Dhaka ১১:৪৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ৭ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বরিশালের পোর্ট রোড সেন্ডিগেটের মাধ্যমে হাত ঘুরলেই দাম বাড়ে ইলিশের, ‘লাভের গুড়’ খায় মধ্যস্বত্বভোগীরা

  • Reporter Name
  • Update Time : ০৭:৫১:০৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৮ অক্টোবর ২০২৪
  • ৭৭ Time View

মধ্যস্বত্বভোগীরা

রমজান আহম্মেদ (রঞ্জু),
মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলম বলেন, “ইলিশের দাম নির্ধারণ বা নিয়ন্ত্রণ করার
কোনো ক্ষমতাই নেই মৎস্য বিভাগ কিংবা জেলেদের।”বাঙালির হাতের প্রায় নাগালের
বাইরে চলে যাওয়া ইলিশ মাছের দাম নির্ধারণে মৎস্য বিভাগ বা জেলেদের কোনো
ভূমিকা নেই। বরং হাতের পর হাত ঘুরে ইলিশের ‘লাভের গুড়’ চলে যায়
মধ্যস্বত্বভোগীদের হাতে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জেলেরা মাছ আড়তে তোলার পর
খোলা ডাকের মাধ্যমে সেটির দাম নির্ধারণে ভূমিকা রাখেন আড়তদার ও পাইকাররা।
পরে সেটি কয়েক হাত ঘুরে বাজারে ভোক্তার কাছে আসে। জেলের হাত থেকে চার-
পাঁচটি ধাপ পার হয়ে বাজারে আসে ইলিশ। প্রতিটি ধাপে এক থেকে দেড়শ টাকা
করে কেজিতে বেড়ে যায় দাম। আর এতেই জাতীয় মাছ ইলিশের দাম আকাশচুম্বী
হয়ে পড়ে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। বরিশালের হিজলা ও মুলাদী উপজেলা মৎস্য
কর্মকর্তার দায়িত্বে থাকা মোহাম্মদ আলম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন,
“ইলিশ মাছের দাম নির্ধারণ কিংবা নিয়ন্ত্রণ করার কোনো ক্ষমতাই নেই মৎস্য
বিভাগের। এমনকি জেলেরাও মাছের দাম নির্ধারণ করতে পারেন না। মাছের দাম
বাড়লেও জেলেরা তেমন উপকৃত হয় না। মধ্যস্বত্ত্বভোগী আড়তদার ও পাইকারি
বিক্রেতারা নিজেদের মত দাম বাড়িয়ে মাছ বিক্রি করেন।” তিনি জানান, জেলেরা
নদী থেকে মাছ শিকার করে তীরবর্তী ঘাটের আড়তে নিয়ে আসেন। সেখানে থাকা
আড়তদার ও পাইকাররা মাছের দাম হাঁকেন। জেলেদের পছন্দ না হলেও সেই দামে

বিক্রি করতে হয়। বাজারে চাহিদার উপর আড়ত ও পাইকাররা দাম নির্ধারণ করে
বিভিন্ন বাজারে বিক্রি করেন। মেঘনা নদীর পাড়ের হিজলা উপজেলার জেলে হাসান
হাওলাদার জানান, তারা নদী থেকে মাছ ধরার পর ঘাটে নিয়ে আসেন। সেখানে
থাকা পাইকাররা ডাক দিয়ে মাছ কিনে নেয়। এখানে মাছের সাইজ এবং ওজন ভেদে
কোনো ভাগ করা হয় না। সব মাছ এক সঙ্গে রাখা হয়। “পাইকাররা মাছের মধ্যে
এক কেজি কিংবা তার চেয়ে বেশি ওজনের মাছ কয়টি আছে, জাটকা কী পরিমাণ
তা দেখে দাম তুলেন। পরে খুচরা বাজারে যে দামে বিক্রি হয় তার চেয়ে অন্তত চার
থেকে পাঁচশ টাকা কম ধরে দাম হাঁকেন। জেলেরা সেই দামে মাছ বিক্রি করেন।”
হাসান হাওলাদার বলেন, খুচরা বাজারে যদি এক কেজি সাইজের ইলিশ ১২০০ টাকা
হয়। তাদের কাছ থেকে ৮০০ টাকা দরে কিনে নেয়। ওই মাছ কিনে তারা ঢাকা,
চাঁদপুর ও বরিশালের বিভিন্ন মোকামে নিয়ে যায়। “সেখান থেকে আরেক পাইকার
কিনে নিয়ে যায়। দেশের বিভিন্ন বড় বাজারের পাইকররা সেখান থেকে কিনে নেন।
তাদের কাছ থেকে কিনে নেন খুচরা বিক্রেতারা। তারপর তাদের কাছ থেকে কেনেন
ভোক্তারা। প্রতি হাতে সর্বনিন্ম একশ থেকে দেড়শ টাকা করে কেজিতে লাভ রাখেন
সবাই।” মেঘনা নদীর তীরের মাছ ঘাটের মালিক আলতাফ জমাদ্দার বলেন, জেলেরা
তাদের কাছ থেকে দাদন নেন। নদী থেকে মাছ শিকারের পর তারা ঘাটে নিয়ে
আসেন। ঘাটে থাকা পাইকাররা দাম হাঁকেন। জেলেদের পছন্দ হলে বিক্রি করেন।
এখানে তাদের কোনো হাত নেই। একই কথা বলেন বরিশাল সদর উপজেলার
লাহারহাট এলাকার বেদে সরদার মো. জসিম। তিনি বলেন, “আমরা মাছ ধরে
বাজারে নিয়ে যাই। সেখানে থাকা পাইকরার ঠিকা দাম হাঁকেন। পছন্দ হলে দিয়ে
দেই।” তিনি বলেন, তাদের কাছ থেকে পাইকাররা এক কেজি ওজনের মাছ ১ হাজার
৩০০ থেকে ১ হাজার ৪০০ টাকা, এক কেজির নিচে এলসি সাইজ ১ হাজার ১০০

থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা, আধা কেজি ওজনের এক হাজার টাকা এবং জাটকা
৩০০ টাকা দরে কিনে নেন। রোববার বরিশাল নগরীর পোর্ট রোড বাজারে
পাইকারিতে এক কেজি ৩০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ মাছ বিক্রি হয়েছে প্রতি কেজি দুই
হাজার ২০০ টাকা দরে। এ ছাড়া এক কেজি সাইজের ইলিশ মাছ ১ হাজার ৯৫০
টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। অপরদিকে খুচরা বাজারে এক কেজির ইলিশের দাম ছিলো
দুই হাজার টাকা। এলসি সাইজ পাইকারিতে এক হাজার ৭০০ টাকা; যা খুচরা
বাজারে ১৮০০ থেকে ১৯০০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। আধা কেজি সাইজের ইলিশ
মাছের কেজি এক হাজার ৫০০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। আড়তদার মো. রানা
বলেন, “বর্তমানে ইলিশ মাছ খুব আসে না। যার কারণে দাম অনেক বেশি। তাই
ভারতে রপ্তানি এক রকম বন্ধ রয়েছে। কারণ যে দামে কিনতে হয়, ভারতে সেই
দাম পাওয়া যায় না। “রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান অনেকেই লসে রয়েছে। শুধুমাত্র লাইসেন্স
টিকিয়ে রাখতে না পাঠালেই নয়, এমন পরিমাণ মাছ পাঠাচ্ছে।”

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

আলোচিত

বোয়ালমারীতে চার বছর কর্মস্থলে না গিয়েও বেতন ভাতা নিচ্ছে উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রের ঝুমা !

বরিশালের পোর্ট রোড সেন্ডিগেটের মাধ্যমে হাত ঘুরলেই দাম বাড়ে ইলিশের, ‘লাভের গুড়’ খায় মধ্যস্বত্বভোগীরা

Update Time : ০৭:৫১:০৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৮ অক্টোবর ২০২৪

মধ্যস্বত্বভোগীরা

রমজান আহম্মেদ (রঞ্জু),
মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলম বলেন, “ইলিশের দাম নির্ধারণ বা নিয়ন্ত্রণ করার
কোনো ক্ষমতাই নেই মৎস্য বিভাগ কিংবা জেলেদের।”বাঙালির হাতের প্রায় নাগালের
বাইরে চলে যাওয়া ইলিশ মাছের দাম নির্ধারণে মৎস্য বিভাগ বা জেলেদের কোনো
ভূমিকা নেই। বরং হাতের পর হাত ঘুরে ইলিশের ‘লাভের গুড়’ চলে যায়
মধ্যস্বত্বভোগীদের হাতে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জেলেরা মাছ আড়তে তোলার পর
খোলা ডাকের মাধ্যমে সেটির দাম নির্ধারণে ভূমিকা রাখেন আড়তদার ও পাইকাররা।
পরে সেটি কয়েক হাত ঘুরে বাজারে ভোক্তার কাছে আসে। জেলের হাত থেকে চার-
পাঁচটি ধাপ পার হয়ে বাজারে আসে ইলিশ। প্রতিটি ধাপে এক থেকে দেড়শ টাকা
করে কেজিতে বেড়ে যায় দাম। আর এতেই জাতীয় মাছ ইলিশের দাম আকাশচুম্বী
হয়ে পড়ে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। বরিশালের হিজলা ও মুলাদী উপজেলা মৎস্য
কর্মকর্তার দায়িত্বে থাকা মোহাম্মদ আলম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন,
“ইলিশ মাছের দাম নির্ধারণ কিংবা নিয়ন্ত্রণ করার কোনো ক্ষমতাই নেই মৎস্য
বিভাগের। এমনকি জেলেরাও মাছের দাম নির্ধারণ করতে পারেন না। মাছের দাম
বাড়লেও জেলেরা তেমন উপকৃত হয় না। মধ্যস্বত্ত্বভোগী আড়তদার ও পাইকারি
বিক্রেতারা নিজেদের মত দাম বাড়িয়ে মাছ বিক্রি করেন।” তিনি জানান, জেলেরা
নদী থেকে মাছ শিকার করে তীরবর্তী ঘাটের আড়তে নিয়ে আসেন। সেখানে থাকা
আড়তদার ও পাইকাররা মাছের দাম হাঁকেন। জেলেদের পছন্দ না হলেও সেই দামে

বিক্রি করতে হয়। বাজারে চাহিদার উপর আড়ত ও পাইকাররা দাম নির্ধারণ করে
বিভিন্ন বাজারে বিক্রি করেন। মেঘনা নদীর পাড়ের হিজলা উপজেলার জেলে হাসান
হাওলাদার জানান, তারা নদী থেকে মাছ ধরার পর ঘাটে নিয়ে আসেন। সেখানে
থাকা পাইকাররা ডাক দিয়ে মাছ কিনে নেয়। এখানে মাছের সাইজ এবং ওজন ভেদে
কোনো ভাগ করা হয় না। সব মাছ এক সঙ্গে রাখা হয়। “পাইকাররা মাছের মধ্যে
এক কেজি কিংবা তার চেয়ে বেশি ওজনের মাছ কয়টি আছে, জাটকা কী পরিমাণ
তা দেখে দাম তুলেন। পরে খুচরা বাজারে যে দামে বিক্রি হয় তার চেয়ে অন্তত চার
থেকে পাঁচশ টাকা কম ধরে দাম হাঁকেন। জেলেরা সেই দামে মাছ বিক্রি করেন।”
হাসান হাওলাদার বলেন, খুচরা বাজারে যদি এক কেজি সাইজের ইলিশ ১২০০ টাকা
হয়। তাদের কাছ থেকে ৮০০ টাকা দরে কিনে নেয়। ওই মাছ কিনে তারা ঢাকা,
চাঁদপুর ও বরিশালের বিভিন্ন মোকামে নিয়ে যায়। “সেখান থেকে আরেক পাইকার
কিনে নিয়ে যায়। দেশের বিভিন্ন বড় বাজারের পাইকররা সেখান থেকে কিনে নেন।
তাদের কাছ থেকে কিনে নেন খুচরা বিক্রেতারা। তারপর তাদের কাছ থেকে কেনেন
ভোক্তারা। প্রতি হাতে সর্বনিন্ম একশ থেকে দেড়শ টাকা করে কেজিতে লাভ রাখেন
সবাই।” মেঘনা নদীর তীরের মাছ ঘাটের মালিক আলতাফ জমাদ্দার বলেন, জেলেরা
তাদের কাছ থেকে দাদন নেন। নদী থেকে মাছ শিকারের পর তারা ঘাটে নিয়ে
আসেন। ঘাটে থাকা পাইকাররা দাম হাঁকেন। জেলেদের পছন্দ হলে বিক্রি করেন।
এখানে তাদের কোনো হাত নেই। একই কথা বলেন বরিশাল সদর উপজেলার
লাহারহাট এলাকার বেদে সরদার মো. জসিম। তিনি বলেন, “আমরা মাছ ধরে
বাজারে নিয়ে যাই। সেখানে থাকা পাইকরার ঠিকা দাম হাঁকেন। পছন্দ হলে দিয়ে
দেই।” তিনি বলেন, তাদের কাছ থেকে পাইকাররা এক কেজি ওজনের মাছ ১ হাজার
৩০০ থেকে ১ হাজার ৪০০ টাকা, এক কেজির নিচে এলসি সাইজ ১ হাজার ১০০

থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা, আধা কেজি ওজনের এক হাজার টাকা এবং জাটকা
৩০০ টাকা দরে কিনে নেন। রোববার বরিশাল নগরীর পোর্ট রোড বাজারে
পাইকারিতে এক কেজি ৩০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ মাছ বিক্রি হয়েছে প্রতি কেজি দুই
হাজার ২০০ টাকা দরে। এ ছাড়া এক কেজি সাইজের ইলিশ মাছ ১ হাজার ৯৫০
টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। অপরদিকে খুচরা বাজারে এক কেজির ইলিশের দাম ছিলো
দুই হাজার টাকা। এলসি সাইজ পাইকারিতে এক হাজার ৭০০ টাকা; যা খুচরা
বাজারে ১৮০০ থেকে ১৯০০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। আধা কেজি সাইজের ইলিশ
মাছের কেজি এক হাজার ৫০০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। আড়তদার মো. রানা
বলেন, “বর্তমানে ইলিশ মাছ খুব আসে না। যার কারণে দাম অনেক বেশি। তাই
ভারতে রপ্তানি এক রকম বন্ধ রয়েছে। কারণ যে দামে কিনতে হয়, ভারতে সেই
দাম পাওয়া যায় না। “রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান অনেকেই লসে রয়েছে। শুধুমাত্র লাইসেন্স
টিকিয়ে রাখতে না পাঠালেই নয়, এমন পরিমাণ মাছ পাঠাচ্ছে।”