Dhaka ১২:৪১ অপরাহ্ন, রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সুন্দরবন ঘেঁষে অবৈধ রিসোর্ট হুমকিতে জীববৈচিত্র্য

  • Reporter Name
  • Update Time : ০৪:১২:৪২ অপরাহ্ন, সোমবার, ৪ নভেম্বর ২০২৪
  • ৪১ Time View

মোঃ শামীম হোসেন – খুলনা প্রতিনিধিঃ-
পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমোদন ছাড়াই সুন্দরবনের খুব কাছেই গড়ে উঠেছে ২৩টি কটেজ ও রিসোর্ট। ইকো কটেজ ও ইকো রিসোর্ট নাম দেওয়া হলেও এগুলোতে রয়েছে এসি, জেনারেটর ও সাউন্ড বক্স। এতে রিসোর্টগুলোর আশপাশে বাড়ছে পানিদূষণের পাশাপাশি মাটি ও শব্দদূষণ। হুমকির মুখে পড়েছে সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য। ওই এলাকা ছেড়ে চলে যাচ্ছে বন্যপ্রাণী। কিন্তু সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না বলে অভিযোগ রয়েছে। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, খালের এক পাশে সুন্দরবন, অন্য পাশে গড়ে তোলা হয়েছে এসব কটেজ ও রিসোর্ট। অনুমোদন ছাড়াই দাকোপ উপজেলার কৈলাশগঞ্জ, ঢাংমারী ও বানিশান্তা, বাগেরহাটের মোংলা এবং সাতক্ষীরার শ্যামনগরে সুন্দরবনের পাশে গড়ে উঠেছে এগুলো। বন বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, বনবাস, বনলতা, ইরাবতী, নির্বাসন, সুন্দরী, বনবিবি, ম্যানগ্রোভ হ্যাভেন রিসোর্ট, জঙ্গলবাড়ি ম্যানগ্রোভ রিসোর্ট, গোলকানন, বরসা রিসোর্ট, টাইগার পয়েন্টসহ ২৩টি রিসোর্ট ও কটেজ গড়ে উঠেছে। খাস জমি ও খালের কিছু অংশ দখল করেছে অধিকাংশ কটেজ ও রিসোর্ট। নদী-খালের মধ্যে তৈরি হয়েছে কংক্রিটের সিঁড়ি ও জেটি। বিদ্যুৎ না থাকলে রাতে রিসোর্টে চালানো হয় বিকট শব্দের জেনারেটর। আর সাউন্ড বক্সের শব্দ তো আছেই। জোরে গান বাজানো হয়। শব্দ ও তীব্র আলোতে ভয়ের মধ্যে থাকে বন্যপ্রাণী। রিসোর্ট-কটেজে মাঝেমধ্যে আয়োজন হয় ডিজে পার্টির। এদিকে কথিত ইকো কটেজগুলোর বেশ কয়েকটিতে সুন্দরবনের গাছ ব্যবহার করা হয়েছে। ভেতরে তৈরি করা হয়েছে কংক্রিটের রাস্তা। রিসোর্ট বাড়ার সঙ্গে পর্যটকের পাশাপাশি ট্রলারের সংখ্যাও বাড়ছে, যা বনের নীরবতা ভাঙছে। চিপস, চানাচুরসহ খাবারের বিভিন্ন প্যাকেট, প্লাস্টিকের বোতল ফেলা হচ্ছে বনের খালে, যা ভেসে বনের মধ্যে চলে যাচ্ছে। এদিকে বনের পাশেই নতুন করে আরও সাতটি রিসোর্ট তৈরি হচ্ছে। এগুলোতে প্রশাসনের কোনো নজর নেই। অভিযোগ রয়েছে, কটেজ ও রিসোর্ট মালিকরা প্রতি মাসে টাকা তুলে বন বিভাগ, থানা ও উপজেলা প্রশাসনকে উৎকোচ দিয়ে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করছেন।
স্থানীয় লোকজন জানান, এসব কটেজ-রিসোর্ট ঘিরে নিরাপত্তাহীনতা তৈরি হচ্ছে। মাঝে মাঝেই এখানে দুর্বৃত্ত ঢুকে পড়ে। সম্প্রতি কৈলাশগঞ্জ এলাকার একটি কটেজে মধ্যরাতে নৌকায় আসা তিন-চার দুর্বৃত্ত ঢুকে তরুণীর শ্লীলতাহানি করে। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান ডিসিপ্লিনের অধ্যাপক ড. আব্দুল্লাহ হারুন চৌধুরী বলেন, সুন্দরবনের চারপাশের ১০ কিলোমিটার এলাকা ‘প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা’। এই এলাকায় কোনো স্থাপনা নির্মাণ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) খুলনা বিভাগীয় সমন্বয়কারী বাবুল হাওলাদার বলেন, কটেজগুলো বনের জমির মধ্যে না হলেও সেগুলোর প্রধান উপজীব্য বন। খুলনা সার্কেলের বন সংরক্ষক মিহির কুমার দোর দাবি, কটেজ ও রিসোর্টগুলো বনের বাইরে। বিষয়টি দেখার দায়িত্ব পরিবেশ অধিদপ্তরের। কটেজ-রিসোর্ট আইনের আওতায় আনার জন্য ‘সুন্দরবন ইকো ট্যুরিজম মাস্টারপ্ল্যান’ প্রণয়ন করা হচ্ছে বলে তিনি জানান।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

আলোচিত

বোয়ালমারীতে চার বছর কর্মস্থলে না গিয়েও বেতন ভাতা নিচ্ছে উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রের ঝুমা !

সুন্দরবন ঘেঁষে অবৈধ রিসোর্ট হুমকিতে জীববৈচিত্র্য

Update Time : ০৪:১২:৪২ অপরাহ্ন, সোমবার, ৪ নভেম্বর ২০২৪

মোঃ শামীম হোসেন – খুলনা প্রতিনিধিঃ-
পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমোদন ছাড়াই সুন্দরবনের খুব কাছেই গড়ে উঠেছে ২৩টি কটেজ ও রিসোর্ট। ইকো কটেজ ও ইকো রিসোর্ট নাম দেওয়া হলেও এগুলোতে রয়েছে এসি, জেনারেটর ও সাউন্ড বক্স। এতে রিসোর্টগুলোর আশপাশে বাড়ছে পানিদূষণের পাশাপাশি মাটি ও শব্দদূষণ। হুমকির মুখে পড়েছে সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য। ওই এলাকা ছেড়ে চলে যাচ্ছে বন্যপ্রাণী। কিন্তু সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না বলে অভিযোগ রয়েছে। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, খালের এক পাশে সুন্দরবন, অন্য পাশে গড়ে তোলা হয়েছে এসব কটেজ ও রিসোর্ট। অনুমোদন ছাড়াই দাকোপ উপজেলার কৈলাশগঞ্জ, ঢাংমারী ও বানিশান্তা, বাগেরহাটের মোংলা এবং সাতক্ষীরার শ্যামনগরে সুন্দরবনের পাশে গড়ে উঠেছে এগুলো। বন বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, বনবাস, বনলতা, ইরাবতী, নির্বাসন, সুন্দরী, বনবিবি, ম্যানগ্রোভ হ্যাভেন রিসোর্ট, জঙ্গলবাড়ি ম্যানগ্রোভ রিসোর্ট, গোলকানন, বরসা রিসোর্ট, টাইগার পয়েন্টসহ ২৩টি রিসোর্ট ও কটেজ গড়ে উঠেছে। খাস জমি ও খালের কিছু অংশ দখল করেছে অধিকাংশ কটেজ ও রিসোর্ট। নদী-খালের মধ্যে তৈরি হয়েছে কংক্রিটের সিঁড়ি ও জেটি। বিদ্যুৎ না থাকলে রাতে রিসোর্টে চালানো হয় বিকট শব্দের জেনারেটর। আর সাউন্ড বক্সের শব্দ তো আছেই। জোরে গান বাজানো হয়। শব্দ ও তীব্র আলোতে ভয়ের মধ্যে থাকে বন্যপ্রাণী। রিসোর্ট-কটেজে মাঝেমধ্যে আয়োজন হয় ডিজে পার্টির। এদিকে কথিত ইকো কটেজগুলোর বেশ কয়েকটিতে সুন্দরবনের গাছ ব্যবহার করা হয়েছে। ভেতরে তৈরি করা হয়েছে কংক্রিটের রাস্তা। রিসোর্ট বাড়ার সঙ্গে পর্যটকের পাশাপাশি ট্রলারের সংখ্যাও বাড়ছে, যা বনের নীরবতা ভাঙছে। চিপস, চানাচুরসহ খাবারের বিভিন্ন প্যাকেট, প্লাস্টিকের বোতল ফেলা হচ্ছে বনের খালে, যা ভেসে বনের মধ্যে চলে যাচ্ছে। এদিকে বনের পাশেই নতুন করে আরও সাতটি রিসোর্ট তৈরি হচ্ছে। এগুলোতে প্রশাসনের কোনো নজর নেই। অভিযোগ রয়েছে, কটেজ ও রিসোর্ট মালিকরা প্রতি মাসে টাকা তুলে বন বিভাগ, থানা ও উপজেলা প্রশাসনকে উৎকোচ দিয়ে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করছেন।
স্থানীয় লোকজন জানান, এসব কটেজ-রিসোর্ট ঘিরে নিরাপত্তাহীনতা তৈরি হচ্ছে। মাঝে মাঝেই এখানে দুর্বৃত্ত ঢুকে পড়ে। সম্প্রতি কৈলাশগঞ্জ এলাকার একটি কটেজে মধ্যরাতে নৌকায় আসা তিন-চার দুর্বৃত্ত ঢুকে তরুণীর শ্লীলতাহানি করে। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান ডিসিপ্লিনের অধ্যাপক ড. আব্দুল্লাহ হারুন চৌধুরী বলেন, সুন্দরবনের চারপাশের ১০ কিলোমিটার এলাকা ‘প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা’। এই এলাকায় কোনো স্থাপনা নির্মাণ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) খুলনা বিভাগীয় সমন্বয়কারী বাবুল হাওলাদার বলেন, কটেজগুলো বনের জমির মধ্যে না হলেও সেগুলোর প্রধান উপজীব্য বন। খুলনা সার্কেলের বন সংরক্ষক মিহির কুমার দোর দাবি, কটেজ ও রিসোর্টগুলো বনের বাইরে। বিষয়টি দেখার দায়িত্ব পরিবেশ অধিদপ্তরের। কটেজ-রিসোর্ট আইনের আওতায় আনার জন্য ‘সুন্দরবন ইকো ট্যুরিজম মাস্টারপ্ল্যান’ প্রণয়ন করা হচ্ছে বলে তিনি জানান।