Dhaka ১০:৩১ অপরাহ্ন, শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ৭ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পহেলা ফাল্গুন। এসেছে ঋতুরাজ বসন্ত। 

  • Reporter Name
  • Update Time : ০৭:০৬:২৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৩
  • ৪২৭ Time View
পহেলা ফাল্গুন। এসেছে ঋতুরাজ বসন্ত। 
আর.এ রাশেদ, বিশেষ প্রতিনিধিঃ
পহেলা ফাল্গুন। প্রকৃতির দক্ষিণা দুয়ারে  বইছে ফাল্গুনের হাওয়া। এর সাথে সাথে আমাদের মাঝে শুকনো পাতায় ভর করে এসেছে ঋতুরাজ বসন্ত। বসন্তের আগমনে কোকিল গাইছে গান। গাছে গাছে পলাশ আর শিমুলের মেলা। কৃষ্ণচূড়ারা সেজেছে সূর্যের সাথে তাল মিলিয়ে রক্তিম রঙে। বসন্ত বারৈ খুঁজে পায় নিজের নামের স্বার্থকতা।
ফাল্গুনের হাত ধরেই ঋতুরাজ বসন্তের আগমন। ঋতুরাজকে স্বাগত জানাতে প্রকৃতির আজ এতো বর্ণিল সাজ। সকল কুসংস্কারকে পেছনে ফেলে, বিভেদ ভুলে, নতুন কিছুর প্রত্যয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়ার বার্তা নিয়ে বসন্তের উপস্থিতিতে ফাল্গুনের মাতাল হাওয়া দোলা দিয়েছে বাংলার নিস্বর্গ প্রকৃতিতে।
বসন্তের এই আগমনে প্রকৃতির সাথে তরুণ হৃদয়েও লেগেছে দোলা। এ দিন বিশেষ করে তরুণীরা বাসন্তি রঙের শাড়ি আর মাথায় হলুদ ফুল দিয়ে নিজেরদের নুতন করে সাজিয়ে তোলে। অন্যদিকে ছেলেরা সাজে হলুদ রঙের পাঞ্জাবিতে। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর তরুণ মনে আবার লেগেছে বসন্তের ছোঁয়া। চারিদিকে যেন সাজ সাজ রব। নতুন কচিপাতার দোলায় দুলছে প্রকৃতি, দুলছে আবেগী মন। আজ নতুন প্রাণেও লেগেছে ফাল্গুনের সতেজ হাওয়া। ঋতুরাজ বসন্ত আজ প্রত্যেকের হৃদয়কে করেছে উচাটন। বসন্তের আগমন মানেই তরুণ হৃদয়ে নতুন প্রাণের সঞ্চার। অনুভবের জায়গা থেকে বলতে গেলে শুধু ফাল্গুন মাসের কথাই বলতে হবে। কেননা, ১৩৫৮ বঙ্গাব্দের ৮ ফাল্গুন ঘটেছিল মহান ভাষা আন্দোলন। যা আজ বিশ্বব্যাপী ২১ ফেব্রুয়ারির মোড়কে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালিত হচ্ছে। এই ভাষা আন্দোলনের পূর্বাপর কাহিনীকে উপজীব্য করে জহির রায়হান রচনা করেছেন উপন্যাস ‘আরেক ফাল্গুন’।
এই ফাল্গুন মাসকে নিয়ে আমাদের লোক গানের পাশাপাশি সাহিত্যের বিভিন্ন শাখায় রয়েছে নানা রচনা। তবে ফাগুনের মাসে শিমুলের বন যে লাল হয় তাতে কোনো সন্দেহ নেই। তাই বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখেছেন…
ফাল্গুনে বিকশিত
কাঞ্চন ফুল,
ডালে ডালে পুঞ্জিত
আম্রমুকুল।
বর্তমান কালের অন্যতম কবি খালেদ হোসাইন লিখেছেন…
তুমি ভালো থাকো আর না-থাকো
ফাল্গুন আসবেই এ দেশে।
ফুল যদি ঝরে যায়, নদী যদি মরে যায়
ফাল্গুন আসবেই এ দেশে।
কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায় লিখেছেন- ‘ফুল ফুটুক আর না-ই ফুটুক আজ বসন্ত।’
বঙ্গাব্দ ১৪০১ সাল থেকে প্রথম ‘বসন্ত উৎসব’ উদযাপন করার রীতি চালু হয়। সেই থেকে জাতীয় বসন্ত উৎসব উদযাপন পরিষদ বসন্ত উৎসব আয়োজন করে আসছে। আজ দিনভর চলবে তাদের বসন্তের উচ্ছ্বাস প্রকাশ। ফোন, ফেসবুক, টুইটারসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলবে বসন্তের শুভেচ্ছা বিনিময়। আজ নানা আয়োজনে বসন্তকে বরণ করবে বাঙালি।
অশ্রুঝড়া বসন্ত
আর.এ রাশেদ
বসন্তের আগমনে-
বিভিন্ন রঙের মেলা বসে।
কিন্তু, লাল রঙ দেখলেই চোখে পড়লেই পুরো শরীরে কাটা দিয়ে ওঠে;
সেই ফাল্গুন মাসেই রক্ত দিলো,
কত মায়ের ছেলে;
মায়ের মুখের বাংলা ভাষা
রক্ষা করবে বলে।

ভাষার জন্য রক্ত ঝড়িয়ে
দিয়েছে যারা প্রাণ,
বসন্তের লাল রঙে আজও
পাওয়া যায় সেই ঘ্রাণ।

ফাগুন মাসে আগুন জ্বলে
হাজারো মায়ের মনে,
কোনোদিন তো আর হবে না দেখা
তাদের ছেলেদের সনে ।

ফাগুন মাস দস্যি মাস
ভয় পায় তাই মা-
ভাষা যুদ্ধে গেলো যারা
অনেকেই তো আর ফিরে এলো না…

“ভালোবাসা ও সেকাল-একাল”
আহমেদ হানিফ –
ভালোবাসতে জানে না পৃথিবীতে এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া বোধহয় চন্দ্র অভিযান থেকেও কঠিন কাজ।ভালোবাসতে জানে পৃথিবীর কঠোর মানুষটিও, পাষাণের বুকেও ভালোবাসার জন্য অনুভূতি আসে।সারাদিন অক্লান্ত পরিশ্রম করা লোকটিও নিভৃতচারীর মতো ভালোবাসে গোপনে।
ভালোবাসার সংজ্ঞা বলা মুশকিল, মুশকিল হওয়ার কারণ বোধহয় বিচিত্র স্বভাবের মানুষের জন্য।
কারো ভালোবাসা হয়তো স্বভাববিরুদ্ধ অনুভবে সঙ্গ দেওয়া, কারো দু’পয়সার গোলাপে সীমাবদ্ধ।কতক দূরদর্শী মানুষের চিন্তনে ভালোবাসার মানে প্রিয়জনদের ভালো রাখা।
তাই ভালোবাসার সজ্ঞায়িত করতে কখনো আশ্রয় নিতে হয় জগৎ বিখ্যাত মনিষী কিংবা কবিদের শহরে।নানান উপমা,রসিকতার চলে ভালোবাসার ইতিবৃত্ত বললেও অনেক সময় তা বোধগম্য হয়ে উঠেনা।
বেরসিক আমিও হাপিত্যেশ করতে করতে সহজ কোনো অর্থ খুঁজতে থাকি যাতে ভালোবাসা বুঝতে পারি, মাঝেসাঝে একটু-আধটু চিন্তার ঘোরে আবেশিত হলেই বুঝতে পারি’ভালো রাখার,ভালো বলার,পাশে থাকার অঙ্গিকার করাই হলো ভালোবাসা’।
আজ ভালোবাসার মানে কিংবা সংজ্ঞায়ন করতে বসেনি।তবে বোধহয় ভালোবাসার সংজ্ঞা নিরূপণে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষেরই ভুল জানা আছে।সুযোগে দু’চারি কথায় এইসব বলতে দ্বিধা কিংবা কসুর ভাববো না।
আফসোসের বিষয় এই ফেব্রুয়ারিতে যেন আমাদের ভালোবাসার জোয়ার উঠে,কতদিন, কত রঙঢঙের অবসান ঘটিয়ে; ঘটা করে পালিত হয় ভালোবাসা দিবস।
আচ্ছা একটি বিষয় বুঝতে খুবই কষ্ট হয় আজ আমাদের ভালোবাসার নিবেদন টাকা দিয়ে কেনা কেন?
কেনইবা অভুক্ত মানুষটিকে ধারের টাকায় কিনতে হয় প্রিয় মানুষের জন্য নানান চমকপ্রদ উপহার।
তাহলে কি  প্রশ্ন আসে দারিদ্র্য পীড়িত মানুষের জন্য ভালোবাসার মূল্য চুকাতে বেশ বেগ পেতে হয়?
বোধহয় হতেও পারে,আগেই বলেছি এই ভালোবাসা বুঝা মুশকিল।
ভালোবাসার নিবেদনকে ঘিরে দু’পক্ষ হতে দেখেছি,দেখেছি মুমূর্ষুজনকে শত কষ্টে অপেক্ষার প্রহর গুনতে।
আজ ভালোবাসা নিয়ে পক্ষ গুলোর অভিমত জানাবো-
উদযাপন করার পক্ষের লোক:-
দিনক্ষণ হিসেবে রেখে নানা ধরণের কর্মব্যস্ত সময় অতিবাহিত করতে দেখি তাদের।সঞ্চয়ের টাকায়  প্রিয়তম কিংবা প্রিয়তমার জন্য একটা সেরা দিন দিতে পারায় যেন তাদের স্বার্থকতা।
ফুল,চকলেট অন্যান্য আনুষাঙ্গিক জিনিসের বিনিময়ে তাদের ভালোবাসার শ্রেষ্ঠত্বের প্রমাণে ব্যস্ত।লেখনীতে নিজেকে বিলিয়ে দিতে চায় প্রিয় মানুষটার জন্য।
উদযাপন না করার পক্ষের লোক:-
এরা প্রচুর যুক্তিবাদী মানুষ দাবী করে নিজেদের।এরা যুক্তির জোরে প্রমাণ করতে ব্যস্ত থাকবে ভালোবাসার কোনো দিন কেন হবে? ভালোবাসতে কেন এত আয়োজন?  ভালোবাসা তো একটু উপলব্ধি যাতে করে ভালো রাখার প্রতিজ্ঞা করা যায় তাই সারা বছরই ভালোবাসা দিবস।
ভালোবাসার সেকাল:-
চিঠির যুগের অবসান তখনো হয়নি।ভয়ে ভয়ে কম্পমান হাতে কবিতার সংযোগ ঘটিয়ে ভালোবাসার শপথ করতো।ডায়েরির পাতাতে ফুল, পাতার ছবি অঙ্কনের মাধ্যমে জীবনের কথাগুলো সাজাতো, কোনো রকমে চলার মাঝে একটু প্রশান্তি দিতে পারলেই হয়ে যেন দম্পতির ভালোবাসার উপলক্ষ্য।
তাই হয়তো তখন উন্নত মানের রেস্তোরাঁয় খাবার খাইয়ে বহুমূল্যের উপহারে ভালোবাসা নিবেদন করতো হতো না।
ভালোবাসার একাল:-
বেশ ঘটা করেই আয়োজিত হয় ভালোবাসার দিবসটি,উন্নত মানের রেস্তোরাঁয় খাবার খাওয়ানো ও বহুমূল্যের উপহারেই যেন ভালোবাসা নিবেদনের আসল উদ্দেশ্য।বন্ধু মহলে প্রতিযোগিতা চলে কোন মানের উপহার সামগ্রী দেওয়া হচ্ছে তার উপর।
প্রিয় মানুষটিকে নিয়ে সারাদিন ঘুরার মতো টাকা সঞ্চয়ে বেশ বেগ পেতে হয় এখন।
ভালোত্বের সংস্পর্শে আসার আগেই যেন ভালো রাখার আয়োজন সাজাতে ব্যস্ত।
অতীতের ভালোবাসা:-
সারাদিন অফিস করে ঠিক ১৪ ফেব্রুয়ারির সন্ধ্যায় একটা গোলাপ প্রিয়তমা স্ত্রীর হাতে দিতে পারাই হতো ভালোবাসা নিবেদন,কিংবা অভাবের সংসারে একটু ভালোমন্দের আয়োজন করতে পারাও ভালোবাসা।সারাজীবন ভালো রাখার আয়োজনে ব্যস্ত খাটুনি করা মায়ের আগলে রাখাও ভালোবাসার নিবেদন। শালীনতার চাদরে নিজেদের আবদ্ধ রেখেই উৎসবমুখর দিনটি ক্যাম্পাস প্রাঙ্গনে কাটিয়ে দেওয়া কিংবা পাশাপাশি হাঁটার মাধ্যমে অতিবাহিত করতে পারাও ভালোবাসার নিবেদন।
বর্তমানের ভালোবাসা:-
নিজেদের অতিরিক্ত আধুনিক ভাবার ফলে আমরা গুলিয়ে ফেলেছি ভালোবাসার মানে, অবাধ বিচরণ, বেহায়াপনার মাধ্যমে নিজেদের মাতিয়ে রাখাই যেন ভালোবাসা।
নিজের সত্তাকে বিলিয়ে দিয়ে অনৈতিকতার মাধ্যমে ভালোবাসার পবিত্র দর্শন খুঁজলেও বারবার আমরা নিজেকে ঠকিয়ে আসছি।
আধুনিকতার বালাই দিয়ে অনৈতিক কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়ে ভালোবাসার নামে পাপ ছড়াচ্ছি সমাজে।
সর্বত্র ছড়াক ভালোবাসা:-
পবিত্র অনুভবে ছড়িয়ে পড়ুক ভালোবাসা, মানুষে মানুষে বন্ধন রচিত হউক।
প্রিয় মানুষের জন্য উৎসর্গ হউক প্রতিটা ভালো কাজ, ভালোত্বের সংস্পর্শে জড়াক সম্পর্ক গুলো।উপলক্ষ্য ছাড়াই নিবেদন হউক ভালোবাসার, ভালো রাখার আয়োজন চলুক সর্বত্র।
গোপন বার্তায় ভালোবাসা না বিলিয়ে নিজেদের অস্তিত্বের জন্য হলেও ভালোবাসা হউক নির্মল।
পক্ষপাত না করে ভালোবাসার পবিত্র উপলব্ধি ছড়িয়ে দেই সকল মানুষের মাঝে।
তবেই ভালোবাসার সংজ্ঞায়ন হবে ‘ভালো রাখার আয়োজন সাজাতে ছোট্ট যে কোনো উপলক্ষ্য কিংবা ভালো রাখবো বলতে পারা’।
Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

আলোচিত

বোয়ালমারীতে চার বছর কর্মস্থলে না গিয়েও বেতন ভাতা নিচ্ছে উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রের ঝুমা !

পহেলা ফাল্গুন। এসেছে ঋতুরাজ বসন্ত। 

Update Time : ০৭:০৬:২৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৩
পহেলা ফাল্গুন। এসেছে ঋতুরাজ বসন্ত। 
আর.এ রাশেদ, বিশেষ প্রতিনিধিঃ
পহেলা ফাল্গুন। প্রকৃতির দক্ষিণা দুয়ারে  বইছে ফাল্গুনের হাওয়া। এর সাথে সাথে আমাদের মাঝে শুকনো পাতায় ভর করে এসেছে ঋতুরাজ বসন্ত। বসন্তের আগমনে কোকিল গাইছে গান। গাছে গাছে পলাশ আর শিমুলের মেলা। কৃষ্ণচূড়ারা সেজেছে সূর্যের সাথে তাল মিলিয়ে রক্তিম রঙে। বসন্ত বারৈ খুঁজে পায় নিজের নামের স্বার্থকতা।
ফাল্গুনের হাত ধরেই ঋতুরাজ বসন্তের আগমন। ঋতুরাজকে স্বাগত জানাতে প্রকৃতির আজ এতো বর্ণিল সাজ। সকল কুসংস্কারকে পেছনে ফেলে, বিভেদ ভুলে, নতুন কিছুর প্রত্যয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়ার বার্তা নিয়ে বসন্তের উপস্থিতিতে ফাল্গুনের মাতাল হাওয়া দোলা দিয়েছে বাংলার নিস্বর্গ প্রকৃতিতে।
বসন্তের এই আগমনে প্রকৃতির সাথে তরুণ হৃদয়েও লেগেছে দোলা। এ দিন বিশেষ করে তরুণীরা বাসন্তি রঙের শাড়ি আর মাথায় হলুদ ফুল দিয়ে নিজেরদের নুতন করে সাজিয়ে তোলে। অন্যদিকে ছেলেরা সাজে হলুদ রঙের পাঞ্জাবিতে। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর তরুণ মনে আবার লেগেছে বসন্তের ছোঁয়া। চারিদিকে যেন সাজ সাজ রব। নতুন কচিপাতার দোলায় দুলছে প্রকৃতি, দুলছে আবেগী মন। আজ নতুন প্রাণেও লেগেছে ফাল্গুনের সতেজ হাওয়া। ঋতুরাজ বসন্ত আজ প্রত্যেকের হৃদয়কে করেছে উচাটন। বসন্তের আগমন মানেই তরুণ হৃদয়ে নতুন প্রাণের সঞ্চার। অনুভবের জায়গা থেকে বলতে গেলে শুধু ফাল্গুন মাসের কথাই বলতে হবে। কেননা, ১৩৫৮ বঙ্গাব্দের ৮ ফাল্গুন ঘটেছিল মহান ভাষা আন্দোলন। যা আজ বিশ্বব্যাপী ২১ ফেব্রুয়ারির মোড়কে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালিত হচ্ছে। এই ভাষা আন্দোলনের পূর্বাপর কাহিনীকে উপজীব্য করে জহির রায়হান রচনা করেছেন উপন্যাস ‘আরেক ফাল্গুন’।
এই ফাল্গুন মাসকে নিয়ে আমাদের লোক গানের পাশাপাশি সাহিত্যের বিভিন্ন শাখায় রয়েছে নানা রচনা। তবে ফাগুনের মাসে শিমুলের বন যে লাল হয় তাতে কোনো সন্দেহ নেই। তাই বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখেছেন…
ফাল্গুনে বিকশিত
কাঞ্চন ফুল,
ডালে ডালে পুঞ্জিত
আম্রমুকুল।
বর্তমান কালের অন্যতম কবি খালেদ হোসাইন লিখেছেন…
তুমি ভালো থাকো আর না-থাকো
ফাল্গুন আসবেই এ দেশে।
ফুল যদি ঝরে যায়, নদী যদি মরে যায়
ফাল্গুন আসবেই এ দেশে।
কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায় লিখেছেন- ‘ফুল ফুটুক আর না-ই ফুটুক আজ বসন্ত।’
বঙ্গাব্দ ১৪০১ সাল থেকে প্রথম ‘বসন্ত উৎসব’ উদযাপন করার রীতি চালু হয়। সেই থেকে জাতীয় বসন্ত উৎসব উদযাপন পরিষদ বসন্ত উৎসব আয়োজন করে আসছে। আজ দিনভর চলবে তাদের বসন্তের উচ্ছ্বাস প্রকাশ। ফোন, ফেসবুক, টুইটারসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলবে বসন্তের শুভেচ্ছা বিনিময়। আজ নানা আয়োজনে বসন্তকে বরণ করবে বাঙালি।
অশ্রুঝড়া বসন্ত
আর.এ রাশেদ
বসন্তের আগমনে-
বিভিন্ন রঙের মেলা বসে।
কিন্তু, লাল রঙ দেখলেই চোখে পড়লেই পুরো শরীরে কাটা দিয়ে ওঠে;
সেই ফাল্গুন মাসেই রক্ত দিলো,
কত মায়ের ছেলে;
মায়ের মুখের বাংলা ভাষা
রক্ষা করবে বলে।

ভাষার জন্য রক্ত ঝড়িয়ে
দিয়েছে যারা প্রাণ,
বসন্তের লাল রঙে আজও
পাওয়া যায় সেই ঘ্রাণ।

ফাগুন মাসে আগুন জ্বলে
হাজারো মায়ের মনে,
কোনোদিন তো আর হবে না দেখা
তাদের ছেলেদের সনে ।

ফাগুন মাস দস্যি মাস
ভয় পায় তাই মা-
ভাষা যুদ্ধে গেলো যারা
অনেকেই তো আর ফিরে এলো না…

“ভালোবাসা ও সেকাল-একাল”
আহমেদ হানিফ –
ভালোবাসতে জানে না পৃথিবীতে এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া বোধহয় চন্দ্র অভিযান থেকেও কঠিন কাজ।ভালোবাসতে জানে পৃথিবীর কঠোর মানুষটিও, পাষাণের বুকেও ভালোবাসার জন্য অনুভূতি আসে।সারাদিন অক্লান্ত পরিশ্রম করা লোকটিও নিভৃতচারীর মতো ভালোবাসে গোপনে।
ভালোবাসার সংজ্ঞা বলা মুশকিল, মুশকিল হওয়ার কারণ বোধহয় বিচিত্র স্বভাবের মানুষের জন্য।
কারো ভালোবাসা হয়তো স্বভাববিরুদ্ধ অনুভবে সঙ্গ দেওয়া, কারো দু’পয়সার গোলাপে সীমাবদ্ধ।কতক দূরদর্শী মানুষের চিন্তনে ভালোবাসার মানে প্রিয়জনদের ভালো রাখা।
তাই ভালোবাসার সজ্ঞায়িত করতে কখনো আশ্রয় নিতে হয় জগৎ বিখ্যাত মনিষী কিংবা কবিদের শহরে।নানান উপমা,রসিকতার চলে ভালোবাসার ইতিবৃত্ত বললেও অনেক সময় তা বোধগম্য হয়ে উঠেনা।
বেরসিক আমিও হাপিত্যেশ করতে করতে সহজ কোনো অর্থ খুঁজতে থাকি যাতে ভালোবাসা বুঝতে পারি, মাঝেসাঝে একটু-আধটু চিন্তার ঘোরে আবেশিত হলেই বুঝতে পারি’ভালো রাখার,ভালো বলার,পাশে থাকার অঙ্গিকার করাই হলো ভালোবাসা’।
আজ ভালোবাসার মানে কিংবা সংজ্ঞায়ন করতে বসেনি।তবে বোধহয় ভালোবাসার সংজ্ঞা নিরূপণে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষেরই ভুল জানা আছে।সুযোগে দু’চারি কথায় এইসব বলতে দ্বিধা কিংবা কসুর ভাববো না।
আফসোসের বিষয় এই ফেব্রুয়ারিতে যেন আমাদের ভালোবাসার জোয়ার উঠে,কতদিন, কত রঙঢঙের অবসান ঘটিয়ে; ঘটা করে পালিত হয় ভালোবাসা দিবস।
আচ্ছা একটি বিষয় বুঝতে খুবই কষ্ট হয় আজ আমাদের ভালোবাসার নিবেদন টাকা দিয়ে কেনা কেন?
কেনইবা অভুক্ত মানুষটিকে ধারের টাকায় কিনতে হয় প্রিয় মানুষের জন্য নানান চমকপ্রদ উপহার।
তাহলে কি  প্রশ্ন আসে দারিদ্র্য পীড়িত মানুষের জন্য ভালোবাসার মূল্য চুকাতে বেশ বেগ পেতে হয়?
বোধহয় হতেও পারে,আগেই বলেছি এই ভালোবাসা বুঝা মুশকিল।
ভালোবাসার নিবেদনকে ঘিরে দু’পক্ষ হতে দেখেছি,দেখেছি মুমূর্ষুজনকে শত কষ্টে অপেক্ষার প্রহর গুনতে।
আজ ভালোবাসা নিয়ে পক্ষ গুলোর অভিমত জানাবো-
উদযাপন করার পক্ষের লোক:-
দিনক্ষণ হিসেবে রেখে নানা ধরণের কর্মব্যস্ত সময় অতিবাহিত করতে দেখি তাদের।সঞ্চয়ের টাকায়  প্রিয়তম কিংবা প্রিয়তমার জন্য একটা সেরা দিন দিতে পারায় যেন তাদের স্বার্থকতা।
ফুল,চকলেট অন্যান্য আনুষাঙ্গিক জিনিসের বিনিময়ে তাদের ভালোবাসার শ্রেষ্ঠত্বের প্রমাণে ব্যস্ত।লেখনীতে নিজেকে বিলিয়ে দিতে চায় প্রিয় মানুষটার জন্য।
উদযাপন না করার পক্ষের লোক:-
এরা প্রচুর যুক্তিবাদী মানুষ দাবী করে নিজেদের।এরা যুক্তির জোরে প্রমাণ করতে ব্যস্ত থাকবে ভালোবাসার কোনো দিন কেন হবে? ভালোবাসতে কেন এত আয়োজন?  ভালোবাসা তো একটু উপলব্ধি যাতে করে ভালো রাখার প্রতিজ্ঞা করা যায় তাই সারা বছরই ভালোবাসা দিবস।
ভালোবাসার সেকাল:-
চিঠির যুগের অবসান তখনো হয়নি।ভয়ে ভয়ে কম্পমান হাতে কবিতার সংযোগ ঘটিয়ে ভালোবাসার শপথ করতো।ডায়েরির পাতাতে ফুল, পাতার ছবি অঙ্কনের মাধ্যমে জীবনের কথাগুলো সাজাতো, কোনো রকমে চলার মাঝে একটু প্রশান্তি দিতে পারলেই হয়ে যেন দম্পতির ভালোবাসার উপলক্ষ্য।
তাই হয়তো তখন উন্নত মানের রেস্তোরাঁয় খাবার খাইয়ে বহুমূল্যের উপহারে ভালোবাসা নিবেদন করতো হতো না।
ভালোবাসার একাল:-
বেশ ঘটা করেই আয়োজিত হয় ভালোবাসার দিবসটি,উন্নত মানের রেস্তোরাঁয় খাবার খাওয়ানো ও বহুমূল্যের উপহারেই যেন ভালোবাসা নিবেদনের আসল উদ্দেশ্য।বন্ধু মহলে প্রতিযোগিতা চলে কোন মানের উপহার সামগ্রী দেওয়া হচ্ছে তার উপর।
প্রিয় মানুষটিকে নিয়ে সারাদিন ঘুরার মতো টাকা সঞ্চয়ে বেশ বেগ পেতে হয় এখন।
ভালোত্বের সংস্পর্শে আসার আগেই যেন ভালো রাখার আয়োজন সাজাতে ব্যস্ত।
অতীতের ভালোবাসা:-
সারাদিন অফিস করে ঠিক ১৪ ফেব্রুয়ারির সন্ধ্যায় একটা গোলাপ প্রিয়তমা স্ত্রীর হাতে দিতে পারাই হতো ভালোবাসা নিবেদন,কিংবা অভাবের সংসারে একটু ভালোমন্দের আয়োজন করতে পারাও ভালোবাসা।সারাজীবন ভালো রাখার আয়োজনে ব্যস্ত খাটুনি করা মায়ের আগলে রাখাও ভালোবাসার নিবেদন। শালীনতার চাদরে নিজেদের আবদ্ধ রেখেই উৎসবমুখর দিনটি ক্যাম্পাস প্রাঙ্গনে কাটিয়ে দেওয়া কিংবা পাশাপাশি হাঁটার মাধ্যমে অতিবাহিত করতে পারাও ভালোবাসার নিবেদন।
বর্তমানের ভালোবাসা:-
নিজেদের অতিরিক্ত আধুনিক ভাবার ফলে আমরা গুলিয়ে ফেলেছি ভালোবাসার মানে, অবাধ বিচরণ, বেহায়াপনার মাধ্যমে নিজেদের মাতিয়ে রাখাই যেন ভালোবাসা।
নিজের সত্তাকে বিলিয়ে দিয়ে অনৈতিকতার মাধ্যমে ভালোবাসার পবিত্র দর্শন খুঁজলেও বারবার আমরা নিজেকে ঠকিয়ে আসছি।
আধুনিকতার বালাই দিয়ে অনৈতিক কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়ে ভালোবাসার নামে পাপ ছড়াচ্ছি সমাজে।
সর্বত্র ছড়াক ভালোবাসা:-
পবিত্র অনুভবে ছড়িয়ে পড়ুক ভালোবাসা, মানুষে মানুষে বন্ধন রচিত হউক।
প্রিয় মানুষের জন্য উৎসর্গ হউক প্রতিটা ভালো কাজ, ভালোত্বের সংস্পর্শে জড়াক সম্পর্ক গুলো।উপলক্ষ্য ছাড়াই নিবেদন হউক ভালোবাসার, ভালো রাখার আয়োজন চলুক সর্বত্র।
গোপন বার্তায় ভালোবাসা না বিলিয়ে নিজেদের অস্তিত্বের জন্য হলেও ভালোবাসা হউক নির্মল।
পক্ষপাত না করে ভালোবাসার পবিত্র উপলব্ধি ছড়িয়ে দেই সকল মানুষের মাঝে।
তবেই ভালোবাসার সংজ্ঞায়ন হবে ‘ভালো রাখার আয়োজন সাজাতে ছোট্ট যে কোনো উপলক্ষ্য কিংবা ভালো রাখবো বলতে পারা’।