বিশেষ প্রতিনিধি :
প্রধান উপদেষ্টা ড. মোহাম্মদ ইউনূসের বাসভবন রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন ‘যমুনা’য় দায়িত্ব পালনের জন্য গণপূর্ত অধিদপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত তিন জন প্রকৌশলী নিরাপত্তা ছাড়পত্র পাননি। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সুবিধাভোগী, ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত থাকা এবং বহুবিধ দুর্নীতির অভিযোগ থাকায় একাধিক রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা তাদের বিষয়ে নেগেটিভ রিপোর্ট দিয়েছে। ইতিমধ্যে একজন প্রকৌশলীকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে।
গণপূর্ত অধিদপ্তরের তিন প্রকৌশলীর মধ্যে দু’জন নির্বাহী প্রকৌশলী ও একজন উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী। নির্বাহী প্রকৌশলী দু’জন হলেন নগর গণপূর্তের নির্বাহী প্রকৌশলী ও ডুয়েট ছাত্রলীগের সাবেক নেতা মো. মাহাবুবুর রহমান এবং ইএম বিভাগ-২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী রাজু আহমেদ। উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী সঞ্জয় হালদারকে ইতিমধ্যে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে। দুই নির্বাহী প্রকৌশলী তাদের সিকিউরিটি ক্লিয়ারেন্স নিতে ‘কোটি টাকার’ মিশন নিয়ে নেমেছে। এর মধ্যে রাজু আহমেদ রাজশাহীতে একটি ভুয়া ঠিকানায় নিরাপত্তা ছাড়পত্র নিতে গিয়ে ধরা খেয়েছেন।
নগর গণপূর্তের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাহাবুবুর রহমান গণপূর্ত অধিদপ্তরে ‘ডিপ্লোমা মাহাবুব’ নামে পরিচিত। মাহাবুব এসএসসি পাসের পর পলিটেকনিক থেকে ডিপ্লোমা পাস করেন। পরে ডুয়েট থেকে বিএসসি পাস করে ২২তম বিসিএস-এ যোগ দেয়। যোগদানের পর থেকে নানা অপকর্মের এই হোতা মাহাবুব বেশিরভাগ সময়ই ঢাকাতে চাকুরি করছেন। উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী হিসেবে সবচে’ গুরুত্বপূর্ণ নগর গণপূর্ত বিভাগ, শেরেবাংলানগর-১ মেডিকেল সাব ডিভিশন, নির্বাহী প্রকৌশলী হিসেবে নারায়ণগঞ্জ, মেডিকেল গণপূর্ত বিভাগ এবং এলাকার বিচারে সবচে’ বড়ো ডিভিশন-৪ এর নির্বাহী প্রকৌশলী, মেট্রোজোনের স্টাফ অফিসারের পর নগর গণপূর্তের নির্বাহী প্রকৌশলী হিসেবে দায়িত্ব পালন করে শত কোটি টাকা লোপাট করেছেন। নগর গণপূর্তের পোস্টিং ভাগাতে দেশের শীর্ষ ব্যক্তির ছেলেকে কয়েক কোটি টাকা দিয়েছেন।
এর আগে ডিভিশন-৪ এর নির্বাহী প্রকৌশলী থাকাকালে মাহাবুবুর রহমান পাবলিক লাইব্রেরী ভবনের টেণ্ডারে সরকারের ৫৬ কোটি টাকা অতিরিক্ত খরচ করেছেন। নিয়ম অনুযায়ী আগ্রহী দরপত্রদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো ১০ শতাংশ কম দরপত্র দিয়ে থাকেন। কিন্তু এ ক্ষেত্রে ঘটেছে ভিন্ন ঘটনা। এই কাজ সাড়ে আট শতাংশ বেশি দরে কাজ দেয়া হয়েছে। সে হিসাবে সাড়ে ১৮ শতাংশের বেশি টাকা খরচ হচ্ছে সরকারের। নেগোসিয়েশনের মাধ্যমে এনডিই নামের একটি প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেয়া হয়েছে। সরকারের ব্যয় সংকোচন নীতির এই সময়ে এতো বেশি টাকা কার্যাদেশ দিয়ে সংশ্লিষ্টরা অতিরিক্ত দরের টাকা ভাগ-বাটোয়ারা করে নিয়েছেন।
দুর্নীতিবাজ প্রকৌশলী মাহাবুব একই ভবন ও অন্যান্য স্থাপনা মেরামতের কাজ একবার করে দুইবার বিল উত্তোলন, অস্তিত্বহীন কাজের নামে বিল-ভাউচার, মন্ত্রিপাড়ায় জরুরি সংস্কার কাজ এবং ফ্যাসিস্টেও দোষর সাবেক প্রধান বিচারপতির বাসভবন সংস্কারের নামে প্রায় ৩০ কোটি টাকার ভুয়া বিল-ভাউচার করে আত্মসাত করেছেন। এর মধ্যে সাবেক প্রধান বিচারপতির বাসভবনে সংস্কারপরবর্তী একটি রিইউনিয়ন অনুষ্ঠানের টাকা এ্যাডজাস্ট করতে ভুয়া বিল ও ভাউচার করেছেন। এ কাজে তিনি পদ্মা কনস্ট্রাকশন লিমিটেড নামে একটি কোম্পানিকে ব্যবহার করেছেন। সম্প্রতি দুদকের একটি এনফোর্সমেন্ট টিম একই কাজে দুইবার বিল তোলার বিষয়ে প্রমাণ পেলেও মাহাবুবসহ অভিযুক্ত প্রকৌশলীদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। বিপুল অর্থের বিনিময়ে ঘটনাটি ধামাচাপা দিয়েছেন এই মাহাবুব।
সাধারণত: ভিভিআইপি স্থাপনায় দায়িত্ব পালন পালনের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার তিনটি বিষয়কে বিবেচনায় নেয়া হয়। এর মধ্যে সততা, দক্ষতা ও রাজনৈতিক মতাদর্শ। তিনটি বিষয়ের দুইটিতেই মাহাবুবের নেগেটিভ রিপোর্ট এসেছে। আর চলতি দায়িত্বের নির্বাহী প্রকৌশলী রাজু আহমেদের ক্ষেত্রে তিনটি বিষয়ই নেগেটিভ রিপোর্ট রয়েছে। রাজু আহমেদ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঠিক এক মাস পর ৭ ফেব্রুয়ারি আওয়ামী লীগ নেতা মাহাবুব উল আলম হানিফের সুপারিশে তৎকালীণ গণপূর্তমন্ত্রী মুক্তাদির চৌধুরীর নির্দেশে ইএম বিভাগ-২ এ বদলি ভাগিয়ে নেন। সে সময়ে তিনি সারাক্ষণ মন্ত্রিপাড়ায় মুক্তাদির চৌধুরীর বাসায় পরে থাকতেন। এ জন্য তার অধস্থন কর্মকর্তাকে মন্ত্রীর পাহারাদার হিসেবে সম্বোধন করতেন।