ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ শিক্ষার্থীদের ক্যারি-অন সিস্টেম বহালের দাবিতে বিক্ষোভ।
মাহাবুবুল আলম সোহাগ, ময়মনসিংহঃ
এমবিবিএস কারিকুলামে ‘ক্যারি অন’ সিস্টেম উঠিয়ে দেওয়াকে অযৌক্তিক ও অমানবিক অভিহিত করে সরকারের কাছে দ্রুত এ সিস্টেম পুনর্বহালের দাবি জানিয়েছে সারা বাংলাদেশের মেডিক্যাল শিক্ষার্থীবৃন্দ। দাবি না মানায় বৃহস্পতিবার সকালে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ ক্যাম্পাসের সামনে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের নবাগত ম-৫৯, বিডিএস-১১তম ব্যাচের শিক্ষার্থীরা ক্লাস বর্জনের ঘোষণা করে। এসময় শিক্ষার্থীরা বলেন, ২০২১ সালের ডিসেম্বর বিএমডিসি কর্তৃকত ২০২১-২০২২ সেশনের শিক্ষার্থীদের উপর নতুন কারিকুলাম আরোপ করা হয়।নতুন কারিকুলামে এ উল্লেখ করা হয়, এতদিন ধরে যে ক্যারি অন সিস্টেম চালু ছিল সেটি বাতিল করা হবে এবং মেডিকেল সিস্টেম সিজিপিএ চালু করা হবে।এর ফলে যদি যেকোনো কারণ বসত কোন শিক্ষার্থী ফলাফল খারাপ হয় তবে তাকে তার নিজ ব্যাচের সাথে পরবর্তী বছরে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারবেনা।জুনিয়র ব্যাচের সাথে নতুন করে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে হবে।এছাড়াও ডাক্তারদের মধ্যে শ্রেনীবিভাজন, ঝড়ে পড়া শিক্ষার্থী সংখ্যা বেশি হয়ে পড়ায় ভর্তি পরীক্ষার আগে ও পড়ে প্রচন্ড মানসিক চাপে থাকা ইত্যাদি সহ নানা ধরনের সমস্যা সৃষ্টি হবে।যা আমাদের শিক্ষাগত ও পেশাগত জীবনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।মেডিকেল ব্যবস্থায় ৬০% নম্বর পেয়ে পাশ করতে হয়।এমনিতেই মেডিকেল শিক্ষা ব্যবস্থা অন্যান্য ডিগ্রি থেকে অনেক কঠিন।এর উপর এই ক্যারি-অন-সিস্টেম যদি বাতিল করা হয় এবং সিজিপিএ যদি চালু করা হয় তাহলে শিক্ষার্থীরা মানুসিকভাবে প্রচন্ড ডিপ্রেশনে ভুগবে।
এছাড়াও সিজিপিএ বাতিল এবং ক্যারি অন বহাল থাকার পক্ষে তাদের যুক্তি উত্থাপন করে।
সিজিপিএ বাতিলের পক্ষে যুক্তি-
১। ডাক্তারদের মাঝে বিভেদ তৈরি হবে।২-যেহেতু আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা প্রায় পুরোটাই ভাইবা ভিত্তিক তাই এই পদ্ধতির মধ্যে সিজিপিএ আনয়ন করা হলে তা সিজিপিএ চালুর মূল উদ্দেশ্যকে ব্যর্থ করবে। ৩। বিভিন্ন মেডিকেল কলেজ তাদের স্বার্থ রক্ষার্থে এই পদ্ধতির অপব্যবহার করবে।৪। বিদেশে যাওয়ার ক্ষেত্রে এই পদ্ধতির একটা সুবিধা থাকলেও বাংলাদেশের ৮০% শিক্ষার্থীরা নিজ দেশে নিজেদের ক্যারিয়ার গড়বে এবং এক্ষেত্রে সিজিপিএ তাদের জন্য অভিশাপ। কারণ মানুষ তখন ডাক্তারদের দক্ষতা না দেখে সিজিপিএ দেখবে।
৫। সিজিপিএ পদ্ধতি মেডিকেল শিক্ষার্থীদের দলগত পড়াশোনা নষ্ট করবে এবং পারস্পরিক সহযোগিতার মনোভাবকে বাধা গ্রস্থ করবে।৬। একজন উচ্চ সিজিপিএর ডাক্তার দক্ষ না ও হতে পারে। এভাবে চিকিৎসা পেশায় একটি খারাপ ও বৈষম্য অবস্থা সৃষ্টি হতে পারে যা আমাদের জন্য কল্যাণকর নয়।০৭। আমাদের মেডিকেল কারিকুলাম বিদেশের মত সেমিষ্টার ভিত্তিক নয়। তাই সিজিপিএ সিস্টেম আমাদের দেশের মেডিকেল ব্যবস্থার প্রেক্ষিতে আমাদেরকে আন্তর্জাতিক মানের শিক্ষা দিতে সক্ষম নয়।
ক্যারি অন বহাল থাকার পক্ষে যুক্তিঃ
১। যেকোনো কারনেই একজন শিক্ষার্থীর একটি প্রফেশনাল পরীক্ষায় ফেল আসতে পারে। শুধু যে প্রস্তুতির ঘারতি এখানে মূল কারন তা নয়। অন্য যেকোনো কারনে ভালো প্রস্তুতি থাকা সত্যেও প্রফেশনাল পরীক্ষায় ফেল আসতে পারে। ক্যারি অন বাতিল করা হলে একজন শিক্ষার্থী দ্বিতীয় তার নিজ ব্যাচের সাথে পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার সুযোগ পাবেনা। এতে তার জীবন থেকে দেড় বৎসর সময় নষ্ট হবে। এমনিতেই এমবিএস দীর্ঘ প্রায় পাঁচ বৎসরের কোর্স যা আরও দীর্ঘান্বিত হয়ে ৭-৮ বৎসরে পরিনত হবে। যা পরবর্তীতে বিসিএস ও পোস্ট গ্রেজুয়েশন কমপ্লিট করতে সমস্যার সৃষ্টি করবে এর ফলে মেডিকেল সেক্টরে শিক্ষার্থীদের আত্মহননের প্রবনতা উল্লেখযোগ্য হারে বাড়তে পারে।২। মেডিকেল শিক্ষার্থীদের ড্রপ আউট প্রবনতাও অনেকাংশে বেড়ে যাবে। যা সামগ্রিকভাবে চিকিৎসা
শিক্ষা ব্যবস্থা ও চিকিৎসকদের নিয়ে প্রশ্ন তুলবে। এই দুটি সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ২০২১-২০২২ সেশনের মেডিকেল শিক্ষার্থীরা আন্দোলন ও প্রতিবাদ কর্মসূচী হাতে নিয়েছে যার ধারাবাহিকতা নিম্নরূপ।
*১ সেপ্টেম্বর থেকে নিজ নিজ ক্যাম্পাসে প্রথম আন্দোলন।* ৫ সেপ্টেম্বর-বিএমডিসির সামনে প্রথম আন্দোলন, রেজিস্ট্রারের সাথে বিভিন্ন মেডিকেলের রিপ্রেজেনটিটিভ এর সাধারণ আলোচনা দাবী জানানো যেখানে বিএমডিসি থেকে ৪৫ দিনের মধ্যে সিদ্ধান্ত জানানোর আশ্বাস দেওয়া হয়।*২৭শে অক্টোবর- ৪৫ দিন কেটে যাওয়ার পরেও কোন সিদ্ধান্ত জানানো হয়নি। এতে করে পরবর্তীতে আবারও বিএমডিসি ভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচী পালন করা হয়।*২৭ শে ডিসেম্বর- এ দিন বিএমডিসি ভবনের সামনে বাংলাদেশের সকল মেডিকেলের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীরা পুনরায় অবস্থান কর্মসূচী নেয় এবং বিএমডিসির ভবনকে তালাবদ্ধ করা হয়। Acting রেজিষ্ট্রার এসে খুব শিঘ্রই আবার মিটিং ডাকা হবে বললেও উপস্থিত শিক্ষার্থীরা এতে সন্তুষ্ট না হয়ে একযোগে সারা বাংলাদেশের সকল মেডিকেলে ক্লাস বর্জনের ঘোষণা দেন এবং পরবর্তী প্রতিবাদ কর্মসূচী চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়।