তানোর(রাজশাহী)প্রতিনিধিঃ
রাজশাহীর তানোর পৌর সদরের ঐতিহ্যবাহী গোল্লাপাড়া হাটেের সরকারী জায়গায় গড়ে ওঠা এলডি সুপার মার্কেটের ঘর নিয়ে চলছে রমরমা বানিজ্য। একদিকে প্রশাসনের একশ্রেণীর কর্মকর্তা ও প্রভাবশালী ভুমিগ্রাসী চক্রের পকেটভারী হচ্ছে।অন্যদিকে হতদরিদ্র প্রকৃত ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের কেউ কাজের সন্ধানে এলাকা ছাড়া, কেউ অর্ধাহার-অনাহারে পরিবার-পরিজন নিয়ে ধুঁকে ধুঁকে মাতবেতর জীবনযাপন করছে।এদিকে উপজেলা প্রশাসনের প্রশ্নবিদ্ধ ভুমিকায় জনমনে চরম অসন্তোষের সৃষ্টি হয়েছে। অন্যদিকে পৌরসভার রাজস্ব আহরণের অন্যতম উৎস গোল্লাপাড়া হাটের সিংহভাগ ব্যক্তিমালিকানা হিসেবে ইজারা দেয়ায় পৌরসভার উন্নয়ন ব্যাহত হচ্ছে।
জানা গেছে, বিগত ২০০৭ সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে গোল্লাপাড়া বাজারে উচ্ছেদ অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ সরকারি সম্পত্তি উদ্ধার করেন। পরবর্তীতে বাজারের ভুমিহীন হতদরিদ্র ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা দোকান ইজারার জন্য জেলা প্রশাসকের (ডিসি) কাছে আবেদন করেন। তাদের আবেদনের প্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসক কার্যালয় থেকে দোকান ঘর ইজারার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। তবে শর্ত দেয়া হয় ভুমিহীন, হতদরিদ্র ও প্রকৃত ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী হতে হবে। এবং প্রত্যক ব্যবসায়ী ১০ ফিট আয়তনের একটি দোকান ঘরের জায়গা একশনা ইজারা নিতে পারবেন। এছাড়াও ইজারাকৃত ঘরে ইজারা নেয়া ব্যক্তিকে অবশ্যই ব্যবসা করতে হবে কোনো অবস্থাতেই ভাড়া বা পজিশন বিক্রি করতে পারবেন না। কোনা কারণে নিজে ব্যবসা করতে ব্যর্থ হলে ইজারা বাতির বলে গণ্য হবে। স্থানীয় হতদরিদ্র ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা জানান, সংশ্লিষ্ট বিভাগের কতিপয় কর্মকর্তার যোগসাজশে একটি প্রভাবশালী ভুমিগ্রাসী চক্র। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের ভুয়া তালিকা দিয়ে হাটের সরকারি জায়গা একশনা ইজারা নিয়ে বানিজ্য শুরু করেছে। অধিকাংশক্ষেত্রে এরা প্রায় ৮ থেকে ১০ লাখ টাকায় এক একটি ঘরের পজিশন বিক্রি করেছেন। কেউ আবার ৩ থেকে ৫ লাখ টাকা জামানত নিয়ে অন্য ব্যবসায়ীর কাছে ভাড়া দিয়েছে। অথচ হতদরিদ্র প্রকৃত ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা এক খন্ড জায়গা না পেয়ে পেশা বদলাতে বাধ্য হয়েছে। সচেতন মহলের প্রশ্ন যদি নিজেরা ব্যবসা না করবে তাহলে তাদের নামে কেনো ঘরের জায়গা বরাদ্দ দেয়া হলো ? যারা ১০ লাখ টাকায় পজিশন ক্রয় বা ৫ লাখ টাকা জনমানত দিয়ে ঘর ভাড়া নিতে পারে তাদের কেনো সরকারি জায়গা দিয়ে ভুমিহীন হতদরিদ্র ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের বঞ্চিত করা হলো।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যবসায়ী জানান, মেসার্স বিসমিল্লাহ জেনারেল স্টোর ৪টি, জেআর ঘড়িঘর ২টি, আদ্যনাথ হালদার ৬টি ও নজরুল ইসলাম ৬টি ঘর ভাড়া নিয়ে ব্যবসা করছেন। সম্প্রতি মোহনপুর উপজেলার মেলান্দী গ্রামের অভয় হালদার কতিপয় কর্মকর্তাকে আর্থিক সুবিধা দিয়ে নীতিমালা লঙ্ঘন করে প্রায় ১০ লাখ টাকায় আজাদ মন্ডলের ঘরের পজিশন কিনেছেন। গোল্লাপাড়া মহল্লার রহমান প্রায় ৫ লাখ টাকায় উদয় কুমারের ঘরের পজিশন কিনেছেন। স্থানীয় একাধিক জনপ্রতিনিধি জানান, গোল্লাপাড়া বাজারে লাখ লাখ টাকায় সরকারি সম্পত্তির দোকান ঘর কেনা-বেচা হচ্ছে। অথচ বাজারের অনেক দরিদ্র প্রকৃত ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী দীর্ঘদিন ধরে খোলা আকাশের নিচে ব্যবসা করছে।কিন্ত্ত ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী হিসেবে অব্যবসায়ী
যাদের ঘর বরাদ্দ দেয়া হয়েছে তাদের সিংহভাগ ব্যবসা করে না। অর্থের বিনিময়ে ব্যবসায়ী নামে ঘর বরাদ্দ নিয়ে কেউ বিক্রি কেউ ভাড়া দিয়ে রেখেছেন।
এবিষয়ে গোল্লাপাড়া বাজার বণিক সমিতির সভাপতি সারোয়ার জাহান জানান, এসব বিষয়ে তার জানা নাই, তবে মানুষের মুখে শোনা যাচ্ছে দোকান ঘর কেনা-বেচা হচ্ছে যা ইজারা নীতিমালা পরিপন্থী। এবিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পঙ্কজ চন্দ্র দেবনাথ বলেন, তিনি এখানো কোনো লিখিত অভিযোগ পাননি। তিনি বলেন, এবিষয়ে বিস্তারিত খোঁজখবর নিয়ে দেখা হবে, কেউ ইজারার শর্ত লঙ্ঘন করলে ইজারা বাতিল করা হবে।