সুমন খান:
রাজধানী দাপিয়ে বেড়াচ্ছে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা। শুধু তাই নয় বাইক নিয়ে উচ্চস্বরে প্রতিটি মড়ে মোড়ে উচ্চ শব্দ সহকারে বাইক নিয়ে তারা তান্ডব চালাচ্ছেন এমন একটি চিত্র মিরপুর-২ লাভ রোডে দেখা যাচ্ছে বেশি কিশোর গ্যাং।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, এসব চক্রের সদস্যদের বড় অংশ কিশোর হলেও অনেকের বয়স ১৯ থেকে ৩৮ বছর। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে এদের বেপরোয়া চলাফেরা ও আচরণ কিছুতেই নিয়ন্ত্রণে আনতে পারছে না আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তাদের কেউ কিছু বলার সাহস পাচ্ছেন না। তাদের বেপরোয়া কর্মকাণ্ড ভাবিয়ে তুলছে সংশ্লিষ্ট এলাকার অধিবাসী ও অভিভাবকদের।
এই গ্রুপগুলো নিয়ন্ত্রণ করছে শতাধিক গডফাদার। পর্দার আড়ালে থেকে রাজনৈতিক পরিচয় বহন করে তাদের দিয়ে বিভিন্ন ধরনের অকাজ করাচ্ছে গডফাদাররা। ঢাকার শিশু আদালতের বিচারিক কার্যক্রমের নথি অনুযায়ী গত ১৫ বছরে এই গ্রুপগুলোর হাতে রাজধানীতে ১৩০টি খুনের ঘটনা ঘটেছে।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ডিএমপির আটটি অপরাধ বিভাগের মধ্যে সবচেয়ে বেশি মিরপুরে। এরপর মোহাম্মদপুরের ঢাকা উদ্যান, আদাবর, শেখের টেক, উত্তরা, যাত্রাবাড়ী, খিলগাঁও এলাকায় এদের দাপট সবচেয়ে বেশি। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, রাজধানীতে ১৩টি গ্রুপের ১৭২ সদস্য এই কাজগুলো করছেন। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, অতুল গ্রুপের সদস্যরা প্রায়ই সন্ধ্যা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত মোটরসাইকেলে মহড়া দেয়। তুচ্ছ কারণে মারধর করে। মিরপুর এলাকার মধ্যে সবচেয়ে বেশি এই চক্র রয়েছে পল্লবীতে। চক্রগুলো হলো- ‘আশিক গ্রুপ’, ‘রাজু গ্রুপ’, ‘রকি গ্রুপ’, ‘রোমান্টিক গ্রুপ’, ‘মুসা-হারুন গ্রুপ’, ‘সোহেল গ্রুপ’ ও ‘পিয়াস গ্রুপ’, বাবা গ্রুপ , বাইক গ্রুপ, তন্ময় গুরুসহ আরো অনেক গ্রুপ ।
পত্রিকার এক সম্পাদক ও প্রকাশক জিজ্ঞাসা করলে সে বলেন,
উত্তরায় ‘ইয়াং স্টার’, ‘ডিসকো বয়েজ’, ‘বিগবস’ ইত্যাদি নামের গ্রুপগুলো ছিনতাইসহ নানান অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। উত্তরা বিভাগের তুরাগ থানা এলাকায় ‘পারভেজ গ্রুপ’, উত্তরখানে ‘রুস্তম গ্রুপ’ ও ‘নাইন এমএম বিগ বস’, দক্ষিণখানে ‘বিগবস’ ও ‘ইয়াং স্টার গ্রুপ’, উত্তরা পশ্চিম থানা এলাকায় ‘নাইন স্টার গ্রুপ’ নামে রয়েছে অপরাধী চক্র।
রাজধানীর মোহাম্মদপুরের নবীনগর, ঢাকা উদ্যান, নবোদয় হাউজিং ও আদাবর থানার শেখেরটেক এলাকায় দাপিয়ে বেড়ানো এই গ্যাংটির হাতে গত তিন মাসে হামলার শিকার হয়েছেন অন্তত আটজন। পুলিশের সাথে রেপসহ কয়েকজনকে আটক করেন।
গত ২৫ আগস্ট রাত সোয়া ৮টার দিকে নবীনগরের বাসিন্দা গাড়িচালক আরমান হোসেনের (২৮) কবজি কেটে নিয়ে যায় দুর্বত্তরা। তিনি আগারগাঁওয়ের পঙ্গু হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। আরমান বলেন, ‘২০ হাজার টাকা ছিনিয়ে নিতে বাধা দেওয়ায় আমার কবজি কেটে নিয়ে গেছে।’ এর আগে, গত ২৪ জুন সন্ধ্যায় বাসার সামনে হামলাকারীরা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সেন্টুর আঙুল কেটে নিয়ে যায়। একই গ্যাং আদাবরের বাসিন্দা রাকিবের ওপর গত ২৯ জুলাই হামলা চালায়। এ ছাড়াও, গত ২২ মে রাজধানীর দারুসসালামে স্কুলছাত্র সিয়ামকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। তার আগে ১০ মে দনিয়া কলেজের সামনে ‘জুনিয়র-সিনিয়র’ দ্বন্দ্বে খুন হয় মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী তাজুল।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার (মিডিয়া) ফারুক হোসেন বলেন, গ্যাংয়ের বিরুদ্ধে আমাদের অবস্থান জিরো টলারেন্স। মামলা ও জড়িতদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। ওসিদের কঠোর নির্দেশনা দেওয়া আছে। গ্যাংয়ের তালিকা করা হয়েছে। জড়িতদের চিহ্নিতের কাজও চলছে।রাজনৈতিক ছত্রচ্ছায়ায় বেপরোয়া কিশোর গ্যাং
রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় বেপরোয়া কিশোর গ্যাং। কোনো কিছুতেই দমানো যাচ্ছে না কিশোর অপরাধীদের দৌরাত্ম্য। রাজধানী ঢাকা থেকে শুরু করে সারা দেশে গ্রাম পর্যন্ত কিশোর গ্যাংয়ের তৎপরতা বাড়ছে। খুন, ধর্ষণ, মাদক চোরাচালান, মাদক সেবনসহ নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়েছে কিশোররা। মেয়েদের উত্ত্যক্তকরণ ও আধিপত্য নিয়ে বিরোধে প্রতিদিনই দেশের কোথাও না কোথাও অপ্রীতিকর ঘটনার জন্ম দিচ্ছে তারা। কিশোর অপরাধ দমনে জনসচেতনতা তৈরির লক্ষ্যে নানাভাবে চেষ্টা করেও পেরে উঠছে না আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। ডাটাবেজ তৈরির কাজ চললেও মিলছে না সুফল।