনের আশায় কৃষকদের চোখে মুখে অনেকটা হাসির ঝিলিক ফুটে উঠেছে। দেশে ভোজ্যতেলের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় এবং কম খরচে বেশি লাভ হওয়ায় কৃষকেরা সরিষা চাষে ঝুঁকেছেন। মেহেরপুর কৃষি সম্প্রসারণ  অধিদপ্তর সূত্র জানায়, জেলায় চলতি মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রার অতিরিক্ত জমিতে সরিষার আবাদ হয়েছে।
মেহেরপুর সদর উপজেলা কৃষি অফিসার নাসরিন পারভীন জানান, চলতি মৌসুমে উপজেলায় ২ হাজার ৫’শ হেক্টর জমিতে সরিষার চাষ করা হয়েছে। যা গত বছরের তুলনায় ৩’শ হেক্টর বেশি। গাংনী উপজেলা কৃষি অফিসার লাভলী খাতুন জানান, চলতি মৌসুমে উপজেলায় ১ হাজার ৯’শ ৯০ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ করা হয়েছে। যা গত বছরের তুলনায় ৫’শ ৯০ হেক্টর বেশি।
মুজিবনগর উপজেলা কৃষি অফিসার জানান, উপজেলায় ৭’শ ৭৫ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ করা হয়েছে। যা গত বছরের তুলনায় ৪’শ ৭৫ হেক্টর বেশি। আমন ধানের জমি থেকে ধান কেটে নেয়ার পর সেই জমিতেও অনেকে সরিষার চাষ করেছেন।
সরজমিনে জেলার বিভিন্ন গ্রামের কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, কৃষকেরা তাদের অধিকাংশ জমিতে উচ্চ ফলনশীল (উফশি) জাত ও স্থানীয় জাতের সরিষা চাষ করেছেন। ভাল ফলন হলে এবং দাম পেলে আগামী বছর সরিষার আবাদ আরো বাড়বে। পশ্চিম মালশাদহ গ্রামের আব্দুল কাদের জানান, যেসব জমিতে গত বছর আলুর চাষ হয়েছে, সেসবের অধিকাংশ জমিতে এবার সরিষার আবাদ হচ্ছে। প্রতি বিঘা জমিতে ৮ থেকে ১০ মণ সরিষার ফলন হয়ে থাকে। আলুর দাম না পাওয়ায় কৃষকেরা এবার সরিষা ও ভুট্টা চাষে আগ্রহ নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে।
হরিরামপুর গ্রামের আব্দুস সালাম জানান, ভোজ্য তেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় কৃষকদের মধ্যে সরিষা আবাদের প্রতি আগ্রহ বাড়ছে। এ ছাড়া সরিষা চাষের জমিতে ধানের চাষও ভাল হয় এবং বোরো চাষে খরচ কম হয়। এ বছর অনুকূল আবহাওয়া থাকায় সরিষা গাছ বেশ বেড়ে উঠেছে। যে কারণে কৃষকদের চোখে মুখে হাসি-খুশি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। লক্ষ্ণীনারায়ণপুর গ্রামের মাহবুবুর রহমান জানান, প্রতি বিঘা জমিতে উফশী জাতের সরিষার ফলন ১০-১২ মণ পর্যন্ত হয়। বপনের ৭০-৮০ দিনের মধ্যেই ফসল ঘরে তোলা সম্ভব। সরিষার খৈল গবাদি পশু ও মাছের উৎকৃষ্ট খাদ্য হিসেবে বাজারে ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। বর্তমান বাজারে প্রতি মণ সরিষা সাড়ে ৪ হাজার থেকে ৫ হাজার টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। আমঝুপি গ্রামের রুহুল আমীন বলেন, দেশে সবজি ও খাদ্য ভান্ডার হিসেবে মেহেরপুরের ব্যাপক পরিচিতি রয়েছে। এখানকার উৎপাদিত পাতাকপি, ফুলকপি, মরিচ, কুমড়া, শিম, টমেটো, ধান, গম, সরিষা, আলু, বেগুন, পটল, করলা, মুলা, রসুন, পেঁয়াজসহ বিভিন্ন সবজির পাশাপাশি আমের ব্যাপক সুনাম রয়েছে দেশজুড়ে। কিন্তু সার, ডিজেল, কীটনাশকের মূল্য বৃদ্ধি, মজুরি খরচ বৃদ্ধি ও সংকট এবং লাগাতার ধান পাটসহ বেশ কিছু খাদ্যের আশানুরূপ মূল্য না পাওয়ায় কৃষকরা ঝুঁকেছে লাভজনক ফসল সরিষাসহ অন্যান্য ফসল চাষের দিকে।
আশরাফপুর গ্রামের মফিজুল ইসলাম বলেন, কম খরচ, কম পরিশ্রম আর কম সময়ে সরিষা চাষ করা সম্ভব বলে সরিষা অত্যন্ত লাভজনক ফসল। খাসমহল গ্রামের নাজমুল বলেন, অনেকেই কৃষি বিভাগ থেকে বিনামূল্যে কৃষি সহায়তা পেয়ে থাকে। তাছাড়া সেচ কাজের খরচ বেড়ে যাওয়ায় ভারতীয় সীমান্তবর্তী গ্রামগুলোতে পূর্বের চেয়ে বেশি জমিতে সরিষা চাষ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এদিকে কৃষকরা যাতে তাদের ফসলে ভালো ফলন পায় এজন্য কৃষি বিভাগ থেকে সকল ধরনের সহযোগিতা ও পরামর্শ দেওয়া অব্যাহত রয়েছে।
মাজিদ আল মামুন
মেহেরপুর প্রতিনিধি
০১৯১৫৩৫১৪৯৮