চতুর্থ গণবিজ্ঞপ্তিতে আবেদনের সুযোগ চেয়ে গণ সমাবেশ করছেন ইনডেক্সধারী শিক্ষকরা ।
মোঃ মিজানুর রহমান সটাফ রিপোর্টার –
চতুর্থ গণবিজ্ঞপ্তিতে আবেদনের সুযোগ চেয়ে গণ সমাবেশ করেছেন ইনডেক্সধারী (আগে থেকেই এমপিও পদে চাকরিরত) শিক্ষকরা। দাবি আদায় না হলে আরও কঠোর কর্মসূচির হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তারা। মঙ্গলবার (২০ ডিসেম্বর) রাজধানীর ইস্কাটন রোডে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের কার্যালয়ের সামনে গণ সমাবেশ করেন শিক্ষকরা। গণ সমাবেশে শিক্ষকরা জানান, আমরা এনটিএআরসিএর দেওয়া নিবন্ধন সনদ দিয়ে দ্বিতীয় ও তৃতীয় গণবিজ্ঞপ্তিতে নিয়োগ পেয়ে নিজের জেলা থেকে অনেক দূরে প্রত্যন্ত এলাকায় বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ইনডেক্সধারী শিক্ষক হিসেবে কর্মরত আছি। এমপিও নীতিমালায় আমাদের বদলীর বিষয়টি উল্লেখ থাকলেও বদলীর কোনো ব্যবস্থা নেই। গণবিজ্ঞপ্তিতে আবেদন করে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে আমরা নিজ বাড়ির কাছাকাছি যাওয়ার চেষ্টা করি। তবে আমাদের সেই সুযোগ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
তারা জানান, ইনডেক্সধারী শিক্ষকদের আবেদনের সুযোগ বন্ধের জন্য বেসরকারি শিক্ষক নিয়োগ বিধিমালার ৭ নম্বর ধারার কার্যকারিতা সাময়িক স্থগিত করা হয়েছে। এটা হঠাৎ করে নেওয়া সিদ্ধান্ত। যদি আমাদের আগেই বিষয়টি জানানো হত, তাহলে আমরা আমাদের ইনডেক্স ডিলেট করে হলেও আবেদন করতাম। তবে আমাদের কোনো কিছুই জানানো হয়নি। হুট করে একটি সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। এমন সিদ্ধান্ত নেওয়ার অন্তত দুই বছর আগে বিষয়টি শিক্ষকদের জানানো দরকার ছিল।
গণ সমাবেশের অন্যতম সমন্বয়ক উজ্জ্বল আলী জানান, ইনডেক্সধারী শিক্ষকদের আবেদনের সুযোগ চেয়ে আমরা আদালতে রিট করেছি। আদালত এ বিষয়ে রুল জারি করেছে। আমরা রিট করতে চাইনি। আমাদের রিট করতে বাধ্য করা হয়েছে। আমাদের এই সময় ক্লাসে থাকার কথা ছিল। অথচ আমাদের রাস্তায় নামতে বাধ্য করা হয়েছে।
তিনি জানান, আমাদের মধ্যে অনেকেই নিজ বাড়ি থেকে ৪০০/৫০০ কিলোমিটার দূরে চাকরি করছেন। আমাদের বেতন মাত্র ১২ হাজার ৫০০ টাকা। এই বেতন দিয়ে নিজেদেরই চলা কষ্টকর। সেখানে পরিবার নিয়ে চলবো কীভাবে। আমাদের বাড়ি ভাড়া দেওয়া হয় মাত্র এক হাজার টাকা। দেশে এক হাজার টাকা দিয়ে কোথায় চাকরি পাওয়া যায় সেটি আমার বোধগম্য নয়।
মাহবুব আলম নামে আরেক শিক্ষক জানান, আমরা গত তিনটি গণবিজ্ঞপ্তিতে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে ইনডেক্স প্রাপ্ত হয়েছি। তবে হঠাৎ করে ইনডেক্সধারীদের আবেদনের সুযোগ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। আমাদের বদলীর কোনো সুযোগ নেই। একটিমাত্র সুযোগ ছিল; সেটি হলো গণবিজ্ঞপ্তিতে আবেদনের মাধ্যমে নিজ বাড়ির কাছে যাওয়ার। এখানে আমরা মেধার ভিত্তিতে প্রতিযোগিতা করেই যেতাম। তবে সেই সুযোগ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এটি কোনো ভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।
তিনি আরও বলেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এমন হটকারী সিদ্ধান্তের কারণে লাখ লাখ শিক্ষক ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। শিক্ষকদের সাথে কথা না বলেই এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যেহেতু আমাদের বদলীর কোনো ব্যবস্থা নেই। কাজেই বদলী ব্যবস্থা চালু হওয়ার আগ পর্যন্ত আমাদের আবেদনের সুযোগ দিতে হবে। আবেদনের সুযোগ না দেয়া হলে চতুর্থ গণবিজ্ঞপ্তি আটকে দেওয়া হবে। আমরা সবার সাথে প্রতিযোগিতা করার কারণে নিজ বাড়ি থেকে অনেক দূরের প্রতিষ্ঠানে চাকরি করছেন। তাহলে এখন কেন পারবো না।
ইয়াসমিন আক্তার নামে আরেক শিক্ষক জানান, শিক্ষকদের বলা হয় জাতি গড়ার কারিগর। অথচ আমাদের বেতন দেওয়া হয় সাড়ে ১২ হাজার টাকা। এর সাথে বাড়ি ভাড়া দেওয়া হয় এক হাজার টাকা। এই অল্প বেতনেও আমরা চাকরি করে যাচ্ছি একটি আসায়; সেটি হলো চাকরির কোনো না কোনো এক সময় গণবিজ্ঞপ্তিতে আবেদনের মাধ্যমে নিজ বাড়ির কাছের প্রতিষ্ঠানে যেতে পারব। তবে সেই সুযোগটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এটি মেনে নেওয়া যায় না। অবিলম্বে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করতে হবে।