রাশেদ, বিশেষ প্রতিনিধি (বগুড়): বগুড়ার সারিয়াকান্দিতে বিভিন্ন চরাঞ্চলে সরবরাহ করা হয়েছে বিদ্যুৎ এবং সোলার সিস্টেম। এতে উত্তপ্ত যমুনার চরে নানা ধরনের ফসল ফলছে। বালুময় সড়কে চলছে ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা। মোবাইল নেটওয়ার্কের আওতায় দুর্গম চরাঞ্চল। চরাঞ্চলের বাজারেও পরেছে শহরের ছোঁয়া। অন্ধকার ছেড়ে আলোতে আসায় কমেছে বিভিন্ন ধরনের অপরাধ। গড়ে উঠছে বিভিন্ন কল কারখানা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।
গত কয়েকবছর আগেই বগুড়া সারিয়াকান্দির বিভিন্ন চরাঞ্চলে বিদ্যুৎ সংযোগ চালু করা হয়েছে। বিদ্যুৎ সংযোগ চালুর আগে যমুনা চরবাসী নানা ধরনের দুর্ভোগের শিকার হতেন। তখন চরবাসি কুপি, হারিকেন, হ্যাচাক, ব্যাটারির টর্চ লাইট প্রভূতি ব্যবহার করে রাতের অন্ধকার কিছুটা নিরারন করতেন। গরমের সময় অসহ্য গরমে জনজীবনে দুর্ভোগ নেমে আসতো। একচর থেকে অন্য চরে পায়ে হেটেই চলাচল করা হতো বা কখনো পণ্য পরিবহনে ব্যবহার হতো ঘোড়ার গাড়ি। পানির অভাবে বিশালাকার এলাকায় ভালো কোনও ফসল ফলতো না, অনাবাদি পরে থাকতো বিশালাকার চারণভূমি। আলোর অভাবে সন্ধ্যার পর পরই চরের বাজারগুলোতে শুনশান নীরবতা বিরাজ করতো। ছিল না টেলিভিশন বা আধুনিক তথ্য প্রযুক্তির ছোঁয়া। সম্প্রতি উপজেলার চালুয়াবাড়ী, কাজলা, কর্ণিবাড়ী এবং বোহাইল ইউনিয়নের প্রায় অর্ধশত চরাঞ্চলে বিদ্যুৎ সংযোগ চালু করেছে জামালপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি। এছাড়াও সোনাতলা পল্লী বিদ্যুৎ সমতি থেকে চালুয়াবাড়ী ইউনিয়নের সুজালির পাড়া এবং সদর ইউনিয়নের চর শালুকায় সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে সরবরাহ করা হয়েছে বিদ্যুৎ সংযোগ। বিদ্যুৎ সংযোগের আগে এসব চরাঞ্চলে সৌরশক্তি চালিত সোলার প্যানেলের মাধ্যমেও আলোর সুবিধা পেতো চরবাসি। বিদ্যুৎ সংযোগ চালুর ফলে এখন ছোট বিদ্যুৎ চালিত মোটর ব্যবহার করে কৃষকেরা জমিতে পানি সেচ দিচ্ছেন। এতে একসময়ের পতিত জমিগুলোতে মরিচ, ভুট্টা, মিষ্টি কুমড়া, ধান, পাটসহ নানা ধরনের উচ্চ ফলনশীল জাতের ফসল চাষাবাদ হচ্ছে। হারিকেন, কুপির পরিবর্তে চরের শিক্ষার্থীরা এখন সোলার বা বিদ্যুৎ এর আলোয় পড়াশোনা করছেন। বিদ্যুৎ সংযোগ চালু হওয়ায় চরাঞ্চলের প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই চালু হয়েছে টেলিভিশন। তাছাড়া চরাঞ্চলেও চালু হয়েছে মোবাইল বা বিভিন্ন ধরনের আধুনিক তথ্য প্রযুক্তির যন্ত্রপাতি। একসময়ের সন্ধ্যার পরের শুনশান নীরবতা ভেঙে, চরাঞ্চলের বিভিন্ন বাজারগুলো বেশ মধ্যরাত পর্যন্ত এখন সরগরম থাকে। চা স্টলগুলোতে বেশ রাত পর্যন্ত চরবাসী সিনেমা হলের মতো টেলিভিশনে বিভিন্ন অনুষ্ঠানাদি উপভোগ করেন। তাছাড়া বাজারগুলোতে বিভিন্ন বিদ্যুৎ নির্ভর দোকানপাট গড়ে উঠেছে। পায়ে হাঁটা, গরুর গাড়ি বা ঘোড়ার গাড়ির পরিবর্তে চরের মেঠোপথে এখন সচরাচর ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা চলাচল করছে। শিক্ষায় পিছিয়ে থাকা চরাঞ্চলের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এখন বেশকিছু বহুতল ভবন নির্মাণ হয়েছে এবং চালু হয়েছে উন্নত স্বাস্থ্যসেবা। বিদ্যুৎ সংযোগ চালু হওয়ায় উপজেলার বিভিন্ন চরাঞ্চলে স্থাপন করা হয়েছে মোবাইল নেটওয়ার্ক। ফলে চরবাসীরাও তাদের নিজেদের ঘরে বসেই বহির্বিশ্বের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করতে পারছেন এবং ই কৃষি সেবা গ্রহণ করছেন। বিদ্যুৎ না থাকায় আগে মানুষরা প্রচন্ড গরমে ঘেমে উঠতো। বিদ্যুৎ সংযোগ চালু হওয়ার কারণে এখন চরবাসীর মাথার উপরেও পাখা ঘোরে। বিদ্যুৎ সংযোগ চালুর পূর্বে অন্ধকারে বিভিন্ন চরাঞ্চলে চুরিসহ বিভিন্ন ধরনের অপরাধ সংঘটিত হতো। বিদ্যুৎ এর আলোয় আলোকিত হওয়ায় এখন চরাঞ্চলে অপরাধ প্রবনতাও কমে গেছে। বিদ্যুৎ সংযোগ চালু হওয়ায় চরাঞ্চলে বিভিন্ন ধরনের কলকারখানা চালু করতে বিভিন্ন কোম্পানির কর্মকর্তারা এগিয়ে আসছেন।
কাজলা ইউপির চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ এ এস এম রফিকুল ইসলাম বলেন, বিদ্যুৎ না থাকায় চরবাসী নানাবিধ অসুবিধার সম্মুখীন হতেন। চরাঞ্চলেও বিদ্যুৎ সরবরাহ চালু হওয়ার কারণে আমাদের চরাঞ্চলেও এখন শহরের সুবিধা চালু হয়েছে এবং চরাঞ্চলেও উন্নয়নের ছোঁয়া লেগেছে।
বগুড়া পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির সারিয়াকান্দি জোনাল অফিসের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার শফি আহমেদ বলেন, চরাঞ্চল হলেও শহর এবং চর বৈষম্য না করে সেখানেও শহরের মতোই সমান গুরুত্ব দিয়ে নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ চালু রাখা হয়েছে। এতে কৃষি উৎপাদন আগের চেয়ে অনেক বৃদ্ধি পাওয়ারও খবর পাওয়া গেছে।
শিরোনাম :
সারিয়াকান্দির চরাঞ্চলে বিদ্যুৎ সংযোগে মানুষের জীবনমানের পরিবর্তন!
- Reporter Name
- Update Time : ১০:১৮:৪১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১২ নভেম্বর ২০২৪
- ৫৭ Time View
Tag :
আলোচিত