ঝিকরগাছা ইউপি সচিব আবু সাঈদ উপজেলার শ্রেষ্ঠ সচিব’র পুরস্কার দিলেন ডাঃ নাসির উদ্দীন এমপি।
শাহাবুদ্দিন মোড়ল ঝিকরগাছা যশোর :
যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার মধ্যে ২০২২ সালে ৬নং ঝিকরগাছা (সদর) ইউনিয়নের জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধনে বিশেষ অবদান রাখায় তার কর্মপরিধি বৃদ্ধির লক্ষ্যে এবং তাকে দেখে অপর ইউনিয়নের সচিবদের কর্মদক্ষতার গতিবৃদ্ধির জন্য শ্রেষ্ঠ সচিব নির্বাচিত হয়েছেন সচিব মোঃ আবু সাঈদ। বিজয়ের মাসে তাকে সম্মান জানিয়ে শ্রেষ্ঠ সচিব নির্বাচিত হওয়ায় তাকে পুরস্কার প্রদান করেন যশোর-২ (চৌগাছা-ঝিকরগাছা) আসনের জাতীয় সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা মেজর জেনারেল (অবঃ) অধ্যাপক ডাঃ মোঃ নাসির উদ্দীন। এসময় উপস্থিত ছিলেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ মাহাবুবুল হক, ভাইস চেয়ারম্যান সেলিম রেজা, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান লুবনা তাক্ষী। এছাড়াও পূর্বে তিনি ঝিকরগাছা উপজেলার ৯নং হাজিরবাগ ইউনিয়নের সচিব হিসেবে তার কর্মদক্ষতার মূল্যায়ন হিসাবে জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয় থেকে একাধিকবার কর্মের স্বীকৃতি পেয়েছেন এবং ঝিকরগাছা ইউনিয়ন পরিষদে যোগদান করার পূর্বে ইউনিয়ন পরিষদের কার্যক্রম নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে কিছুটা ভোগান্তি থাকলেও বর্তমানে তাকে পেয়ে ঝিকরগাছা ইউনিয়নের সাধারণ মানুষের মাঝে স্বস্তি ফিরে এসেছে। ইতিমধ্যে সে গত ৬অক্টোবর জাতীয় জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন দিবসে ৬নং ঝিকরগাছা (সদর) ইউনিয়নের জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধনে বিশেষ অবদান রাখায় যশোরের জেলা প্রশাসক মোঃ তমিজুল ইসলাম খাঁন এর নিকট হতে পুরস্কার গ্রহণ করেন।
৬নং ঝিকরগাছা (সদর) ইউনিয়নের সচিব মোঃ আবু সাঈদ বলেন, আমি কথায় না কাজে বিশ্বাসী। কাজ থাকলে আমার অন্য কোনো কিছু ভালো লাগে না। আমি সরকারের একজন অতি সামান্য কর্মচারী। আমার দায়িত্ব মেনে আমি যে সম্মানে সম্মানিত হয়েছি, এটার দাবিদার আমার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও সদস্য, গ্রাম পুলিশ ও ইউনিয়নের সকল সাধারণ মানুষ। আমি আমার প্রাপ্ত পুরস্কার ইউনিয়নের সকলের প্রতি উৎসর্গ করলাম।
যশোরে রূহানী চার্চ বাংলাদেশের উদ্যোগে বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনায় শুভ বড়দিন পালিত।
আব্দুল্লাহ আল মামুন বিশেষ প্রতিনিধি
রূহানী চার্চ বাংলাদেশের উদ্যোগে যশোরে বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনা আর ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে পালিত হয়েছে খ্রিস্টান ধর্মালম্বীদের সবচেয়ে বৃহত্তম ধর্মীয় উৎসব শুভ বড়দিন। এ দিনটি উপলক্ষে রূহানী চার্চসহ যশোরের গীর্জাগুলো সাজানো হয় নতুন সাজে। এ উপলক্ষে রবিবার সকালে যশোরের মণিরামপুরে রূহানী চার্চ বাংলাদেশ আয়োজন করে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা, বিশেষ প্রার্থনা, ধর্মীয় গান, ধর্মীয় আলোচনা, পুরষ্কার বিতরণ, কেক কাটাসহ দুপুরে প্রীতিভোজ। ধর্মীয় উপাসনা পর্বে পবিত্র বাইবেল পাঠসহ আলোচনা করা হয় যিশু খ্রিস্টের জীবনী সম্পর্কে।
দুর্বাডাঙ্গা ইউনিয়নের গোপালপুরে রুহানী চার্চ মিশন স্কুল প্রাঙ্গনে এ উপলক্ষে রূহানী চার্চ বাংলাদেশ ট্রাস্ট আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন এলজিআরডি প্রতিমন্ত্রীর প্রতিনিধি নেহালপুর কলেজের অধ্যক্ষ চঞ্চল ভট্টাচার্য্য। বিশেষ অতিথি ছিলেন মণিরামপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মনিরুজ্জামান, দূর্বাডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের চারবার নির্বাচিত ইউপি সদস্য ও পাড়ালা রূহানী চার্চের উপদেষ্টা সেলিম আকতার, বিশিষ্ট সমাজ সেবক ডাক্তার আতিয়ার রহমান, সুধান্য মন্ডল, সারথী রানী মন্ডল, দূর্বাডাঙ্গা ইউনিয়ন যুবলীগের সিনিয়র সহ সভাপতি মশিয়ার রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক অংশুমান গাইন প্রমূখ।
সোনিয়া আক্তারের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব ও শুভ বড়দিনের তাৎপর্য, বড়দিন সম্পর্কে পবিত্র বাইবেল থেকে যিশু খ্রিস্টের অলৌকিকভাবে জন্ম গ্রহণসহ তাঁর জীবন ও কর্ম বিষয়ে ব্যাখ্যামূলক আলোচনা করেন রূহানী চার্চ বাংলাদেশের জাতীয় পরিচালক বিশিষ্ট সাংবাদিক রেভারেন্ড জেমস আব্দুর রহিম রানা। আলোচনায় বক্তারা বলেন, আজ থেকে দুই সহস্রাধিক বছর আগে পাপাচারে লিপ্ত মানবজাতির মুক্তি ও পৃথিবীতে শান্তি প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যে যিশু এই ধরাধামে এসেছিলেন। আজ আমরা সকল মানবজাতির সুখ-সমৃদ্ধি ও মঙ্গল কামনায় যিশুকে স্মরণ করার মাধ্যমে বড়দিন পালন করছি।
বক্তারা আরও বলেন, আমরা অনেকেই জানি খ্রিষ্টধর্মের মধ্যে প্রকাশিত হয়েছে গভীর ভালোবাসা। ঈশ্বর ও ভালোবাসা মহান যিশুর কর্মকাণ্ডের জন্য পরিপূরক হয়ে উঠেছে। বিশ্বের কোটি কোটি খ্রিষ্টান ধর্মানুসারীর নিকট যিশু হলেন ঈশ্বরপুত্র। মাত্র ৩৩ বছর বয়সে তিনি ক্রুশবিদ্ধ হন। কিন্তু ক্রুশে বিদ্ধ অবস্থাতেও তিনি ছিলেন ক্ষমাশীলতায় উদ্ভাসিত।
এটিও অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ যে, যে সাতটি বাণী ক্রুশবিদ্ধ অবস্থায় মহাত্মা যিশু উচ্চারণ করেছিলেন, তার প্রথম কথাটিই হল ক্ষমা। জীবনাচরণে তিনি প্রেম, সেবা ও সৌহার্দ্যরে প্রতীক হয়ে উঠেছিলেন। যিশুর ধর্ম-কর্ম-জীবন যুগ যুগ ধরে পৃথিবীর বিপুল সংখ্যক মানুষকে অন্ধকার হতে আলোর পথে পরিচালিত করেছে, অসত্য হতে সত্য পথের দিশা দিয়াছে যা আজও প্রবহমান।
আমরা জানি, সকল ধর্মের মৌলিক সত্য ও সারসত্য হল মানবকল্যাণ। খ্রিষ্টধর্মও তার ব্যতিক্রম নয়। বর্তমানে সারা পৃথিবীতে প্রায় সোয়া দুই শতাধিক কোটি মানুষ খ্রিষ্টধর্মের অনুসারী। বাংলাদেশে রয়েছে সকল ধর্মের-সম্প্রদায়ের মানুষের অপূর্ব সহাবস্থান। যদিও প্রায় ১৭ কোটি জনসংখ্যার এই দেশে খ্রিষ্টধর্মাবলম্বীদের সংখ্যা খুব বেশি নয়। তবে এই উপমহাদেশে খ্রিষ্টান সমপ্রদায়ের ইতিহাস চারশত বছরের অধিক। বাংলাদেশে খ্রিস্টান সম্প্রদায় সংখ্যায় কম হলেও তাদের শান্তিপূর্ণ সহ-অবস্থান আমাদের জন্য দৃষ্টান্ত। শাস্ত্রীয় আলোচনায় রেভারেন্ড জেমস আব্দুর রহিম রানা বলেন, খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস ঈশ্বরের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্যে একজন নারীর প্রয়োজন ছিল। সেই নারীই কুমারী মাতা মরিয়ম। যাকে ইসলাম ধর্মের পবিত্র গ্রন্থ আল-কোরআনে বিবি মরিয়ম (আঃ) বলা হয়েছে।
ধর্মীয় বিশ্বাস মতে, ঈশ্বরের অনুগ্রহে ও অলৌকিক ক্ষমতায় মরিয়ম কুমারী হওয়া সত্ত্বেও গর্ভবতী হন।
ঈশ্বরের ইঙ্গিতে সেই শিশুটির নাম রাখা হয় ইম্মানুয়েল যে নামের অর্থ আমাদের সাথেই ঈশ্বর। যিনি ইতিহাসে যিশু খ্রিস্ট ও পবিত্র কোরআনে হযরত ঈসা (আঃ) নামে অভিহিত। অনুষ্ঠানের শুরুতে এক বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের করা হয় এবং শোভাযাত্রা শেষে কেক কাটার মাধ্যমে যিশু খ্রিস্টের জন্মদিন পালন করা হয়। এছাড়া গীর্জায় উপাসনা শুরু ও শেষের পর গাওয়া হয় বড়দিনের বিশেষ গান ও বন্দনা সঙ্গীত। অপরদিকে, রূহানী চার্চ বাংলাদেশের মনোহরপুর ইউনিয়নের খাকুন্দী ও এনায়েতপুর রূহানী চার্চে অনুরূপভাবে বিশেষ প্রার্থনা, শাস্ত্রীয় আলোচনা, পুরস্কার বিতরণসহ প্রীতিভোজের আয়োজন করা হয়। রূহানী চার্চের শিশু বিভাগের পরিচালক জন সাব্বির রানার পরিচালনায় বড়দিন সম্পর্কে পবিত্র বাইবেল থেকে যিশু খ্রিস্টের অলৌকিকভাবে জন্ম গ্রহণসহ তাঁর জীবন ও কর্ম বিষয়ে ব্যাখ্যামূলক আলোচনা করেন রূহানী চার্চ বাংলাদেশের কোষাধ্যক্ষ সেলিনা খাতুন নয়মী।
আলোচনা শেষে ভক্তদের মাঝে দুপুরে প্রীতিভোজসহ বিভিন্ন রকমের খাবার পরিবেশন ও শুভেচ্ছা বিনিময় করেন খ্রিস্টান ধর্মালম্বীরা।
উল্লেখ্য, শুভ বড়দিন উদযাপন উপলক্ষে যশোর জেলার মণিরামপুর উপজেলার ৩৮টি গির্জার অনুকূলে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর থেকে ৫০০ কেজি করে চাল বরাদ্দ দেয়া হয়। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর থেকে জানা গেছে, বড়দিন উপলক্ষে প্রতি বছর গির্জায় এই চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়। এদিকে রূহানী চার্চ বাংলাদেশের সেবামূলক কর্মকাণ্ডে অভিভুত হয়ে মণিরামপুর থেকে প্রকাশিত একমাত্র নিয়মিত সংবাদপত্র সাপ্তাহিক পল্লী কথার পক্ষে সকলস্তরের ভক্তবৃন্দকে অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জ্ঞাপনসহ উপহারসামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে। পত্রিকার তথ্য উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা সম্পাদক দেবব্রত ঘোষ এক বিবৃতিতে পত্রিকার পক্ষে সকলস্তরের ভক্তবৃন্দকে অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করেন।