“হতদরিদ্রদের জমি দখলে নিতে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানির অভিযোগ”
ফুলবাড়ীয়া ময়মনসিংহ প্রতিনিধি:
ময়মনসিংহের ফুলবাড়ীয়া উপজেলার এনায়েতপুর ইউনিয়নের কাহালগাঁও এলাকায় হতদরিদ্রদের জমি দখলে নিতে পরপর ৫টি মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানির অভিযোগ উঠেছে সাইফুল ইসলাম (৫২) এর বিরুদ্ধে। সে কাহালগাঁও পূর্বপাড়া মিশন রোড এলাকার আব্দুল মতিন এর ছেলে। সুত্র জানায়, অভিযুক্ত সাইফুল ইসলাম ও তাঁর ভাই সাহেদ আলীর সঙ্গে পৈত্রিক সম্পত্তির ভাগ ভাটোয়ারা নিয়ে দির্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছে। এই সুবাদে প্রতিবেশী হতদরিদ্র মফিজুল হক (৪৪) তাঁর ভাই আমিরুল(৫৫) এর জমি দখলে নিতে ঘটনায় জড়িত না থাকলেও নিজ ভাইয়ের সাথে হতদরিদ্র পরিবারের সদস্যদের আসামী করেন। এইভাবে মফিজুল ও তাঁর ভাইদের বিরুদ্ধে বিভিন্নভাবে একাধিক মামলা ঠুঁকে দেন সাইফুল ইসলাম। সবশেষ মামলার চার্জশিট প্রদান করা হয় ফুলবাড়িয়া থানা থেকে। মামলা নং ২২/১৩১। মামলার এজাহারে স্বাক্ষীর তালিকায় থাকা, লাল মিয়া,হারুন অর রশিদ,হালিম, আব্দুল হামিদ ও প্রত্যক্ষদর্শী নূরুল ইসলাম,গ্রামপুলিশ কমলের সাথে কথা হলে মফিজুল ও তাঁর ভাই , ভাতিজা ঘটনায় জড়িত ছিলেন না বলে জানান।অপরদিকে মামলার সাক্ষীদের জবানবন্দিতে উক্ত ঘটনায় জড়িত থাকায় যাদের নামে চার্জশিট দেওয়া হয়েছে তাতে প্রকৃত অপরাধীকে আড়ালে রাখা হয়েছে । এমন অদ্ভুত জবানবন্দি কান্ডে সাক্ষীরা বলেন আমরা পুলিশের কাছে কোন জবান বন্দি দেইনি। এদের মধ্যে হারুন অর রশিদ বলেন, ঘটনার দিন তিনি ফুলবাড়ীয়া উপজেলাতেই ছিলেন না। চার্জশিটে সাক্ষীর জবানবন্দীর তালিকায় তার নাম থাকায় তিনি হতবাক।
প্রতিবেদককে তিনি আরও বলেন,কোন দেশে আমরা বাস করি, যেখানে জবানবন্ধী রেকর্ড করা হয় অথচ পুলিশের সাথে আমার কোন কথাই হয়নি, তাহলে কিভাবে চার্জশিটে আমার জবানবন্দী রেকর্ড হয়? মামলার চার্জশিটে ৭ নং জবানবন্দি লাল মিয়া বলেন, এই মামলায় আমি স্বাক্ষীর জবানবন্দি দেইনি। আর ঘটনার সময় আমি ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলাম না। তবে আগের একটি মারামারি মামলার স্বাক্ষী ছিলাম আমি। স্বাক্ষী তালিকায় থাকা সাইফুল ইসলাম ও সাহেদের বড় ভাই আঃ হামিদ জানান, তিনিও জবানবন্দি দেননি। তিনি আরো বলেন, আমাদের মায়ের জমি নিয়ে সমস্যা। জমির সমস্যা সমাধানে সাবেক বর্তমান চেয়ারম্যানসহ স্হানীয় মাতাব্বরগন অনেকবার শালিস করেছে। কিন্তু সমস্যার সমাধান করা সম্ভব হয়নি আমার দুই ভাইয়ের কারণে। তারা কেউ শালিসের সিদ্ধান্ত মানেনা। আর মফিজুল এবং তার ভাই আমিরুল এই ঘটনার সাথে জড়িত নয়। তাদের ২৫.৬৭ শতাংশ জমি জোর পূর্বকভাবে সাইফুল দখল করে আছে এবং জমি দখল যাতে ঠিক থাকে তাই তাদেরকে আসামী করা হয়েছে। এর আগেও তাদেরকে আরো ২/ ৩ টি মামলায় আসামী করে সাইফুল।
চার্জশিটভুক্ত আরেক স্বাক্ষী আলম বলেন, ঘটনার সময় আমি ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলাম না। পরে শুনেছি। আর আল্লাহ সাহেদকে ক্ষমা করলেও আমি ক্ষমা করবনা। সাহেদ একটি মামলায় আমার মেয়েকে আসামী করেছিল।
এবিষয়ে কথা হয় মামলার চার্জশিট ভুক্ত ১ নং আসামী সাহেদ আলীর সাথে তিনি জানান, আমাদের পৈত্রিক জমিজমা নিয়ে আমার বড় ভাই সাইফুলের সাথে বিরোধ চলছিল। ঘটনার দিন বিকালে জমিতে খুঁটি স্হাপন করতে গেলে আমার ভাই সাইফুলের সাথে বাকবিতন্ডা শুরু হয়। তখন আমার হাতে মাটি গর্ত করার একটি শাবল ছিল। বাকবিতন্ডার এক পর্যায়ে আমার ভাতিজি জামাতা ও এই মামলার বাদী সাইফুল ইসলাম প্রথমে লাঠি দিয়ে আমার মাথায় আঘাত করলে আমি শাবল দিয়ে তা প্রতিহত করলে তার বারির আঘাতে আমার পাশে থাকা বড় ভাই সাইফুল ইসলাম এর মাথায় আঘাত লাগে। তার মাথা ফেটে রক্ত বের হওয়া শুরু হলে আমি তার দিকে তাকাতেই আমার মাথায় লাঠি দ্বারা পূণরায় আঘাত করেন জামাই সাইফুল। এসময় আমি মাটিতে পড়ে গেলে হাতে থাকা শাবলও মাটিতে পড়ে যায়। তখন জামাই সাইফুল সাপল কুড়িয়ে নিয়েই প্রথমে আমার পায়ে আঘাত করে এবং পা ভেঙ্গে যায় এর পর আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলি। যেখানে আমার মাথায় আঘাত করে ও পা ভেঙ্গে ফেলে সেখানে কিভাবে আমি কাউকে মারতে পারি? জামাই সাইফুলের লাঠির আঘাতে আমার এবং আমার ভাই সাইফুল ইসলাম গুরুতর আহত হয়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলি। এরপর আমরা চিকিৎসা গ্রহণ করতে হাসপাতালে গেলে জামাই সাইফুল বাদী হয়ে আমাকে প্রধান আসামী করে মামলা করে। তবে এই মামলার সঠিক তদন্ত দাবী করেন সাহেদ আলী। এব্যাপারে মামলার বাদী সাইফুল ইসলাম ( জামাই সাইফুল) এর সাথে কথা হলে তিনি জানান, সাহেদ একজন জমির দালাল। তাকে আমার ক্রয়কৃত জমি থেকে দালালী দেইনি বলে সে আমাদের উপর হামলা করে। হামলার ঘটনায় আমি বাদী হয়ে মামলা করেছি।
এব্যাপারে আহত সাইফুল ইসলামের কাছে জানতে চাইলে তিনি মিডিয়া কর্মীদের সাথে কথা বলতে রাজি হননি।
এব্যাপারে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক এস আই হানিফ বলেন,চার্জশিটে যাদের নাম রয়েছে তারাই প্রকৃত আসামী।