Dhaka ১০:৫৭ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

“ঝুঁকছে বিনিয়োগকারীরা জামালপুর অর্থনৈতিক অঞ্চলের উদ্বোধন”

  • Reporter Name
  • Update Time : ০৬:৩০:৫০ অপরাহ্ন, সোমবার, ২১ নভেম্বর ২০২২
  • ৭৮৫ Time View

“ঝুঁকছে বিনিয়োগকারীরা জামালপুর অর্থনৈতিক অঞ্চলের উদ্বোধন”

কামরুল হাসান: মহান স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি তথা স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী
উপলক্ষ্যে বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০ নভেম্বর সকালে
দেশের ৫০টি অর্থনৈতিক অঞ্চলের উদ্বোধন করেন । মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তার
কার্যালয় থেকে ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সুইচ টিপে শুভ উদ্বোধন ঘোষণা করেন। এ
৫০টি অর্থনৈতিক অঞ্চলের মধ্যে জামালপুর অর্থনৈতিক অঞ্চলও রয়েছে। বেজা
কর্তৃপক্ষ আয়োজিত অনুষ্ঠানে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামীলীগের
সভাপতি এডভোকেট মুহাম্মদ বাকী বিল্লাহ, সাধারন সম্পাদক ফারুক আহাম্মেদ চৌধুরী,
জামালপুর জেলা প্রশাসক শ্রাবস্তী রায়, সদর আসনের এমপি মোজাফ্ফর হোসেন, সদর
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা লিটুস লরেন্স চিরান, উদ্যোক্তা শামীমুর রহমানসহ প্রমুখ
বক্তব্য দেন।
জামালপুর অর্থনৈতিক অঞ্চলের ৪৩৬ একর জায়গা বিনিয়োগকারীদের জন্য
এখন পুরোপুরি প্রস্তুত। ইতোমধ্যেই ১১টি প্রতিষ্ঠান ৮৮ একর জমি নেয়ার জন্য
বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ বা বেজার সঙ্গে চুক্তি করেছে। যেখানে বিসিক
ও বিটাক ছাড়াও ৯টি প্রতিষ্ঠান প্রায় ৩৫০ কোটি টাকার বিনিয়োগ প্রস্তাব করেছে ।
বেজা সূত্রে জানা গেছে, প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ৩টি প্রতিষ্ঠান কৃষিভিত্তিক কারখানা
তৈরী করবে। অন্য প্রতিষ্ঠানগুলো মেডিকেল এবং সার্জিক্যাল আইটেম, ওভেন ব্যাগ
শিল্প, পিভিসি ফ্লেক্স ব্যানার উৎপাদন শিল্প তৈরী করবে। এ প্রতিষ্ঠানে
প্রাথমিকভাবে ৩ হাজার ৬৭৫ জনের কর্মসংস্থান হবে।
এছাড়া এখানে পাট ও পাটজাত পণ্য, তৈরী পোশাক, ফার্মাসিউটিক্যালস, মসলাজাত পণ্য,
চামড়া, সিরামিকসহ বিভিন্ন পণ্যও উৎপাদিত হবে । পুরো অর্থনৈতিক অঞ্চল চালু হলে
সরাসরি ৩২ হাজার লোকের কর্মসংস্থান হবে।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্যমতে,  দেশের গড় দারিদ্র্যের হার ২০
শতাংশ। তবে জামালপুর জেলার মোট জনগোষ্ঠী ২৩ লাখ ৮৪ হাজারের মধ্যে ৫২.৫ শতাংশ
মানুষ এখনো দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, অপেক্ষাকৃত
অনগ্রসর ও দারিদ্র্যপীড়িত জামালপুরের অর্থনৈতিক কার্যক্রম বাড়াতে এ অর্থনৈতিক
অঞ্চল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে ।
জামালপুর জেলার সদর উপজেলাধীন দিগপাইত ইউনিয়নের রঘুনাথপুর দিঘুলী (বড়ভিটা),
সুলতাননগর, জোয়ানের পাড়া, হরিদ্রাটা, গান্ধাইল মৌজার মোট ৪৩৬ দশমিক ৯৭ একর
জায়গায় এ অর্থনৈতিক অঞ্চলটির কার্যক্রম বিস্তৃত। জামালপুর অর্থনৈতিক অঞ্চলে
বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক) কে ৫০ একর জমি দেয়া হয়েছে।
এছাড়া বাংলাদেশ শিল্প কারিগরি সহায়তা কেন্দ্র (বিটাক) কে কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র
তৈরীর জন্য পাঁচ একর জমি বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এ দু’টি প্রতিষ্ঠানসহ মোট ১১টি
প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করেছে বেজা।
গত আগস্ট মাসে জামালপুর অর্থনৈতিক অঞ্চলে কালার স্টাইল বাংলাদেশ লিমিটেড ৬
একর জমি বরাদ্দ পায় । প্রতিষ্ঠানটি এখানে আরএমজি, রং এবং টেক্সটাইল রাসায়নিক
কারখানা তৈরীতে ১১.৭৬ মিলিয়ন ডলার  বিনিয়োগ করবে । সেখানে ১ হাজার ২৩৫ জনের
কর্মসংস্থান হবে। কালার স্টাইল বাংলাদেশ নামক প্রতিষ্ঠানটি শিগগীর উৎপাদনে যাবে
বলে জানা গেছে।
অন্যদিকে বেজা কর্তৃপক্ষ জানান, 'সারাদেশে পরিকল্পিত শিল্পায়নের অংশ হিসেবে
জামালপুরের এ অর্থনৈতিক অঞ্চলটিকে খাদ্য ও কৃষি পণ্য প্রক্রিয়াজাতকরণের জন্য
উপযুক্ত করে গড়ে তোলা হচ্ছে। এর ফলে স্থানীয় জনগোষ্ঠী দেশের মূলধারার অর্থনীতির
চাকার সাথে সম্পৃক্ত হবে এবং সামষ্টিক অর্থনৈতিক উন্নয়নে নতুন উদাহরণ তৈরী
হবে'।
ম্যাক্স ইনফোটেক লিমিটেড দুই একর জায়গায় কৃষি প্রক্রিয়াজাত খাদ্য ও পানীয়
কারখানা তৈরী করবে। তারা বিনিয়োগ করবে ২.৬৮ মিলিয়ন ডলার।  রিলায়েন্স সলিউশন
লিমিটেডের প্রতিষ্ঠান বায়োলীপ এগ্রো ইন্ডাস্ট্রি লিমিটেড এবং বায়োলীপ ইন্ডাস্ট্রি
দুই একর জায়গা নিয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি এক একর নিয়ে কৃষিভিত্তিক কারখানা তৈরী
করবে। যেখানে বিনিয়োগ হবে ১.১৫ মিলিয়ন ডলার। অপর এক একর জমিতে ১.৭৩ মিলিয়ন
ডলার বিনিয়োগ করে মেডিকেল এবং সার্জিক্যাল আইটেম প্রস্তুত করবে। সিল্কেন
সিউয়িং লিমিটেড ছয় একর জমি নিয়েছে। ইতোমধ্যেই এ ৫টি প্রতিষ্ঠানের জমি হস্তান্তর
করা হয়েছে। স্টেপ মিডিয়া লিমিটেড ৬ একর জায়গায় পিভিসি ফ্লেক্স ব্যানার
ম্যানুফ্যাকচারিং ইন্ডাস্ট্রি ৯.৬৩ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে। পিপিএস প্লাস্টিক
ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড ৫ একর জায়গায় কারখানা গড়ে তুলবে; যেখানে বিনিয়োগ প্রস্তাব

করেছে ৭.৯২ মিলিয়ন ডলার। এছাড়া নোবেল নেভিগেশন এবং শিপিং লাইন দুই একর জায়গায়
ওভেন ব্যাগ ইন্ডাস্ট্রি তৈরী করবে যেখানে তারা বিনিয়োগ করবে ৪.৭৪ মিলিয়ন ডলার।
বায়ো-জিন কসমেকিউটিক্যালস চার একর জায়গায় প্রসাধনী, প্রোবায়োটিক ফিশ ফিড,
পোল্ট্রি এবং ফিশ ফিড উৎপাদন করার কারখানা করবে। তারা বিনিয়োগ করবে ৩.৪৯
মিলিয়ন ডলার। ইউপিভিসি পাইপস, এইচডিপিই পাইপস, ইউপিভিসি ডোরস, ইউপিভিসি
ফিটিংস, হ্যাঙ্গারস, পিভিসি গার্ডেন হোসে পাইপ প্রভৃতি তৈরী করবে এ প্রতিষ্ঠান।
সম্প্রতি জামালপুর অর্থনৈতিক অঞ্চলে ছয় একর জমি বরাদ্দ পেয়েছে সিল্কেন সিউয়িং
লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানটি ৯ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করে রপ্তানিমুখী 'নিটেড ডাইড
ফেব্রিক' কারখানা স্থাপন করবে। এতে অন্তত ১ হাজার ১২ জন লোকের কর্মসংস্থান
সৃষ্টি হবে বলে আশা করছে কর্তৃপক্ষ। সিল্কেন সিউয়িং লিমিটেড জানায়, "আমরা দ্রুত
কারখানার নির্মাণকাজ শুরু করবো। এই কারখানায় জার্সি টপ, নাইটওয়্যার, সোয়েটার ও
হুডি উৎপাদন হবে"। ৩৩০ কোটি টাকা ব্যয়ের জামালপুর অর্থনৈতিক অঞ্চল
প্রকল্পের কাজ শুরু হয় ২০১৬ সালে। চলতি বছর প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হবে। গ্যাস
সংযোগ লাইন ও ৩৩/১১ কেভিএ বিদ্যুৎ সাব-স্টেশন নির্মাণ, ভূমি উন্নয়ন, পানি
সরবরাহের কাজ শেষ হয়েছে। বিদ্যুৎ সংযোগের কাজ ৮০ শতাংশ ও সংযোগ সড়ক
নির্মাণের কাজ ৯০ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে। অফিস ভবন, ডরমিটরি হাউজ, প্রবেশদ্বার ও
সীমানা প্রাচীর নির্মাণের কাজ ৮০ শতাংশ শেষ। বেজা বলছে, বিনিয়োগকারীদের সব
ধরনের সুযোগ-সুবিধা দিতে প্রস্তুত জামালপুর অর্থনৈতিক অঞ্চল। এ অর্থনৈতিক
অঞ্চল এমন কোম্পানিগুলোকেই আমন্ত্রণ জানাবে যারা পাট ও পাটজাত পণ্য, আরএমজি
পণ্য, ফার্মাসিউটিক্যালস, মশলা, চামড়াজাত পণ্য, সিরামিক পণ্য ইত্যাদি উৎপাদন
করবে। ৫০ বছরের ইজারায় অর্থনৈতিক অঞ্চলে উন্নত এবং অনুন্নত জমি পাওয়া যাবে।
প্লট হস্তান্তরের আগে জমি উন্নয়ন, ইউটিলিটি এবং সড়কের দেখাশোনার দায়িত্ব
বেজার। পুরো টাকা পরিশোধ করলে বেজা জমি হস্তান্তর করে। ইতোমধ্যে জামালপুর
অর্থনৈতিক অঞ্চলে ৫টি প্রতিষ্ঠানকে বেজা জমি বুঝিয়ে দিয়েছে। এর মধ্যে কিছু
প্রতিষ্ঠান নির্মাণ কাজ শুরু করেছে। ২০৩০ সালের মধ্যে সারা দেশে ১০০টি অর্থনৈতিক
অঞ্চল প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কাজ করছে বেজা। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ১ কোটি লোকের
কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং ২০৩০ সালের মধ্যে বার্ষিক অতিরিক্ত ৪০ বিলিয়ন ডলার মূল্যে
পণ্য উৎপাদন ও রপ্তানির প্রত্যাশা নিয়ে অর্থনৈতিক অঞ্চল কার্যক্রম বাস্তবায়ন
করছে বেজা।

কামরুল হাসান
01914735842

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

আলোচিত

বোয়ালমারীতে চার বছর কর্মস্থলে না গিয়েও বেতন ভাতা নিচ্ছে উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রের ঝুমা !

“ঝুঁকছে বিনিয়োগকারীরা জামালপুর অর্থনৈতিক অঞ্চলের উদ্বোধন”

Update Time : ০৬:৩০:৫০ অপরাহ্ন, সোমবার, ২১ নভেম্বর ২০২২

“ঝুঁকছে বিনিয়োগকারীরা জামালপুর অর্থনৈতিক অঞ্চলের উদ্বোধন”

কামরুল হাসান: মহান স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি তথা স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী
উপলক্ষ্যে বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০ নভেম্বর সকালে
দেশের ৫০টি অর্থনৈতিক অঞ্চলের উদ্বোধন করেন । মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তার
কার্যালয় থেকে ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সুইচ টিপে শুভ উদ্বোধন ঘোষণা করেন। এ
৫০টি অর্থনৈতিক অঞ্চলের মধ্যে জামালপুর অর্থনৈতিক অঞ্চলও রয়েছে। বেজা
কর্তৃপক্ষ আয়োজিত অনুষ্ঠানে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামীলীগের
সভাপতি এডভোকেট মুহাম্মদ বাকী বিল্লাহ, সাধারন সম্পাদক ফারুক আহাম্মেদ চৌধুরী,
জামালপুর জেলা প্রশাসক শ্রাবস্তী রায়, সদর আসনের এমপি মোজাফ্ফর হোসেন, সদর
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা লিটুস লরেন্স চিরান, উদ্যোক্তা শামীমুর রহমানসহ প্রমুখ
বক্তব্য দেন।
জামালপুর অর্থনৈতিক অঞ্চলের ৪৩৬ একর জায়গা বিনিয়োগকারীদের জন্য
এখন পুরোপুরি প্রস্তুত। ইতোমধ্যেই ১১টি প্রতিষ্ঠান ৮৮ একর জমি নেয়ার জন্য
বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ বা বেজার সঙ্গে চুক্তি করেছে। যেখানে বিসিক
ও বিটাক ছাড়াও ৯টি প্রতিষ্ঠান প্রায় ৩৫০ কোটি টাকার বিনিয়োগ প্রস্তাব করেছে ।
বেজা সূত্রে জানা গেছে, প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ৩টি প্রতিষ্ঠান কৃষিভিত্তিক কারখানা
তৈরী করবে। অন্য প্রতিষ্ঠানগুলো মেডিকেল এবং সার্জিক্যাল আইটেম, ওভেন ব্যাগ
শিল্প, পিভিসি ফ্লেক্স ব্যানার উৎপাদন শিল্প তৈরী করবে। এ প্রতিষ্ঠানে
প্রাথমিকভাবে ৩ হাজার ৬৭৫ জনের কর্মসংস্থান হবে।
এছাড়া এখানে পাট ও পাটজাত পণ্য, তৈরী পোশাক, ফার্মাসিউটিক্যালস, মসলাজাত পণ্য,
চামড়া, সিরামিকসহ বিভিন্ন পণ্যও উৎপাদিত হবে । পুরো অর্থনৈতিক অঞ্চল চালু হলে
সরাসরি ৩২ হাজার লোকের কর্মসংস্থান হবে।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্যমতে,  দেশের গড় দারিদ্র্যের হার ২০
শতাংশ। তবে জামালপুর জেলার মোট জনগোষ্ঠী ২৩ লাখ ৮৪ হাজারের মধ্যে ৫২.৫ শতাংশ
মানুষ এখনো দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, অপেক্ষাকৃত
অনগ্রসর ও দারিদ্র্যপীড়িত জামালপুরের অর্থনৈতিক কার্যক্রম বাড়াতে এ অর্থনৈতিক
অঞ্চল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে ।
জামালপুর জেলার সদর উপজেলাধীন দিগপাইত ইউনিয়নের রঘুনাথপুর দিঘুলী (বড়ভিটা),
সুলতাননগর, জোয়ানের পাড়া, হরিদ্রাটা, গান্ধাইল মৌজার মোট ৪৩৬ দশমিক ৯৭ একর
জায়গায় এ অর্থনৈতিক অঞ্চলটির কার্যক্রম বিস্তৃত। জামালপুর অর্থনৈতিক অঞ্চলে
বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক) কে ৫০ একর জমি দেয়া হয়েছে।
এছাড়া বাংলাদেশ শিল্প কারিগরি সহায়তা কেন্দ্র (বিটাক) কে কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র
তৈরীর জন্য পাঁচ একর জমি বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এ দু’টি প্রতিষ্ঠানসহ মোট ১১টি
প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করেছে বেজা।
গত আগস্ট মাসে জামালপুর অর্থনৈতিক অঞ্চলে কালার স্টাইল বাংলাদেশ লিমিটেড ৬
একর জমি বরাদ্দ পায় । প্রতিষ্ঠানটি এখানে আরএমজি, রং এবং টেক্সটাইল রাসায়নিক
কারখানা তৈরীতে ১১.৭৬ মিলিয়ন ডলার  বিনিয়োগ করবে । সেখানে ১ হাজার ২৩৫ জনের
কর্মসংস্থান হবে। কালার স্টাইল বাংলাদেশ নামক প্রতিষ্ঠানটি শিগগীর উৎপাদনে যাবে
বলে জানা গেছে।
অন্যদিকে বেজা কর্তৃপক্ষ জানান, 'সারাদেশে পরিকল্পিত শিল্পায়নের অংশ হিসেবে
জামালপুরের এ অর্থনৈতিক অঞ্চলটিকে খাদ্য ও কৃষি পণ্য প্রক্রিয়াজাতকরণের জন্য
উপযুক্ত করে গড়ে তোলা হচ্ছে। এর ফলে স্থানীয় জনগোষ্ঠী দেশের মূলধারার অর্থনীতির
চাকার সাথে সম্পৃক্ত হবে এবং সামষ্টিক অর্থনৈতিক উন্নয়নে নতুন উদাহরণ তৈরী
হবে'।
ম্যাক্স ইনফোটেক লিমিটেড দুই একর জায়গায় কৃষি প্রক্রিয়াজাত খাদ্য ও পানীয়
কারখানা তৈরী করবে। তারা বিনিয়োগ করবে ২.৬৮ মিলিয়ন ডলার।  রিলায়েন্স সলিউশন
লিমিটেডের প্রতিষ্ঠান বায়োলীপ এগ্রো ইন্ডাস্ট্রি লিমিটেড এবং বায়োলীপ ইন্ডাস্ট্রি
দুই একর জায়গা নিয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি এক একর নিয়ে কৃষিভিত্তিক কারখানা তৈরী
করবে। যেখানে বিনিয়োগ হবে ১.১৫ মিলিয়ন ডলার। অপর এক একর জমিতে ১.৭৩ মিলিয়ন
ডলার বিনিয়োগ করে মেডিকেল এবং সার্জিক্যাল আইটেম প্রস্তুত করবে। সিল্কেন
সিউয়িং লিমিটেড ছয় একর জমি নিয়েছে। ইতোমধ্যেই এ ৫টি প্রতিষ্ঠানের জমি হস্তান্তর
করা হয়েছে। স্টেপ মিডিয়া লিমিটেড ৬ একর জায়গায় পিভিসি ফ্লেক্স ব্যানার
ম্যানুফ্যাকচারিং ইন্ডাস্ট্রি ৯.৬৩ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে। পিপিএস প্লাস্টিক
ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড ৫ একর জায়গায় কারখানা গড়ে তুলবে; যেখানে বিনিয়োগ প্রস্তাব

করেছে ৭.৯২ মিলিয়ন ডলার। এছাড়া নোবেল নেভিগেশন এবং শিপিং লাইন দুই একর জায়গায়
ওভেন ব্যাগ ইন্ডাস্ট্রি তৈরী করবে যেখানে তারা বিনিয়োগ করবে ৪.৭৪ মিলিয়ন ডলার।
বায়ো-জিন কসমেকিউটিক্যালস চার একর জায়গায় প্রসাধনী, প্রোবায়োটিক ফিশ ফিড,
পোল্ট্রি এবং ফিশ ফিড উৎপাদন করার কারখানা করবে। তারা বিনিয়োগ করবে ৩.৪৯
মিলিয়ন ডলার। ইউপিভিসি পাইপস, এইচডিপিই পাইপস, ইউপিভিসি ডোরস, ইউপিভিসি
ফিটিংস, হ্যাঙ্গারস, পিভিসি গার্ডেন হোসে পাইপ প্রভৃতি তৈরী করবে এ প্রতিষ্ঠান।
সম্প্রতি জামালপুর অর্থনৈতিক অঞ্চলে ছয় একর জমি বরাদ্দ পেয়েছে সিল্কেন সিউয়িং
লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানটি ৯ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করে রপ্তানিমুখী 'নিটেড ডাইড
ফেব্রিক' কারখানা স্থাপন করবে। এতে অন্তত ১ হাজার ১২ জন লোকের কর্মসংস্থান
সৃষ্টি হবে বলে আশা করছে কর্তৃপক্ষ। সিল্কেন সিউয়িং লিমিটেড জানায়, "আমরা দ্রুত
কারখানার নির্মাণকাজ শুরু করবো। এই কারখানায় জার্সি টপ, নাইটওয়্যার, সোয়েটার ও
হুডি উৎপাদন হবে"। ৩৩০ কোটি টাকা ব্যয়ের জামালপুর অর্থনৈতিক অঞ্চল
প্রকল্পের কাজ শুরু হয় ২০১৬ সালে। চলতি বছর প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হবে। গ্যাস
সংযোগ লাইন ও ৩৩/১১ কেভিএ বিদ্যুৎ সাব-স্টেশন নির্মাণ, ভূমি উন্নয়ন, পানি
সরবরাহের কাজ শেষ হয়েছে। বিদ্যুৎ সংযোগের কাজ ৮০ শতাংশ ও সংযোগ সড়ক
নির্মাণের কাজ ৯০ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে। অফিস ভবন, ডরমিটরি হাউজ, প্রবেশদ্বার ও
সীমানা প্রাচীর নির্মাণের কাজ ৮০ শতাংশ শেষ। বেজা বলছে, বিনিয়োগকারীদের সব
ধরনের সুযোগ-সুবিধা দিতে প্রস্তুত জামালপুর অর্থনৈতিক অঞ্চল। এ অর্থনৈতিক
অঞ্চল এমন কোম্পানিগুলোকেই আমন্ত্রণ জানাবে যারা পাট ও পাটজাত পণ্য, আরএমজি
পণ্য, ফার্মাসিউটিক্যালস, মশলা, চামড়াজাত পণ্য, সিরামিক পণ্য ইত্যাদি উৎপাদন
করবে। ৫০ বছরের ইজারায় অর্থনৈতিক অঞ্চলে উন্নত এবং অনুন্নত জমি পাওয়া যাবে।
প্লট হস্তান্তরের আগে জমি উন্নয়ন, ইউটিলিটি এবং সড়কের দেখাশোনার দায়িত্ব
বেজার। পুরো টাকা পরিশোধ করলে বেজা জমি হস্তান্তর করে। ইতোমধ্যে জামালপুর
অর্থনৈতিক অঞ্চলে ৫টি প্রতিষ্ঠানকে বেজা জমি বুঝিয়ে দিয়েছে। এর মধ্যে কিছু
প্রতিষ্ঠান নির্মাণ কাজ শুরু করেছে। ২০৩০ সালের মধ্যে সারা দেশে ১০০টি অর্থনৈতিক
অঞ্চল প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কাজ করছে বেজা। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ১ কোটি লোকের
কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং ২০৩০ সালের মধ্যে বার্ষিক অতিরিক্ত ৪০ বিলিয়ন ডলার মূল্যে
পণ্য উৎপাদন ও রপ্তানির প্রত্যাশা নিয়ে অর্থনৈতিক অঞ্চল কার্যক্রম বাস্তবায়ন
করছে বেজা।

কামরুল হাসান
01914735842