নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
কৃষি মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের (বিএডিসি) বিভিন্ন উইংয়ের কতিপয় দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তারা এখনও বহাল তবিয়তে আছেন।
বিএডিসি বঙ্গবন্ধু পরিষদ, বিএডিসি কৃষিবিদ সমিতি ও বিএডিসি প্রকৌশলী সমিতির কতিপয় দুনীর্তিবাজ নেতারা ঢাকায় এখনও গুরুত্বপূর্ণ পদে কর্মরত। এসব কর্মকর্তাদের মধ্যে প্রধান প্রকৌশলী (সওকা) শিবেন্দ্র নারায়ণ গোপ, মহাব্যবস্থাপক (পাট বীজ) দেবদাস সাহা, আলু বীজ বিভাগ (অতিরিক্ত মহাব্যবস্থাপক) আবুল খায়ের মোঃ নুরুল ইসলাম | এসব কর্মকর্তারা সবাই বিগত হাসিনা সরকারের আমলে বিএডিসিতে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে কৃষি ভবনকে আওয়ামীলীগের দলীয় অফিসে রূপান্তর করে।
আসন্ন রবি মৌসুমে বীজ ও সার সরবরাহ সেচ সুবিধা কার্যক্রমে বিঘ্নতার সৃষ্টির মাধ্যমে দেশে অরাজকতা ও অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির জন্য কতিপয় নেতারা প্রায়ই একত্রিত হয়ে ষড়যন্ত্র লিপ্ত হচ্ছে।
বিএডিসি’র মাঠ পর্যায়ে গুরুত্বপূর্ণ অফিসগুলোতেও উত্তেজনা ও অস্থিরতা চলছে। আওয়ামী সরকারের আমলে কোটি কোটি টাকা দুনীর্তি ও লুটপাটকারী কতিপয় নেতা নামধারী কর্মকর্তাদের গুরুত্বপূর্ণ পদ থেকে সরিয়ে না দিলে আসন্ন রবি মৌসুমে বোরো ধান, গম, ভূট্টা, আলু, ডাল তৈলসহ অন্যান্য বীজ সরবরাহ; টিএসপি, এমওপি ও ডিএসপি সার সরবরাহ এবং সেচ সুবিধা সরবরাহে বিঘ্ন ঘটবে।
বিএডিসি’র একাধিক কর্মকর্তা জানান, আলু বীজ বিভাগ (অতিরিক্ত মহাব্যবস্থাপক) আবুল খায়ের মো. নুরুল ইসলাম একজন দুর্নীতিগ্রস্থ কর্মকর্তা। বাইরে সজ্জন সেজে আপাদমস্তক দুর্নীতিগ্রস্ত একজন অফিসার।
সাবেক কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক ও সাবেক কৃষি সচিব ওয়াহিদা আক্তারের দোহাই দিয়ে শত কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন। বিএডিসির বীজ বিভাগের প্রকল্প ও মাঠ পর্যায়ের দুনীর্তি ও চাঁদাবাজির টাকা উত্তোলনের দায়িত্বে ছিলেন।
নুরুল ইসলাম ডাল ও তৈলবীজ প্রকল্পের পিডি থাকাকালে কোটি কোটি টাকা লুটে নিয়েছেন। যোগ্য কর্মকর্তাদের বাদ দিয়ে সে তার মতো দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের দিয়ে মাঠ সাজিয়েছে। যাতে করে লুটপাট করতে সহজ হয়। সংস্থায় নুরুল ইসলামের প্রথম সেল্টারদাতা ছিলেন বিএডিসির তৎকালীন মহাব্যবস্থাপক প্রদীপ কুমার দে। এই প্রদীপ কুমার সিনিয়র কর্মকর্তাদের ডিঙিয়ে নিজে পদোন্নতি নেন। প্রদীপ কুমার বিএডিসি ধান, গম, ভূট্টা প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক, এজিএম বীজ প্রক্রিয়াজাতকরণ বিভাগ এবং মহাব্যবস্থাপক (বীজ) থাকাকালে শত কোটি টাকা লুটপাট করেছেন। প্রদীপ কুমার প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব সাজ্জাদুল হাসানের ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত। তার দোহাই দিয়ে প্রদীপ কুমার বিএডিসির বিভিন্ন সেক্টরে লুটপাট করেছেন। তদন্ত করলেই তার দুর্নীতির সকল প্রমাণ বেড়িয়ে আসবে।
দীপ সংস্থার বীজ ইউংয়ের বিভিন্ন বিভাগে তারমতো দুনীর্তিবাজ অযোগ্য কর্মকর্তাদের বসান। তিনি চলে যাওয়ার পর সে দায়িত্ব নেন নুরুল ইসলাম।
নুরুল ইসলাম ডাল তেল প্রকল্প শেষ হলে সাবেক প্রধান মন্ত্রীর মুখ্য সচিব সাজ্জাদুল হাসান ও কৃষি সচিব ওয়াহিদা আক্তারকে কয়েক কোটি টাকা ঘুষ দিয়ে বিএডিসির চেয়ারম্যানকে বাধ্য করে বীজ প্রক্রিয়াজাতকরণ বিভাগে পোস্টিং নেন এবং যথারীতি দুর্নীতি শুরু করেন। নুরুল ইসলামের রিয়েল এস্টেটের বিজনেস রয়েছে। কোটি কোটি টাকা দিয়ে উত্তরায় বাড়ি কিনেছেন। বর্তমানে তিনি বনানীর ৪ রোডের বাড়ি ১৮, ব্লক জি. ফ্ল্যাট৩/১ বিলাসী ফ্ল্যাটে বসবাস করেন। এই ফ্ল্যাটটি আড়াই কোটি টাকা দিয়ে কিনেছেন। এছাড়া আমেরিকায়ও বাড়ি কিনেছেন। বর্তমানে তার ছেলে মেয়ে আমেরিকা পড়া শোনা করছে। নুরুল ইসলাম যে কোনো সময় দেশ ছেড়ে আমেরিকায় পাড়ি দিবেন বলে শোনা যাচ্ছে। বর্তমানে বগুড়া বড়ি হওয়ার সুবাদে সে এখন নব্য বিএনপি সাজার চেষ্টা করছে। দেবদাস সাহা আরেকজন দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তার নাম। তিনি ২০০৯ সালে আওয়ামীলীগ ক্ষমতা নেয়ার পর হতেই টাকার বিনিময়ে দুর্নীতি করা যায় এমন যায়গায় পোস্টিং নেন। তৎকালীন কৃষি মন্ত্রী ড. আ: রাজ্জাকের সহায়তায় টাকার পাহাড় বানান। সে এখনও বিএডিসিতে অশান্ত পরিবেশ সৃষ্টির করে বর্তমান সরকারকে বিপাকে ফেলানোর প্রচেষ্টায় লিপ্ত। বিএডিসি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের দাবী এসব দুনীর্তিবাজ কর্মকর্তাদের দ্রুত সম্পদের তদন্ত এবং সংস্থার গুরুত্বপূর্ণ পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার দাবী জানিয়েছেন। ঢাকা থেকে অন্যত্র বদলীর দাবী করেন।