“বাগেরহাটে বিশ্ব মৃত্তিকা দিবস ২০২২ পালিত।”
মেহেদি হাসান নয়ন, বাগেরহাট –
বাগেরহাট জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে বিশ্ব মৃত্তিকা দিবস ২০২২ উৎযাপন উপলক্ষে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।জেলা প্রশাসনের আয়োজনে এ অনুষ্ঠানে জেলা প্রশাসক মোহাম্মাদ আজিজুর রহমান প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্হিত ছিলেন। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বাগেরহাটের উপপরিচালক মোহাম্মদ আজিজুর রহমান এর সভাপতিত্বে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সার্বিক হাফিজ আল আসাদ, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক রাজস্ব মোহাম্মদ শাহীনুজ্জামান, জেলা তথ্য কর্মকর্তা মেহেদী হাসান, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, জনপ্রতিনিধি, প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার প্রতিনিধি,সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তা, কৃষি বিভাগের বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তা, কৃষক ও কৃষাণী এতে অংশ নেন। সভায় মৃত্তিকা দিবস উদযাপনের গুরুত্ব ও উদ্দেশ্য নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা এবং এর উপর একটি প্রামাণ্য চিত্র প্রদর্শন করেন মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়নের ইনিষ্টিটিউট খুলনার প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা অমরেন্দ্রনাথ বিশ্বাস । এর আগে একটি র্যালী জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে থেকে শুরু হয়ে শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে সভাস্থলে এসে শেষ হয়।
খুলনায় হারাতে বসেছে বাঙলার ঐতিহ্য “গরুর গাড়ি”।
মোঃ শামীম হোসেন – খুলনা :
“ওকি গাড়িয়াল ভাই–কত রব আমি পন্থের দিকে চাইয়ারে” মাঠে ঘাটে পথে প্রান্তরে এমন গান আর শোনা যায়না। গরু বা মহিষের গাড়ি নিয়ে উচ্চ স্বরে এমন গানের হাঁক আর শোনা যায়না। গ্রামের মেঠোপথে কৃষিজ পণ্য পরিবহনের কাজে ব্যবহার হতো গরুর গাড়ি নামে একপ্রকার যান। গরুর গাড়ি হল দুই চাকাবিশিষ্ট গরু বা বলদে টানা একপ্রকার যান। এই যানে সাধারণত একটি মাত্র অক্ষের সাথে চাকা দুটি যুক্ত থাকে। সামনের দিকে একটি জোয়ালের সাথে দুটি গরু বা বলদ জুতে এই গাড়ি টানা হয়। সাধারণত চালক বসেন গাড়ির সামনের দিকে। এই হলো গরুর গাড়ি। শুধু যান হিসেবেই নয় সংস্কৃতির অংশ হয়ে ওঠে গরুর গাড়ি। গান, গল্প, কবিতার শেষ নেই। গরুর গাড়ি নিয়ে কন্ঠশিল্পী সাবিনা ইয়াসমিনের গাওয়া বিখ্যাত গান “আমার গরুর গাড়িতে বউ সাজিয়ে- ধুতুর, ধুতুর, ধুতুর ধু সানাই বাজিয়ে, যাব তোমায় শ্বশুরবাড়ি নিয়ে” আজও জনপ্রিয়তার শীর্ষে। কিন্তু আধুনিক সভ্যতার বিবর্তনে যন্ত্রচালিত লাঙল বা পাওয়ার টিলার এবং নানা যন্ত্রযানের উদ্ভবের ফলে বিলুপ্তির পথে আজ ‘গরুর গাড়ি’। মৎস্য ও শষ্য ভান্ডার খ্যাত উত্তরের নওগাঁ জেলার সর্বত্রই এক সময়ের যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম গ্রামবাংলার জনপ্রিয় ঐতিহ্যবাহি গরুর গাড়ি আজ বিলুপ্তির পথে। নতুন নতুন প্রযুক্তির ফলে মানুষের জীবনযাত্রার উন্নয়ন ঘটেছে। পক্ষান্তরে হারিয়ে যাচ্ছে অতীতের এই ঐতিহ্য। জানা গেছে, গরুর গাড়ির ইতিহাস সুপ্রাচীন। খ্রীষ্টজন্মের ১৫০০ – ১৬০০ বছর আগেই সিন্ধু অববাহিকা ও ভারতীয় উপমহাদেশের উত্তর-পশ্চিম অঞ্চলে গরুর গাড়ির প্রচলন ছিল। যা সেখান থেকে ক্রমে ক্রমে দক্ষিণেও ছড়িয়ে পড়ে। গ্রাম বাংলায় এ ঐতিহ্য আজ তা হারিয়ে যেতে বসেছে। একসময় উত্তরাঞ্চলের পল্লী এলাকার জনপ্রিয় বাহন ছিল গরুর গাড়ি। বিশেষ করে এই জনপদে কৃষি ফসল ও মানুষ বহনের জনপ্রিয় বাহন ছিল এটি। যুগের পরিবর্তনে হারিয়ে যাচ্ছে এই বাহন। বর্তমানে নানা ধরনের মোটরযানের কারণে অপেক্ষাকৃত ধীর গতির এই যানটির ব্যবহার অনেক কমে এসেছে। তাই এখন আর তেমন চোখে পড়ে না। বর্তমান যুগ হচ্ছে যান্ত্রিক যুগ। এখনকার মানুষ বিভিন্ন ধরনের প্রয়োজনীয় মালামাল বহনের জন্য বাহন হিসেবে ব্যবহার করছে ট্রাক, পাওয়ার টিলার, লরি, নসিমন-করিমনসহ বিভিন্ন মালবাহী গাড়ি। মানুষের যাতায়াতের জন্য রয়েছে মোটরগাড়ি, রেলগাড়ি, বেবিট্যাক্সি, অটোরিকশা ইত্যাদি। ফলে গ্রামাঞ্চলেও আর চোখে পড়ে না গরুর গাড়ি। অথচ গরুর গাড়ির একটি সুবিধা হলো, এতে কোনো জ্বালানি লাগে না। ফলে ধোঁয়া হয় না। পরিবেশের কোনো ক্ষতিও করে না। এটি পরিবেশবান্ধব একটি যানবাহন। আবার ধীর গতির কারণে এতে তেমন কোনো দুর্ঘটনারও আশংকা থাকে না। অথচ যুগের পরিবর্তনে কালের অতল গর্ভে হারিয়ে যাচ্ছে আমাদের প্রিয় এই গরুরগাড়ি প্রচলন। এক সময় দমক খুলনার পল্লী এলাকায় জনপ্রিয় বাহন ছিলো গরুর গাড়ি। বিশেষ করে এই জনপদে কৃষি ফসল ও মানুষ বহনের জনপ্রিয় বাহন ছিলো গরুর গাড়ি। যুগের পরিবর্তনে হারিয়ে যেতে বসেছে এই জনপ্রিয় পল্লী বহন। বর্তমানে নানা ধরণের মটোরযানের কারণে অপেক্ষাকৃত ধীর গতির এই যান বাহনের ব্যবহার কমে আসছে। বর্তমান যুগ হচ্ছে আধুনিক যান্ত্রিক যুগ। এখনকার মানুষ বিভিন্ন ধরণের প্রয়োজনীয় মালামাল বহণের জন্য ব্যবহার করছে ট্রাক, পাওয়ার টিলার, লড়ি, নসিমন, করিমনসহ বিভিন্ন মালবাহী গাড়ি। মানুষের যাতায়াতের জন্য মটোরসাইকেল, রেলগাড়ি, অটোরিকশা মাইক্রোবাস ইত্যাদি। ফলে গ্রামাঞ্চলেও আর চোখে পড়েনা গরুর গাড়ি। গরুর গাড়ির যানবাহনটি হলো নিরাপদ। এই বহনে অন্যতম সুবিধা হলো জ্বালানীর কোন প্রয়োজন হয়না। জ্বালানী না থাকায় দূর্ষিত ধোয়া তৈরী হয়না ফলে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে। পরিবেশের কোন ক্ষতি হয়না। এটি পরিবেশবান্ধব একটি যানবাহন। আবার ধীর গতির কারণে তেমন কোন দূর্ঘটনা ঘটার কোন আশংকা থাকেনা। দাকোপের বাজুয়া বাজারের ষাটোর্ধ আমজেদ গাজী জানান, শহরের ছেলে মেয়েরা তো দূরের কথা বর্তমানে গ্রামের ছেলে মেয়েরাও গরুর গাড়ি শব্দটির সাথে তেমন পরিচিত নয়। এটা দেখতে কেমন? চলে কীভাবে? ঐতিহ্যেবাহী গরুর গাড়ি দেখা তো যায না আজ শুধু গল্প হয়ে দাড়িয়েছে।
খুলনায় সড়কে খোঁড়াখুঁড়িতে দুর্ভোগে নগরবাসী।
মোঃ শামীম হোসেন – খুলনা
খুলনা মহানগরীর ৬৯টি সড়ক ও ৮৩টি ড্রেন সংস্কারের কাজ করছে সিটি করপোরেশন (কেসিসি)। নগরীর অধিকাংশ সড়ক খুঁড়ে স্যুয়ারেজ লাইন বসাচ্ছে ওয়াসা। ইতোমধ্যে পাইপ বসানোর জন্য ৯টি সড়কে খোঁড়াখুঁড়ি চলছে। নগরীজুড়ে দুই সংস্থার এই উন্নয়ন কর্মযজ্ঞের কারণে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন নাগরিকরা। এই বিশাল কর্মযজ্ঞ আগামী জানুয়ারি মাসের মধ্যে সম্পন্ন করার পরিকল্পনা থাকলেও লাগবে কয়েক মাস।
সরেজমিন দেখা গেছে, নগরীর আহসান আহমেদ সড়ক খুঁড়ে ওয়াসার স্যুয়ারেজ পাইপ বসানোর পর কোনোমতে মাটি দিয়ে ভরাট করে রাখা হয়েছে। শামসুর রহমান সড়ক খুঁড়ে বসানো হচ্ছে স্যুয়ারেজ লাইন। খানজাহান আলী সড়কের এক পাশের ড্রেন পুনর্নির্মাণের জন্য খোঁড়াখুঁড়ি করছে কেসিসি। বেনী বাবু সড়ক খোঁড়ার পর দীর্ঘদিন ইটের খোয়া বিছিয়ে রাখা হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ এই চারটি সড়ক আরও ভোগান্তি বয়ে এনেছে। উন্নয়ন কাজের জন্য অনেক সড়ক বন্ধ থাকায় নগরবাসীকে গন্তব্যে যেতে হচ্ছে অনেক ঘুরে। এতে বিকল্প সড়কগুলোতে সৃষ্টি হচ্ছে যানজট। এ ছাড়া ধুলাবালিতে পথচলাই দায়। কেসিসি ও ওয়াসা বলছে, উন্নয়ন কাজের জন্য নগরবাসীকে এই দুর্ভোগ মেনে নিতে হবে আরও বেশ কয়েক মাস। খুলনা ওয়াসা সূত্রে জানা গেছে, এডিবির আর্থিক সহযোগিতায় ‘খুলনা পয়ঃনিস্কাশন ব্যবস্থা উন্নয়ন’ প্রকল্পের কাজ শুরু করেছে ওয়াসা। প্রকল্প ব্যয় ২ হাজার ৩৩৪ কোটি টাকা। প্রকল্পের আওতায় নগরীর বাড়িগুলো থেকে মানববর্জ্য পাইপলাইনের মাধ্যমে নিয়ে পরিশোধন করা হবে। প্রকল্পের মাঠ পর্যায়ের কাজের প্রথম ধাপে সড়ক খুঁড়ে বসানো হচ্ছে ১০ ইঞ্চি থেকে ৪০ ইঞ্চি ব্যাসের পাইপলাইন।
গত ২২ জুন শুরু হয় সড়ক খুঁড়ে পাইপ বসানোর কাজ। ইতোমধ্যে নগরীর শেখপাড়ার হাজী ইসমাইল রোড, ছোট মির্জাপুর ও বড় মির্জাপুর রোড, আহসান আহমেদ রোড, সাউথ সেন্ট্রাল রোড, টি বি ক্রস রোড ও ফায়ার ব্রিগেড রোড খুঁড়ে স্যুয়ারেজ পাইপ বসানোর কাজ সম্পন্ন হয়েছে। সরেজমিন দেখা গেছে, এই ছয়টি সড়কে পাইপ বসানোর পর মাটি দিয়ে এবড়োখেবড়ো গর্ত ভরাট করা হয়েছে। গর্তগুলো সমান করা হয়নি। এতে সড়কগুলোতে ছোট-বড় যানবাহন চলছে হেলেদুলে। এ ছাড়া ব্যাপক হারে ধুলাবালি উড়ছে। চলাচলে দুর্ভোগের পাশাপাশি অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। ঘটছে নানা দুর্ঘটনা। বর্তমানে ট্যাংক রোড, শামসুর রহমান রোড ও টুটপাড়া ইস্ট লিংক রোড খুঁড়ে পাইপ বসানোর কাজ হচ্ছে। ২০২৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত নগরীর ২৬৯ কিলোমিটার সড়ক খুঁড়ে এই পাইপ বসানো হবে। খানজাহান আলী রোডে দেখা যায়, শান্তিধাম মোড় থেকে ফেরিঘাট মোড় পর্যন্ত সড়কের ডান পাশের ড্রেন খোঁড়া হচ্ছে। ড্রেনের মাটি ও পার্শ্ব দেয়ালের ইটগুলো সড়কের এক-তৃতীয়াংশ জায়গাজুড়ে রাখা হয়েছে। এতে ব্যস্ততম এই সড়কে প্রায়ই যানজট লেগে থাকছে। ব্যস্ততম টুটপাড়া-জোড়াকল বাজার সড়কেরও একই চিত্র। বেনী বাবু সড়কে দেখা যায়, সড়কটিতে ইটের খোয়া বিছানো। কবে নাগাদ পিচ দেওয়া হবে, তা জানেন না এলাকাবাসী। নগরীর পিটিআই মোড়, ফারাজিপাড়া ফুল মার্কেট, ছোট মির্জাপুর মোড়, স্যার ইকবাল রোডসহ আরও কয়েকটি স্থানে দেখা যায় ব্যাপক যানজট। এ ব্যাপারে খুলনা নাগরিক সমাজের সদস্য সচিব মো. বাবুল হাওলাদার বলেন, একই সঙ্গে দুই সংস্থা সড়কে খোঁড়াখুঁড়ি, সড়ক ও ড্রেন সংস্কার কাজ শুরু করায় নগরবাসীকে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। খুলনা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আবদুল্লাহ বলেন, কাজের ক্ষেত্রে কোনো সমন্বয়হীনতা নেই। প্রকল্পটি নগরবাসীর সুবিধার জন্যই বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। সাময়িক দুর্ভোগ মেনে নিতে হবে। কেসিসি মেয়র তালুকদার আবদুল খালেক বলেন, ওয়াসার খোঁড়াখুঁড়ির কারণে সড়ক সংস্কার কাজে কিছুটা দেরি হচ্ছে। নগরবাসীর দুর্ভোগের কথা স্বীকার করেন তিনি।