রাশেদ, বিশেষ প্রতিনিধিঃ বগুড়ার সারিয়াকান্দিতে বিভিন্ন ধরনের ফসলে ভরপুর হয়েছে যমুনার বিস্তীর্ণ বালুচর। ফসলগুলো বিক্রি করে লাভবান হচ্ছেন কৃষক। চরের বাড়ির পাশাপাশি অনেকেরই এখন রয়েছে শহরাঞ্চলে বাড়ি। আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতি এবং উচ্চ ফলনশীল জাত উদ্ভাবনের ফলে এসব সম্ভব হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তা।
বগুড়ার সারিয়াকান্দিতে ১২ টি ইউনিয়নের মধ্যে সবগুলোই নদীর কবলে। এর মধ্যে ৩ টি ইউনিয়নের উপর দিয়ে বাঙালি এবং সুখদহ নদী বহমান রয়েছে। অপরদিকে পৌরসভাসহ ৬ টি ইউনিয়নের আংশিক এবং ৩ টি ইউনিয়ন সম্পূর্ণ যমুনা নদীগর্ভে। ফলে নদীর সাথে প্রবহমান বালু পরে প্রাচীনকাল থেকেই এ এলাকায় বিশালাকার চারণভূমি অনাবাদি হয়ে পরে থাকে। এছাড়া যমুনা বাঙালি এবং সুখদহ নদীর নাব্যতা না থাকায় এসব নদীর অববাহিকায় পলি পরে বিশালাকার কৃষি জমির সৃষ্টি হয়েছে। এসব কৃষি জমিতে পানির অভাবে কৃষকরা তাদের কাঙ্খিত ফসলাদি চাষ করতে পারতো না। ফসল ফলানোর জন্য আদিকালে বৃষ্টির পানিই ছিল একমাত্র ভরসা। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরেই ডিজেল বা বিদ্যুৎ চালিত শ্যালোমেশিন দিয়ে পানি উত্তোলন করে তা প্লাস্টিকের ফিতা পাইপের সাহায্য কৃষি জমির উঁচুনিচু এলাকাতে সেচ দিয়ে ফসল চাষ করা হচ্ছে। ফলে উপজেলার উত্তপ্ত বালুচর আর অনাবাদি ফেলে না রেখে সেখানে কৃষকরা নানা ধরনের ফসল ফলাচ্ছেন। আগের চেয়ে উচ্চ ফলনশীল জাতের ফসল বেশি চাষাবাদ করে এখন কৃষকরা ব্যাপকভাবে লাভবান হচ্ছেন। কেউ কেউ বছর চুক্তিতে জমি নিয়ে ৫০ বিঘা থেকে শুরু করে ৩০০ বিঘা পর্যন্ত জমি প্রকল্প আকারে বাণিজ্যিকভাবে চাষাবাদ শুরু করেছেন। আর এসব ফসল ঘরে তুলে লাভবান হয়ে কৃষকেরা চরের বাড়ির পাশাপাশি শহেরও পাকাবাড়ি গড়ে তুলছেন। চরাঞ্চলের যেদিকে দুচোখ যায় সেদিকেই শুধুই ফসল আর ফসল। এগুলোর মধ্যে মরিচ, ভুট্টা, মিষ্টি কুমড়া, বিভিন্ন জাতের ধান, বিভিন্ন প্রকারের শাকসবজি, বিভিন্ন ধরনের কলাই, মিষ্টি ও গোলআলু, গম, তীল প্রভূতি অন্যতম। এসব ফসল বিক্রির সাথে জড়িত থেকে উপজেলার শতশত বেকার যুবকের কর্মসংস্থানও হচ্ছে। ঘুরছে অর্থনীতির চাকা।
সারিয়াকান্দি উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্য অনুযায়ী, বিভিন্ন ফসলের মধ্যে এ বছর উপজেলায় ৩,১৩০ হেক্টর জমিতে মরিচের আবাদ হয়েছে। অতীতের সকল রেকর্ড ভেঙে ৭ হাজার ৮০০ হেক্টর জমিতে ভুট্টার আবাদ হয়েছে। ১৩০ হেক্টর জমিতে মিষ্টি কুমড়ার আবাদ হয়েছে এবং এর মাড়াই কাজ চলমান রয়েছে। প্রতি হেক্টর জমিতে ১৫ থেকে ২০ টনের বেশি মিষ্টি কুমড়া উৎপন্ন হচ্ছে। যা বাজারে ৫০ টাকা কেজি পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। তাছাড়া ২০০ হেক্টর জমিতে গম, ১,০৩০ হেক্টর জমিতে মসুর, ৫৩০ হেক্টর জমিতে মাসকলাই, ৭৭০ হেক্টর জমিতে খেসারি, ৯১৪ হেক্টর জমিতে চিনাবাদাম এবং ১৫ হেক্টর জমিতে তিলের আবাদ হয়েছে। এর প্রায় সবটুকুই চরাঞ্চলে আবাদ হয়েছে।
হাটশেরপুর ইউনিয়নের দিঘাপাড়া চরের কৃষক মিঠু মিয়া জানান, গত বছর তিনি ৩৫ বিঘা জমিতে মিষ্টি কুমড়ার আবাদ করে সাড়ে ১০ লাখ টাকা লাভ পেয়েছিলেন মাত্র ৩ মাসে। এ বছর ৪৫ বিঘা জমিতে মিষ্টি কুমড়ার চাষ করেছেন। মিঠু মিয়ার মতো এ চরেই মান্না মিয়া ৪০ বিঘা, হবিবর মিয়া ৭০ বিঘা এবং আমরুল মিয়া ৬০ বিঘা জমিতে মিষ্টি কুমড়ার আবাদ করেছেন। চরের ফসলের লাভের টাকা দিয়ে তারা চরাঞ্চলের বাড়ির পাশাপাশি শহরাঞ্চলেও পাকাবাড়ি করেছেন। মিঠু মিয়া আরও জানান, চরাঞ্চলে এখন কৃষকরা ২০০ থেকে ৩০০ বিঘা পর্যন্ত জমি প্রকল্প আকারে বাণিজ্যিক ভাবে ফসল চাষাবাদ করছেন। আর এগুলো সম্ভব হচ্ছে শ্যালো ইঞ্জিনে ফিতা পাইপের সাহায্যে উঁচুনিচু জমিতে পানিসেচের মাধ্যমে এবং আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতি ও উচ্চ ফলনশীল জাতের ফসল চাষাবাদের কারণে।
উপজেলার পাইকারি ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম জানান, শুধুমাত্র যমুনাচরের ফসলের উপর নির্ভর করেই যমুনাতীরের প্রায় ৫ টি এলাকায় ফসল বিক্রির আড়ৎ গড়ে উঠেছে এবং প্রতিটি আড়ৎ এ প্রতিদিন হাজারের বেশি মণ করে বিভিন্ন ধরনের ফসল আমদানি হচ্ছে।
সারিয়াকান্দি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল হালিম বলেন, চরাঞ্চল এখন মানুষের জন্য অভিশাপ না। এটি এখন কৃষকদের জন্য আশীর্বাদ। আমাদের পরামর্শে নানা জাতের উচ্চ ফলনশীল ফসল চরের উর্বর মাটিতে প্রচুর পরিমাণে ফলছে। কৃষকরা ব্যাপকভাবে লাভবান হচ্ছেন চরাঞ্চলে উৎপাদিত ফসল বিক্রি করে।