সমীক্ষাতেই ঝুলে আছে ভোলা-বরিশাল সেতু।
রমজান আহম্মেদ (রঞ্জু), বরিশাল ব্যুরো চীফ, বরিশাল –
ভোলাকে বরিশালের সঙ্গে সড়কপথে যুক্ত করতে পারে একটি সেতু। ইতিমধ্যে তেঁতুলিয়া ও কালাবদর
নদীর ওপর দেশের দীর্ঘতম সেতু নির্মাণের পরিকল্পনা করছে সরকার। তবে শুধু সমীক্ষাতেই ঝুলে
আছে ভোলা-বরিশাল সেতু নির্মাণের পরিকল্পনা।জানা যায়, প্রায় ১০ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সেতুর
ব্যয় ধরা হয়েছে ৯ হাজার ৯২২ কোটি টাকা। সেতুটির নকশা চূড়ান্ত হওয়ার পর এই ব্যয় আরও বাড়তে
পারে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, বরিশাল থেকে ভোলা যাওয়ার একমাত্র উপায় নদীপথ। নদীপথে
বরিশাল থেকে ভোলার ভেদুরিয়া যেতে লঞ্চে প্রায় দুই ঘণ্টা এবং স্পিড বোটে ৪০ মিনিটের মতো সময়
লাগে। ভেদুরিয়া থেকে ভোলা সদর উপজেলায় যেতে প্রায় ৩০ মিনিট সময় লাগে।বরিশালের লাহারহাট
ফেরিঘাট থেকেও লঞ্চে ভেদুরিয়া যাওয়া যায়। এই ঘাট থেকে ভোলার ইলিশঘাট পর্যন্ত একটি ফেরি
চলাচল করে। ভোলা থেকে যাত্রী ও পণ্য পরিবহন নৌকা ও লঞ্চের ওপর নির্ভরশীল। যা এই জেলার
আর্থসামাজিক উন্নয়নে প্রভাব ফেলছে। বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ (বিবিএ) জানায়, ভোলার সঙ্গে
কোনো সড়ক যোগাযোগ না থাকায় বরিশাল জেলা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে আছে। এই প্রকল্পটির মাধ্যমে
তেঁতুলিয়া ও কালাবদর নদীর ওপর সেতু নির্মাণ করে বরিশাল ও ভোলা জেলার মধ্যে সরাসরি সড়ক
যোগাযোগ স্থাপন করা সম্ভব হবে। ভোলা থেকে গ্যাস সরবরাহ করা সহজ হবে। ২০১৯ সালের
ডিসেম্বরে ভোলায় এসে তৎকালীন সেতু সচিব মো. বেলায়েত হোসেন জানিয়েছিলেন, ২০২৫ সালের
মধ্যে ভোলা-বরিশাল সেতু নির্মাণ হবে। ইতিমধ্যে ভোলা-বরিশাল সেতুর ফিজিবিলিটি স্টাডি
(সম্ভাব্যতা সমীক্ষা) সম্পন্ন হয়েছে। সেতুটি নির্মাণের জন্য ইতিমধ্যে জার্মানি, জাপান, চীনসহ
বেশ কয়েকটি দেশি-বিদেশি কোম্পানির আবেদনপত্র জমা পড়েছে। ২০৪১ সালের যে রূপকল্প আছে
তাতে ভোলা-বরিশাল ও ভোলা-লক্ষ্মীপুর সেতুর কথা উল্লেখ আছে। সামাজিক সংগঠন বদ্বীপ
ফোরামের প্রধান সমন্বয়কারী মীর মোশাররফ অমি বলেন, ‘বহুল কাঙ্ক্ষিত ভোলা-বরিশাল সেতু
নির্মাণকাজ শুরুর স্বপ্ন দেখছিলেন ভোলাবাসী অনেক আগেই। ২০২৫ সালের মধ্যে নির্মাণকাজ শেষ
হওয়ার কথা থাকলেও দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের ২১ জেলার অর্থনৈতিক নেটওয়ার্ক গড়ে তোলার
লক্ষ্যে এখন পুনরায় সমীক্ষা যাচাইকাজ শুরু হলেও এখনো শেষ হচ্ছে না। ভোলার সঙ্গে বরিশালের
সংযোগ হলে ভোলাবাসী ভঙ্গুর স্বাস্থ্যব্যবস্থা, শিক্ষাব্যবস্থাসহ জেলার কৃষক ও ব্যবসায়ীরা বড়
ধরনের সুবিধা পাবেন, তেমনি দেশ অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ হবে। তাই আমরা দ্রুত এই প্রকল্প চালুর
দাবি জানাই।’ বোরহানউদ্দিন উপজেলার উদয়পুর এলাকার ব্যবসায়ী শেখ আ. রহিম নাগর মিয়া বলেন,
ভোলা-বরিশাল সেতু খুবই প্রয়োজন। এটা ভোলাবাসীর প্রাণের দাবী। এই সেতুর জন্য বহু নেতাকে
বহুবার বলেছি। কিন্তু এখনো ভোলা-বরিশাল সেতুর কাজ কেন হচ্ছে না তা জানি না। ভোলা জেলা
আওয়ামী লীগের সভাপতি ও চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি ভোলা জেলার সাবেক সভাপতি
ফজলুল কাদের মজনু মোল্লা বলেন, ‘সরকারের যেহেতু প্রস্তাবনা আছে, ভোলা-বরিশাল সেতু নির্মাণ
হবে। তবে আমি সদর উপজেলা চেয়ারম্যান থাকাকালে ২০১০ সালের ২৩ জানুয়ারি ভেদুরিয়া এলাকায়
বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির সহায়তায় ইউরোপিয়ান কমিশনের অর্থায়নে এলজিইডির বাস্তবায়নে মুসলিম
এইডের তত্ত্বাবধানে ‘কাজের বিনিময়ে অর্থ’ প্রকল্পের আওতায় ভেদুরিয়া থেকে কালাবদর
রাস্তাসহ মাটির বাঁধের উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়েছিল। ভোলার চরচটকিমারা হয়ে
বরিশালের মেহেন্দীগঞ্জ পর্যন্ত রাস্তা দিয়ে ছোট ছোট কয়েকটি ব্রিজও পাকা হয়ে গেছে। তাই
সরকার ইচ্ছা করলে সেখান দিয়ে ভোলার লাহার হাট তেঁতুলিয়া ও বরিশালের কালাবদর নদীতে দুটি কাটা
ফেরির ব্যবস্থা করলে মাত্র এক ঘণ্টার মধ্যে ভোলা থেকে বরিশাল যেতে পারবে। ভোলার অতিরিক্ত
জেলা প্রশাসক তামিম আল ইয়ামিন বলেন, এটা সেতু বিভাগের কাজ। তারাই এ বিষয়ে ভালো বলতে
পারবে। বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ বিবিএর প্রধান প্রকৌশলী কাজী মুহাম্মদ ফেরদৌস বলেন, ভোলা-
বরিশাল সেতুর সমীক্ষা করা হয়েছে। এখন স্টাডি করা হচ্ছে। বাপেক্স জানায়, ভোলার শাহবাজপুর
গ্যাস ক্ষেত্রের প্রায় ৩২ কিলোমিটার উত্তরে ভেদুরিয়া ইউনিয়নে প্রায় ৬০০ বিলিয়ন ঘনফুট
গ্যাসের সন্ধান পাওয়া গেছে। গ্যাসের সন্ধান পাওয়ার পর, ভোলার গ্যাসের রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে প্রায় ১
দশমিক ৫ ট্রিলিয়ন ঘনফুটে। এই সেতুটি হলে ভোলা থেকে বরিশালসহ বিভিন্ন জায়গায় গ্যাস সরবরাহ
সহজ হবে। সুশাসনের জন্য প্রচারাভিযান (সুজন) ভোলা জেলা শাখার সভাপতি মোবাশ্বির উল্যাহ
চৌধুরী বলেন, ‘১২ বছর ধরেই শুনে আসছি ভোলা-বরিশাল সেতু হবে। কিন্তু আজ পর্যন্ত আমরা এর
বাস্তবায়ন দেখছি না। আদৌ হবে কি না, তা নিয়েও সন্দিহান।’
বরিশালের দক্ষিণাঞ্চলে বাড়ছে শীতের প্রবণতা। জানুয়ারিতে আসছে ২টি শৈত্যপ্রবাহ।
রমজান আহম্মেদ (রঞ্জু), বরিশাল ব্যুরো চীফ, বরিশাল –
রাতে বৃষ্টিপাত আর দিনে ঘন কুয়াশায় বরিশালে বাড়তে শুরু করেছে শীতের প্রকোপ। আবহাওয়া
অধিদপ্তর বলছে, আগামী এক মাসে শীত অনুভূতি আরও বাড়বে। চলতি মাসে শৈত্যপ্রবাহের
সম্ভাবনা না থাকলেও জানুয়ারি জুড়ে কমপক্ষে দুটি মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ আসবে। বুধবার (২৮
ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন বরিশাল বিভাগীয় আবহাওয়া অফিসের উচ্চ
পর্যবেক্ষক প্রণব কুমার রায়। প্রণব কুমার জানান, মঙ্গলবার মাঝরাতে বরিশাল বিভাগের
বিভিন্নস্থানে আকস্মিক বৃষ্টিপাত হয়। বৃষ্টিপাতের মাত্রা ছিল ১ দশমিক ২ মিলিমিটার।
একই সময়ে দেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে শীতাকুন্ডে। এরপরে গোপালগঞ্চে ৫
মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। বুধবার চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকায় বৃষ্টিপাত
হয়েছে। রাতের বৃষ্টির পরে দক্ষিণাঞ্চলে শীত বেড়েছে। বঙ্গোপসাগরে হঠাৎ লঘুচাপের সৃষ্টি
হওয়ায় বৃষ্টিপাত হয়। তিনি বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় বরিশাল বিভাগে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল
১৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তবে মৃদু শৈত্যপ্রবাহের খুব কাছাকাছি ছিল ২৪ ডিসেম্বর। ওই দিন ১০
দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা ছিল। চলতি মাসে কোনো শৈত্যপ্রবাহের সম্ভাবনা নেই
উল্লেখ করে তিনি বলেন, মৌসুমের আর একমাস শীত থাকবে। এই সময়ে বরিশাল বিভাগের
ওপর দিয়ে দুটি মাঝারি শৈত্য প্রবাহ বয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আবহাওয়া অধিদপ্তর
বলছে, যেকোনো বছরের তুলনায় এবার শীত বেশি অনুভূত হচ্ছে এই অঞ্চলে। অন্যান্য
বছরগুলোতে শীতেমৌসুম এক মাসে ফুরালেও এবার দক্ষিণাঞ্চলে তা তিন মাসের মতো স্থায়ী
হতে পারে। ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং চলে যাওয়ার পরপরই মৌসুমী বায়ু সক্রিয় থাকায় শীত বেশি
অনুভূত হচ্ছে। পটুয়াখালী জেলার দুমকি উপজেলার বাসিন্দা কৃষক মনির হাওলাদার বলেন, ৬/৭
দিন ধরে দুমকিতে বেশ শীত অনুভূত হচ্ছে। অন্যান্য বছর জানুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে যেমন
শীত লাগত এ বছর ডিসেম্বরের মাঝ সময় থেকে তেমন অনুভূত হচ্ছে। এতে নিত্যদিনের
কৃষিকাজে কিছুটা অসুবিধা হচ্ছে। ভোলার ভেলুমিয়া এলাকার বাসিন্দা সগির গাজী বলেন, ভোলা
নদী বেষ্টিত হওয়ায় সাধারণত শীত কিছুটা কম লাগে। তবে এ বছর তার উল্টো মনে হচ্ছে।
দুপুরবেলা ছাড়া অন্য সময়ে শীত লাগে। এতে বৃদ্ধ আর শিশুরা রোগাক্রান্ত হচ্ছে বেশি। তিনি
জানান, তার ঘরের ৫ জন সদস্যের মধ্যে চারজনই ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত। এর মধ্যে
একজন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ঝালকাঠি জেলার কাঁঠালিয়া উপজেলা সদরের বাসিন্দা
সোহাগ বলেন, বিগত ৫ বছর ডিসেম্বরের শেষে মৃদ শীত অনুভূত হয়। কিন্তু এ বছর মনে হচ্ছে
উত্তরাঞ্চলের মত শৈত্যপ্রবাহে আমরাও পড়তে পারি। হিজলা আবহাওয়া স্টেশনের ইনচার্জ
আনিসুর রহমান বলেন, ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে তাপমাত্রা নেমে আসলে শৈত্যপ্রবাহ
ঘোষণা করা হয়। এর আগেই মৃদু শৈত্যপ্রবাহ অনুভূত হয়। হিজলাসহ নদী তীরবর্তী এলাকা
বরিশালের মধ্য অঞ্চলের তুলনায় তাপমাত্রা বেশি রয়েছে। সাধারণত নদী তীরবর্তী এলাকা
উষ্ণ থাকে। শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. এইচএম সাইফুল
ইসলাম জানান, শীতের প্রকোপে বরিশাল বিভাগে ডিসেম্বর মাসের ৫ তারিখ থেকে ২৬ তারিখ
পর্যন্ত ১০ জন শিশু ও ৪ জন বয়স্ক ব্যক্তি ঠান্ডাজনিত রোগে মৃত্যুবরণ করেছে।
মোবাইলঃ 01620-849601
তারিখঃ 29/12/2022